ব্রেকিং:
আরজি কর মেডিকেলে ২০০ কোটির দুরনীতি, একাধিক প্রভাবশালীর জোগ থাকার সম্ভাবনা নলপুরে বেলাইন সেকান্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস চলতি মাসেই ২০ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা, রয়েছে নিম্নচাপের সম্ভাবনাও আগ্রা- লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু রায়গঞ্জের কুলিকে শিশুর প্রাণ বাচিয়ে ডুবে মৃত্যু তরুণের গাজোলে মাটি খুড়তে গিয়ে উদ্ধার ১৬টি রুপার মুদ্রা

সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মুর্শিদাবাদের সুতিতে শুট আউট। CSK-তে যাচ্ছেন ঋষভ? সামনে এল বড় খবর

নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কিত কিছু ভাবনা 

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল 

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৪ ০২ ১৬  

নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কিত কিছু ভাবনা 

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল 

 

      সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার সংসদীয় শাসনব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে লোকসভা, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত বা পৌরসভা- এই তিনটি প্রধান ভোট।অর্থাৎ, দেশের প্রতিটি শহর ও গ্ৰামে প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত তিনবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনকে এখন গণতন্ত্রের উৎসব বলা হচ্ছে। এদিক থেকে দেখলে লোকসভা নির্বাচন দেশের বৃহত্তম উৎসব।একইভাবে বিধানসভার ভোট সংশ্লিষ্ট রাজ্যের এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন গ্ৰামীণ এলাকার সবচেয়ে বড় উৎসব।রাষ্ট্র, রাজ্য অথবা স্থানীয় এলাকার সরকার গঠনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত উৎসব অনেকসময়ই উপভোগ্য থাকে না। নানাবিধ কারণে অনেকের কাছেই এই উৎসব আনন্দদায়ক হওয়ার পরিবর্তে বিরক্তিকর ও আতঙ্কজনক হয়ে ওঠে। এজন্য সমগ্ৰ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কিভাবে আরও সহজ, সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করার অবকাশ রয়েছে।   

      লক্ষ্য করলে দেখা যায়, স্বাধীন ভারতে ১৯৫২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৭২ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থায় বেশকিছু নিয়মের রদবদল করা হয়েছে।যেমন, ৬১তম সংবিধান সংশোধনী, ১৯৮৯-এর মাধ্যমে ভোটাধিকারের ন্যূনতম বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়। ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনের সময়ে (১৯৯০-১৯৯৬) একাধিক উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধন হতে দেখা যায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার দিন থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য আদর্শ আচরণবিধি (মডেল কোড অব কনডাক্ট) কার্যকর করা হয়। প্রচারণার জন্য প্রার্থীদের ব্যয়ের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হয়। প্রচারণায় সাম্প্রদায়িক ও বর্ণভিত্তিক মন্তব্য নিষিদ্ধ করা হয়। ভোট প্রচারের সময় মন্ত্রিসভা তথা আইনসভার সদস্যদের সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।১৯৯৩ সালে সকল ভোটারের জন্য সচিত্র পরিচয় পত্র বা এপিক চালু করা হয়। এখন ভোটার লিস্টেও ভোটারের ফটো থাকে। বাড়ি বাড়ি ভোটার স্লিপ পৌঁছে দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্ৰহণ করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে ভোটগ্ৰহণ কেন্দ্রে গিয়েও একজন ভোটারের কোনো প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ইভিএম-এ 'নোটা' বোতাম সংযুক্ত করা হয়। ভিভিপ্যাট থেকে ভোটার দেখে নিতে পারেন তিনি যে প্রার্থীকে ভোট দিলেন তিনিই সেই ভোট পেলেন কিনা। আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটপ্রদান পর্ব শেষ হবার অব্যবহিত পরে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রেই ভোট গণনা করা হতো, এখন তা দিন কয়েক পর বিডিও অফিসের তত্ত্বাবধানে করা হয়। আগে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ভোটকর্মীদের ব্যক্তিগত ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হতো, এখন ভোটকর্মীদের নিজ নিজ বিধানসভা এলাকায় ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়। গত শতক পর্যন্ত এক দিনেই ভোট গ্ৰহণ করা হয়েছে, এখন তা অধিকাংশ রাজ্যে একাধিক দফায় করা হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন রাজ্য পুলিশ এবং তাৎক্ষণিক ভাবে নিযুক্ত লাঠিধারী ভলান্টিয়ার। এখন লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া করা হয় না। কাজেই বলা যায়, আমাদের দেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নানান সংযোজন-বিয়োজন বা পরিবর্তন ঘটেই চলেছে।

      নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের ধারাবাহিকতায় আরও কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার বলে মনে হয়।যেমন- এক, ভোটাধিকারের ন্যূনতম বয়স কয়েক বছর বাড়ানো উচিত কারণ একজন ব্যক্তির মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হওয়ার জন্য আঠারো বছর বয়স যথেষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা শেষ করতেই সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর বয়স ২৪-২৫ বছর হয়ে যায়। আমাদের দেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর। ভোটাধিকারের ন্যূনতম বয়সও ওটাই করা যেতে পারে। দুই, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা হোক যাতে মানুষ বিভিন্নভাবে এতে সামিল হতে পারে। ১৯৫২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনো লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রদানের জাতীয় গড় ৭০ শতাংশ অতিক্রম করেনি। ৩০ শতাংশ ভোটারের ভোটদানে বিরত থাকা সংসদীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে স্বাস্থ্যকর পরিসংখ্যান হতে পারে না। একজন ভোটার ব্যস্ততা, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও যাতে সে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা দরকার। অনলাইনে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করি। তাহলে 'ডিজিটাল' ভারতে অনলাইনে ভোট গ্ৰহণে অসুবিধা কোথায়? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কলকাতা হাইকোর্ট ই-মেল ও হটসআপের মাধ্যমে মনোনয়ন পত্র পেশ করার অনুমতি দিয়েছিল। তিন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে একটা ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হোক। যেটা ছাড়া একজন নাগরিকের পক্ষে কোনো সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব নয় সেটা ছাড়া একজন নাগরিক আইনসভার সদস্য হবেন কেন? ছোটবেলা থেকে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া না শিখে সমাজবিরোধী ও অসামাজিক কার্যকলাপ করতে করতেই অনেকের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটছে এবং তারা জনপ্রতিনিধিও হয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। চার, ভোট প্রক্রিয়ার দীর্ঘীকরণ রোধ করা হোক। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়েছে ১৬.৩.২৪ তারিখ।মোট সাত দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে।প্রথম দফা (১৯.৪.২৪) থেকে অন্তিম দফার (১.৬.২৪) ব্যবধান ৬ সপ্তাহ। ভোট গণনা হবে ৪.৬.২৪ তারিখ। অর্থাৎ নির্ঘণ্ট ঘোষণা থেকে গণনা দীর্ঘ ৮০ দিনের ব্যাপার। ১৭তম লোকসভা নির্বাচনও সাত দফায় অনুষ্ঠিত হয়।নির্ঘণ্ট ঘোষণা থেকে গণনা চলে ৭২ দিন ধরে। ভোটদান পর্বকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থেই এমন প্রলম্বিত সূচির প্রয়োজনীতার কথা বলা হলেও বাস্তবে উল্টোটাই ঘটতে দেখা যায়। ভোট প্রক্রিয়া যত দীর্ঘমেয়াদী হয় প্রার্থীদের পক্ষে বাহুবল ও অর্থবল দেখানোর সময় ও সুযোগ তত বৃদ্ধি পায়। নির্বাচন পর্ব কম সময়ের মধ্যে সাঙ্গ হলে সাধারণ ভোটাররা অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত বা বিভ্রান্ত না হয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি অনুযায়ী ভোট দিতে পারেন।সমগ্ৰ ভোট প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জনজীবন ও প্রশাসনিক কাজকর্মকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিৎ। পাঁচ, অন্তর্বর্তী নির্বাচন রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা দরকার।বিকল্প সরকার গঠনের নিশ্চয়তা তৈরি না করে কোনো ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটানো যাবে না, এই মর্মে আইন প্রণয়ন করতে হবে। ঘন ঘন ভোট যজ্ঞের আয়োজন দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য ও স্থায়ী উন্নয়নের পরিপন্থী।ছয়, ভোট গ্রহণ করতে গিয়ে ভোটকর্মীদের অমানসিক চাপ সহ্য করতে হয়। তাই কোনো সরকারি কর্মচারী-শিক্ষকই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকর্মী হতে চান না। প্রিসাইডিং অফিসার নানান ধরণের ফর্ম পূরণ করতে করতেই নাজেহাল হয়ে পড়েন।এত বেশি নিয়মাবলী প্রয়োগ করার কথা বলা হয় যে, বুথের মধ্যে সেসব মনে রাখা ও কার্যকর করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ এগুলোর সঙ্গে ভোটকর্মীদের নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন ও সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করার খুব একটা সম্পর্ক নেই। অজস্র অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্রের হিসেব রাখার পরিবর্তে ভোট গণনা করার জন্য যেটুকু তথ্য দরকার ভোটকর্মীদের কেবল সেটুকুই প্রস্তুত করতে বলা হোক। লক্ষ্যের থেকে উপলক্ষ্যকে বড় করে ভোটকর্মীদের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে ফেলা বন্ধ হোক। সাত, ইভিএম ও অন্যান্য কাগজপত্র ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া এবং ভোট গ্রহণ শেষে সেগুলো সংগ্ৰহ করার দায়িত্ব সেক্টর অফিসারের ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে। অর্থাৎ ডিসি-আরসি'র কাজ করবেন সেক্টর অফিসার আর সেক্টর অফিসারের সঙ্গে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ভোটকর্মীদের বোঝাপড়া হবে। আট, কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার জন্য অথবা সামগ্ৰিকভাবে ভোটের কাজে দীর্ঘদিন ধরে পঠনপাঠন বন্ধ রেখে স্কুল-কলেজ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। আমরা যেন মনে না করি- সবার উপরে ইলেকশন সত্য তাহার উপরে নাই।

       সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় দেশের সকল নাগরিকেরই কমবেশি রাজনীতি সচেতন হওয়া দরকার।এই সচেতনতা শুধু ভোটের সময় রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের ভাষণ শুনে তৈরি হয় না। সারা বছর চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে হবে। ভোটের সময় তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সরকার গঠনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে সহজ ভাবে গ্ৰহণ করতে হবে। রাজনীতিতে শাসক পক্ষ ও বিরোধী পক্ষ উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানুষ ঠিক করবে কোন দল কোন দায়িত্ব পালন করবে। ভোট নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি ভালো নয়। আজকের দিনে রাজনীতিতে চরম অবক্ষয়ের জন্য জনগণের অজ্ঞতাও অনেকাংশে দায়ী।

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর