চড়ক পূজা ও ইতিহাস
পল মৈত্র
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৯ ২০ ০৮ ৪৯ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ২০ ০৮ ৪৯

দক্ষিণ দিনাজপুরঃ চড়ক পূজা বিশেষত বাঙালী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। চৈত্রের শেষ দিনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে। লিঙ্গপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিবারাধনা প্রসঙ্গে নৃত্যগীতাদি উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পূজার উল্লেখ নেই। পূর্ণ পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত গোবিন্দানন্দের বর্ষক্রিয়াকৌমুদী ও রঘুনন্দনের তিথিতত্ত্বেও এ পূজার উল্লেখ পাওয়া যায় না। উচ্চ স্তরের লোকদের মধ্যে এ অনুষ্ঠানের প্রচলন খুব প্রাচীন নয়। তবে পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এ উৎসব প্রচলিত ছিল।
চড়ক পূজা কবে কিভাবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে জনশ্রুত রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রচলন করেন। রাজ পরিবারের লোকজন এই পূজা আরম্ভ করলেও চড়কপূজা কখনও রাজ-রাজড়াদের পূজা ছিল না। এটি ছিল হিন্দু সমাজের লোকসংস্কৃতি। পূজার সন্ন্যাসীরা প্রায় সবাই হিন্দু ধর্মের কথিত নিচু সম্প্রদায়ের লোক। তাই এ পূজায় এখনও কোন ব্রাহ্মনের প্রয়োজন পড়ে না।
এ পূজার অপর নাম নীল পূজা। গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়কপূজারই রকমফের। চড়ক পূজা চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিবসে পালিত হয়। আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে ‘বুড়োশিব’ নামে পরিচিত। পতিত ব্রাহ্মণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারানো বা হাজারা পূজা করা।
এই সব পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ। পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেওয়া হয়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে এখনো তা প্রচলিত আছে।
পূজার উদ্যোক্তারা কয়েকজনের একটি দল নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। দলে থাকে একজন শিব ও দু’জন সখী। একজনকে সাজানো হয় লম্বা লেজ দিয়ে, তার মাথায় থাকে উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল। সখীদের পায়ে থাকে ঘুঙুর। তাদের সঙ্গে থাকে ঢোল-কাঁসরসহ বাদকদল। সখীরা গান ও বাজনার তালে তালে নাচে। এদেরকে নীল পাগলের দলও বলা হয়। এরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গাজনের গান গায় এবং নাচ-গান পরিবেশন করে। বিনিময়ে দান হিসেবে যা কিছু পাওয়া যায় তা দিয়ে হয় পূজা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা চড়ক সংক্রান্তির মেলা নামে অভিহিত।
হিন্দু ধর্ম মতে চৈত্র মাসের শেষ থেকে বৈশাখ মাসের প্রথম পর্যন্ত ভক্তরা মহাদেব শিবঠাকুরের আরাধনা করতে থাকেন। মহাদেবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় সপ্তাহব্যাপী নানান পূজার আয়োজন করেন তারা। ফলপূজা, কাদা পূজা, নীল পূজাসহ সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন পূজা পালন শেষে আয়োজন করা হয় গা শিউরে উঠা চড়ক পূজা।
চড়ক পূজায় পিঠে বাণ ফুড়িয়ে চড়ক গাছের সঙ্গে বাশঁ দিয়ে তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের চড়কায় ঝুলন্ত দড়ির সঙ্গে পিঠের বড়শি বেঁধে দেওয়া হয়। তখন বাণ বিদ্ধ সন্ন্যাসীরা শূণ্যে ঝুলতে থাকেন। রাতে নীল পূজার পর সন্ন্যাসীরা উপোস থাকেন। পরদিন বিকেলে এ চড়ক পূজা শেষেই উপোস ভাঙেন তারা।
