ব্রেকিং:
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বেওয়া-২ পঞ্চায়েতের নিশিন্দ্রা গ্রামে ভোটার তালিকা ভুয়ো ভোটার। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার উদ্যোগে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা সভা। ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট এমকে ফাইজির গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সামশেরগঞ্জে পথসভা SDPI এর ফের সামশেরগঞ্জের হাউস নগর ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে পথদুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা গাড়িচালকের জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

রোববার   ১২ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২৬ ১৪৩২   ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

সর্বশেষ:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

গঙ্গার গ্রাসে বিলীন সামশেরগঞ্জ, চোখে জল মুর্শিদাবাদবাসীর

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৯ ০৯ ১৬   আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৯ ০৯ ১৬

সফিকুল ইসলাম, সামসেরগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ: একসময় নাম শুনলেই মনে পড়ত নবাবের দেশ, ঐতিহ্য ও ইতিহাস— মুর্শিদাবাদ। কিন্তু আজ নাম উচ্চারিত হতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে গঙ্গা ভাঙনের আতঙ্কে জর্জরিত মানুষের হাহাকার।শামশেরগঞ্জ থেকে সুতি, তারানগর, রঘুনাথগঞ্জ, লালগোলা— গঙ্গার তীব্র ভাঙনে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। কোথাও তলিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি, কোথাও ঘরবাড়ি, কোথাও শতাব্দী প্রাচীন মন্দির। রবিবার থেকে দুর্গাপূজার উৎসবের আমেজ শেষ হতে না হতেই ভয়াবহ ভাঙনে কেঁপে উঠল সামশেরগঞ্জের চাইচন্ডো গ্রাম। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যায় একাধিক বাড়ি ও চাষ যোগ্য জমি বাগান। ফাটল ধরে ছিল কালী মন্দিরের চারি পাস,সোমবার রাতে শতবর্ষ প্রাচীন কালীমন্দির ভাঙ্গনের জেরে তলিয়ে যায়।ভাঙ্গনের কারণে এলাকার মানুষ তিন রাত ধরে চোখে ঘুম নেই। আতঙ্ক আর কান্নায় ভরপুর চারদিক। উত্তর চাই চন্ড গ্রামে কারো বাড়ি এখন ঝুলন্ত অবস্থায়, যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। তাই আসবাবপত্র নিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোথাও স্থায়ী আশ্রয় নেই।গত পাঁচ বছর ধরে এই ভাঙন অব্যাহত। স্থানীয়দের দাবি, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার যদি আগেই সঠিক ব্যবস্থা নিত, তাহলে হয়তো আজও আমাদের ভিটেমাটি টিকে থাকত। একজন স্থানিয় ভিটেমাটি হারা বাসিন্দা বলেন।ধুলিয়ান ঘাটে যেমন পাকা ভাবে বাধা হয়েছে, তেমন যদি আমাদের এলাকাতেও হতো, তাহলে আমার বাড়িটা হারাতে হতো না।চাইচন্ডো গ্রামের মাধুরী সরকার এখনো নদীর ধারে বসে দেখছেন তাঁর বাড়ির জায়গা— যা এখন গঙ্গার পেটে। কান্না ভরা দুই চোখ কণ্ঠে গভীর হতাশা, কষ্টে কাতর হৃদয় নিয়ে তিনি জানান “দু’দিন আগে বাড়িটা তলিয়ে গেছে। এক।সময় শেষ হয়েছে চাষযোগ্য জমি লিচুবাগান, মিলিয়ে 16 বিঘা জমি ছিল— সব শেষ। এত বছর কেউ বুঝল না, এখন কে বুঝবে? এই ভিটেমাটি ছিল আমার পূর্বপুরুষের ভালোবাসা, কত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে ভিটেমাটির সাথে এক নিমেষে সব শেষ। আজ একেবারে নিঃস্ব আমি। পাথর কণ্ঠে বলে আমাকে কি কেউ কিছু দেবে! আমাদের কথা কি কেউ শুনবে?সেই অবস্থায় তিনি সরকারের কাছে একটাই আবেদন রাখেন— অন্তত থাকার মতো একটা বাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।একই আবেদন ভারতী সরকারের নামের আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দার। তিনি বলেন,সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি আমরা। একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই। কিন্তু এখন আর বিশ্বাস হয় না— কেউ কিছু দেবে। যেমন বিড়ির ওপরে জিএসটির কর ৪০% করার প্রক্রিয়া চলছিল, তখন সমস্ত দল এসে অরঙ্গবাদে মিটিং করে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু এখন কেন সমস্ত দল মত মিলে আমাদের থাকার স্থায়ী ও ব্যবস্থাপনা নিচ্ছেন না? সমস্ত দল-মত এক হয়ে ব্যবস্থা নেক, এই প্রতিরোধ স্থায়ী ও বাসস্থানের।তোর বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই, কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে তিনি নদীর দিকে ইশারা করে বলেন,“আমার বাড়ি ওখানে... নদীর তলায়।” আর একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান,“নদী অন্তত দুই কিলোমিটার কেটেছে। এই দুই কিলোমিটারের মধ্যে শত শত পরিবার ছিল— এখন ঘরবাড়িহারা। প্রাচীন কালীমন্দিরও তলিয়ে গেছে গতরাতের আগা রাতে। তবুও প্রতিনিধি ও প্রশাসনের কোনও তৎপরতা নেই, কোন সহযোগিতা মিলেনি।তাদের দাবি— পাকা বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলা হোক, আর যাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।একসময় গঙ্গার তীরে জীবন গড়ে উঠেছিল, আজ সেই গঙ্গাই বুকে কেটে নিচ্ছে মুর্শিদাবাদের প্রাণ। মানুষের কণ্ঠে এখন একটাই প্রশ্ন—

এই ভাঙন কবে থামবে? আমাদের জীবনের ক্ষত আদৌ কি সেরে উঠবে?

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর