ব্রেকিং:
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বেওয়া-২ পঞ্চায়েতের নিশিন্দ্রা গ্রামে ভোটার তালিকা ভুয়ো ভোটার। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার উদ্যোগে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা সভা। ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট এমকে ফাইজির গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সামশেরগঞ্জে পথসভা SDPI এর ফের সামশেরগঞ্জের হাউস নগর ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে পথদুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা গাড়িচালকের জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

রোববার   ১২ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২৭ ১৪৩২   ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

সর্বশেষ:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

বিজেপির শাসন ও সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ 

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল 

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২৫ ১১ ১১ ২৭   আপডেট: ৪ মে ২০২৫ ১১ ১১ ২৭

বিজেপির শাসন ও সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ 
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল 

         ব্রিটিশ ভারতে ১৮৮৫ সালে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। এটা ছিল হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান ও শিখ সহ সকল সম্প্রদায়ের একটি সম্মিলিত সংগঠন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ভারতের সমস্ত মানুষের হয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে দাবি দাওয়া উত্থাপন করার একটা 'কমন প্ল্যাটফর্ম'। মুসলমানদের একাংশ ১৯০৬ সালে গঠন করে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। নামকরণের মধ্যেই সংগঠনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট; শুধুমাত্র মুসলিম সমাজের স্বার্থ রক্ষা। মুসলিম লীগ লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। মুসলিম লীগের পাল্টা হিসেবে ১৯১৫ সালে গড়ে ওঠে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। এক্ষেত্রেও নামকরণেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, সকল ভারতীয় নয়, শুধুমাত্র হিন্দুদের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করাই হল এদের উদ্দেশ্য। ১৯২৫ সালে গঠিত হয় হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। পরাধীন ভারতে ১৯৩৫ সাল থেকে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয় সেগুলোতে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম লীগ মোটামুটি ভালো ফল করলেও হিন্দু মহাসভা কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। স্বাধীন ভারতে ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে ১৯৫১ সালে গঠিত হয় আরেকটি হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসঙ্ঘ। ১৯৮০ সাল থেকে এটিরই নাম হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। আরএসএস-বিজেপি হিন্দুদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি মতাদর্শগতভাবে কমিউনিস্টদের আর জাতিগতভাবে মুসলমানদের বিষ-নজরে দেখে। এর কারণ হল, কমিউনিস্টরা জাতি-ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন করার ঘোরতর বিরোধী এবং সবসময়ই ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সওয়াল করে। অন্যদিকে, কয়েক শত বছর ধরে মুসলমানরা হিন্দুদের প্রধান প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করছে। ধর্মভিত্তিক ভিন্নতার কারণে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তাকে বিভেদ ও বিদ্বেষে পর্যবসিত করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা এবং অহিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে রূপান্তরিত করে ভারতকে একটা মনুবাদী হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করাই হল সঙ্ঘ পরিবারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে এবং সাফল্যও পাচ্ছে। এই সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিজেপি সরকারকে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলার পাশাপাশি দেশবাসীর মধ্যে উগ্ৰ দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষ আহ্বান করতে দেখা যায়। দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হলে এবং সীমান্তে অশান্তি দেখা দিলে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা  বৃদ্ধি পায়। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
