ব্রেকিং:
আরজি কর মেডিকেলে ২০০ কোটির দুরনীতি, একাধিক প্রভাবশালীর জোগ থাকার সম্ভাবনা নলপুরে বেলাইন সেকান্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস চলতি মাসেই ২০ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা, রয়েছে নিম্নচাপের সম্ভাবনাও আগ্রা- লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু রায়গঞ্জের কুলিকে শিশুর প্রাণ বাচিয়ে ডুবে মৃত্যু তরুণের গাজোলে মাটি খুড়তে গিয়ে উদ্ধার ১৬টি রুপার মুদ্রা

শনিবার   ১৮ জানুয়ারি ২০২৫   মাঘ ৫ ১৪৩১   ১৮ রজব ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মুর্শিদাবাদের সুতিতে শুট আউট। CSK-তে যাচ্ছেন ঋষভ? সামনে এল বড় খবর

ওয়েব ডেস্ক, ৩১ ডিসেম্বর- চিনা হ্যাকাররা হানা দিয়েছে আমেরিকায়। তাও আবার খোদ দেশের অর্থ মন্ত্রকের সিস্টেমে। যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এমনটাই দাবি করেছেন বলে সূত্রের খবর। তবে ঘটনার শুরু হয়েছে চলতি মাসের গোড়ার দিক থেকে। কোন তথ্য চিনা হ্যাকাররা হাতিয়ে নিয়েছে, সাইবার হানায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে এফবিআই। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রক অন্য সংস্থাগুলির সঙ্গেও আলোচনা করছ্রছযদিও ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত চিনা দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলছেন, ‘এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ

কীভাবে হ্যাকাররা সিস্টেমে ঢুকে পড়ল, তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা পরিষেবা দেওয়া সংস্থার মাধ্যমে হ্যাকাররা অর্থ মন্ত্রকের কর্মীদের কম্পিউটার হ্যাক করেছে।অর্থ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সিস্টেমে হামলার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।গত ডিসেম্বর সাইবার নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থাবিয়ন্ডট্রাস্টআমেরিকার অর্থ মন্ত্রককে সাইবার হানার বিষয়ে সচেতন করেছিল

 

আমেরিকার অর্থ  মন্ত্রকের সিস্টেমে চিনা হ্যাকার হানা
৬ই ডিসেম্বর: ২০২৪-এর ডাক

৬ই ডিসেম্বর: ২০২৪-এর ডাক

৬ই ডিসেম্বর: ২০২৪-এর ডাক

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

 

৬ই ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার কালো দিন। এই দিনটি শুধু ভারতবর্ষ নয়, শুধু এশিয়া মহাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের কাছে পশু শক্তিকে ধিক্কার জানানোর দিন ও সেই সাথে মানবতার পক্ষে, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তথা কথিত সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু নির্বিশেষে, সকল সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন স্বাধীনতা, সম্পত্তি ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য শপথ নেবার দিন।

এই মুহূর্তে আমাদের দেশের দুই মহান সন্তান, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রশাসনের উচ্চ আসন অধিকারকারীর কথা মনে পড়ে যায়। একজন হলেন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী, অনন্য সাধারণ শিক্ষাবিদ, যিনি মক্কার জমজম কূয়ার পাড়ে জন্ম নিয়ে আশৈশব যমুনার তীরকে আপন করে তাকে স্বদেশভূমি তথা জন্মভূমি বলে গণ্য করেছিলেন। তিনি হলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। আর একজন হলেন দক্ষিণ ভারতে ভূমিষ্ঠ হওয়া ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি তথা পরবর্তীকালের রাষ্ট্রপতি বিরলদৃষ্ট দার্শনিক ডঃ সর্ব্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান।

আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের শেষ পর্বে যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছিষ্ট একই আস্তাকুঁড় থেকে কুড়িয়ে খেয়ে হিন্দু মৌলবাদী ও মুসলিম মৌলবাদীরা দেশভাগের দড়ি টানাটানি করছে, যখন ইকবাল "পাকিস্থান" নাম দিয়ে ভারত ভাগ করে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের কথা বলছেন, তখন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফুর খান প্রমুখরা অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন। ঠিক এই লগ্নে মুসলিম লীগের তরফে আজাদকে আহ্বান করা হয় যে একজন বিশিষ্ট মুসলিম বুদ্ধিজীবি হিসাবে তিনি ভারত বিভাজন করে একটি সার্ব্বভৌম স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে সামিল হোল। উত্তরে তিনি বলেন, "আগে আমি একজন মানুষ, তারপর একজন ভারতীয়, তারপর একজন মুসলমান। আমি ধর্মনিরপেক্ষ অবিভক্ত ভারত চাই। . . . . ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করে গঠিত ঐ দেশ আবার ভাঙবে।" সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফুর খানের কাছেও একই প্রস্তাব গিয়েছিল। তিনিও অনুরূপ উত্তর দেন। অতি অল্পকালের মধ্যেই তাদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণ হয়। পাকিস্থান ভেঙ্গে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীন সার্ব্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের উদ্ভব হয়। এখন যে অবশিষ্ট পাকিস্থান আছে, সেখানে বালুচ জনগণ স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন।

এবার আসা যাক ডঃ রাধাকৃষ্ণাণের উক্তি নিয়ে আলোচনায়। ঠিক ঐ একইলগ্নে হিন্দু মহাসভার তরফে তাঁর কাছে প্রস্তাব যায় যে দেশভাগ হলে তো হিন্দুদের ক্ষতি নেই। কারণ মুসলিমদের জন্য পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হলে হিন্দুরা স্বস্তিতে থাকবে। উত্তরে ডঃ রাধাকৃষ্ণান জানান, "আগে আমি মানুষ, তারপর ভারতীয়, তারপর হিন্দু। . . . . আমি ধর্মনিরপেক্ষ অবিভক্ত ভারত চাই। "ভারত বিভাগকে তবুও ঠেকানো যায়নি। মুসলিম লীগ-হিন্দুমহাসভা আর. এস. এস-ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তে ভারত বিভক্ত হয়। পাকিস্থান সৃষ্টি হয়।

পাকিস্থান সৃষ্টির পরে হিন্দুমহাসভা- আর. এস. এস. দাবী তোলে এদেশের মুসলিম ভাইবোনদেরকে পাকিস্থানে পাঠিয়ে দেবার। এর উত্তরে গণপরিষদের ভিতরে ও বাইরে, উপরাষ্ট্রপতির আসন ও রাষ্ট্রপতির আসন থেকে বারে বারে ডঃ রাধাকৃষ্ণান ষোষণা করেন যে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্থান নামক মুসলিম রাষ্ট্র হয়েছে মানেই অবশিষ্ট স্বাধীন ভারত হল একটি "হিন্দু রাষ্ট্র" একথা মনে করার কোন কারণ নেই। "দেশভাগের যন্ত্রণা সয়েই বলছি এবং বোলবো যে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, ধর্মনিরপেক্ষ আছে, এবং চিরদিন ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে।"

বস্তুতপক্ষে, আমাদের দেশের সংবিধানের ২৫নং ধারায় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ গণপরিষদ থেকেই স্বীকৃত হয়েছে। পরবর্তীকালে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে সংবিধানের ৪২তম সংশোধন হয় ও তার মাধ্যমে "Secular" বা ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি প্রস্তাবনায় সংযুক্ত হয়। এক কথায়, হিন্দু মৌলবাদীরা যতই হিন্দী--হিন্দু--হিন্দুস্থান বলে চীৎকার করুক এবং ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করুক, কিংবা কিছু ধর্মান্ধ মুসলিম মৌলবাদীর পেট্রোডলারের লোভে কিছু দিনের মধ্যেই ভারতকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র বানানোর ঘৃন্য অপচেষ্টা চলুক, অশোক--আকবর--দারাশিকো--বিবেকানন্দ--রবীন্দ্রনাথ--নজরুলের দেশে কোন মৌলবাদী শক্তির কোন চক্রান্তই সফল হবে না। বিদ্রোহী কবির কথাই ঠিক হবে--

একই বৃন্তে দুইটি কুসুম 

হিন্দু--মুসলমান।

মুসলিম তার নয়নমণি

হিন্দু তাহার প্রাণ।

এদেশের হিন্দু ভাইবোনরা তাঁর লেখা শ্যামাসংগীতে মাকে অর্ঘ্য দেয় ও দেবে। মহাঅষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার সময় হিন্দু ভাইবোনরা স্মরণ করবে যে ভারতমাতার সন্ধানে বেরিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ ঝিলাম নদীর এক মুসলিম মাঝির ক্ষুধার্ত শিশু কন্যাকে, যে তার মুখের আধপোড়া রুটিটুকু তার ক্ষুধাকাতর শিশু ভাই-এর গালে তুলে দিচ্ছে, এই দৃশ্য থেকে "জয় ভারত মাতা কি জয়" বলে স্বামীজী তাকে শ্রষ্টাঙ্গে প্রণাম করে তার পূজো করেছিলেন, এবং সেই থেকেই মহাঅষ্টমীতে শারদীয়ায় কুমারী পূজার চল। 

তবু বোলবো যে আমাদের এই মহান দেশে ৬ই ডিসেম্বর ঘটেছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে রাম জন্মভূমি উদ্ধারের নামে। উপনিষদে বলা আছে-- "সর্বং খল্বিদং ব্রহ্মঃ।" ব্রহ্ম অর্থাৎ ঈশ্বর সর্বত্র বিদ্যমান। হিরণ্যকশিপু বধের পৌরাণিক উপখ্যানে দেখা যায় যে ভগবান শ্রীহরি সর্বত্রই আছেন। তাই হিরণ্যকশিপু দৈত্য "হরি"র নামে অসহ্য হয়ে তার হরিভক্ত সন্তান প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করে যে "তোর হরি কি ওই ঢিপিটার মধ্যেও আছে?" প্রহ্লাদ উত্তর দেয় "হ্যাঁ বাবা আছে।" তখন হিরণ্যকশিপু বলে ওঠে, "দাঁড়া দেখি তোর হরিকে দেখাচ্ছি।" এই বলে সে ঐ ঢিপির মাথায় লাথি মারে। অমনি নৃসিংহমূর্তিতে "শ্রহরি" হিরণ্যকশিপুকে বধ করেন। 

এই পৌরাণিক উপাখ্যান কতখানি সত্য বা মিথ্যা তা জানি না। কিন্তু এই উপাখ্যানের যে নির্যাস, তা সর্ব্বদেশের সর্ব্বকালের জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষের কাছে শিক্ষনীয়। 

আসলে দুনিয়া জুড়ে সব দেশেই উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে, "ধর্ম" বা "ঈশ্বর"কে ব্যাখ্যা না করে অত্যন্ত সংকীর্ণ বা বিকৃতভাবে এই শব্দ দুইটিকে ব্যাখ্যা করা হয়। তাই আমরা দেখি যে দেশে দেশে ধর্মের দোহাই পেড়ে মানুষের খুনে নরপিশাচরা হাত রাঙায়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হলে তো কথাই নেই! এমনকি ধর্মীয় সংখ্যাগুরুরাও গণহত্যার শিকার হয়ে থাকেন।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হবার কারণে জার্মান আধিপত্যবাদের প্রবক্তা হিটলারের হাতে ইহুদি মেধ যজ্ঞ হয়েছে। আইনস্টাইনের মত বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানীকেও প্রাণের দায়ে দেশত্যাগ করতে হয়। মায়ানমারে বৌদ্ধ মৌলবাদীদের হাতে মুসলিম হবার অপরাধে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের রক্তে রেঙ্গুনের রাজপথ লালে লাল হয়ে উঠছে। জীবনানন্দ--জসিমুদ্দিনের পদধূলিধন্য ও শেখ মজিবের সংগ্রামের ফসল স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে আজ ইসলামী মৌলবাদীরা তাণ্ডব করে বেড়াচ্ছে এবং সেখানে হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে তথা বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন বাম ও গণতান্ত্রিক দলের কর্মীদের উপর বর্বর আক্রমণ চলছে ইউনুস সরকারের মদতে, তাদের অনড় ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতার কারণে।

আমাদের দেশ ভারতবর্ষে যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট, যেমন কাশ্মীরে, সেখানে নির্বিচারে হিন্দু নিধন চলছে। আবার যেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘিষ্ঠ যেমন গুজরাটে বা রাজস্থানে, সেখানে তথাকথিত "গোমাতা রক্ষা"র নামে দানবীয়ভাবে মুসলিম ভাইবোনদের শবে সবরমতীর মত নদীগুলোর জল দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে। গুজরাট দাঙ্গা, উত্তরপ্রদেশে আখলাখ হত্যা, হরিয়ানায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তীর পরিযায়ী শ্রমিক সাবিরের হত্যার কথা যেন আমরা মনে রাখি।

সবশেষে, শুধু সংখ্যালঘুরা নয়। সংখ্যাগুরুরাও সাম্রাজ্যবাদীদের মদতে গণহত্যার শিকার হয়। রোডেশিয়ায়, বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায়, সংখ্যালঘু শেতাঙ্গরা সরকারী ক্ষমতায় থেকে সংখ্যাগুরু কৃষ্ণঙ্গদের রক্তে মাটি লালে লাল করেছে ব্রিটেন ও আমেরিকার মদতে। ঠিক একইভাবে, ওদের মদতে সংখ্যাগুরু মুসলিমরা প্যালেস্টাইনে ইহুদি মৌলবাদী ইসরায়েলের হাতে খুন হচ্ছেন। আসলে সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু তত্ত্বটিই হোল আপেক্ষিক। এক দেশে যারা সংখ্যালঘু অন্যদেশে তারাই সংখ্যাগুরু। সংখ্যালঘু নির্যাতন বা সংখ্যাগুরু নির্যাতন নিয়ে যারা গলা ফাটাচ্ছেন তারা কায়ার সঙ্গে না লড়ে ছায়ার সঙ্গেই লড়াই করার কথা বলছেন। বলতে হবে সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু নির্বিশেষে, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন থেকে শুরু করে প্যালেস্টাইনে, ভারতে, মায়ানমারে মুসলিমদের উপর নির্যাতন, উত্তর পূর্ব্বভারতে খৃষ্টান আধিপত্যবাদীদের হাতে হিন্দু নিপীড়ন, আবার ওখানে কিছু কিছু পাহাড়ী অঞ্চলে হিন্দু আগ্রাসনবাদীদের হাতে নিরীহ খৃষ্টান মা বোনদের উপর নিপীড়ন, কাশ্মীরে মুসলিম জঙ্গীদের দ্বারা নির্বিচারে হিন্দু নিধন, পাকিস্থানে জনগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘু বালুচদের উপরে পাঠানদের নির্যাতন, আফগানিস্থানে কাবুল--কান্দাহার--বামিয়ানে হিন্দু ও বৌদ্ধদের উপর নিপীড়ন এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির নিদর্শনগুলিকে ধূলিস্যাৎকরণ, পাকিস্থানে কান্দাহারে ও আফগান সীমান্তে সংখ্যালঘু শিয়াদের উপর সংখ্যাগুরু সুন্নিদের নির্যাতন--সর্বত্রই ধ্বংসের বিরুদ্ধে, পাশবিকতা ও দানবীয়তার বিরুদ্ধে এবং সৃষ্টি, স্থিতি ও সম্প্রীতির পক্ষে আমাদেরকে প্রবল জনমত গড়ে তুলতে হবে। এটাই হবে এই ২০২৪ এর ৬ই ডিসেম্বর বাবরি দিবসে সারা বিশ্বের সকল মানবতাবাদী মানুষের শপথ, লৌহ দৃঢ় অঙ্গীকার। আজকের আওয়াজ হবে পদ্মা--মেঘনা--যমুনা--জর্ডান--তাইগ্রিস--কাবুলের তটে--

হিন্দু না মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?

কাণ্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ 

সন্তান মোর মার।

কপোতাক্ষ--মেঘনার তীরে হিন্দুরা মরছে না, মরছে মানুষ, জর্ডানের বা যমুনার কূলে মুসলিমরা মরছে না, মরছে মানুষ, কাবুলের স্বচ্ছতোয়ায় হিন্দু বা বৌদ্ধদের লাশ ভাসছে না, ভাসছে মানুষের লাশ, গাজার প্রান্তরে পচছে না মোমিনের মড়া, পচছে মানুষের মরদেহ। সর্বত্রই বিপন্ন হোল মানুষ, বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন বিশেষণে। এসবের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে শিল্পী অমর পালের সুরে সমস্বরে গেয়ে উঠতে হবে--

"আকাশ আমার ঘরের ছাউনি,

পৃথিবী আমার ঘর,

এই দুনিয়ার সকল মানুষ

কেহ নহে মোর পর,

কেহ নহে মোর পর।"

--এটাই সময়ের দাবী। 

 

      

 

 

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

০১:০৩ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

ফাতেহা দোয়াজ  দাহাম ও ফাতেহা ইয়াজ দাহামের  দিনে  বিশ্ব মানবতার উত্তোরণে হোক দোয়া

ফাতেহা দোয়াজ দাহাম ও ফাতেহা ইয়াজ দাহামের দিনে বিশ্ব মানবতার উত্তোরণে হোক দোয়া

ফাতেহা দোয়াজ দাহাম ও ফাতেহা ইয়াজ দাহামের দিনে বিশ্ব মানবতার উত্তোরণে হোক দোয়া 

 

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

 

 আরবিতে ফতেহা শব্দের অর্থ হোল প্রার্থনা বা দোয়া। আর দোয়াজ দাহাম শব্দের অর্থ একসাথে বারোর প্রার্থনা। মহানবি হজরত মহম্মদের জন্মদিন হিসাবে এই দিবসটি পালন করা হয়। উল্লেখ্য যে ইসলাম ধর্মে জন্মদিন বা মৃত্যুদিনকে আড়ম্বর সহকারে পালনের বিধান নেই। অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে মহানবির এই জন্মদিনটিকে বিশেষ প্রার্থনা, দোয়ার মাধ্যমে তাই উদ্‌যাপন করা হয়। ইংরাজী ৫৭০ মতান্তরে ৫৭১ খৃষ্টাব্দে মা ফতেমার গর্ভ থেকে মহানবি মক্কার এক পাহাড়ী উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন। আসলে আরবি মাস "রবিউল আউয়াল"-এর ১২ তারিখে সোমবার হজরত মহম্মদ জন্মগ্রহণ করেন। তাই এই দিনের প্রার্থনাকে বারোর প্রার্থনা বা "ফতেহা দোয়াজ দাহাম" বলা হয়।

আর একটি কথা। "রবিউল" শব্দের আরবিতে অর্থ হোল বসন্ত বা চিরসবুজ। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন যে মক্কাসহ গোটা আরব ভূখণ্ড ছিল মরুময়। কিন্তু মা ফতেমার গর্ভে মহানবি আসার সময় থেকে গোটা প্রাকৃতিক পরিবেশ সেখানে পাল্টে যায়। সবুজে সবুজে গোটা এলাকা ভরে যায়। গাছে গাছে দেখা দেয় রকমারী ফুল ও ফলের সমারোহ। মহানবির পবিত্র জন্মদিনে তাই বিশ্বজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই বোনরা সর্ব্বশক্তিমানের কাছে দোয়া করেন, প্রার্থনা করেন বিশ্ববাসীর সুখ--শান্তি সমৃদ্ধির জন্য, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এক পৃথিবীর জন্য। এবারেও, এই ২০২৪ সালেও, ফতেহা দোয়াজ দাহামে তার কোনই অন্যথা হবে না। 

অনেকেই ফতেহা দোয়াজ দাহাম ও ফতেহা ইয়াজ দাহাম এই দুইটিকে এক করে ফেলেন।ইয়াজ দাহাম কিন্তু ফরাসী শব্দ ।এর অর্থ হলো এগারোতম দিন ।এটি হোল হজরত কাদের জিলানির ওফাত দিবস।হিজরি পাঁচশ একষট্টি সালের এগারোই রবিউস সানি ওনার এন্তেকাল হয়।তাঁর স্মরণে বিশ্বজুড়ে এইদিন প্রার্থনা করেন শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য ।পনেরোই অক্টোবর দুহাজার চব্বিশে এবারে সেই ফতেহা ইয়াজ দাহামের দিন।আর দুহাজার চব্বিশ সালের ষোলই সেপ্টেম্বর ছিল ফতেহা দোয়াজ দাহামের দিন।

আমরা জানি যে আমরা আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার বিস্ময়কর বিজয় যাত্রার যুগে বসবাস করছি। তবুও আমরা বোলবো যে মহানবি হজরত মহম্মদের ৫৭০/৫৭১ খৃষ্টাব্দে জন্মের পূর্ববর্তী সময়কাল ও আজকের যুগের তুলনামূলক বিচারে

কিম্বা পরমপূজ্য হজরত কাদের জিলানির পাঁচশ একষট্টি হিজরিতে ওফাত দিবসের বিচারে, ক্ষুধা--দারিদ্র্য--বেকারী--হানাহানি, ইত্যাদির দৃষ্টিকোণে, আমরা এখন মোটেও কোন ভালো অবস্থায় নেই। বরং বলা যায় যে আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক উন্নততর অবস্থানে থাকলেও, আজো আমরা কার্যতঃ পড়ে আছি প্রাক--মহানবি--জন্মকালের আগের পরিস্থিতির মধ্যে। কি আমাদের রাজ্যপরিস্থিতি, কি আমাদের জাতীয় পরিস্থিতি, কি আমাদের বিশ্বপরিস্থিতি, সব কিছুর নিরীখে আমরা এই কথাই বলতে পারি।

প্রথমেই আমরা ধরি আমাদের রাজ্য পশ্চিমবাংলার অবস্থার কথা। আমাদের কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছিলেন--

"ধনধান্যে পুষ্পে ভরা,

আমাদের এই বসুন্ধরা।"

কিন্তু সেই "ধনধান্যে পুষ্পে ভরা বসুন্ধরা" আজ শশ্মানে পরিণত হয়েছে। কৃষি--শিল্প সমস্ত কিছুই আজ শেষ। বেকারীর পাহাড় এই রাজ্যে। হাজারো রকমের "ডোল" দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে অমূক শ্রী তমুক শ্রী ইত্যাদির নামে। সীমাহীন দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ণ আজ এই রাজ্যে। দুর্বৃত্তদের হাতে মানুষ মরছে প্রতিদিন নির্বিচারে। দুর্নীতি জেনে ফেলেছিল বলেই আর. জি. কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসককে খুন হতে হয়েছে। আজও তার কিনারা হয়নি। সরকারের প্রচার মাধ্যমে দুবেলা বলা হচ্ছে উন্নয়ন, উন্নয়ন। আমাদের জানতে ইচ্ছা করে এই উন্নয়ন কার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন কি রিজওয়ানুয়ের বাবার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন কি হরিয়ানার গোরক্ষকদের হাতে নিহত পশ্চিমবাংলার পরিযায়ী শ্রমিক সাবিরের পরিবারের উন্নয়ন? এই উন্নয়ন কি সিঙ্গুরে জমিহারা কৃষকদের উন্নয়ন অথবা যে তরুণরা রাজ্যে শিল্পায়ণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখেছিল, এ উন্নয়ন কি তাদের উন্নয়ন? মোটেও তা নয়। এই উন্নয়ন হোল কিছু গোরু চোর, কয়লা চোর, বালি চোর, সোনা চোর, চাকরি চোর, মেছোঘেরীর মালিক, ইটভাঁটার মালিক, প্রোমোটার ও কনট্রাকটরদের উন্নয়ন। তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ দিন দিন আরও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী কখনো সংখ্যালঘু তোষণ, কখনো সংখ্যাগুরু তোষণের মাধ্যমে হিন্দু--মুসলিমে বিভাজন তৈরী করে রাজ্যে ক্ষমতায় আছে। তাদের পুতনা রাক্ষসী রাজে কর্মহীন মানুষরা এরাজ্য ছেড়ে রুটি রুজির সন্ধানে ভিন রাজ্যে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে অপুষ্টি, অর্ধাহার, অস্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ, ইত্যাদিতে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ মারা যাচ্ছে অকালে। আবার কেউ কেউ উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীদের আক্রমণের শিকার হয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসছে শ্মশান শয্যায় বা গোরস্থানে। 

তাই এবারে ফতেহা ইয়াজ দাহামে বা দোয়াজ দাহামে মোমিন ভাইদের প্রার্থনা হবে পশ্চিমবাংলা যেন ধাপ্পাবাজি "লক্ষ্মীরভাণ্ডার"-এ পরিণত না হয়ে সত্যিকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে পরিণত হয়। যেন কৃষি, শিল্প, সামাজিক পরিবেশ সব কিছুতেই এই রাজ্যে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রকৃত বাতাবরণের আবহে যেন কবিগুরুর পদধূলি ধন্য বাংলা "সোনার বাংলা"য় পরিণত হয়। সমৃদ্ধিতে পশ্চিমবাংলা আগামী দিনে ভরে উঠুক, এটাই হোক এই দুই দিবসের আবেদন ।

ঠিক একইভাবে এই পবিত্র দিনদুইটিতে সর্ব্বশক্তিমানের কাছে তাঁদের প্রার্থনা হোক ভারতের স্থিতি, স্থায়িত্ব, ও সমৃদ্ধি নিয়ে। ইতিহাস সাক্ষ্যদেয় যে আমাদের এই মহানদেশ একা হিন্দুর নয়, একা মুসলমানের নয়, একা খৃষ্টানের নয়, এই দেশ হোল হিন্দু--মুসলিম--বৌদ্ধ--খৃষ্টান সকলের। বহুত্ববাদী সংস্কৃতির যে ধারা অশোক--আকবর--দারাশিকো--বিবেকানন্দ--রবীন্দ্রনাথ--কাজী নজরুল প্রমুখের হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে, সেই ধারা আজ আমাদের দেশে বিপন্ন। আমাদের দেশে আজ চলছে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি। ফলে এদেশে আজ মানুষ গৌণ। মুখ্য হোল তার ধর্মীয় পরিচয়। কোথাও এখন এই আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষের কোথাও কোথাও একজন মানুষের জীবনের চেয়ে একটি গোরুর মূল্য অনেক বেশী। কোথাও রামের নামে, কোথাও রহিমের নামে হচ্ছে নির্মম নিষ্ঠুর গণহত্যা। আমাদের জন্মভূমি ভারতবর্ষ এই গভীর সংকটের হাত থেকে মুক্ত হোক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিমণ্ডল পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক, এটাই হোক সকল মোমিনের দোয়া। 

আমাদের দেশ ঐতিহ্যগতভাবে বরাবর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, বর্ণ বৈষম্যবাদ বিরোধী ও ঔপনিবেশিকতাবাদ বিরোধী। কিন্তু সেই মহান আদর্শ থেকে বিচ্যূত হয়ে আমাদের দেশের বর্তমান সরকার এখন সাম্রাজ্যবাদীদের তাঁবেদারে পরিণত হয়েছে। এদেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সকল মানুষ জাতিধর্ম নির্বিশেষে ভারত সরকারের এই লেজুড়বৃত্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন। তাঁদের এই লড়াই যেন সফল হয় এবং এই লড়াই-এর চাপে যেন বর্তমান দিল্লীর সরকার বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হয়, এটা হোক সকলের ঐ দিন দুইটিতে নমাজের শেষে মোনাজাত। 

পরিশেষে, আমাদের রাজ্য ও আমাদের দেশের মত গোটা বিশ্ব পরিস্থিতিও আজ খুব জটিল। সাম্রাজ্যবাদ ও সংকীর্ণ ধর্মীয় মৌলবাদ আজ রক্তের বন্যায় গোটা পৃথিবীকে আজ রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে। কোথাও হিন্দু মৌলবাদ, কোথাও বৌদ্ধ মৌলবাদ, কোথাও খৃষ্টান মৌলবাদ, কোথাও ইহুদি মৌলবাদ ধর্মের দোহাই পেড়ে এই কাণ্ড করছে। মায়ানমারে বৌদ্ধ মৌলবাদীরা মুসলিম হবার অপরাধে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের রক্তে সেদেশের মাটিকে রক্তে লাল করে দিচ্ছে। আবার সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যথা আফগানিস্থান, সিরিয়া, আলজেরিয়া প্রমুখ দেশে উগ্র ইসলামিক মৌলবাদ ইসলামিক স্টেট নাম ধরে বা আফগানিস্থানে তালিবান নাম ধরে শুধু অমুসলিমদেরকেই নয়, সুস্থ চিন্তার মুসলিম ভাইবোনদেরকে খুন করছে। ভারতবর্ষে দিকে দিকে উগ্র হিন্দু মৌলবাদীরা খৃষ্টান ও মুসলিমদের রক্তে যমুনা--গঙ্গা--সবরমতীর তীরকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। উত্তরপূর্ব্ব ভারতে উগ্র খৃষ্টান আধিপত্যবাদ ও উগ্র হিন্দু মৌলবাদীদের দ্বন্দ্বে মণিপুরসহ বিভিন্ন সবুজ পাহাড় আজ রক্তে লাল। সংকীর্ণ মুসলিম বিদ্বেষের দৃষ্টিকোণে উগ্র ইহুদি মৌলবাদ জর্ডানের তীর ও গাজার প্রান্তরকে লালে লাল করে দিচ্ছে মানুষের রক্তে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার সংকীর্ণ তেলের রাজনীতির স্বার্থে ইসরায়েলকে মদত করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে তৃতীয় মহাযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরী করছে। ইরাণ, লেবালন প্রমুখ দেশ মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগ্রামীদের পাশে সংগত কারণেই দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ প্যালেস্টাইনের পক্ষে থাকলেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ইসরায়েল মরীয়া হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। লজ্জার কথা যে আমাদের দেশের ঐতিহ্যগত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভারত সরকার ইসরায়েল ও আমেরিকার এই যুদ্ধ প্রয়াসকে সমর্থন করছে। এক কথায় বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা আজ বিপন্ন। 

এই পরিস্থিতিতে গোটা পৃথিবীকে বাঁচাতে পবিত্র ফতেহা দোয়াজ দহমের ও ইয়াজ দাহামের দিনে, এবারে মোমিন ভাইরা অবশ্যই প্রার্থনা করবেন সাম্রাজ্যবাদ ও সব রকমের ধর্মীয় মৌলবাদের নিশ্চিত পরাজয় ও মানবতাবাদ এবং বিশ্ব শান্তিরবাদের তথা প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগ্রামের জয়ের লক্ষে, এ আমাদের দৃঢ় আশা ও প্রত্যয়। 

 

      

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

০৮:৩১ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ মঙ্গলবার

ফাতেহা দোয়াজ  দাহাম ও ফাতেহা ইয়াজ দাহামের  দিনে  বিশ্ব মানবতার উত্তোরণে হোক দোয়া

ফাতেহা দোয়াজ দাহাম ও ফাতেহা ইয়াজ দাহামের দিনে বিশ্ব মানবতার উত্তোরণে হোক দোয়া

ফাতেহা দোয়াজ দাহাম ও ফাতেহা ইয়াজ দাহামের দিনে বিশ্ব মানবতার উত্তোরণে হোক দোয়া 

 

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

 

 আরবিতে ফতেহা শব্দের অর্থ হোল প্রার্থনা বা দোয়া। আর দোয়াজ দাহাম শব্দের অর্থ একসাথে বারোর প্রার্থনা। মহানবি হজরত মহম্মদের জন্মদিন হিসাবে এই দিবসটি পালন করা হয়। উল্লেখ্য যে ইসলাম ধর্মে জন্মদিন বা মৃত্যুদিনকে আড়ম্বর সহকারে পালনের বিধান নেই। অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে মহানবির এই জন্মদিনটিকে বিশেষ প্রার্থনা, দোয়ার মাধ্যমে তাই উদ্‌যাপন করা হয়। ইংরাজী ৫৭০ মতান্তরে ৫৭১ খৃষ্টাব্দে মা ফতেমার গর্ভ থেকে মহানবি মক্কার এক পাহাড়ী উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন। আসলে আরবি মাস "রবিউল আউয়াল"-এর ১২ তারিখে সোমবার হজরত মহম্মদ জন্মগ্রহণ করেন। তাই এই দিনের প্রার্থনাকে বারোর প্রার্থনা বা "ফতেহা দোয়াজ দাহাম" বলা হয়।

আর একটি কথা। "রবিউল" শব্দের আরবিতে অর্থ হোল বসন্ত বা চিরসবুজ। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন যে মক্কাসহ গোটা আরব ভূখণ্ড ছিল মরুময়। কিন্তু মা ফতেমার গর্ভে মহানবি আসার সময় থেকে গোটা প্রাকৃতিক পরিবেশ সেখানে পাল্টে যায়। সবুজে সবুজে গোটা এলাকা ভরে যায়। গাছে গাছে দেখা দেয় রকমারী ফুল ও ফলের সমারোহ। মহানবির পবিত্র জন্মদিনে তাই বিশ্বজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই বোনরা সর্ব্বশক্তিমানের কাছে দোয়া করেন, প্রার্থনা করেন বিশ্ববাসীর সুখ--শান্তি সমৃদ্ধির জন্য, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এক পৃথিবীর জন্য। এবারেও, এই ২০২৪ সালেও, ফতেহা দোয়াজ দাহামে তার কোনই অন্যথা হবে না। 

অনেকেই ফতেহা দোয়াজ দাহাম ও ফতেহা ইয়াজ দাহাম এই দুইটিকে এক করে ফেলেন।ইয়াজ দাহাম কিন্তু ফরাসী শব্দ ।এর অর্থ হলো এগারোতম দিন ।এটি হোল হজরত কাদের জিলানির ওফাত দিবস।হিজরি পাঁচশ একষট্টি সালের এগারোই রবিউস সানি ওনার এন্তেকাল হয়।তাঁর স্মরণে বিশ্বজুড়ে এইদিন প্রার্থনা করেন শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য ।পনেরোই অক্টোবর দুহাজার চব্বিশে এবারে সেই ফতেহা ইয়াজ দাহামের দিন।আর দুহাজার চব্বিশ সালের ষোলই সেপ্টেম্বর ছিল ফতেহা দোয়াজ দাহামের দিন।

আমরা জানি যে আমরা আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার বিস্ময়কর বিজয় যাত্রার যুগে বসবাস করছি। তবুও আমরা বোলবো যে মহানবি হজরত মহম্মদের ৫৭০/৫৭১ খৃষ্টাব্দে জন্মের পূর্ববর্তী সময়কাল ও আজকের যুগের তুলনামূলক বিচারে

কিম্বা পরমপূজ্য হজরত কাদের জিলানির পাঁচশ একষট্টি হিজরিতে ওফাত দিবসের বিচারে, ক্ষুধা--দারিদ্র্য--বেকারী--হানাহানি, ইত্যাদির দৃষ্টিকোণে, আমরা এখন মোটেও কোন ভালো অবস্থায় নেই। বরং বলা যায় যে আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক উন্নততর অবস্থানে থাকলেও, আজো আমরা কার্যতঃ পড়ে আছি প্রাক--মহানবি--জন্মকালের আগের পরিস্থিতির মধ্যে। কি আমাদের রাজ্যপরিস্থিতি, কি আমাদের জাতীয় পরিস্থিতি, কি আমাদের বিশ্বপরিস্থিতি, সব কিছুর নিরীখে আমরা এই কথাই বলতে পারি।

প্রথমেই আমরা ধরি আমাদের রাজ্য পশ্চিমবাংলার অবস্থার কথা। আমাদের কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছিলেন--

"ধনধান্যে পুষ্পে ভরা,

আমাদের এই বসুন্ধরা।"

কিন্তু সেই "ধনধান্যে পুষ্পে ভরা বসুন্ধরা" আজ শশ্মানে পরিণত হয়েছে। কৃষি--শিল্প সমস্ত কিছুই আজ শেষ। বেকারীর পাহাড় এই রাজ্যে। হাজারো রকমের "ডোল" দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে অমূক শ্রী তমুক শ্রী ইত্যাদির নামে। সীমাহীন দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ণ আজ এই রাজ্যে। দুর্বৃত্তদের হাতে মানুষ মরছে প্রতিদিন নির্বিচারে। দুর্নীতি জেনে ফেলেছিল বলেই আর. জি. কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসককে খুন হতে হয়েছে। আজও তার কিনারা হয়নি। সরকারের প্রচার মাধ্যমে দুবেলা বলা হচ্ছে উন্নয়ন, উন্নয়ন। আমাদের জানতে ইচ্ছা করে এই উন্নয়ন কার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন কি রিজওয়ানুয়ের বাবার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন কি হরিয়ানার গোরক্ষকদের হাতে নিহত পশ্চিমবাংলার পরিযায়ী শ্রমিক সাবিরের পরিবারের উন্নয়ন? এই উন্নয়ন কি সিঙ্গুরে জমিহারা কৃষকদের উন্নয়ন অথবা যে তরুণরা রাজ্যে শিল্পায়ণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখেছিল, এ উন্নয়ন কি তাদের উন্নয়ন? মোটেও তা নয়। এই উন্নয়ন হোল কিছু গোরু চোর, কয়লা চোর, বালি চোর, সোনা চোর, চাকরি চোর, মেছোঘেরীর মালিক, ইটভাঁটার মালিক, প্রোমোটার ও কনট্রাকটরদের উন্নয়ন। তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ দিন দিন আরও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী কখনো সংখ্যালঘু তোষণ, কখনো সংখ্যাগুরু তোষণের মাধ্যমে হিন্দু--মুসলিমে বিভাজন তৈরী করে রাজ্যে ক্ষমতায় আছে। তাদের পুতনা রাক্ষসী রাজে কর্মহীন মানুষরা এরাজ্য ছেড়ে রুটি রুজির সন্ধানে ভিন রাজ্যে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে অপুষ্টি, অর্ধাহার, অস্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ, ইত্যাদিতে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ মারা যাচ্ছে অকালে। আবার কেউ কেউ উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীদের আক্রমণের শিকার হয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসছে শ্মশান শয্যায় বা গোরস্থানে। 

তাই এবারে ফতেহা ইয়াজ দাহামে বা দোয়াজ দাহামে মোমিন ভাইদের প্রার্থনা হবে পশ্চিমবাংলা যেন ধাপ্পাবাজি "লক্ষ্মীরভাণ্ডার"-এ পরিণত না হয়ে সত্যিকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে পরিণত হয়। যেন কৃষি, শিল্প, সামাজিক পরিবেশ সব কিছুতেই এই রাজ্যে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রকৃত বাতাবরণের আবহে যেন কবিগুরুর পদধূলি ধন্য বাংলা "সোনার বাংলা"য় পরিণত হয়। সমৃদ্ধিতে পশ্চিমবাংলা আগামী দিনে ভরে উঠুক, এটাই হোক এই দুই দিবসের আবেদন ।

ঠিক একইভাবে এই পবিত্র দিনদুইটিতে সর্ব্বশক্তিমানের কাছে তাঁদের প্রার্থনা হোক ভারতের স্থিতি, স্থায়িত্ব, ও সমৃদ্ধি নিয়ে। ইতিহাস সাক্ষ্যদেয় যে আমাদের এই মহানদেশ একা হিন্দুর নয়, একা মুসলমানের নয়, একা খৃষ্টানের নয়, এই দেশ হোল হিন্দু--মুসলিম--বৌদ্ধ--খৃষ্টান সকলের। বহুত্ববাদী সংস্কৃতির যে ধারা অশোক--আকবর--দারাশিকো--বিবেকানন্দ--রবীন্দ্রনাথ--কাজী নজরুল প্রমুখের হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে, সেই ধারা আজ আমাদের দেশে বিপন্ন। আমাদের দেশে আজ চলছে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি। ফলে এদেশে আজ মানুষ গৌণ। মুখ্য হোল তার ধর্মীয় পরিচয়। কোথাও এখন এই আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষের কোথাও কোথাও একজন মানুষের জীবনের চেয়ে একটি গোরুর মূল্য অনেক বেশী। কোথাও রামের নামে, কোথাও রহিমের নামে হচ্ছে নির্মম নিষ্ঠুর গণহত্যা। আমাদের জন্মভূমি ভারতবর্ষ এই গভীর সংকটের হাত থেকে মুক্ত হোক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিমণ্ডল পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক, এটাই হোক সকল মোমিনের দোয়া। 

আমাদের দেশ ঐতিহ্যগতভাবে বরাবর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, বর্ণ বৈষম্যবাদ বিরোধী ও ঔপনিবেশিকতাবাদ বিরোধী। কিন্তু সেই মহান আদর্শ থেকে বিচ্যূত হয়ে আমাদের দেশের বর্তমান সরকার এখন সাম্রাজ্যবাদীদের তাঁবেদারে পরিণত হয়েছে। এদেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সকল মানুষ জাতিধর্ম নির্বিশেষে ভারত সরকারের এই লেজুড়বৃত্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন। তাঁদের এই লড়াই যেন সফল হয় এবং এই লড়াই-এর চাপে যেন বর্তমান দিল্লীর সরকার বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হয়, এটা হোক সকলের ঐ দিন দুইটিতে নমাজের শেষে মোনাজাত। 

পরিশেষে, আমাদের রাজ্য ও আমাদের দেশের মত গোটা বিশ্ব পরিস্থিতিও আজ খুব জটিল। সাম্রাজ্যবাদ ও সংকীর্ণ ধর্মীয় মৌলবাদ আজ রক্তের বন্যায় গোটা পৃথিবীকে আজ রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে। কোথাও হিন্দু মৌলবাদ, কোথাও বৌদ্ধ মৌলবাদ, কোথাও খৃষ্টান মৌলবাদ, কোথাও ইহুদি মৌলবাদ ধর্মের দোহাই পেড়ে এই কাণ্ড করছে। মায়ানমারে বৌদ্ধ মৌলবাদীরা মুসলিম হবার অপরাধে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের রক্তে সেদেশের মাটিকে রক্তে লাল করে দিচ্ছে। আবার সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যথা আফগানিস্থান, সিরিয়া, আলজেরিয়া প্রমুখ দেশে উগ্র ইসলামিক মৌলবাদ ইসলামিক স্টেট নাম ধরে বা আফগানিস্থানে তালিবান নাম ধরে শুধু অমুসলিমদেরকেই নয়, সুস্থ চিন্তার মুসলিম ভাইবোনদেরকে খুন করছে। ভারতবর্ষে দিকে দিকে উগ্র হিন্দু মৌলবাদীরা খৃষ্টান ও মুসলিমদের রক্তে যমুনা--গঙ্গা--সবরমতীর তীরকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। উত্তরপূর্ব্ব ভারতে উগ্র খৃষ্টান আধিপত্যবাদ ও উগ্র হিন্দু মৌলবাদীদের দ্বন্দ্বে মণিপুরসহ বিভিন্ন সবুজ পাহাড় আজ রক্তে লাল। সংকীর্ণ মুসলিম বিদ্বেষের দৃষ্টিকোণে উগ্র ইহুদি মৌলবাদ জর্ডানের তীর ও গাজার প্রান্তরকে লালে লাল করে দিচ্ছে মানুষের রক্তে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার সংকীর্ণ তেলের রাজনীতির স্বার্থে ইসরায়েলকে মদত করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে তৃতীয় মহাযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরী করছে। ইরাণ, লেবালন প্রমুখ দেশ মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগ্রামীদের পাশে সংগত কারণেই দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ প্যালেস্টাইনের পক্ষে থাকলেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ইসরায়েল মরীয়া হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। লজ্জার কথা যে আমাদের দেশের ঐতিহ্যগত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভারত সরকার ইসরায়েল ও আমেরিকার এই যুদ্ধ প্রয়াসকে সমর্থন করছে। এক কথায় বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা আজ বিপন্ন। 

এই পরিস্থিতিতে গোটা পৃথিবীকে বাঁচাতে পবিত্র ফতেহা দোয়াজ দহমের ও ইয়াজ দাহামের দিনে, এবারে মোমিন ভাইরা অবশ্যই প্রার্থনা করবেন সাম্রাজ্যবাদ ও সব রকমের ধর্মীয় মৌলবাদের নিশ্চিত পরাজয় ও মানবতাবাদ এবং বিশ্ব শান্তিরবাদের তথা প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগ্রামের জয়ের লক্ষে, এ আমাদের দৃঢ় আশা ও প্রত্যয়। 

 

      

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

০৮:২৯ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ মঙ্গলবার

মধ্যপ্রাচ্য: শান্তির সন্ধানে

মধ্যপ্রাচ্য: শান্তির সন্ধানে

মধ্যপ্রাচ্য: শান্তির সন্ধানে

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

 

আজ থেকে ৮৫ বছর আগে উগ্র জাতীয়তাবাদের তথা ইহুদি বিদ্বেষবাদের পতাকা তুলে যেভাবে নাৎসী জার্মানী ইউরোপের বুকে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে ছিল এবং সেই যুদ্ধের দাবানলে গোটা বিশ্ব পুড়েছিল, ঠিক সেইভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদতে উগ্র জাতীয়তাবাদ তথা মুসলিম বিদ্বেষবাদের পতাকা তুলে ইসরায়েল আজ মধ্যপ্রাচ্যে সর্ব্বনাশা যুদ্ধের আগুণ জ্বেলেছে এবং সেই আগুণ সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্খা দেখা দিয়েছে। আমেরিকা--ইসরায়েলের এই রক্তহোলি খেলার নেশা সারা দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষকে চিরতরে মিটিয়ে দিতে হবে--এটাই হোক চন্দ্র--সূর্য--গ্রহ--তারা--আকাশ--বাতাস--সাগরের তরঙ্গমেলা, সবারই এক আওয়াজ।

কবিগুরুর কথার প্রতিধ্বনি দিয়ে বলতে হয়, "মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে"--এটাই হোল প্রত্যেক মানুষের মনের কথা। কোন মানুষই মরতে চায় না। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সুরে প্রকাশ্যে--অপ্রকাশ্যে সব মানুষই বলতে চায়, "তোমার দেওয়া এই বিপুল পৃথিবী সকলে করিব ভোগ।" কিন্তু, তবুও আমরা দেখছি যে নির্বিচারে বছরের পর বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার তাঁবেদার ইসরায়েলের হাতে মানুষ মরছে। তবু মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ কিন্তু দমছে না। বরং, জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্যকরে মানুষ সেখানে সংগ্রাম করছে। প্রতিদিন অগণিত স্ত্রী হারাচ্ছে তাদের স্বামীকে, স্বামীরা হারাচ্ছে তাদের স্ত্রীকে, বাবা মা হারাচ্ছে তাদের সন্তানকে। 

তবু, লোহিত সাগরের তীরে, জর্ডানের কূলে, গাজার প্রান্তরে দাঁতে দাঁত চেপে, চোখের জলকে জ্বালানী বানিয়ে মানুষ লড়ছে। আসলে এই মানুষগুলি মানবতার পক্ষে লড়ছে, শান্তির লক্ষ্যে লড়ছে, ধ্বংসের বিরুদ্ধে, মৃত্যুর বিরুদ্ধে, জীবনের পক্ষে, সৃজনের স্বার্থে লড়ছে। অনেকে ভাবের ঘরে চুরি করেন। তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের বিবাদমান পক্ষগুলিকে, অর্থাৎ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, ইসরায়িলী আগ্রাসনবাদ এবং এদের পাশাপাশি ইরাণ--ইয়েমেন--লেবানন--প্যালেস্টাইনের সামরিক পদক্ষেপকে একাকার করে দেখছেন। কিন্তু, এটা মোটেও যুক্তিযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি নয়। আক্রমণ ও আত্মরক্ষা দুটো মোটেও এক বস্তু নয়। এক হতে পারে না।

এই প্রসঙ্গে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ভাবাদর্শকে এখানে তুলে ধরতে চাই। জাতিপুঞ্জের সনদে যুদ্ধকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে: "aggressive war" বা আক্রমণাত্মক যুদ্ধ এবং "defensive war" বা আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ। এই সনদ অনুযায়ী আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ বৈধ। অবৈধ হোল আক্রমণাত্মক যুদ্ধ। আক্রমণাত্মক যুদ্ধের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জের সনদে যৌথ নিরাপত্তা বা "Collective Security"-র কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, জাতিপুঞ্জের সনদ অনুযায়ী বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে, আক্রান্ত দেশের পক্ষে সমস্ত দেশ যৌথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

আজকের মধ্যপ্রাচ্যের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সঠিক বিশ্লেষণ করতে গেলে জাতিপুঞ্জের সনদের এই আলোকে সকলকে তা করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে আজ বিধ্বংসী যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং এই আঞ্চলিক যুদ্ধ বা "Regional war" একটি বিশ্বযুদ্ধ বা "World war" -এর চেহারা নিতে পারে। কিন্তু কথা হোল যে মধ্যপ্রাচ্যে এই বিধ্বংসী যুদ্ধের আবহে প্রকৃতপক্ষে আক্রমণকারী কে এবং আক্রান্তই বা কে? একথা বলার কোন অপেক্ষাই রাখে না যে মধ্যপ্রাচ্যে আক্রমণকারী হোল মার্কিন মদতপুষ্ট ইসরায়েল। আর আক্রান্ত হচ্ছেন প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী জণগন। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বারে বারে ঘোষণা করেছে যে মার্কিন মদতপুষ্ট ইসরায়েলই হোল আক্রমণকারী, আর প্যালেস্টাইনী জনগণ হোল আক্রান্ত। 

এতে আমেরিকা--ইসরায়েল খুবই অসন্তুষ্ট জাতিপুঞ্জের উপরে। জাতিপুঞ্জের কোন কর্মকর্তাকে ইসরায়েল তার ভূখণ্ডে ঢুকতে দিচ্ছে না। এমনকি জাতিপুঞ্জের মহাসচিব এ্যাণ্ডোনিও গুতেরেসকে ইসরায়েল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার আন্তর্জাতিক সংগঠন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকেও সে চ্যালেঞ্জ করছে। কারণ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও তার মহাসচিব গুতেরেস প্যালেস্টাইনবাসীর স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করছেন। বিশ্বের একশ ছেচল্লিশটি দেশ প্যালেস্টাইনকে সার্ব্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নরওয়ে সহ ইউরোপের তিনটি দেশ তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বীকৃতি দেয়নি উগ্র মুসলিম মৌলবাদীদের সমর্থনপুষ্ট তথা মার্কিন উচ্ছিষ্টভোগী বর্তমান বাংলাদেশ সরকার তথা তার প্রধান ইউনুস।

আর দুর্ভাগ্যের কথা হোল যে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ বরাবর জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পাশে থেকেছে। কি ১৯৬০ সালের কঙ্গোর প্রশ্নে, ভিয়েৎনাম প্রশ্নে বাংলাদেশ প্রশ্নে, সব সময়ই আমাদের জনগণ ও সরকার জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পাশে থেকেছে। পণ্ডিত নেহেরুর ভাষায়, "Where freedom is menaced and justice threatened, we cannot be and shall not be neutral." অর্থাৎ স্বাধীনতা যেখানে বিপন্ন, মানব অধিকার যেখানে পদদলিত, সেখানে আমরা নির্লিপ্ত থাকতে পারি না, নির্লিপ্ত থাকবো না। বস্তুতঃপক্ষে, এযাবৎকালের যাবতীয় ভারত সরকার প্যালেস্টাইন মুক্তি আন্দোলনের পাশে থেকেছে। নরেন্দ্রমোদী সরকারই তার ব্যতিক্রম। এই সরকার প্যালেস্টাইনে ইসরায়েল--মার্কিন জোটের নির্বিচার গণহত্যাকে মদত করছে। এটা আমাদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিদেশ নীতির পরিপন্থী। 

আমরা বিশ্বাস করি যে বিশ্বজনমতের চাপ তথা ভারতবাসীর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মেজাজের চাপ মোদী সরকারকে বাধ্য করবে এই ভ্রান্ত পথ থেকে সরে আসতে। ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আবহে ইরাণ, লেবালন, ইয়েমেন প্রভৃতি দেশ রণাঙ্গনে এসে গেছে। সাম্রাজ্যবাদের দালাল কিছু লোক সংকীর্ণ ধর্মীয় মৌলবাদী দৃষ্টিকোণে কুৎসা করছে যে " মুসলমানরা সব এক হয়ে জাতের টান টানছে।" এটা একটা বর্বরসুলভ মন্তব্য। মধ্যপ্রাচ্যে "মুসলমানরা সব এক হয়ে জাতের টান টানছে" না। তা যদি হবে তাহলে ঢাকার মসনদে বলে থাকা ঐ মার্কিন দালালটা (ইউনুস) কি? ওটা কি হিন্দু? না বৌদ্ধ? না খৃশ্চান? ওটা কি তথাকথিত ধর্মসূত্রে মুসলিম নয়?

আসলে হিন্দু--মুসলিম--বৌদ্ধ--খৃশ্চান--কোন জাতের বা ধর্মের প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হোল মানবতাবাদের। প্রশ্নটা হোল মানুষ নামক জাতের। আমাদের কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কথায়--

"জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে,

সে জাতির নাম মানুষ জাতি।"

"মুসলমান" নয়, খৃশ্চান নয়, বৌদ্ধ নয়। মানুষ নামক এই জাতিটার অস্তিত্ব আজ মার্কিন--মদতপুষ্ট ইসরায়েলী আক্রমণে বিপন্ন। এই আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনের স্বপক্ষে জাতিপুঞ্জের সনদের যৌথ নিরাপত্তা বা "Collective Security"-র নীতির ভাবাদর্শে ইরাণসহ বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন বিভিন্ন দেশ আগ্রাসী ইসরায়েল--আমেরিকার বিরুদ্ধে আক্রান্ত প্যালেস্টাইনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনে আরও বিভিন্ন দেশ তার পাশে এসে দাঁড়াবে। তার পদধ্বনি স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। 

উল্লেখ্য যে ১৯৩৯ সালে হিটলার যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে, তখন League of Nations ও নেই, আবার United Nations ও উদ্ভূত হয়নি। কিন্তু যৌথ নিরাপত্তার আদর্শ তখন মানুষের ভাবাদর্শের জগতে আত্মপ্রকাশ করেছে। তারই ভিত্তিতে বিশ্ববাসী সহ সারা পৃথিবীর নাৎসী বিরোধী--ফ্যাসিবিরোধী দেশসমূহ আক্রান্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আজ সারা পৃথিবীর সকল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশ জাতিপুঞ্জের যৌথ নিরাপত্তা নীতির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্যালেস্টাইন মুক্তিসংগ্রামের পাশে দাঁড়িয়েছে ও দাঁড়াচ্ছে। বিশেষতঃ, শিয়া--সুন্নি বিরোধের সুযোগে ইরাণ--ইরাক বিভাজন তৈরী করে ওয়াশিংটন সাদ্দাম হোসেনকে অপসারিত করে খুন করেছিল ও মধ্যপ্রাচ্যকে নিষ্কন্টক করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সদ্য প্রতিষ্ঠিত শিয়া--সুন্নি প্রধান ইরাণ--ইরাক বোঝাপড়া সাম্রাজ্যবাদীদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ওরা আজ আরও মরীয়া। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলী--মার্কিন হানার তীব্রতা তারই প্রমাণ। এ ওদের দোজক যাত্রার, নরক যাত্রার পূর্বাভাষ। ভিয়েৎনাম, বাংলাদেশ, সর্বত্রই সাম্রাজ্যবাদীরা এটা করেছিল, মধ্য প্রাচ্যেও ওরা তাই করছে। কিন্তু, পারবে না। ওদের পরজয় ও মানবতার জয় অবশ্যম্ভাবী। শুধু সময়ের কিছু অপেক্ষা। 

 

      

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

০১:৫৫ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৪ রোববার

আর এক নাসেরকে চাই

আর এক নাসেরকে চাই

আর এক নাসেরকে চাই

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

 

নাস্তিক্যবাদীরা, যেমন চার্বাক, কালমার্কস, ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস, নেলসন ম্যাণ্ডেলা ধর্মকে সমাজের বুকে যত অনাসৃষ্টির মূল হিসাবে দেখেছেন। আবার, নাজিম হিকমৎ, নাসের, ইয়াসের আরাফত, মহাত্মা গান্ধী, সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফুর খান, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, কাজী নজরুল ইসলাম, ডঃ রাধাকৃষ্ণান, প্রমুখ আস্তিক্যবাদী চিন্তাবিদরা, ধর্মকে মানব সেবার একটি বলিষ্ঠ মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করেছেন।

আমরা এখানে এই উভয় বক্তব্য নিয়ে ইতিহাসের কষ্ঠিপাথরে বিচার করতে চাই। প্রথমেই নাস্তিক্যবাদী ভাবধারা নিয়ে আলোচনা করা যাক। আধুনিক যুগে বিশ্বজুড়ে একটা প্রচার বা অপপ্রচার রয়েছে যে কমিউনিস্টরা উগ্র বাস্তুবাদী। তাঁরা ধর্মকে মানেন না। তাঁদের মতে কার্ল মার্কস ধর্মকে আফিঙ বলেছিলেন। তাঁর ভাষায়, "Religion is the Opium of the masses" স্বভাবতঃই, কার্ল পপার সরোকিন, কিংসলে ডেভিস প্রমুখ চিন্তাবিদরা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ তথা মার্কস্‌বাদকে আক্রমণ করে বলেছেন যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কোথাও প্রতিষ্ঠিত হলে, সেখানে নাস্তিক্যবাদই প্রতিষ্ঠিত হবে। আস্তিক্যবাদের বিন্দু বিসর্গের অস্তিত্ব থাকবে না।

তাঁদের ধারণাকে আরও বদ্ধমূল করেছে ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় ট্রটস্কি ও তাঁর অনুগামীরা যে নৈরাজ্যবাদী কাণ্ডকারখানা ঘটান, তার ফলে। ট্রটস্কি ও তাঁর অনুগামীরা কার্ল মার্কসের উল্লিখিত উদ্ধৃতি তুলে দেশজুড়ে মঠ--মসজিদ--গীর্জা, সকল ধর্মস্থানগুলিকে ভাঙ্গচূর করা শুরু করেন। তাঁরা বলেন যে এই সব প্রতিষ্ঠানগুলি শোষণের আখড়া। তাই এগুলিকে ধূলিস্যাৎ করে দিতে হবে। ব্রিটেন ও পশ্চিমী মদতে ক্ষমতাচ্যূত বুর্জোয়ারা বিষয়টিকে সম্বল করে বলশেভিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব সংঘটিত করে এই সরকারকে উৎখাত করার উদ্যোগ নেন।

কমরেড লেনিন ও কমরেড যোসেফ স্টালিন বলশেভিক ব্যবস্থার এই অস্তিত্ব সংকটে এগিয়ে আসেন এবং ট্রটস্কি ও তাঁর অনুগামীদেরকে নৈরাজ্যবাদী আখ্যা দিয়ে তাঁদের তত্ত্ব মার্কস্‌বাদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, জোরালো ভাষায় এই অবস্থান নেন। বলশেভিক বিপ্লবের দিনগুলিতে এই দুই বলশেভিক নেতা অনুধাবন করেছিলেন যে অগণিত ধর্মাচরণকারী মানুষ, বৌদ্ধ--খৃশ্চান--মুসলিম--ইহুদি নির্বিশেষে, বলশেভিকদেরকে খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। তাঁদের সহায়তায় তাঁরা বিপ্লবের সময় ধর্মস্থানগুলিতে আশ্রয় পেয়েছিলেন। জীবনের এই বাস্তব অভিজ্ঞতাকে তাঁরা ভোলেননি। তাঁরা এই বাস্তব অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে দ্বৈত ঘোষনা করেন একই সঙ্গে: (১) যাঁরা ধর্মে বিশ্বাস করেন না, তাঁদের সেই অধিকার থাকবে নাস্তিক্যবাদী বক্তব্য প্রচার করার। (২) যাঁরা আস্তিক্যবাদী অর্থাৎ ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাঁদের অধিকার থাকবে ধর্মাচরণ করার ও ধর্মীয় প্রচার করার। ১৯১৭ সালের লেনিন সংবিধানে, ১৯৩৬ সালের স্টালিন সংবিধানে, ১৯৭৬ সালের ব্রেজনেভ সংবিধানে একই সাথে পাশাপাশি এই দুই অধিকারকে স্বীকৃতি জানানো হয় এবং এটা করে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর ক্ষমতাচ্যূত বুর্জোয়াদের অপচেষ্টায় কমরেড লেনিন ও কমরেড স্টালিন জল ঢেলে দেন। 

আসলে মার্কসবাদ হোল তত্ত্ব। লেনিনবাদ ও স্টালিনবাদ হোল তার রূপায়ণ। প্রখ্যাত সোভিয়েত সমাজ বিজ্ঞানী ভি. জি. আফানাসিয়েভের ভাষায়, "Leninism and Stalinism is Marism in practice." লেনিনবাদী ও স্টালিনবাদী এই দৃষ্টিকোণে সমাজতান্ত্রিক চীন থেকে শুরু করে, পূর্ব্ব ইউরোপের রুমানিয়া, আলবেনিয়া, পোলাণ্ড, হাঙ্গেরী, যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্লাভাকিয়া প্রমুখ দেশে এবং এশিয়ার বুকে কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাতিন আমেরিকায়, কিউবা, চিলি প্রমুখ দেশের সংবিধানে ধর্মীয় প্রশ্নে এই দ্বৈত অবস্থান নেওয়া হয়েছে এবং এটা করে দেশের স্থায়িত্ব ও সংহতি প্রতিটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুনিশ্চিত করা হয়েছে।

এসব সত্ত্বেও শাস্ত্রে আছে "চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী।" অর্থাৎ প্রতিটি সমাজতান্ত্রিক দেশে ধর্মাচরণের অধিকার ও ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচার করার অধিকার স্বীকৃত হলেও, এবং প্রতিটি ধর্মীয় স্থানকে সংস্কার ও সুরক্ষার ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে করা হলেও, কমিউনিস্টরা ধর্ম মানে না, তাদের শাসনে মানুষের ঐশ্বরিক সাধনা ও ভাবনা বিপন্ন--এই অপপ্রচার লাগামহীনভাবে চালিয়ে গেছে প্রতিক্রিয়াশীলরা। এর বিরুদ্ধে জননেতা হিসাবে ইসলামী দুনিয়ায় সর্ব্বপ্রথম প্রতিবাদ করেন তুরস্কের মহান সন্তান বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের প্রবক্তা তথা বিশ্ববন্দিত কবি নাজিম হিকমত। আর রাষ্ট্রনেতা হিসাবে প্রথম প্রতিবাদ করেন আরবজাতীয়তাবাদের প্রাণপুরুষ তথা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসর ব্রিটেন--ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অকুতোভয় যোদ্ধা মিশরের রাষ্ট্রপতি আব্দেল নাসের।

প্রথমে নাজিম হিকমতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে দুই বৃহৎ শক্তিধর দেশের আর্বিভাব হয়। যথা সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ধনতান্ত্রিক দুনিয়ার নেতা আমেরিকা। সোভিয়েত ইউনিয়নের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্রের প্রসার ঘটানো ও ক্ষুধা--দারিদ্র্য--বেকারী--অপুষ্টি মুক্ত এক পৃথিবী গঠন করা। অন্যদিকে আমেরিকার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় সমাজতন্ত্রের অগ্রগতিকে রুখে দেওয়া ও ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিশ্বজোড়া অস্তিত্বকে রক্ষা করা। প্রসঙ্গতঃ এখানে উল্লেখ করা দরকার যে গোটা পুঁজিবাদী বিশ্ব টিঁকে ছিল আরব দুনিয়ার তৈল সম্পদের উপর। অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নিরীখে এই অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার কাছে। কারণ, এখানকার খনিজ তেলের ভাণ্ডার তাদের অর্থনীতির অস্তিত্বের তাগিদে খুব জরুরী।

আরব জাতীয়তাবাদের নেতা নাসের এবং তুরস্কের গণ আন্দোলনের মুখ নাজিম হিকমৎ উভয়েই তুরস্কসহ গোটাভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ও পশ্চিম এশিয়াসহ সমগ্র ইসলামী দুনিয়ার জনগণের ঘুমকে ভাঙিয়ে দিলেন। উগ্র মুসলিম মৌলবাদী শক্তিগুলিকে, অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছ উলেমাদেরকে এবং সর্ব্বোপরি তার উচ্ছিষ্টভোগী "Muslim Brotherhood"-এর সভ্য-সমর্থক--নেতাদেরকে কিনে নিয়ে আমেরিকার গোয়েন্দা বাহিনী সি. আই. এ প্রচারের বন্যা বইয়ে দেয় যে কমিউনিস্টরা ধর্ম মানে না, ওরা কাফের। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব্ব ইউরোপে কাফেররাজ প্রতিষ্ঠিত। ওখানে ইসলাম বিপন্ন। আর এদের হয়েই ওকালতি করছেন নাজিম হিকমত, আব্দেল নাসের ও তাঁদের অনুগামীরা। সুতরাং ওদের কথায় কান নয়। ইসলামকে বাঁচাতে গেলে আমেরিকার পাশেই থাকতে হবে।

তুরস্ক ও মিশরে উভয় দেশেই ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলিম ভাইবোনদেরকে এই অপপ্রচার বিভ্রান্ত করে। কমরেড নাজিম হিকমত ও অন্যান্য বামপন্থী সহযোদ্ধাদের নিয়ে মরণপণ সংগ্রাম চালান প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে। সোভিয়েত ইউনিয়নও যথাসাধ্য সাহায্য করে। উপায়হীন হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ রাষ্ট্রপতি হ্যারিট্রুম্যানের নেতৃত্বে তুরস্কে সামরিক হস্তক্ষেপ করে। হাজার হাজার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামীর রক্তে ভূমধ্যসাগরের জল ও আঙ্কারার মাটি লালে লাল হয়ে যায়। নিরুপায় কমরেড নাজিম হিকমত ও তাঁর সহযোদ্ধারা সোভিয়েত ইউনিয়নে আশ্রয় নেন। 

তুরস্কে বামপন্থী ও কমিউনিস্টদের এই বিপর্যয়ে হ্যারী ট্রুম্যান আহ্লাদে আটখানা হয়ে সদর্পে ঘোষণা করেন যেখানে যেখানে "স্থিতাবস্থাকে" অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে "গায়ের জোরে" (অর্থাৎ গণ জোয়ারে) উৎখাত করার চেষ্টা হবে, "আমেরিকা সেইখানে সেই অপপ্রয়াসকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবে।" কিন্তু, না, তাঁর সেই হুংকারকে কাগুজে বাঘের হুংকারে পরিণত করেছে ইতিহাস। রাষ্ট্রপতি নাসের গোটা মিশর তথা আরব জণগণকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে সক্ষম হন। তাঁদেরকে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির অভিজ্ঞতার আলোকে বোঝাতে সক্ষম হন যে ধর্ম ও ধর্মান্ধতা এক নয়। কমিউনিস্টরা ধর্মান্ধতার বিরোধী। ধর্মের বিরোধী নয়। বরং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার উচ্ছিষ্ট দিয়ে উলেমা ও "Muslim Brotherhood"-কে পেট ভরিয়ে সোভিয়েত বিরোধী ও কমিউনিস্ট বিরোধী অপপ্রচার করছে। একদিকে বিপুল গণসমর্থন ও সেইসঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাসের এই মার্কিন দালাল, উলেমা ও "Muslim Brotherhood"-সভ্যদের মাজা ভেঙ্গে দেন। "Muslim Brotherhood"- CIA-এর চক্রান্তে নাসেরকে খুন করতে আলেকজান্দ্রিয়ার সভায় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। কিন্তু মানুষের আশীর্বাদে তিনি বেঁচে যান। 

এরপর, মার্কিন দালালদের মাজা ভাঙার পর নাসের খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদেশ সমূহের মাজা ভাঙতে মনোনিবেশ করেন। যুগ যুগ ধরে পশ্চিমী দুনিয়া সুয়েজখালকে ব্যবহার করে মুনাফা লুটতো। নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করলেন। ক্ষিপ্ত ব্রিটেন মার্কিন মদতে ১৯৫৬ সালে মিশর আক্রমণ কোরলো। ক্রেমলিন নাসেরের পাশে দাঁড়ালো। পশ্চিমী দুনিয়া লেজগুটিয়ে পালালো। ইসলামী দুনিয়াসহ সারা পৃথিবীর মানুষরা দেখলেন কারা হিন্দু--মুসলিম--বৌদ্ধ--খৃশ্চান নির্বিশেষে মানুষের ন্যায়সংগত সংগ্রামের পাশে থাকে। 

সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, মানবতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পক্ষে ইসলামী দুনিয়ার আরো অনেকে লড়েছেন। এঁদের মধ্যে একমাত্র প্যালেস্টাইন মুক্তি যুদ্ধের মহানায়ক ইয়াসের আরাফৎ ছাড়া আর সবাই শহীদ হয়েছেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের জনক শেখ মুজিবর রহমান, ১৫ই আগস্ট, আফগানিস্থানের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি ডঃ নজিবুল্লাকে ১৯৯৬ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর, ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনকে ৩০শে ডিসেম্বর ২০০৬ সালে পবিত্র ঈদের ভোরে, ২০শে অক্টোবর ২০১১ তে লিবিয়ার গদ্দাফি এবং অতি সম্প্রতি ৩১শে জুলাই ২০২৪ তারিখে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নির্দেশে খুন করা হয়েছে হামাস নেতা ইসমাইন হানিয়েকে। রক্তের বন্যায় গাজার মাটি জর্ডানের তীর মার্কিন মদতপুষ্ট ইসরায়েলের আক্রমণে লালে লাল হয়ে উঠছে। পদ্মা, মেঘনা, গঙ্গার জল বামগণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের লাশে ভরে যাচ্ছে। ধর্মান্ধ তালিবানরা ও সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে নীরব।

কিন্তু বিবেকবান মানুষরা হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃশ্চান নির্বিশেষে দুনিয়া জুড়ে আওয়াজ তুলেছেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক, উগ্র ইহুদি জঙ্গীবাদ তথা ইসরায়েলী জঙ্গীবাদ ধ্বংস হোক, ধর্মান্ধ মধ্যযুগীয় তালিবানরাজ ধ্বংস হোক: নাজিম-নাসের-আরাফত--বাঘাসিদ্দিকী--ইসমাইল হানিয়ের নির্দেশিত পথে নারী--পুরুষ--হিন্দু--মুসলিম--খৃশ্চান--বৌদ্ধ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের মানব অধিকার রক্ষিত হোক। এঁদের মতই লুমুম্বা--আলেন্দে--নেরুদা--চে গুয়েভারা--সুকর্ণো, নত্রুমা--নেহেরু--গান্ধী--সীমান্তগান্ধী আব্দুল গফুর খান, মৌলানা আবুল কালাম আজাদও একই আদর্শে লড়েছেন। সেই আদর্শকে রূপায়ণে সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরা মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এক হোন, সোচ্চার হোন। এটাই সময়ের দাবী।

 

 

 

      

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

০৮:৩৯ এএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার

ছাত্রদের অবদান

ছাত্রদের অবদান

ছাত্রদের অবদান

ডক্টর মোঃ বদরুল আলম সোহাগ 

 

গত জুলাই থেকে এই বাচ্চারা যুদ্ধ করছে, মার খেয়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে, নিজের ভাই-বন্ধু কে চোখের সামনে - হাতের উপর মরতে দেখেছে, এখন পর্যন্ত দেড় মাসের কাছে হতে যাচ্ছে, তারা ঘরে একদন্ড বসতে পারেনি।রাষ্ট্র 

সংস্কার করতে কাজ করছে।

 একটা অসুস্থ ফোন জেনারেশন আপনাদের সুস্থ দেশ আর সমাজ উপহারের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। 

কি অদ্ভুত তাইনা?

 

কি একটা অদ্ভুত জেনারেশন না? ওদের ফ্যান এর নিচে ক্লাস করতে বলেন কত বাহানা, এসি করা ক্লাস রুম লাগবে । কিন্তু কি সুন্দর ৩৫/৩৬ দিন রাস্তায় আন্দোলন করলো। এখন আবার রোদে পুরে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছে। 

এরা কি জানেনা বলেন?

এরা যুদ্ধ করলো। তবুও ক্লান্ত হয়নি এখন সুন্দর আবার দেখেন ট্রাফিক সহ পুরো দেশ সংস্কার করছে কোনো বাজেট ছাড়াই। 

 

এদের ট্রাফিকের বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই তবুও দেখেন সুন্দর সব রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করছে। 

 

কি অদ্ভুত না।গোটা একটা জেনারেশন যারা অনলাইনে ডুবে থাকত তারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করল,দেশ স্বাধীন করল।এখন দেশ সংস্কারে লেগে পড়েছে। স্বমনয়ক রা সরকার গঠন করছে ।ছাত্ররাই কি সুন্দর ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতেছে,, বাজার তদারকি করছে,চাঁদাবাজ, ঘুষখোর দের চিহ্নিত করছে,রাস্তায় কি সুন্দর দেয়াল লেখন করছে,ক্যালিগ্রাফি, কেউ আবার খাবার -পানি দিয়ে তাদের এপ্রিসিয়েট করছে,রাস্তা ঘাট পরিষ্কার করছে,, সং্খ্যা লঘু দের নিরাপত্তা দিচ্ছে, মাদ্রাসার ভাইরা মন্দির পাহারা দিচ্ছে।ডাকাত দের ড্রোন দিয়ে খুঁজছে,,সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত করছে। সবাই স্বাধীন দেশে নির্ভয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করছে,লিখছে। ভাবতেই অবাক লাগছে।কি সুন্দর!

 

বুকে ব্যাথা আবু সাঈদ আর মুগ্ধদের জন্যে আর দৃঢ় মনোবল দেশ গড়ার। 

এটা যেনো অব্যাহত থাকে।

ছিনতাই না হয়ে যায় আমাদের স্বপ্নগুলো। 

তাইলে যে শহীদ সন্তানরাও অভিশাপ দিবে।

০৩:১৩ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২৪ শনিবার

২রা জুলাই ১৭৫৭ ও আজকের আমরা

২রা জুলাই ১৭৫৭ ও আজকের আমরা

২রা জুলাই ১৭৫৭ ও আজকের আমরা

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

 

২ রা জুলাই ১৭৫৭ সাল, ইংরেজদের পদলেহী বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের পুত্র মীরনের নির্দেশে অর্থের লোভে নির্মমভাবে পিটিয়ে এবং ছুরির আঘাতে মোহাম্মদি বেগ নবাব সিরাজউদ্‌দৌলাকে হত্যা করে। ২৩শে জুন, ১৭৫৭ সাল, পলাশীর যুদ্ধ দিয়ে যে নাটকের শুরু, মাত্র নদিনের ব্যবধানে সে পর্বের সমাপ্তি। গোটা বাংলা তথা ভারতবর্ষ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পদানত হওয়ার প্রক্রিয়া দৃঢ়তর হোল। প্রায় পৌণে তিনশবার আগের ঘটনা এ সব। কিন্তু, আজও এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথম প্রহরে এর প্রাসঙ্গিকতা হোল অপরিসীম।

সেদিনও আমাদের শত্রু ছিল সাম্রাজ্যবাদ। আজও আমাদের শত্রু সাম্রাজ্যবাদ। সেদিনও বেইমান বিশ্বাসঘাতকরা চেয়েছিল সাম্রাজ্যবাদীদের পায়ে ভারতের তথা বাংলার স্বাধীনতাকে সঁপে দিতে। আজও বেইমান--বিশ্বাসঘাতক--নেমকহারামরা রয়েছে এই দানবদের পায়ের তলায় আমাদের প্রিয় দেশবাসীর স্বাধীনতা ও মানব অধিকারকে জলাঞ্জলি দিতে। পার্থক্য শুধু নামের, শুধু সাইনবোর্ডের। সেদিন আমাদের শত্রু ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। আর তার দালাল ছিল মীরজাফর, ইয়ার লতিফ, রাজা রায় দুর্লভ, উঁমিচাঁদ, জগৎ শেঠ প্রমুখ শয়তানের দল যারা কোরাণ স্পর্শ করে, শালগ্রাম শিলা হাতে করে শপথ করে বলেছিল যে তারা দেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে, নবাব সিরাজউদ্‌দৌলার পক্ষে থাকবে। আর আজ আমাদের শত্রু হোল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, এবং তার উচ্ছিষ্টভোগী তাঁবেদার হোল আর. এস. এস, হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লীগ, জামাতি ইসলামী প্রমুখরা।

প্রকাশ থাকে যে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন সময়ে মিত্র জোটের নেতা ছিল ব্রিটেন। এই মহাযুদ্ধে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসীবাদের সমাধি হয়। তাদের কবরের উপর দুই বৃহৎ শক্তিধর দেশের আবির্ভাব হয়: আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। অর্থাৎ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্রবাহিনী জিতলেও, পশ্চিমী জোটের নেতৃত্বের বদল হয়। ব্রিটেনের জায়গায় বিশ্ব জোড়া ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার নেতা হয়ে আত্মপ্রকাশ করে আমেরিকা। এক দিকে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় সারা দুনিয়ায় সমাজতন্ত্রের প্রসার ঘটানো। অন্যদিকে আমেরিকার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, সেই সমাজতন্ত্রের প্রসারকে প্রতিহত করা ও ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করা। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের পর থেকে এই পৌণে একশ বছর কাল ধরে আমেরিকা এই কাজ করে আসছে। এশিয়া আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ক্ষুধা--দারিদ্র্য--বেকারী--অনুন্নয়ন--ক্লিষ্ট দেশগুলিতে আমেরিকা এই কাজ করে আসছে।

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ এশিয়ার মধ্যেই পড়ে এবং সেও হচ্ছে এই মহাদেশের অন্যান্য সদ্য স্বাধীন দেশ গুলির মতই প্রচণ্ড আর্থ--সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। তৃতীয় বিশ্বের সমস্যাদীর্ণ দেশগুলিতে যাতে সমাজতন্ত্রের প্রসার না হয়, তারা যাতে, তাদের স্বাধীন অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের দিকে না ঝুঁকে পড়ে, তার জন্য মার্শাল প্লানের মারফৎ ওয়াশিংটন এইসব দেশগুলিকে ব্যাপক অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানের কর্মসূচী গ্রহণ করে। পাকিস্থান সহ একাধিক দেশ এই মার্কিনী ফাঁদে পা দেয় এবং তার তাঁবেদারে পরিণত হয়। দুনিয়া জুড়ে দেশে দেশে মানব অধিকারের উপর যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তাণ্ডব তাকে এরা চোখ বন্ধ করে সমর্থন করে।

কিন্তু, ভারতবর্ষ এই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী অপকৌশলের শিকার হয়নি। মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল নাসের, ঘানার নত্রুমা, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্ণো প্রমুখের মত ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করেন, যার মূল কথা ছিল সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ, ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরোধীতা করা। ১৯৬০ সালে মার্কিন কংগ্রেসে কঙ্গো সংকটের উপর প্রদত্ত এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ঘোষণা করেন--"Where freedom is menaced and justice threatend, we can not be and shall not be neutral." অর্থাৎ স্বাধীনতা যেখানে বিপন্ন, ন্যায় বিচার যেখানে পদদলিত, সেখানে আমরা নির্লিপ্ত হতে পারি না, হবো না। 

বলা বাহুল্য যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বহু প্রশ্নে পণ্ডিত নেহেরুর দল জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে অনেক দল ও মানুষের বহু মতভেদ ছিল বা রয়েছে। কিন্তু নেহেরু সরকারের বা কংগ্রেস সরকারের ঘোষিত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতির সঙ্গে, কমিউনিস্ট--অকমিউনিস্ট নির্বিশেষে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কোন মতভেদ নেই--সহমত রয়েছে। অর্থাৎ ভারতের জোট নিরপেক্ষ বিদেশনীতি হোল "Consensus policy" বা ঐক্য মতের বিদেশনীতি। তাই কি ১৯৫০ সালে কোরিয়ার সংকট প্রশ্নে, ১৯৫৪ সালে মিশরের জননেতা আব্দেল নাসেরকে মার্কিন মদতপুষ্ট Muslim Brotherhood কর্তৃক খুনের প্রচেষ্টার প্রশ্নে, ১৯৫৬ সালে সুয়েজ প্রশ্নে, ১৯৬০ ও ১৯৬১ সালে কঙ্গোর প্রশ্নে তথা প্যাট্রিস লুমুম্বাকে হত্যার প্রশ্নে, ১৯৬২ সালে কিউবার প্রশ্নে, ভিয়েৎনাম যুদ্ধ--বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম--আফগানিস্থানের সাউর বিপ্লব--ইত্যাদি প্রশ্নে ভারত সরকার যখন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, ভারতবাসী ও ভারতের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী, কমিউনিস্ট দলগুলি সরকারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা বাহুল্য যে কমিউনিস্ট নেতা ও বিশিষ্ট বাগ্মী সাংসদ কমরেড ভূপেশ গুপ্ত, ১৯৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধ কালে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত হিসাবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে জনমত ও সরকারী সমর্থন আদায়ে বেরিয়েছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ (চীনবাদে) ও জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির সমর্থনে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের হুমকি উপেক্ষা করে ভারতবর্ষ বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামে সাহায্য দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজকে যে প্যালেস্টাইনের মুক্তি সংগ্রামে এতো রক্ত ঝরছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তে ইসরায়েলকে শিখণ্ডী হিসাবে সামনে রেখে, সেই প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগ্রামকে তার জন্মলগ্ন থেকেই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে, ভারতবর্ষের সমস্ত মানুষ সমর্থন করে আসছেন। PLO নেতা ইয়াসের আরাফত ভারতবর্ষের মাটিতে এসে ভারতবাসী তথা ভারতের সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে গেছেন। 

ল্যাতিন আমেরিকার বুকে চিলির রাষ্ট্রপতি সালভাদোর আলেন্দেকে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে--সি. আই. এ কর্তৃক খুনের বিরুদ্ধে ভারতবাসী সরব হয়েছেন। সরব হয়েছেন তাঁরা ইরাকী প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে তাঁর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাবের জন্য বিচারের প্রহসন করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক ঈদের ভোরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার বিরুদ্ধে। এককথায় ভারতবাসী ও ভারত সরকারের ভূমিকা এসব ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয়। 

কিন্তু আজ গোটা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের দেশে এখন নয়া বিশ্বাস ঘাতকরা সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাস হিসাবে দেশের স্বাধীনতা, সার্ব্বভৌমিকতা, আভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতির সকল আদর্শকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। এই বিশ্বাস ঘাতকদের নামগুলো তথা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নামগুলো আলাদা। সেটা হোল যথাক্রমে উগ্র হিন্দু মৌলবাদী শক্তির ধারক ও বাহকরা অর্থাৎ বি. জে. পি --আর. এস. এস নেতারা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাণ্ডারীরা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তথা তার দোসরদের সেবাদাসগিরি করতে এদেশের বর্তমান সরকার ভারতীয় জনগণ তথা বিশ্ববাসীর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলি হেলনে, মীরজাফর পুত্র মীরণের নির্দেশে মহম্মদি বেগ একজন মানুষকে, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্‌দৌলাকে, খুন করেছিল। আর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলি হেলনে আমাদের বি. জে. পি সরকার অগণিত ভারতবাসী ও বিশ্ববাসীকে খুন করছে। 

এই সরকার আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের গৃহীত মিশ্র-অর্থনীতি বা "Mixed Economy"-র পথকে পরিত্যাগ করে অবাধ বাণিজ্যবাদনীতির পথ গ্রহণ করেছে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পথ পরিত্যাগ করেছে, পরিকল্পনা কমিশনকেই তুলে দিয়েছে। জাতীয়করণের পথকে পরিহার করে সীমাহীন বেসরকারী করণের পথে হাঁটছে। এক কথায় কোটি কোটি ভারতবাসীকে এই সরকার দেশী বিদেশী বৃহৎ পুঁজিপতিদের খামখেয়ালিপনার পায়ে সঁপে দিয়েছে। এই নেকড়েগুলোর নখ--দাঁত--থাবায় রক্তাক্ত ভারতীয় জনগণ।

অন্যদিকে, বিদেশনীতির ক্ষেত্রে এই সরকার আমাদের দেশের সহমতের যে নীতি হোল জোটনিরপেক্ষ তথা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিদেশনীতি, সেই বিদেশনীতিকে পরিত্যাগ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন দালালি করছে। তাই আমরা দেখছি যে আজ ইসরায়েলকে সামন রেখে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ প্যালেস্টাইনকে রক্তের বন্যায় যখন ভাসিয়ে দিচ্ছে, সেই নরঘাতী, নারীঘাতী, শিশুঘাতী, পাশবিকতাকে জয় সিয়ারামের চেলা, এদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্লজ্জভাবে সমর্থন করছেন। প্রকাশ থাকে যে আমাদের দেশের মাটিতে ঔরঙ্গজেবের মত কিছু উগ্র মুসলিম মৌলবাদী বা শিবাজীর মত কিছু উগ্র হিন্দু মৌলবাদীর জন্ম হলেও, এদেশ হোল মূলতঃ অশোক--আকবর--দারাশিকো--রবীন্দ্রনাথ--বিবেকানন্দ--নজরুলের মত ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের দেশ। এদেশ হোল মীরমদন--মোহনলাল--সিরাজউদ্‌দৌলার মত ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের দেশ। মীরমদন--মোহনলালরা শহীদ হয়েছেন ২৩শে জুন, ১৯৫৭, পলাশীর প্রান্তরে, আর সিরাজউদ্‌দৌলা শহীদ হয়েছেন ২রা জুলাই ১৭৫৭ মীরজাফরের কারাগারে। 

আজ হোল ২রা জুলাই ২০২৪। দীর্ঘ পৌণে দু'শোবছর ধরে ভারতবাসী অনেক বীরের রক্তস্রোত ও মাতার অশ্রু ধারার বিনিময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদেরকে পরাস্ত করে দেশকে স্বাধীন করলেন, আসুন এই শহীদ দিবসে আমরা, আজ শপথ গ্রহণ করি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের উত্তরসূরী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদেরকে এদেশের বুক থেকে উৎখাত করে ভারতবাসী তথা বিশ্বাবাসীকে জোটনিরপেক্ষতা, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা ধনতন্ত্র বিরোধীতার পতাকার নীচে সুরক্ষা দিতে। এটাই সময়ের দাবী। 

 

      

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

০১:২৯ পিএম, ১০ জুলাই ২০২৪ বুধবার

মালদায় ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির

মালদায় ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির

০৭:৩৮ পিএম, ৫ মার্চ ২০২৪ মঙ্গলবার

ইন্টার কলেজ স্টেট স্পোর্টস গেমস চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হল

ইন্টার কলেজ স্টেট স্পোর্টস গেমস চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হল

০৯:৪২ পিএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার

অন্ধ প্রতিবন্ধী যুবতীকে মারধর, নীরব পুলিশ

অন্ধ প্রতিবন্ধী যুবতীকে মারধর, নীরব পুলিশ

০৯:২৪ পিএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে অবৈধভাবে চলছে গ্যাস রিফিলিং

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে অবৈধভাবে চলছে গ্যাস রিফিলিং

০৯:১৮ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বুধবার

মালদায় মুকুলের দেখা মিলেছে আমবাগান গুলিতে

মালদায় মুকুলের দেখা মিলেছে আমবাগান গুলিতে

মালদা জেলা জগৎ বিখ্যাত আমের জন্য। ইতিমধ্যেই মুকুলের দেখা মিলেছে আমবাগান গুলিতে। শুরু হয়েছে আম গাছ স্পে থেকে পরিচর্যা

১০:৪৪ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রোববার

বিয়ের ২৪ দিনের মাথায় উদ্ধার এক যুবকের ঝুলন্ত মৃতদেহ।

বিয়ের ২৪ দিনের মাথায় উদ্ধার এক যুবকের ঝুলন্ত মৃতদেহ।

০৯:৫৮ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার

49th NTPC Raising Day Commemorated at Farakka

49th NTPC Raising Day Commemorated at Farakka

০৮:৪৯ পিএম, ৭ নভেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের জনপ্রিয়