চড়ক পূজার শুরুতে শিবপাঁচালী পাঠক মন্ত্রপড়া শুরু করলে সন্ন্যাসীরা শিবধ্বনি দিতে দিতে নদীতে স্নান করতে যান। স্নান শেষ করে মাটির কলসি ভরে জল আনেন তারা। এরপর চড়ক গাছের গোড়ায় গোল হয়ে দাঁড়ান সন্ন্যাসীরা। আবার শিবপাঁচালী পাঠ করতে থাকেন বালা (শিবপাঁচালী পাঠক)। সন্ন্যাসীরা চড়ক গাছে জল ঢেলে প্রমাম করে চলে যান ফাঁকা জায়গায়। সেখানেই তাদের বাণবিদ্ধ করা হয়। সন্ন্যাসীরা নিজের শরীর বড়শিতে বিঁধে চড়কগাছে ঝুলে শূণ্যে ঘুরতে থাকেন। আবার সন্ন্যাসীর আর্শীবাদ লাভের আশায় শিশু সন্তানদের শূন্যে তুলে দেন অভিভাবকরা। সন্ন্যাসীরা ঘুরতে ঘুরতে কখনও কখনও শিশুদের মাথায় হাত দিয়ে আর্শীবাদ ও করেন। এ অবস্থায় একহাতে বেতের তৈরি বিশেষ লাঠি ঘুরাতে থাকেন আর অন্য হাতে দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে বাতাসা ছেটান এই ঝুলন্ত সন্ন্যাসীরা। তাদের বিশ্বাস জগতে যারা শিব ঠাকুরের সন্তুষ্টি লাভের জন্য স্বেচ্ছায় এত কঠিন আরাধনার পথ বেছে নিয়েছেন বিনিময়ে পরলোকে শিবঠাকুর তাদের স্বর্গে যাওয়ার বর দেবেন।
চৈত্র সংক্রন্তির ১৫ অথবা ৭ দিন আগে থেকে শুরু হয় চড়কের প্রস্ততি। উৎসবের আমেজ শুরু হয় গ্রামের বারোয়ারি তলায়, শ্মশানে কিংবা গৃহস্থ বাড়ির আঙিনায়। যেখানে আর যেভাবেই এই উৎসব উপস্থাপিত হোক না কেন এর মূল আবহ জুড়ে থাকে কৃষি দেবতা শিবের আবাহন। শিবই এই উৎসবের মুখ্য। তাই শিবকে সন্তুষ্ট করাই পূজারীদের উদ্দেশ্য।
পশ্চিমবঙ্গের যে অঞ্চলগুলো মূলত কৃষিপ্রধান সেখানেই চড়কপূজা উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলার প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থার শরীরে প্রবেশ করতে হলে এরকম উৎসবগুলোকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেই কেবল লৌকিক বাংলার আদিরূপ দেখা সম্ভব হবে।
বৈশাখী উৎসবে নিজেকে রঙ্গিয়ে নিবে বাঙালি জাতি। চৈত্র মাসের শেষ দিনটিতে ফেলা আসা বছরের হিসাবের খাতাকে লোকাচার-পার্বণে বিদায় জানানো হবে। নতুন করে উদ্যোম ও মঙ্গল প্রত্যাশায় নতুন বছর কে স্বাগত জানাতে প্রস্তত হবে বাঙালি। চৈত্র সংক্রান্তি বিশেষ লোক উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তি প্রধানত হিন্দু সম্প্রাদায়ের উৎসব হলে ও অসাম্প্রদায়িক বাঙালির কাছে এক বৃহত্তর লোক উৎসবে পরিণত হয়েছে ক্রমে ক্রমে। চৈত্র সংক্রান্তি এখন কেবল কোন ধর্ম বা মতের মধ্যে আবদ্ধ নয় তা রুপ নিয়েছে এক সর্বজনীন বর্ণিল উৎসবে।
চৈত্র সংক্রান্তির আসল আর্কষণ থাকে চড়ক পূজা। এই চড়ক পুজাকে কেন্দ্র করে দেশের অনেক জায়গায় বসে মেলা। বাংলা সনের শেষ দিনটি কে বিদায় জানানোর জন্য যেমন প্রস্তুত হবে বাঙালি তার ই সাথে সাথে প্রস্তুত হবে আরেক টি নতুন বছর কে স্বাগত জানাতে। সে সঙ্গে খাতা খুলে কষতে বসবে বিগত বছরের সাফল্য ব্যার্থতা পাওয়া না পাওয়ার হিসাব। সূর্যাস্তের সাথে সাথে নানান আচার অনুষ্ঠানে যেমন বিদায় জানানো হবে চৈত্র কে তেমনি প্রস্তুতি নিবে চৈত্র এর শেষ রাতের প্রহরে সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশাখ কে বরণ করে নিতে।
- বৈশাখী - জ্যৈষ্ঠ অনুষ্ঠান
- ফের বেতবোনা গ্রামের মানুষের পাশে জেলা পুলিশ, বিভিন্ন সামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা তুলে দিলেন SP
- রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় জোড়া হোক পহেলগাঁও কাণ্ডে জড়িত টিআরএফ-এর নাম, দাবি ভারতের প্রতিনিধিদলের
- ৩ ঘণ্টায় ২২ জনকে কামড়! কুকুরের আতঙ্কে কাঁপছে পুরুলিয়া
- দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু ফরাক্কা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
- বিজেপির শাসন ও সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ
- POEM - MORE THAN EVER BEFORE !
- Poem - When Morning Bore Thee Away
- Poem - Lyrics of humanity, Poet:- Dr. Laxmikanta Dash, India
- মানুষকে অভয়বাণী দিতে ধুলিয়ানে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরলেন জঙ্গিপুরের নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার, ও আইসি দিলেন আশ্বাস
- মানুষকে অভয়বাণী দিতে ধুলিয়ানে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরলেন জঙ্গিপুরের নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার, দিলেন আশ্বাস Jangipur Police District West Bengal Police
- উত্তর বঙ্গ উন্নয়নের টাকায় রাস্তার কাজ শুরু করলেন বিধায়ক চন্দনা
- পাখা লাগাতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু এক ব্যক্তির
- বহু নথি নষ্টের আশঙ্কা
রাত আড়াইটে থেকে জ্বলছে মুম্বইয়ের ইডি দফতর - মালদার অমৃতির সেকেন্দারপুরে গ্রাম পাহারা দেওয়ার সময় যুবক খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার
- দুর্ঘটনা এড়াতে ভাঙা রাস্তা সারাই করলেন মালদার সায়েম চৌধুরী
- দুর্ঘটনা এড়াতে ভাঙা রাস্তা সারাই করলেন মালদার সায়েম চৌধুরী
- অনুষ্ঠিত হল আম্বেদকর কালচারাল কলেজের গুণীজন সংবর্ধনা ও বিশেষ আলোচনা চক্র
- অনুষ্ঠিত হল আম্বেদকর কালচারাল কলেজের গুণীজন সংবর্ধনা ও বিশেষ আলোচনা চক্র
- অনুষ্ঠিত হল আম্বেদকর কালচারাল কলেজের গুণীজন সংবর্ধনা ও বিশেষ আলোচনা চক্র
- ধুলিয়ান বালিকা বিদ্যালয়ে পালিত হলো বিশ্ব নারী দিবস।
- Poems
- Poem - Health!
- Poems
- Poem - Gyration Humanity
- Poem - Who Am I Without A Homeland?
- সামশেরগঞ্জের হাউসনগর ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা গাড়ির চালকের
- সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস এর বিশেষ সহযোগিতায় ট্রাই সাইকেল বিতরণ সাগরদিঘিতে।
- Poem - Nostalgic
- Poem - A New Poem
- রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় জোড়া হোক পহেলগাঁও কাণ্ডে জড়িত টিআরএফ-এর নাম, দাবি ভারতের প্রতিনিধিদলের
- দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু ফরাক্কা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
- ফের বেতবোনা গ্রামের মানুষের পাশে জেলা পুলিশ, বিভিন্ন সামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা তুলে দিলেন SP
- ৩ ঘণ্টায় ২২ জনকে কামড়! কুকুরের আতঙ্কে কাঁপছে পুরুলিয়া
- বৈশাখী - জ্যৈষ্ঠ অনুষ্ঠান
- হোলি বা দোল পূর্ণিমার ইতিকথা
- ঈদের চাঁদ দেখা গেছে সৌদি আরবে, মঙ্গলবার ঈদ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য
- ভারতে আসছেন আল্লামা ইমাদ উদ্দিন ফুলতলী
- চড়ক পূজা ও ইতিহাস
- হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতির অপুর্ব্ব নিদর্শন বীরভূমের রাজনগরে।
- মহানাম সংকীর্তন উৎসব শেষে মহাপ্রসাদ বিতরন
- আল্লামা তৈয়বুর রহমান ইন্তেকাল
- পবিত্র ঈদ উপলক্ষে বিরাট মাহফিলে কাওয়ালী
- আজ শ্যামাপূজা ও দীপাবলি
- মা তারার প্রতিষ্ঠা দিবস
- বাঙিটোলায় ৪০০ বছর পুরনো মুক্তকেশী পুজো
- মুসলিম গর্ববতি মহিলাকে রক্ত দিয়ে সম্প্রীতির নজির গড়লেন ভিআরপি
- চাঁচলের কলিগ্রাম মহরমে অস্ত্রছাড়া মিছিল থেকে শান্তির বার্তা
- শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পীঠস্থান রামকেলিতে মেলা বন্ধ।
- সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন হরিশ্চন্দ্রপুরের ঈদ মিলন উৎসব