         ১৯৯৬ সালে ১৩ দিন প্রধানমন্ত্রী থাকার পর সঙ্ঘ পরিবারের সন্তান অটলবিহারী বাজপেয়ী ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে আবার সরকার গঠন করেন। কিন্তু জোট সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে সূচনা থেকেই সংশয় দেখা দেয়। সেজন্য দেরি না করে তিনি মে মাসেই রাজস্থানের পোখরানে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু যে পাকিস্তানকে ভয় দেখাতে বোমা ফাটানো হয়, সেই পাকিস্তানের অন্নের অভাব থাকলেও অস্ত্র রয়েছে যথেষ্ট। সেও একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র এবং সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ তার নিত্যসঙ্গী। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানে এখনও গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেনি। সেজন্য, সেখানে সেনাবাহিনী প্রায়ই রাষ্ট্র ক্ষমতার দখল নেয়। সুতরাং, গোলাবারুদের লড়াইয়ে পাকিস্তানের অরুচি নেই। তাই তারা পোখরানের পাল্টা বিস্ফোরণ ঘটাতে বিলম্ব করেনি। এরপর ১৯৯৯ সালের মে-জুলাইয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কার্গিলে কাজিয়া চলে আর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হয় লোকসভার অন্তর্বর্তী নির্বাচন। বিজেপির হিসাব মিলে যায় এবং তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। প্রচুর সেনার প্রাণের বিনিময়ে কার্গিল যুদ্ধে অর্জিত সাফল্য বিজেপিকে ভোট বৈতরণী পার হতে প্রভূত পরিমাণে সাহায্য করে। তবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা না থাকলেও কার্গিল যুদ্ধের কাহিনী কিন্তু সমর বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য হয়নি। শুধু তাই নয়, কার্গিল যুদ্ধের শহীদ সেনাদের জন্য কফিন কেনা নিয়েও আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটে। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে পাক-জঙ্গিরা ভারতের একটি যাত্রীবাহী বিমান অপহরণ করে কাঠমাণ্ডু থেকে কান্দাহারে নিয়ে যায়। এটাই ছিল ভারতের কোনো অসামরিক বিমান অপহরণের প্রথম ঘটনা। ২০০১-এর ডিসেম্বরে খোদ সংসদ ভবনের ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় ব্যাপকভাবে জীবনহানি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বিজেপির নেতানেত্রীরা প্রত্যক্ষভাবে এই দাঙ্গায় জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও বিস্ফোরণের অন্যতম মূল ষড়যন্ত্রী বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা এন আই এ।
         ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দশ বছর কংগ্রেসের ডঃ মনমোহন সিং পরিচালিত সরকারের আমলে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে দেখা যায়নি এবং ভারত-পাক সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক থেকেছে। কিন্তু বিজেপির নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর কাশ্মীরে একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে এবং ভারত-পাক সম্পর্কে চাপান-উতোর শুরু হয়। ভারতের ভ্রমণপ্রিয় ও 'নন- বায়োলজিক্যাল' প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিনা আমন্ত্রণেই বিরিয়ানি খেতে ইসলামাবাদ চলে যান। কিন্তু মোদীজির এই 'মাস্টার স্ট্রোক'-এর কয়েকদিন পরেই ২০১৬ সালের পয়লা জানুয়ারি 'নববর্ষের শুভেচ্ছা' জানাতে পাঞ্জাবের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে পাক-জঙ্গিরা হামলা চালায় এবং কয়েকদিন ধরে গোলাগুলি চলে। ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে জম্মু-কাশ্মীরের উরির সেনা ছাউনিতে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়। কয়েক দিনের মাথায় মোদী সরকার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে জঙ্গি হানার বদলা নেওয়ার দাবি করে। কিন্তু সেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরেও কুপওয়ারা, নাগরোটা প্রভৃতি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা হতে দেখা যায়।
         সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের এপ্রিল-মে মাসে। ঠিক তার কয়েক দিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি 'প্রেম দিবস'-এ পুলওয়ামা কাণ্ড ঘটে। ২৫০০ সেনা ও ৭৮টি গাড়ির কনভয়ের মধ্যে একজন জঙ্গি বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ে এবং ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে প্রাণ হারান প্রায় অর্ধশত সৈনিক, আহত হন আরও অনেকেই। নরেন্দ্র মোদীর আমলে ফ্রিজের মধ্যে থাকা সামান্য গোমাংসের সন্ধান পাওয়া যায় কিন্তু বিভিন্ন সেনানিবাস ও সীমান্ত সন্ত্রাসবাদী হামলার নিশানা হলে তা সময় থাকতে টের পাওয়া যায় না! পুলওয়ামা কাণ্ডে শহীদের মৃত্যুবরণ করলেন সেনারা আর তার রাজনৈতিক ফায়দা তুললেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির আসনসংখ্যা বাড়ল এবং তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই ঘটনার সরকারি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। বরং অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির বিশ্লেষণে ওই ঘটনায় সরকারি ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। কাশ্মীরের মানুষের বিক্ষোভকে দমন করে 'শ্মশানের শান্তি' কায়েম করা হয়। এহেন কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে গত ২২শে এপ্রিল জঙ্গিহানায় প্রাণ হারালেন অন্তত ২৬জন পর্যটক। জঙ্গিদের তল্লাশিতে বেরিয়ে ২৪ তারিখ শহীদ হলেন ঝণ্টু আলী শেখ নামের একজন জওয়ান। প্রশ্ন হল, সীমান্ত সহ সমগ্ৰ জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র বিভাগের। বলা হয় থাকে, উপত্যকায় প্রতি দশজন মানুষ পিছু একজন সেনা মোতায়েন  রয়েছেন। তারপরও জঙ্গিহানা হতে পারছে কি করে? জঙ্গিরা কোথা থেকে আসছে? কোথায় লুকাচ্ছে? এতদিন জঙ্গিদের ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করা হত। এবার মৃত ব্যক্তিদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়েও প্রচার করা শুরু হল। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার দামামা যথারীতি বাজছে। আসলে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কারবারীরা ভালোভাবেই জানে যে, ভূস্বর্গে সত্যিকারের শান্তি বিরাজ করলে পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদ করার সুযোগ সংকুচিত হবে আর পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষ না হলে অথবা সেই সংঘর্ষে ভারতীয় সেনাদের প্রাণহানি না হলে দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদের তীব্র আবেগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে ভারতীয় মুসলমানদের পাকিস্তানপন্থী বলে দেগে দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করা সহজ হয়। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে আরও প্রান্তিক করে দেওয়ার চেষ্টা সফল হয়। অন্যদিকে, দেশবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান সহ সামগ্ৰিক উন্নয়নের মৌলিক বিষয়গুলোকে আলোচনার অগ্ৰাধিকার থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে সরকারের সমালোচনা করা থেকে সকলেই বিরত থাকে। সুতরাং, শাসক বিজেপির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করতে দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রয়োজন রয়েছে!
            গত এগারো বছরে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে মোদী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশ থেকে হিসাব বহির্ভূত সম্পদ উদ্ধার করে প্রতিটি নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পনেরো লাখ টাকা দেওয়া সহ অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি 'জুমলা' বলে প্রমাণিত হয়েছে। নোট বন্দির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীদের কোমর ভেঙে দেওয়ার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি। বরং নোট বন্দির ফলে দেশের সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে। দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ হয়েছে। আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবনমন ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকেও বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির পতন হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়ন করে ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, ইডি প্রভৃতি স্বশাসিত সংস্থার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্ৰহণের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজকে তাদের ধর্মীয় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আগেই তিন তালাক আইন প্রণয়ন করে মুসলমানদের বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর হয়তো অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রবর্তন করার চেষ্টা করা হবে। মুখে 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ'-এর কথা বলা হলেও সত্যিকারের উন্নয়ন ও সুশাসন কোনো সাম্প্রদায়িক সরকারের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তাই সঙ্ঘ পরিবার যতদিন শক্তিশালী থাকবে ততদিন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হিন্দু-মুসলমান, মন্দির-মসজিদ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সন্ত্রাসবাদী হামলার চক্রব্যূহ থেকে বেরোতে পারবে না। হিন্দুত্ববাদীদের হিংস্রতা বাড়লে মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সক্রিয়তাও বৃদ্ধি পায়। এজন্য হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের অতিরিক্ত ধর্মীয় আবেগের অন্তর্ধান অত্যন্ত জরুরি। 'হিন্দু ঐক্য জিন্দাবাদ' অথবা 'মুসলিম ঐক্য জিন্দাবাদ' বিপজ্জনক স্লোগান। কোনো রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অথবা সামাজিক সংগঠন যেন ধর্মের নামে মানুষকে 'মুরগি' বানাতে না পারে, এই সচেতনতা অর্জন করতে হবে। অন্ধ আবেগ নয়, প্রতিটি বিষয়কে যুক্তির আধারে বিচার বিবেচনা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর