ব্রেকিং:
আরজি কর মেডিকেলে ২০০ কোটির দুরনীতি, একাধিক প্রভাবশালীর জোগ থাকার সম্ভাবনা নলপুরে বেলাইন সেকান্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস চলতি মাসেই ২০ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা, রয়েছে নিম্নচাপের সম্ভাবনাও আগ্রা- লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু রায়গঞ্জের কুলিকে শিশুর প্রাণ বাচিয়ে ডুবে মৃত্যু তরুণের গাজোলে মাটি খুড়তে গিয়ে উদ্ধার ১৬টি রুপার মুদ্রা

শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মুর্শিদাবাদের সুতিতে শুট আউট। CSK-তে যাচ্ছেন ঋষভ? সামনে এল বড় খবর

পার্থেনিয়াম নিধনে হাতে মাঠে নামলেন তুলসীহাটা পঞ্চায়েত

মোহঃ নাজিম আক্তার

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০১৯ ২৩ ১১ ৫৮  

হরিশ্চন্দ্রপুর - ১ নং ব্লকের তুলসীহাটা গ্রামপঞ্চায়েতের উদ্যোগে বিষাক্ত পার্থনিয়াম আগাছা নিধন কর্ম সূচি শুরু হল রবিবার । উপস্থিত ছিলেন হরিশচন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু , মালদা জেলা পরিষদের সদস্য সন্তোষ চৌধুরী, এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্টেন্ট আবুল কালাম ও পঞ্চায়েতের প্রধান-উপ-প্রধানসহ পঞ্চায়েতের সমস্ত কর্মীরা।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও পঞ্চায়েত কর্মী নুর ও পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ মালদা জেলা শাখার বিশিষ্ট সদস্য মহঃমিজানুর হক ।

 

মিজানুর হকের বিজ্ঞানীক ভাবধারায় ঘন্টা খানেক প্রশিক্ষণের পর থেকে বিষাক্ত পার্থনিয়াম আগাছা নিধনের কর্মসূচি শুরু হয়।পঞ্চায়েতের পাশের মাঠ থেকে পার্থেনিয়াম নাশের অভিযান শুরু করেন বিশিষ্ট জনেরা। মিজানুর হক পার্থেনিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানান,

 

'পার্থেনিয়াম একটি উদ্ভিদ; একটি আগাছার নাম। যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচতে সক্ষম এই আগাছা। বিশেষ করে ফসলের খেত কিংবা রাস্তার দুধারে জন্মে থাকে। আগাছাটিকে বেঁচে থাকতে হলে কোনো ধরনের যত্ন-আত্তির প্রয়োজন পড়ে না। খুব সহজেই প্রকৃতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এটি আমাদের দেশের নিজস্ব উদ্ভিদ নয়, এসেছে মেক্সিকো থেকে। ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উপমহাদেশে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সে সুবাদে আমাদের দেশেও এসেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলার রাস্তার দুধারে বেশি নজরে পড়ে। এছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলায় কমবেশি দেখা যায়। তবে এখনো ফসলের খেতে দেখা যায়নি। এটি ছড়িয়েছে কয়েকভাবেই। গরুর গোবর, গাড়ির চাকার সঙ্গে লেপটে, সেচের মাধ্যমে এবং জুতার তলার কাদার সঙ্গে লেপটে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

এ গাছ সাধারণত এক থেকে দেড় মিটার উচ্চতার হয়। অসংখ্য শাখা; ত্রিভুজের মতো ছড়িয়ে থাকে। ছোট ছোট সাদা ফুল হয়। ঠিক যেন ধনেগাছের ফুল। হঠাত্ করে দেখলে যে কেউ ভুল করবেন ধনে ভেবে। গাছটির আয়ুষ্কাল মাত্র তিন-চার মাস। আয়ুুষ্কালের মধ্যে তিনবার ফুল ও বীজ দেয় গাছটি। ফুল সাধারণত গোলাকার, সাদা, পিচ্ছিল হয়। এ গাছ তিন-চার মাসের মধ্যে ৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে সক্ষম।

 

আগাছাটি অত্যন্ত ভয়ংকর। গবাদি পশু চরানোর সময় গায়ে লাগলে পশুর শরীর ফুলে যায়। এ ছাড়াও তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। আর পশুর পেটে গেলে কেমন বিষক্রিয়া হতে পারে তা অনুমেয়। শুধু পশুই নয়, আগাছাটি মানুষের হাতে পায়ে লাগলে চুলকে লাল হয়ে ফুলে যায়। পাশাপাশি ত্বক ক্যানসার সৃষ্টি করে। আক্রান্ত মানুষটির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকে। এমনকি মারাও যেতে পারে। ভারতের পুনেতে পার্থনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় ১২ জন মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে এই পর্যন্ত। এতসব ভয়ংকর বিষয়াদি জানতে পেরে পরিবেশবিদেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কিত হয়েছেন কৃষিবিদরাও।

 

কৃষিবিদরা এ আগাছা নিয়ে বেশ শঙ্কিত। তারা এটিকে বিষাক্ত আগাছা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটি শুধু বিষাক্তই নয়; যে কোনো ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিও করে। প্রায় ৪০ শতাংশ ফসল কম ফলে যদি কোনো খেতে পার্থেনিয়াম থাকে। এসব ক্ষতিকর দিকগুলো পর্যালোচনা করে কৃষিবিদরা গাছটি পুড়িয়ে ফেলতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন : এটি কেউ কাটতে গেলে ব্যক্তির হাতে-পায়ে লাগতে পারে। পোড়াতে গেলে ফুলের রেণু দূরে উড়ে বংশবিস্তার ঘটাতে পারে। আবার ব্যক্তির নাকে, মুখেও লাগতে পারে। তাতে করে তিনি মারাত্মক বিষক্রিয়ায় পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রথমে গাছটিকে কাটতে হবে। হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা থাকলে ভালো হয়। পা ভালোমতো ঢেকে রাখতে হবে। মোটা কাপড়ের প্যান্টের সঙ্গে বুটজুতা পরা যেতে পারে, সঙ্গে মোটা কাপড়ের জামাও পরতে হবে।

 

গাছকাটা হলে গভীর গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে। এ ছাড়াও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আগাছানাশক ব্যবহার করে এ গাছ দমন করা যায়। সেক্ষেত্রে ডায়ইউরোন, টারবাসিল, ব্রোমাসিল ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে হেক্টরপ্রতি প্রয়োগ করতে হবে। আবার প্রতি হেক্টরে দুই কেজি ২.৪ সোডিয়াম লবণ অথবা এমসিপি ৪০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করেও এ আগাছা দমন করা যেতে পারে।

 

সবচেয়ে ভালো হচ্ছে জৈবিক প্রক্রিয়ায় দমন করলে। তাতে করে ক্ষতির সমূহ সম্ভবনা নেই বললেই চলে। এই পদ্ধতিতে নানা ধরনের পাতাখেকো অথবা ঘাসখেকো পোকার মাধ্যমে পার্থেনিয়াম দমন করা সম্ভব।

 

তবে সুখবরটি হচ্ছে আমাদের দেশে এখনো পার্থেনিয়ামের বিষক্রিয়ায় কেউ আক্রান্ত হননি। গবাদি পশুর ব্যাপারেও সে ধরনের উদ্বেগজনক খবর আমাদের কানে এসে পৌঁছায়নি। কাজেই আমাদের উচিত এখনই সতর্ক হওয়া— যেসব জেলায় পার্থেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে সেখানে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা মাধ্যমে কৃষকদের অবহিত করা এবং গাছ নিধনের জন্য পরামর্শ দেওয়া। তাতে করে এই বিষাক্ত আগাছা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

 

পার্থেনিয়াম সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য রয়েছে, যা না জানালেই নয়। আগাছাটি মানুষ ও গবাদি পশুর যেমন ক্ষতি করে তেমনি আবার উপকারও করে। এর রয়েছে কিছু ঔষুধি গুণ। এই আগাছা থেকে মানুষের প্রচ্ল জ্বর, বদহজম, টিউমার, আমাশয়সহ নানা ধরনের জটিল রোগের প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে। এমনকি গবেষকরা মরণব্যাধি ক্যানসারেরও প্রতিষেক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি, উপকার কিংবা অপকার দুটিতে সক্ষম পার্থেনিয়াম। তাই বলে যত্রতত্র এ আগাছার বংশ বিস্তার কারো কাম্য নয়। ওষুধের প্রয়োজনে সংরক্ষিত এলাকায় এটি চাষাবাদ হতে পারে কিন্তু সেটি আমাদের দেশের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। সুতরাং আমরা এটিকে নিধন করাই শ্রেয় মনে করি। আমাদের কৃষকদেরও সেই পরামর্শ দেব আমরা। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে কাউন্সিলিং করতে হবে ব্যাপকভাবে। তবে পার্থেনিয়াম থেকে রেহাই পাওয়া যাবে; অন্যথায় এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে আমাদের দেশে । যেমন ব্রাজিল থেকে আগত গ্রাস করেছে আমাদের দেশের সমস্ত জলাশয়কে ।তাই ছড়ানোর আগেই আমাদের নাশ করার ব্যবস্থা নিতে হবে ।

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর