ব্রেকিং:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

শনিবার   ১৭ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩২   ১৯ জ্বিলকদ ১৪৪৬

সর্বশেষ:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা
বিজেপির শাসন ও সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ 

বিজেপির শাসন ও সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ 

বিজেপির শাসন ও সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ 
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল 

         ব্রিটিশ ভারতে ১৮৮৫ সালে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। এটা ছিল হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান ও শিখ সহ সকল সম্প্রদায়ের একটি সম্মিলিত সংগঠন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ভারতের সমস্ত মানুষের হয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে দাবি দাওয়া উত্থাপন করার একটা 'কমন প্ল্যাটফর্ম'। মুসলমানদের একাংশ ১৯০৬ সালে গঠন করে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। নামকরণের মধ্যেই সংগঠনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট; শুধুমাত্র মুসলিম সমাজের স্বার্থ রক্ষা। মুসলিম লীগ লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। মুসলিম লীগের পাল্টা হিসেবে ১৯১৫ সালে গড়ে ওঠে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। এক্ষেত্রেও নামকরণেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, সকল ভারতীয় নয়, শুধুমাত্র হিন্দুদের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করাই হল এদের উদ্দেশ্য। ১৯২৫ সালে গঠিত হয় হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। পরাধীন ভারতে ১৯৩৫ সাল থেকে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয় সেগুলোতে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম লীগ মোটামুটি ভালো ফল করলেও হিন্দু মহাসভা কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। স্বাধীন ভারতে ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে ১৯৫১ সালে গঠিত হয় আরেকটি হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসঙ্ঘ। ১৯৮০ সাল থেকে এটিরই নাম হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। আরএসএস-বিজেপি হিন্দুদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি মতাদর্শগতভাবে কমিউনিস্টদের আর জাতিগতভাবে মুসলমানদের বিষ-নজরে দেখে। এর কারণ হল, কমিউনিস্টরা জাতি-ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন করার ঘোরতর বিরোধী এবং সবসময়ই ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সওয়াল করে। অন্যদিকে, কয়েক শত বছর ধরে মুসলমানরা হিন্দুদের প্রধান প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করছে। ধর্মভিত্তিক ভিন্নতার কারণে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তাকে বিভেদ ও বিদ্বেষে পর্যবসিত করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা এবং অহিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে রূপান্তরিত করে ভারতকে একটা মনুবাদী হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করাই হল সঙ্ঘ পরিবারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে এবং সাফল্যও পাচ্ছে। এই সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিজেপি সরকারকে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলার পাশাপাশি দেশবাসীর মধ্যে উগ্ৰ দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষ আহ্বান করতে দেখা যায়। দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হলে এবং সীমান্তে অশান্তি দেখা দিলে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা  বৃদ্ধি পায়। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
         ১৯৯৬ সালে ১৩ দিন প্রধানমন্ত্রী থাকার পর সঙ্ঘ পরিবারের সন্তান অটলবিহারী বাজপেয়ী ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে আবার সরকার গঠন করেন। কিন্তু জোট সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে সূচনা থেকেই সংশয় দেখা দেয়। সেজন্য দেরি না করে তিনি মে মাসেই রাজস্থানের পোখরানে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু যে পাকিস্তানকে ভয় দেখাতে বোমা ফাটানো হয়, সেই পাকিস্তানের অন্নের অভাব থাকলেও অস্ত্র রয়েছে যথেষ্ট। সেও একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র এবং সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ তার নিত্যসঙ্গী। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানে এখনও গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেনি। সেজন্য, সেখানে সেনাবাহিনী প্রায়ই রাষ্ট্র ক্ষমতার দখল নেয়। সুতরাং, গোলাবারুদের লড়াইয়ে পাকিস্তানের অরুচি নেই। তাই তারা পোখরানের পাল্টা বিস্ফোরণ ঘটাতে বিলম্ব করেনি। এরপর ১৯৯৯ সালের মে-জুলাইয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কার্গিলে কাজিয়া চলে আর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হয় লোকসভার অন্তর্বর্তী নির্বাচন। বিজেপির হিসাব মিলে যায় এবং তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। প্রচুর সেনার প্রাণের বিনিময়ে কার্গিল যুদ্ধে অর্জিত সাফল্য বিজেপিকে ভোট বৈতরণী পার হতে প্রভূত পরিমাণে সাহায্য করে। তবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা না থাকলেও কার্গিল যুদ্ধের কাহিনী কিন্তু সমর বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য হয়নি। শুধু তাই নয়, কার্গিল যুদ্ধের শহীদ সেনাদের জন্য কফিন কেনা নিয়েও আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটে। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে পাক-জঙ্গিরা ভারতের একটি যাত্রীবাহী বিমান অপহরণ করে কাঠমাণ্ডু থেকে কান্দাহারে নিয়ে যায়। এটাই ছিল ভারতের কোনো অসামরিক বিমান অপহরণের প্রথম ঘটনা। ২০০১-এর ডিসেম্বরে খোদ সংসদ ভবনের ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় ব্যাপকভাবে জীবনহানি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বিজেপির নেতানেত্রীরা প্রত্যক্ষভাবে এই দাঙ্গায় জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও বিস্ফোরণের অন্যতম মূল ষড়যন্ত্রী বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা এন আই এ।
         ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দশ বছর কংগ্রেসের ডঃ মনমোহন সিং পরিচালিত সরকারের আমলে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে দেখা যায়নি এবং ভারত-পাক সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক থেকেছে। কিন্তু বিজেপির নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর কাশ্মীরে একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে এবং ভারত-পাক সম্পর্কে চাপান-উতোর শুরু হয়। ভারতের ভ্রমণপ্রিয় ও 'নন- বায়োলজিক্যাল' প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিনা আমন্ত্রণেই বিরিয়ানি খেতে ইসলামাবাদ চলে যান। কিন্তু মোদীজির এই 'মাস্টার স্ট্রোক'-এর কয়েকদিন পরেই ২০১৬ সালের পয়লা জানুয়ারি 'নববর্ষের শুভেচ্ছা' জানাতে পাঞ্জাবের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে পাক-জঙ্গিরা হামলা চালায় এবং কয়েকদিন ধরে গোলাগুলি চলে। ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে জম্মু-কাশ্মীরের উরির সেনা ছাউনিতে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়। কয়েক দিনের মাথায় মোদী সরকার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে জঙ্গি হানার বদলা নেওয়ার দাবি করে। কিন্তু সেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরেও কুপওয়ারা, নাগরোটা প্রভৃতি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা হতে দেখা যায়।
         সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের এপ্রিল-মে মাসে। ঠিক তার কয়েক দিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি 'প্রেম দিবস'-এ পুলওয়ামা কাণ্ড ঘটে। ২৫০০ সেনা ও ৭৮টি গাড়ির কনভয়ের মধ্যে একজন জঙ্গি বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ে এবং ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে প্রাণ হারান প্রায় অর্ধশত সৈনিক, আহত হন আরও অনেকেই। নরেন্দ্র মোদীর আমলে ফ্রিজের মধ্যে থাকা সামান্য গোমাংসের সন্ধান পাওয়া যায় কিন্তু বিভিন্ন সেনানিবাস ও সীমান্ত সন্ত্রাসবাদী হামলার নিশানা হলে তা সময় থাকতে টের পাওয়া যায় না! পুলওয়ামা কাণ্ডে শহীদের মৃত্যুবরণ করলেন সেনারা আর তার রাজনৈতিক ফায়দা তুললেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির আসনসংখ্যা বাড়ল এবং তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই ঘটনার সরকারি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। বরং অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির বিশ্লেষণে ওই ঘটনায় সরকারি ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। কাশ্মীরের মানুষের বিক্ষোভকে দমন করে 'শ্মশানের শান্তি' কায়েম করা হয়। এহেন কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে গত ২২শে এপ্রিল জঙ্গিহানায় প্রাণ হারালেন অন্তত ২৬জন পর্যটক। জঙ্গিদের তল্লাশিতে বেরিয়ে ২৪ তারিখ শহীদ হলেন ঝণ্টু আলী শেখ নামের একজন জওয়ান। প্রশ্ন হল, সীমান্ত সহ সমগ্ৰ জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র বিভাগের। বলা হয় থাকে, উপত্যকায় প্রতি দশজন মানুষ পিছু একজন সেনা মোতায়েন  রয়েছেন। তারপরও জঙ্গিহানা হতে পারছে কি করে? জঙ্গিরা কোথা থেকে আসছে? কোথায় লুকাচ্ছে? এতদিন জঙ্গিদের ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করা হত। এবার মৃত ব্যক্তিদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়েও প্রচার করা শুরু হল। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার দামামা যথারীতি বাজছে। আসলে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কারবারীরা ভালোভাবেই জানে যে, ভূস্বর্গে সত্যিকারের শান্তি বিরাজ করলে পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদ করার সুযোগ সংকুচিত হবে আর পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষ না হলে অথবা সেই সংঘর্ষে ভারতীয় সেনাদের প্রাণহানি না হলে দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদের তীব্র আবেগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে ভারতীয় মুসলমানদের পাকিস্তানপন্থী বলে দেগে দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করা সহজ হয়। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে আরও প্রান্তিক করে দেওয়ার চেষ্টা সফল হয়। অন্যদিকে, দেশবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান সহ সামগ্ৰিক উন্নয়নের মৌলিক বিষয়গুলোকে আলোচনার অগ্ৰাধিকার থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে সরকারের সমালোচনা করা থেকে সকলেই বিরত থাকে। সুতরাং, শাসক বিজেপির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করতে দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রয়োজন রয়েছে!
            গত এগারো বছরে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে মোদী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশ থেকে হিসাব বহির্ভূত সম্পদ উদ্ধার করে প্রতিটি নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পনেরো লাখ টাকা দেওয়া সহ অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি 'জুমলা' বলে প্রমাণিত হয়েছে। নোট বন্দির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীদের কোমর ভেঙে দেওয়ার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি। বরং নোট বন্দির ফলে দেশের সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে। দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ হয়েছে। আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবনমন ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকেও বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির পতন হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়ন করে ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, ইডি প্রভৃতি স্বশাসিত সংস্থার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্ৰহণের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজকে তাদের ধর্মীয় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আগেই তিন তালাক আইন প্রণয়ন করে মুসলমানদের বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর হয়তো অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রবর্তন করার চেষ্টা করা হবে। মুখে 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ'-এর কথা বলা হলেও সত্যিকারের উন্নয়ন ও সুশাসন কোনো সাম্প্রদায়িক সরকারের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তাই সঙ্ঘ পরিবার যতদিন শক্তিশালী থাকবে ততদিন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হিন্দু-মুসলমান, মন্দির-মসজিদ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সন্ত্রাসবাদী হামলার চক্রব্যূহ থেকে বেরোতে পারবে না। হিন্দুত্ববাদীদের হিংস্রতা বাড়লে মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সক্রিয়তাও বৃদ্ধি পায়। এজন্য হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের অতিরিক্ত ধর্মীয় আবেগের অন্তর্ধান অত্যন্ত জরুরি। 'হিন্দু ঐক্য জিন্দাবাদ' অথবা 'মুসলিম ঐক্য জিন্দাবাদ' বিপজ্জনক স্লোগান। কোনো রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অথবা সামাজিক সংগঠন যেন ধর্মের নামে মানুষকে 'মুরগি' বানাতে না পারে, এই সচেতনতা অর্জন করতে হবে। অন্ধ আবেগ নয়, প্রতিটি বিষয়কে যুক্তির আধারে বিচার বিবেচনা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

১১:১৮ এএম, ৪ মে ২০২৫ রোববার

মৌলবী গড়ার নয়, মানুষ গড়ার ভাষা উর্দূ

মৌলবী গড়ার নয়, মানুষ গড়ার ভাষা উর্দূ

মৌলবী গড়ার নয়, মানুষ গড়ার ভাষা উর্দূ

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

 

যখন আমি ছাত্র ছিলাম, তখন গ্রীক চিন্তাবিদ "Aristotle"-এর উপর আমার খুব রাগ হোত। সে আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগের কথা। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অনার্স ক্লাসে ষাট ও সত্তর দশকের গোধূলি লগ্নে আমার স্যারেরা এরিষ্টটলের"Politics" গ্রন্থ পড়াতে পড়াতে বলতেন যে এই গ্রীক চিন্তাবিদ গণতন্ত্রকে "নিকৃষ্টতম শাসন ব্যবস্থা" বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে গণতন্ত্র হোল "অজ্ঞ, অশিক্ষিত, ও মুর্খ" দের শাসন ব্যবস্থা। তরতাজা সেই তারুণ্যের দিনগুলিতে "Aristotle" এর এই বক্তব্যকে খুবই প্রতিক্রিয়াশীল বলে মনে হয়েছিল এবং হতো। কিন্তু আজ যখন জীবন সূর্য্য অস্তাচলে, তখন ব্যালট বাক্সের সন্তান রাজনৈতিক প্রশাসক--প্রশাসিকাদের (কেউ মুখ্যমন্ত্রী, কেউ উপ-মুখ্যমন্ত্রী) মুখনিসৃত "অমৃতবাণী" শুনে মনে হয় যে এই প্রাজ্ঞ গ্রীক চিন্তাবিদ ঠিক কথাই বলেছিলেন ,কারণ, তা না হলে কেউ কি ভোটে জিতে রাজ্যপটে বসে সরস্বতী পূজোর অঞ্জলি মন্ত্র, কিংবা মীর্জা গালিবের লেখা বা রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কবিতা নিলর্জ্জের মতো ভুলভাল আওড়িয়ে চলে? সব লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে উত্তর প্রদেশের এক জন রাজনৈতিক প্রশাসক তো বলেই দিয়েছেন অন্ধ মুসলিম বিদ্বেষে কলূর বলদের মতো চোখে ঠুলি বেঁধে যে "উর্দূ হোল মৌলবী বানানোর ভাষা"। গৈরিক পতাকাধারী এই নেতার বলিহারী কাণ্ডজ্ঞান! এঁরা সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, কিছুই জানেন না। এঁরা ভারতবর্ষকে জানেন না। এঁরা অশোক--আকবর--দারাশিকো--বিবেকানন্দ--রবীন্দ্রনাথকে জানেন না। তাই এইসব দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি করে এঁরা দেশ ও দেশবাসীর সর্ব্বোনাশ করছেন। 

সভ্যতা ও সংস্কৃতির বাস্তবতা হোল এই যে ভাষা কোন ধর্মগুরু বা ধর্মীয় পরিচয় যুক্ত লোককে তৈরী করে না, কি পুরোহিত, কি পাদ্রী, কি "মৌলবী", কাউকেই তৈরী করে না। ভাষা হোল স্বচ্ছতোয়া নদীর মতো। এ হোল কপোতাক্ষ, এ হোল গঙ্গা, এ হোল নীল, এ হোল জর্ডান, এ হোল তাইগ্রিস, এ হোল ইউফ্রেটিস, এ হোল রাইন, এ হোল ভল্গা, এ হোল বৈতরিণী, এ হোল ডন, এ হোল কাবেরী, এ হোল ফল্গু। এদের কারোর জলই ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারী দানব তৈরী করে না, করে মানব। বাংলা ভাষা বিবেকানন্দ--নজরুল--রবীন্দ্রনাথ--জসিমউদ্দিন--সুকান্ত--সুভাষকে তৈরী করেছে। ঠিক তেমনিভাবে উর্দূ ভাষা মুন্সী প্রেমচাঁদ, মীর্জা গালিব, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখদের তৈরী করেছে। মহামতি দারাশিকো প্রমুখ পণ্ডিতরা উর্দূ ভাষায় মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। মুন্সী প্রেমচাঁদ তো মৌলবী বা মুসলিম কোনটিই ছিলেন না। তিনি ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ। তাঁর অমর সৃষ্টির অনেকগুলি উর্দূ ভাষায় লেখা। সম্রাট দারাশিকো ফারসিতে রামায়ণ অনুবাদ করেন এবং তাঁর রামায়ণের শুরু "বিসমিল্লাহ" কথাটি দিয়ে। আরব দুনিয়ায় উর্দূ ও আরবিতে রামায়ণ মহাভারতকে ঢালাওভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। সর্ব্বোপরি প্রখ্যাত বাগ্মী ও সাংসদ অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় যখন ইংরাজী বাংলা ও উর্দূতে ভারতের লোকসভায় বক্তৃতা করতেন তখন নেহেরু থেকে শুরু করে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ , সবাই নীরব হয়ে সেই ভাষণ শুনতেন।

সুতরাং যিনি বা যাঁরা উর্দূকে "মৌলবী" বানানোর ভাষা বলছেন তাঁরা ইতিহাসের লজ্জা। আসলে এই ভাষা-আন্দোলন পক্ষকালে আমাদের মনে রাখতে হবে যে মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ বিশ্বের সর্ব্বদেশের, সর্ব্বকালের মানুষের থাকে। তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে ভাষাগত প্রশ্ন নিয়ে দুইটি দৃষ্টিকোণ আছে: একটি হোল একত্ববাদী দৃষ্টিকোণ, অন্যটি হোল বহুত্ববাদী দৃষ্টিকোণ। একত্ববাদী দৃষ্টিকোণ ভাষাগত উদারতার উপর তথা সহনশীলতার উপর জোর দেয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন (যার শহীদ হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বরকত, সালাম, প্রমুখ) নিয়ে চর্চা করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনেকে এটিকে উর্দূ বিরোধী আন্দোলন হিসাবে কার্যতঃ দাঁড় করান পশ্চিম পাকিস্থানের বাহুবলী শাসকবর্গের উর্দূ চাপানোর প্রচেষ্টার নিন্দা করতে গিয়ে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে পাক গণপরিষদে পূর্ব্ব পাকিস্থান থেকে নির্বাচিত সভ্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বহুত্ববাদী দৃষ্টিকোণে উর্দূকে একটি সমৃদ্ধশালী ভাষা হিসাবে সম্মান জানিয়েই বলেন যে অবিভক্ত পাকিস্থানে সংখ্যা গরিষ্ঠের ভাষা যেহেতু বাংলা, সেই হেতু বাংলাকেই গোটা পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা করা হোক এবং এর পাশাপাশি উর্দূ, বালুচি, সিন্ধ্রী প্রমুখ আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক ভাষাগুলির পূর্ণাঙ্গীন বিকাশের উপর জোর দেওয়া হোক। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান, সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফুর খানের পুত্র, NAP বা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির-নেতা ওয়ালি খান, পাকিস্থানের বিশিষ্ট কবি ও চিন্তাবিদ ফয়েজ আহম্মদ ফয়েজ প্রমুখ।কিন্তু পশ্চিম পাকিস্থানের শাসক গোষ্ঠী এসব পরামর্শে কান দিলেন না। ভাষাগত একাত্ববাদের ভাবনা তাঁদেরকে চেপে বসলো।

ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ১৯৫২ সালের পূর্ব্বপাকিস্থানের ভাষা আন্দোলন শেষ হোল ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। প্রকাশ থাকে যে ভাষাগত প্রশ্ন নিয়ে শুধু পূর্ব্ব পাকিস্থানেই নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন হয়েছে ও হচ্ছে। ভারতবর্ষের বুকে বাংলা ভাষার প্রশ্নে সিংভূম, কাছাড় প্রমুখস্থানে ভাষাগত আন্দোলন হয়েছে এবং সকল ভাষার মর্যাদা রক্ষার ও ভাষাগত স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ও তার পূর্ণ বিকাশের সুযোগ নিয়ে সোচ্চার দাবী উঠেছে। আমাদের দেশ ভারতবর্ষের সংবিধানের ২৯ ও ৩০ নং ধারায় প্রত্যেক ভাষার স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ও পূর্ণ বিকাশের অধিকার স্বীকৃতি লাভ করেছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের "Ecosoc"-এর শাখা সংগঠন UNESCO প্রতিটি, ভাষাভাষী মানুষের ভাষাগত স্বাতন্ত্র্য রক্ষার উপর জোর দিয়েছে এবং ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বলা বাহুল্য যে বিশ্বশান্তি তথা বিশ্ব মৈত্রী রক্ষার এটি একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। 

কিন্তু, এসব সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যের বিষয় হোল যে কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনৈতিক ফেরিওয়ালা অত্যন্ত নীচ ও হীনভাবে ভাষাগত প্রশ্নটিকে উপস্থাপন করছেন। তাঁরা নিজ মাতৃভাষাকে সম্মান জানাতে গিয়ে অন্যের মাতৃভাষাকে অবমাননা করছেন। এটা অন্যায়। এক জন বাঙালী হিসাবে বোলবো যে এই ভাষার সম্মান রক্ষায় পূর্ব্বোল্লিখিত শহীদরাসহ আসাম, ঝাড়খণ্ড ইত্যাদি স্থানে বহু মানুষ শহীদ হয়েছেন। এইসব শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সর্ব্বোৎকৃষ্ট পথ হোল বাংলা ভাষাসহ সকল ভাষার প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল থাকা। নিজের মাতৃভাষাকে সম্মান জানাতে গিয়ে অন্যের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করা মানুষের মতো কাজ নয়, পশুর মতো কাজ। এই পাশবিকতার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে, আপন মাতৃভাষার সম্মান রাখার পাশাপাশি অন্যের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করার প্রবণতাকে রুখতে গিয়ে অনেক মহান মানুষকে বহু লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে। পাক উর্দূ কবি ফয়েজ আহম্মদ ফয়েজ, উর্দূভাষী পাক বামপন্থী রাজনীতিবিদ ওয়ালিখান প্রমুখ মানুষরা আপন মাতৃভাষা উর্দূর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও অবিভক্ত পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেবার জন্য মহম্মদ আলি জিন্না থেকে শুরু করে ইস্কান্দার মীর্জা, লিয়াকৎ আলি খান, সবার কাছেই দাবী রাখেন, কারণ বাংলা ভাষীরাই অবিভক্ত পাকিস্থানে ছিলেন সংখ্যা গরিষ্ঠ। তাঁরা উর্দূসহ অন্যান্য ভাষাগুলিকে মর্যাদাপূর্ণভাবে বিকাশের দিকে নজর দিতে আহ্বান করেন।

কিন্তু, উর্দূভাষাগত সংকীর্ণতাবাদ উল্লিখিত শাসকদের এমনই গিলে ফেলে যে এই অপরাধের জন্য এঁদেরকে "হিন্দুস্থানের দালাল" অপবাদ দিয়ে যথেষ্ঠ হেনাস্থা করার ব্যবস্থা করা হয়। অপর দিকে পাকগণপরিষদের ভিতরে ও বাইরে যিনি বাংলা ভাষাকে পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আপোষহীনভাবে লড়েছেন, তিনি অর্থাৎ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত কিন্তু উর্দূ সম্পর্কে কোন অসম্মান তো দূরে থাক, যথেষ্ঠ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এই সুসমৃদ্ধ ভাষার প্রতি। উগ্র মুসলিম মৌলবাদে অন্ধ হয়ে বাংলাকে যেমন লিয়াকৎ আলি--ইস্কান্দার মীর্জারা "কাফের এর ভাষা" বলে আখ্যাত করেছিলেন, ঠিক তেমনি কিছু লোক হিন্দু মৌলবাদে অন্ধ হয়ে উর্দূকে "মৌলবী বানানোর ভাষা" বলে আখ্যাত করছেন ।ধিক শত ধিক এঁদেরকে ।কোন ভাষা কোন ধর্মগুরু বানানোর যন্ত্র নয়, এসব বানানোর হাতিয়ার আলাদা। কেউ কেউ আবার উর্দূ ভাষা ইকবালের মাতৃভাষা হওয়ায়, ইকবাল বিরোধীতা থেকে উর্দূ বিরোধীতার পথে হাঁটেন। বাস্তবিকই তো দেশ ভাগের জন্য তিনি অর্থাৎ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, জিন্না ও ইকবালকে সমভাবে ঘৃণা করতেন যেমন ঘৃণা করতেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এঁদেরকে ও আম্বেদকরকে ।কারণ "পাকিস্থান" নামটি ইকবালের দেওয়া। আর ১৯৩২ সালের যে লণ্ডন বৈঠকে গান্ধিজী ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী তোলেন, সেই বৈঠক ভেস্তে যায় আম্বেদকর ও জিন্নার জাতপাতভিত্তিক ও ধর্ম ভিত্তিক সংরক্ষণের দাবী তোলার জন্য তথাকথিত অনুন্নত সম্প্রদায় ও মুসলিমদের স্বার্থে। এঁদের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ও গান্ধীজীর "সর্ব্বোদয়" বা সবার কল্যাণের পক্ষে ছিলেন আজাদ, খান আব্দুল গফুর খান, ডঃ রাধাকৃষ্ণান, ভি. ভি. গিরি, প্রমুখরা এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা। 

কিন্তু কোন ভাষা তো কারোর পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। ভাষা হোল নদী। সেখানে পাপী ও পূণ্যাত্মা সবাই স্নান করে। এর জন্য তো নদীর কিছু করার নেই। ইকবাল দেশ ভাগের জন্য অবশ্যই দায়ী। কিন্তু বাংলা ভাগের জন্য তো বাংলাভাষী শ্যামাপ্রসাদ কিংবা ভারত বিভক্তির জন্য মারাঠি ভাষী সাভারকারও দায়ী। তাহলে কি বাংলা ভাষা, বা মারাঠি ভাষা অচ্ছূৎ হয়ে যাবে? মোট কথা উদার, ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক দৃষ্টিতে সবাইকে ভাষাগত প্রশ্নকে বিবেচনা করতে হবে এবং সমাজতান্ত্রিক অসমাজতান্ত্রিক নির্বিশেষে আমেরিকা, সুইজারল্যাণ্ড, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারতবর্ষ প্রমুখ বহুভাষাভাষী মানুষের বাসস্থান বৃহৎ যুক্তরাষ্ট্রগুলিতে যেভাবে একাধারে সংখ্যাগুরু--ভাষাভাষী মানুষদের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করে অন্যান্য ছোট-বড়--মাঝারি সব ভাষার উপযুক্ত সম্মান ও বিকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে বা হয়েছিল, সেই মডেল "বিশ্বের সর্বত্র চালু হওয়া বিশ্বশান্তি, মৈত্রী ও নিরাপত্তার জন্য একান্ত জরুরী। এই প্রসঙ্গেই বলতে চাই যে "হিন্দী, হিন্দু, হিন্দুস্থান" ধ্বনির আওয়াজকারী ভারতের বর্তমান শাসক দল বি. জে. পি. জোর করে হিন্দী ভাষাকে অহীন্দিভাষীদের উপর চাপাতে চেষ্টা করছে। এটা তারা আগুন নিয়ে খেলছে। তাদের মনে রাখা দরকার যে হিন্দী অবশ্যই একটি শ্রদ্ধাস্পদ সমৃদ্ধ ভাষা। কিন্তু এটা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা নয়, আপেক্ষিক সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা। ষাট শতাংশের মত ভারতবাসী বিভিন্ন অ-হিন্দী ভাষায় কথা বলেন। তাদের ভাষাগত ভাবাবেগের দিকে লক্ষ্য রেখে, এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশের শাসক গোষ্ঠী ভাষা প্রশ্নে একত্ববাদী-আধিপত্যবাদী পথ ছেড়ে, বহুত্ববাদের পথকেই সম্মান করুন--এটাই সময়ের দাবী। 

 

      

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

*লেখকের কাছ থেকে মোঃ ইজাজ আহামেদ - এর দ্বারা সংগ্রহ করা হয়েছে*

০৯:০৮ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার

অনুষ্ঠিত হল সুতি চক্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

অনুষ্ঠিত হল সুতি চক্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

অনুষ্ঠিত হল সুতি চক্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা 

 

মোঃ ইজাজ আহামেদ 

 

ছাবঘাটি, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫: আজ সোমবার ছাবঘাটি কে. ডি বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হল সুতি চক্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এদিন এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সুতি চক্রের ৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪৬টি এসএসকে বিদ্যালয়ের মোট ২৯৭ জন প্রতিযোগী ৩৪টি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে। উপস্থিত ছিলেন সুতি চক্রের এস আই অরিন্দম দত্ত, সুতির বিডিও হুমায়ুন চৌধুরী, শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য জানেহুর খাতুন, পার্থ সারথী কর্মকার, শাহ রশিদ আলম, মহঃ তৈরুল ইসলাম, তিলক দাস, তাপস কুমার দাস, সুদেব হালদার, মৃদুল চৌধুরী, মুর্শিদুল হক, সামসুদ্দিন বিশ্বাস, স্বপন কুমার সরকার, মোহাঃ নাসিরুদ্দিন, নবীরুল ইসলাম, মোহাঃ বাদিরুদ্দিন, সহিদুল আলম, তৈমুর ইসলাম, মেহেবুব আলম প্রমুখ ও বিদ্যালগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী। এদিন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাটি সঞ্চালনা করেন সব্যসাচী দাস ও পলাশ দাস। খুব সুন্দরভাবে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। বরণ, মশাল জ্বালানো, প্যারেড ও জাতীয় সঙ্গীতের পর খেলার পর্ব শুরু হয়। উপস্থিত সকলে আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

 

 

 

১১:০০ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার

শুরু হল সামশেরগঞ্জ বইমেলা ( ২য় বর্ষ) - ২০২৫

শুরু হল সামশেরগঞ্জ বইমেলা ( ২য় বর্ষ) - ২০২৫

শুরু হল সামশেরগঞ্জ বইমেলা ( ২য় বর্ষ) - ২০২৫ 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

 

ধুলিয়ান, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫: আজ ২৭শে জানুয়ারী সোমবার বেলা দুটোর সময় কাঞ্চনতলা জে. ডি. জে ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে শুরু হল সামশেরগঞ্জ বইমেলা -২০২৫, চলবে ২রা ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। বেলা দুটোর সময় বইমেলার মিছিল বের হয়। অংশগ্রহণ করে এলাকার স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদগণ। উপস্থিত ছিলেন এই বইমেলার প্রধান উদ্যোক্তা ও সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারের পরিচালক ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান, মুর্শিদাবাদ জেলার সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা, বইমেলার স্মরণিকার সম্পাদক তথা ডি.এন.সি কলেজের লাইব্রেরিয়ান মহঃ নুরুল ইসলাম, কাঞ্চনতলা জে. ডি. জে ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই মাসুদ রহমান, চাচন্ড বি.জে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেজাউর রহমান, ডি.এন.সি কলেজের এনসিসির কো-অরডিনেটর রামকৃষ্ণ মহান্তি,  আমুহা কদমতলা হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী, কবি, লেখক ও সম্পাদক মোঃ ইজাজ আহামেদ, কল্যাণ গুপ্ত প্রমুখ।

 

 

০৯:২৪ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার

শুরু হল অরঙ্গাবাদ বইমেলা-২০২৫

শুরু হল অরঙ্গাবাদ বইমেলা-২০২৫

শুরু হল অরঙ্গাবাদ বইমেলা-২০২৫

মোঃ ইজাজ আহামেদ 

 

অরঙ্গাবাদ, ২১ জানুয়ারী, ২০২৫: সুতি নাগরিক মঞ্চের আয়োজনে ২১শে জানুয়ারী মঙ্গলবার শুরু হল অরঙ্গাবাদ বইমেলা-২০২৫, চলবে ২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত। বেলা দুটোর সময় ডিএনসি কলেজ মাঠ থেকে বইমেলার মিছিল বের হয়। এই মিছিলে অংশগ্রহণ করে শিক্ষাবিদ জুলফিকার আলি, মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন সহ - সভাধিপতি নিজামুদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ড. সুনীল কুমার দে,  ডিএনসি কলেজ ও  স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী। এদিন বইমেলার শুভ উদ্বোধন করেন সুতির বিধায়ক ঈমানী বিশ্বাস। এছাড়া উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. সুনীল কুমার দে, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী, প্রাক্তন শিক্ষক দিলবাদশা, ভারত সেবাশ্রম সংঘের মহারাজ , ড. সামন্ত, ডিএনসি কলেজের এনসিসির কো-অরডিনেটর রামকৃষ্ণ মহান্তি, পতাকা ইন্ডাস্ট্রিজ অরঙ্গাবাদ শাখার ম্যানেজার আব্দুল লতিফ প্রমুখ।

১২:০৯ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০২৫ বুধবার

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে  শেষ হল সর্ব-ভারতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে শেষ হল সর্ব-ভারতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট

 

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে শেষ হল সর্ব-ভারতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট 

 

মোঃ ইজাজ আহামেদ 

 

 

জঙ্গিপুর: ১৯ জানুয়ারী রবিবার জঙ্গিপুরের রঘুনাথগঞ্জ ম্যাকেঞ্জি মাঠে শেষ হল সর্ব- ভারতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এমপি গোল্ড কাপ অল ইন্ডিয়া সিনিয়ার সুপার সেভেন ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ - এর ফাইনাল ম্যাচ। এদিন ঝাড়খন্ড ৪৮ রানে পরাজিত হয় এমপি- ৭ এর কাছে। স্থানীয় দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় জঙ্গিপুরবাসীদের মনে আনন্দের জোয়ার উঠে। উপস্থিত ছিলেন জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান, বিধায়ক তথা শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ আখরুজ্জামান, বিধায়ক কানাইচন্দ্র মণ্ডল, বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ জেলার সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা, প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার শ্রীকান্ত শর্মা, টলিউডের নায়িকা শ্রাবন্তী চ্যাটার্জী প্রমুখ। উল্লেখ্য এদিন ফাইনাল ম্যাচের আগে তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় জম্মু কাশ্মীর ও ওড়িশার মধ্যে। ওড়িশা বিজয়ী হয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে।

 

 

১০:৪৮ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার

মরক্কো ও চীন থেকে সম্মাননা  কবি মোঃ ইজাজ আহামেদকে

মরক্কো ও চীন থেকে সম্মাননা কবি মোঃ ইজাজ আহামেদকে

 

 

মরক্কো ও চীন থেকে সম্মাননা কবি মোঃ ইজাজ আহামেদকে 

 

নিজস্ব সংবাদাতা: 

 

মুর্শিদাবাদ জেলার অরঙ্গাবাদের কবি, লেখক ও সম্পাদক মোঃ ইজাজ আহামেদকে মরক্কোর ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর ক্রিয়েটিভিটি এন্ড হিউম্যানিটি (আই এফ সি এইচ) দি কিংডম অব মরক্কো, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ফিডিয়া মরক্কো ৪৩/২০১৮ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট পেলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট পেয়েছেন। কয়েকদিন আগেও চীনের ইন্টারন্যাশনাল পোয়েট্রি ট্রান্সলেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দ্যা জার্নাল অফ রেন্ডিশন অফ ইন্টারন্যাশনাল পোয়েট্রি (মাল্টিলিঙ্গুয়াল), দ্যা বোর্ড অফ ডাইরেক্টরস অফ ওয়ার্ল্ড ইউনিউন অফ পোয়েট্রি ম্যাগাজিন আয়োজিত 'প্রাইজস ২০২৪: দ্যা ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট পোয়েটস্ অ্যান্ড ট্রান্সলেটরস্' -এ বিভিন্ন দেশ থেকে বেস্ট পোয়েটস্ অ্যান্ড ট্রান্সলেটরস্ হিসেবে ১৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি একজন এবং ভারত থেকেও একজন। তাঁর লেখা দেশবিদেশের বিভিন্ন জার্নাল, পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন ও যৌথ বইয়ে প্রকাশিত হয়ে আসছে। তাঁর কবিতা আরবী, চীনা, কোরীয়, তুর্কী, ইতালীয়, আলবেনীয়, তাজিক, পোলিশ, হিন্দী, রুশ, বসনিয়ান, কিরগিজ, ডাচ, জার্মান ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।    উল্লেখ্য গত ১২ জানুয়ারী ৬৪ টি দেশের কবি - লেখকদের লেখায় সমৃদ্ধ স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করলেন অরঙ্গাবাদ থেকে। মফস্বল থেকেও যে আন্তর্জাতিক মানের কাজ করা যায় তা দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

 

 

 

০৫:২৭ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ রোববার

অনুষ্ঠিত হলো স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকা উৎসব-২০২৫

অনুষ্ঠিত হলো স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকা উৎসব-২০২৫

 

অনুষ্ঠিত হলো স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকা উৎসব-২০২৫

নিজস্ব সংবাদাতা

 

১২ই জানুয়ারী, ২০২৫: আজ অরঙ্গাবাদের একান্ত আপন লজে ১২ই জানুয়ারী রবিবার অনুষ্ঠিত হলো স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকা উৎসব-২০২৫। এদিন স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকার ৬৪টি দেশের কবি- লেখকের লেখায় সমৃদ্ধ পঞ্চম বর্ষের পঞ্চম সংখ্যাটির মোড়ক উন্মোচন, সাহিত্য সম্মেলন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রৌফ, বিশেষ অতিথি হিসেবে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সবুজ সরকার, অতিথি হিসেবে ছিলেন ভাষা আন্দোললনের শহীদ আবুল বরকতের ভাগ্নে ও শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি সংঘের কর্ণধার সৈয়দ সিয়াদত আলী,  মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন সহ-সভাধিপতি নিজামুদ্দিন আহমেদ, প্রাক্তন শিক্ষক দিলবাদশা, কবি ও লেখক এস এম নিজামুদ্দিন, প্রাক্তন শিক্ষক ও সহিত্যিক আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী যিনি অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন। উপস্থিত ছিলেন কবি ও প্রাক্তন অধ্যাপক বিশ্বনাথ সাহা, কবি ও লেখক বদরুদ্দোজা হারুন, মা জহুরা লাইব্রেরি ও রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ শাহ গোলাম হায়দার, কবি দুলাল প্রামানিক, লেখক মনিরুজ্জামান বিট্টু, কবি স্বাগতা সান্যাল, কবি নুর মোহাম্মদ, কবি তসলিম আরিফ, কবি রিনা কংসবনিক, কবি পারভীন খাতুন, কবি সামসুদ্দিন বিশ্বাস, কবি, সুলতানা পারভীন, কবি সৈয়দ সোফিয়া নওয়ার, কবি রবিউল আলম, কবি মাহাতাব হোসেন, কবি মাহজাবিন আফরোজা, কবি মাহমুদ হোসেন, কবি সায়েদা মুসফেক ইসলাম, কবি আজিজুল হাকিম, কবি রাফিকুজ্জামান খান, কবি পারভেজ সেখ, চান্স বাংলার কর্ণধার মিঠুন সেখ, কবি আব্দুল করিম, কবি ইমতিয়াজ কবীর, সাংবাদিক সৈয়দুল ইসলাম, মিডিয়া ব্যক্তি হাবিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুদ্দিন, এফ এস হেলথ কেয়ার অ্যান্ড অপটিক্যাল-এর কর্ণধার ও চক্ষু পরীক্ষক সেখ মামুন আল হাসান, পত্রিকার সম্পাদক মোঃ ইজাজ আহামেদ, সভাপতি আবদুস সালাম, সহ-সম্পাদক আব্দুল মালেক, সহ-সম্পাদক ইমদাদুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক আব্দুল মালেক, পত্রিকার প্রচ্ছদ ডিজাইনার হুমায়ুন কবির, পত্রিকার অক্ষরবিন্যাসকারী আজাদ রহমান, পত্রিকার সদস্য হুমায়ূন শেখ, ইফতিকার হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিক্ষবিদ গুলজার হোসেন। এদিন উপস্থিত সকল কবি - লেখকদের ব্যাচ ও সম্মাননাপত্র দিয়ে সম্মানিত করা হয় এবং এইবছর থেকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বছর যাঁরা সাহিত্যে স্বপ্নের ভেলা সাহিত্যাচার্য সম্মাননা পুরস্কার পান তাঁরা হলেন - 

ড. আজিজ মৌনতাসির (কবি, সদস্য - নাসা, মরক্কো)

বিশ্বনাথ সাহা (কবি, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক)

বদরুদ্দোজা হারুন (সাহিত্যিক, অবসরপ্রাপ্ত ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস আধিকারিক), মোহাঃ হাসানুজ্জামান (সাহিত্যিক) ও স্বাগতা সান্যাল (কবি)।

সাংবাদিকতায় 'স্বপ্নের ভেলা সাংবাদিকতা সম্মাননা' পেলেন

সৈয়দ মিনহাজ হুসেইন আল-হুসেইনী (সম্পাদক - কাদেরী টাইমস্ পত্রিকা) ও সমাজসেবায় 'স্বপ্নের ভেলা সমাজব্রতী সম্মাননা' পেল হাউসনগর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতি।

 

 

 

 

১০:৪৯ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৫ রোববার

শুটিং চলছে মুর্শিদাবাদের ছেলে দাউদ হোসেন পরিচালিত সিনেমা লোন-এর

শুটিং চলছে মুর্শিদাবাদের ছেলে দাউদ হোসেন পরিচালিত সিনেমা লোন-এর

কলকাতায় শুটিং চলছে মুর্শিদাবাদের ছেলে দাউদ হোসেন পরিচালিত সিনেমা লোন-এর 

  

মোঃ ইজাজ আহামেদ 

 

কলকাতা: মুর্শিদাবাদের বিড়ি শ্রমিকের ছেলে দাউদ হোসেন পরিচালিত ও দ্যা রয়েল ফিল্ম প্রযোজিত 'লোন' সিনেমার শুটিং চলছে কলকাতায়। টলিউডের এক ঝাঁক অভিনেতা অভিনেত্রীদের শুটিং করতে দেখা গেল, যেমন রাজ, বোধিসত্ত্ব মজুমদার, দেবা ব্যানার্জি। নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছেন স্টার জলসার মা সিরিয়ালের ঝিলিক ওরফে তিথি বসু। এছাড়াও অভিনয় করছেন সান্তনা বোস, ভোলা, প্রদীপ, আলমগীর শেখ, ধনরাজ, আকাশ, মৌসুমী সহ একাধিক কলাকুশলীরা। পরিচালক দাউদ হোসেন জানান যে এই সিনেমা বাস্তব জীবনের উপর নির্মিত হচ্ছে। বর্তমান লোনে মানুষ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। লোনে জর্জরিত ব্যর্থ ব্যবসায়ীর জীবন কাহিনী নিয়ে এই সিনেমা বুনেছেন নির্মাতারা। ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে সিনেমাটি বাংলার হলে হলে মুক্তি পাবে বলে আশাবাদী পরিচালক দাউদ হোসেন ও প্রযোজক সামিরুল ইসলাম।

 

 

১১:২৩ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ বুধবার

হাউসনগর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতির অনুষ্ঠান

হাউসনগর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতির অনুষ্ঠান

হাউসনগর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতির অনুষ্ঠান 

 

সামসেরগঞ্জ, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪: 

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে প্রতিবন্ধীদের জন্য হাউসনগর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতির সামগ্রী প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো কাঁকুরিয়া মাঠে। এদিন উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা, শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, ডক্টর ওয়াসিকুল, সুতি ও সমসেরগঞ্জের বিডিওগণ, কবি ও শিক্ষক মোঃ ইজাজ আহামেদ, আমুহা কদমতলা হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও কবি আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এদিন প্রায় একশো প্রতিবন্ধীদের শীত বস্ত্র, কৃত্রিম অঙ্গ, ট্রাই সাইকেল সহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ১টা থেকে এবং চলে রাত দশটা পর্যন্ত। অতিথি সহ প্রতিবন্ধীদের বক্তব্য ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠানটি। এছাড়া দাউদ হোসেন রচিত 'বিবেক খুঁজি' নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। দর্শকগণ বাস্তব চিত্র অবলম্বনে নির্মিত নাটকটির ভুয়সী প্রশংসা করেন। অতিথিগণ সমিতির সভাপতি তৌসিক আহমেদ ও সেক্রেটারী মোঃ সাব্বির আলির এই মহৎ উদ্যোগকে কুর্নিশ জানান। এদিন অতিথিদেরকেও বরণ ও সম্মাননা দেওয়া হয়।

 

 

০৯:৪২ এএম, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪

সুতি, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪: আজ রবিবার সুতির আহিরণে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারের আইন বিভাগ  আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিরসা মুন্ডা এবং অন্যান্য উপজাতীয় নেতাদের সম্মানার্থে জনজাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪ উদযাপন করল। ভারত সরকার জাতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অবদানকে স্মরণ করতে স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং আদিবাসী নেতা  বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকীকে "জন জাতীয় গৌরব দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।
এদিন উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রৌফ, অধ্যাপক ড. মোঃ জুনায়েদ, অধ্যাপক ড. রশীদ আহমেদ, অধ্যাপিকা ড. আলিয়া, ছাত্রছাত্রী সায়াম রহমান, ফাইজা শাকির আয়েশা নিগর, ফাইজা উরুজ প্রমুখ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন 'হাউসনগর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতি'র সভাপতি মোঃ তৌসিফ আহমেদ, 'স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকা'র সম্পাদক, কবি, লেখক ও শিক্ষক মোঃ ইজাজ আহামেদ। উপস্থিত অতিথিগণ ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকাগণের বক্তব্যে অনুষ্ঠান মুখরিত হয়ে উঠে। অতিথি ও অধ্যাপক- অধ্যাপিকাদের মেমেন্টো দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ছাত্রীগণ মূকাভিনয়ও করেন। অধ্যাপক ড. মোঃ জুনায়েদ বলেন যে সেন্টারের ডাইরেক্টর ড. মেহবুবুর রহমান খুব সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটির বন্দোবস্ত করেছেন এবং উপস্থিত অতিথিগণও অনুষ্ঠানটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।





০৫:০৪ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ রোববার

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`

 

 

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল 'জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪'

 

সুতি, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪: আজ রবিবার সুতির আহিরণে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারের আইন বিভাগ আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিরসা মুন্ডা এবং অন্যান্য উপজাতীয় নেতাদের সম্মানার্থে জনজাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪ উদযাপন করল। ভারত সরকার জাতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অবদানকে স্মরণ করতে স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং আদিবাসী নেতা বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকীকে "জন জাতীয় গৌরব দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। 

 এদিন উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রউফ, অধ্যাপক ড. মোঃ জুনায়েদ, অধ্যাপক ড. রশীদ আহমেদ, অধ্যাপিকা ড. আলিয়া, ছাত্রছাত্রী সায়াম রহমান, ফাইজা শাকির আয়েশা নিগর, ফাইজা উরুজ প্রমুখ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন 'হাউসনগর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতি'র সভাপতি মোঃ তৌসিফ আহমেদ, 'স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকা'র সম্পাদক, কবি, লেখক ও শিক্ষক মোঃ ইজাজ আহামেদ। উপস্থিত অতিথিগণ ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকাগণের বক্তব্যে অনুষ্ঠান মুখরিত হয়ে উঠে। অতিথি ও অধ্যাপক- অধ্যাপিকাদের মেমেন্টো দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ছাত্রীগণ মূকাভিনয়ও করেন। অধ্যাপক ড. মোঃ জুনায়েদ বলেন যে সেন্টারের ডাইরেক্টর ড. মেহবুবুর রহমান খুব সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটির বন্দোবস্ত করেছেন এবং উপস্থিত অতিথিগণও অনুষ্ঠানটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

 

 

 

 

 

 

০৪:৫১ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ রোববার

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪

সুতি, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪: আজ রবিবার সুতির আহিরণে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারের আইন বিভাগ  আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিরসা মুন্ডা এবং অন্যান্য উপজাতীয় নেতাদের সম্মানার্থে জনজাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪ উদযাপন করল। ভারত সরকার জাতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অবদানকে স্মরণ করতে স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং আদিবাসী নেতা  বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকীকে "জন জাতীয় গৌরব দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।
এদিন উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রউফ, অধ্যাপক ড. মোঃ জুনায়েদ, অধ্যাপক ড. রশীদ আহমেদ, অধ্যাপিকা ড. আলিয়া, ছাত্রছাত্রী সায়াম রহমান, ফাইজা শাকির আয়েশা নিগর, ফাইজা উরুজ প্রমুখ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন 'হাউসনগর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতি'র সভাপতি মোঃ তৌসিফ আহমেদ, 'স্বপ্নের ভেলা সাহিত্য পত্রিকা'র সম্পাদক, কবি, লেখক ও শিক্ষক মোঃ ইজাজ আহামেদ। উপস্থিত অতিথিগণ ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকাগণের বক্তব্যে অনুষ্ঠান মুখরিত হয়ে উঠে। অতিথি ও অধ্যাপক- অধ্যাপিকাদের মেমেন্টো দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ছাত্রীগণ মূকাভিনয়ও করেন। অধ্যাপক ড. মোঃ জুনায়েদ বলেন যে সেন্টারের ডাইরেক্টর ড. মেহবুবুর রহমান খুব সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটির বন্দোবস্ত করেছেন এবং উপস্থিত অতিথিগণও অনুষ্ঠানটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।





০৪:৪৭ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ রোববার

অনুষ্ঠিত হল অরঙ্গাবাদ ব্রাইট ফিউচার অ্যাকাডেমির বার্ষিক অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠিত হল অরঙ্গাবাদ ব্রাইট ফিউচার অ্যাকাডেমির বার্ষিক অনুষ্ঠান

অরঙ্গাবাদ ব্রাইট ফিউচার একাডেমি  ও প্রগ্রেসিভ কোচিং সেন্টারের বার্ষিক অনুষ্ঠান

আজ ১৫ নভেম্বর  অরঙ্গাবাদ ব্রাইট ফিউচার একাডেমি  ও প্রগ্রেসিভ কোচিং সেন্টারের বার্ষিক অনুষ্ঠান মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হল অরঙ্গাবাদের বোরবোনাহাট মোড়ে।উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক আবদুস সামাদ, শিক্ষক আবু তাহের, অরঙ্গাবাদ হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আমির আলি, কবি ও লেখক আব্দুল মালেক, মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন খাদ্য কর্মধক্ষ্য মইদুল ইসলাম, কবি, লেখক সম্পাদক, সাংবাদিক ও শিক্ষক মোঃ ইজাজ আহামেদ, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, স্কুলের কর্ণধার মোতাহার হোসেন, বারিউল ইসলাম সরিকুল ইসলাম, রাকেশ সেখ, শিক্ষক শিক্ষিকামণ্ডলী ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দগণ। অতিথিদের সম্মাননা দিয়ে বরণ করা হয়। আবৃত্তি, সঙ্গীত ও বক্তব্যে মুখরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠানটি।

০৮:৪০ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

সুতি পাবলিক স্কুল ও কোচিং সেন্টারের উদ্বোধন

সুতি পাবলিক স্কুল ও কোচিং সেন্টারের উদ্বোধন

সুতি পাবলিক স্কুল ও কোচিং সেন্টারের উদ্বোধন 

 

আজ ১৫ নভেম্বর মহেন্দ্রপুরে অরঙ্গাবাদ হাই মাদ্রাসার নিকট সুতি পাবলিক স্কুল ও কোচিং সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হল। উপস্থিত ছিলেন সুতির বিধায়ক মাননীয় ঈমানি বিশ্বাস, শিক্ষক শীষ মোহাম্মদ, শিক্ষক নওশাদ আলি, অরঙ্গাবাদ হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আমির আলি, অধ্যাপক মোসাব আলি, কবি ও লেখক আব্দুল মালেক, সমাজসেবী মইদুল ইসলাম, সমাজসেবী জাহাঙ্গীর সেখ, কবি, লেখক সম্পাদক, সাংবাদিক ও শিক্ষক মোঃ ইজাজ আহামেদ, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, শিক্ষক ইফতিখার হোসেন, স্কুলের কর্ণধার ফারুক হোসেন ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। অতিথিদের সম্মাননা দিয়ে বরণ করা হয়।

০৮:৩৬ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

আর জি কর-কাণ্ড: অভূতপূর্ব ঘটনায় নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া

আর জি কর-কাণ্ড: অভূতপূর্ব ঘটনায় নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া

আর জি কর-কাণ্ড: অভূতপূর্ব ঘটনায় নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া 

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল

কাবিলপুর , মুর্শিদাবাদ

 

     আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল বাংলা তথা ভারতের একটি প্রসিদ্ধ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান। কলকাতায় এটার প্রথম পথচলা শুরু হয় ১৮৮৬ সালে। একটা সংগঠিত প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা পায় ১৯১৬ সালে। খ্যাতনামা চিকিৎসক তথা প্রতিষ্ঠাতা সচিব রাধাগোবিন্দ করের (১৮৫২-১৯১৮) নামানুসারে বর্তমান নামকরণে পরিচিত হচ্ছে ১৯৪৮ সাল থেকে। এখানকার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আসন সংখ্যা হল যথাক্রমে ২৫০ ও ১৭৫। সিনিয়র ও জুনিয়র মিলিয়ে মোট চিকিৎসক সংখ্যা ৭০০। শয্যা সংখ্যা দেড় হাজার। 

      ৯ই আগস্ট, ২০২৪ সকালে দ্বিতীয় বর্ষের স্নাতকোত্তর শিক্ষানবিশ (পিজিটি) একজন মহিলাকে (৩১) আর জি করের একটি সেমিনার কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই তরুণী চিকিৎসক টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটিতে ছিলেন। তিনি ৮ই আগস্ট দিবাগত রাত্রে নৈশভোজ সেরে একটু ঘুমোচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি নৃশংস নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর শরীরে গুরুতর আঘাত ও ধর্ষণের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রথমে এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলা হয়। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং এবং যথাযথ তদন্তের দাবি জানাতে থাকেন। ময়না তদন্তের ভিডিওগ্ৰাফি করা হয়। মৃতার বাবা-মাকে অবশ্য ঠিকমতো দেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। তাড়াহুড়ো করে শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

       একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে কার্যত কর্তব্যরত অবস্থায় একজন তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ভূ-ভারতে আর কখনও ঘটেছে বলে মনে হয় না। এই অভূতপূর্ব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তাও নজিরবিহীন। এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ প্রতিবাদ কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মাসাধিককাল ধরে সংঘটিত হয়েছে তা এই বঙ্গে স্মরণাতীত কালের দেখা যায়নি।আট থেকে আশি সকলেই সোচ্চার। শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী, যৌনকর্মী, ক্রীড়ামোদী, আইনজীবী, চিকিৎসক, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী, ছাত্র, যুব প্রায় সব পেশার মানুষ ও পেশাগত সংগঠনকে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে একাধিকবার মিছিলে ও সমাবেশে সামিল হতে দেখা গেছে।জীবনে প্রথমবার প্রতিবাদ জানাতে পথে নেমেছেন এমন মানুষের সংখ্যাও অজস্র। পশ্চিমবঙ্গে বোধহয় এতবড় নাগরিক তথা অরাজনৈতিক আন্দোলন আর কখনও গড়ে ওঠেনি।গণ আন্দোলনের ইতিহাসে সংযুক্ত হয়েছে নতুন ধারা- মেয়েদের রাত দখল। একটি উচ্চমানের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে একজন চিকিৎসকের যৌন নিপীড়ন ও হত্যার ঘটনা যে যত্রতত্র ঘটে চলা আর পাঁচটা ধর্ষণ-খুনের ঘটনার থেকে অনেকটাই আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে, এটা সকলেরই উপলব্ধির মধ্যে এসেছে। এজন্য রাজ্য ও দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বময় ধ্বনিত হয়েছে 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস', 'জাস্টিস ফর আর জি কর', 'জাস্টিস ফর তিলোত্তমা' প্রভৃতি স্লোগান।  

    আর জি করের মহিলা ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুন আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বলে মনে হয় না। এটা পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে। এই পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনায় ওই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ও চিকিৎসকের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। 'তিলোত্তমা' হয়তো কারোর সঙ্গে কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন।কোনো গুরুতর গোপন বিষয় হয়তো তিনি জেনে ফেলেছিলেন। তাঁর ভূমিকায় কেউ হয়তো ভীষণ অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েছিল।তাই তাঁকে প্রাণে মারার ষড়যন্ত্র করা হয়, সঙ্গে যৌন নির্যাতন। এখানে ক্রোধ মুখ্য, কাম গৌণ। এই ভয়ঙ্কর ঘটনা যাতে নির্বিঘ্নে ঘটতে পারে তার বন্দোবস্ত আগে থেকেই করা হয়। তিলোত্তমাকে কে বা কারা খুন ও ধর্ষণ করেছে, এই তথ্য উদঘাটন করার পাশাপাশি কে বা কারা তা করিয়েছে, সেই তথ্যও সামনে আসা জরুরি। 

      আর জি করের ঘটনায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও লবিবাজির খবর প্রকাশ পেয়েছে। পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষার রেজাল্ট, ওষুধপত্র, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিভিন্ন পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি সবেতেই অনিয়ম, কাটমানি, কমিশন ও কারচুপির ঘটনা ঘটে। মেডিক্যাল কলেজের পড়াশোনা ও প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও কর্তাব্যক্তিদের অনেকেই যে এক একটা দুর্বৃত্ত হয়ে উঠেছেন, একথা এতদিন সাধারণ বঙ্গবাসী জানত না। পাড়ার মাথামোটা মাস্তানদের মতো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে অবস্থানকারী মেধাবী ডাক্তাররাও যে দাদাগিরি করেন, ভাবতেই খারাপ লাগছে। থ্রেট কালচার, মাফিয়ারাজ ছড়িয়ে পড়তে কোনো ক্ষেত্রই বোধহয় বাকি নেই। পশ্চিমবঙ্গের শুধু পশ্চাদগমন চলছে।

      আর জি করের মহিলা ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দুদিনের (২-৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) বিশেষ অধিবেশনে অপরাজিতা নারী ও শিশু (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন ও সংশোধন), ২০২৪ বিল সর্বসম্মতিক্রমে ধ্বনিভোটে পাস হয়েছে। রাজ্যপাল বিলটিতে স্বাক্ষর না করে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য প্রেরণ করেছেন। কিন্তু বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভে সমর্থ হবে বলে মনে হয় না। প্রথমত, ধর্ষণের কড়া শাস্তি আগেকার আইপিসি অথবা এখনকার বিএনএস-এ নেই এমনতো নয়। ধর্ষণ ও খুনের শাস্তি হিসেবে ২০০৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ও ২০২০ সালে দিল্লীতে মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা ও অক্ষয় কুমারের ফাঁসি হয়। আর জি করের তিলোত্তমার ধর্ষক ও খুনীদের ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি প্রযুক্ত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোনো অপরাধের এক ও একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করা আমাদের সংবিধানের পরিপন্থী। প্রতিটি অপরাধের সাজার ক্ষেত্রেই বিকল্প সংস্থান থাকা জরুরি। আদালত একাধিক বিকল্প থেকে যেকোনো একটিকে বেছে নেবে। কাজেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখানোর নামে রাজ্য সরকারের তাড়াহুড়ো করে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগের মধ্যে নাটকীয়তা থাকলেও এটি কোনো কাজের কাজ নয়। নিছকই আই ওয়াশ।

       যখন 'বিচার চাই', 'জাস্টিস চাই' বা 'ইনসাফ চাই' বলে আওয়াজ ওঠে তখন আসলে চাওয়া হয়, যেন বিচার প্রক্রিয়া যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে শেষ করে অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকলের শাস্তি কার্যকর করা হয়। এটা অত্যন্ত জনপ্রিয় দাবি। কিন্তু ভারতীয় বিচারব্যবস্থা এব্যাপারে ডাহা ফেল। স্বাধীন ভারতে একাধিক আইন কমিশন গঠন, ফৌজদারি আইনের সংস্কার ও সংশোধনী সত্ত্বেও এব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্ৰগতি ঘটেনি। বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতেই চায় না! ফলতঃ সাজা ঘোষণা ও তা কার্যকর করতে সাঙ্ঘাতিক বিলম্ব ঘটে। পয়লা জুলাই, ২০২৪ প্রবর্তিত নতুন ফৌজদারি আইনও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে বলে মনে হয় না। এতে প্রথম শুনানির ৬০ দিনের মধ্যে চার্জ গঠন এবং শেষ শুনানির ৪৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শুনানির সর্বোচ্চ সংখ্যা কিংবা প্রথম ও শেষ শুনানির মধ্যে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবধানের ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি। অর্থাৎ, 'তারিখ পে তারিখ' চলতেই থাকবে আর আমাদের আওড়াতে হবে- জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড। খুনের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনেক বিলম্ব ঘটার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মহাত্মা গান্ধী নিহত হন ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি। ঘাতক নাথুরাম গডসে হাতেনাতে ধরা পড়ে। নাথুরাম ও তার সহযোগী নারায়ণ আপ্তেকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জাতির জনকের অভাবনীয় হত্যাকাণ্ডের ৬৫৫ দিন পর ১৯৪৯ সালের ১৫ই নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর। সৎবন্ত সিং ও কেহর সিংয়ের ফাঁসি কার্যকর হয় প্রায় পাঁচ বছর পর ১৯৮৯ সালের ৬ই জুন। ২০০৮ সালের ২৬শে নভেম্বর মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ১৬৬ জন মানুষ মারা যায়।ধরা পড়ে পাকিস্তানী জঙ্গি আজমল কাশভ। তাকে ফাঁসি দেওয়া হয় চার বছর পর ২০১২ সালের ২১শে নভেম্বর।কলকাতার একটি আবাসনে ১৪ বছর বয়সী হেতাল পারেখের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে ৫.৩.১৯৯০ তারিখ আর অভিযুক্ত ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় প্রায় দেড় দশক পর ১৪.৮.২০০৪ তারিখ। দিল্লিতে ২৩ বয়সী ফিজিওথেরাপি ছাত্রী 'নির্ভয়া'র (জ্যোতি সিং) গণধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত চারজনের ফাঁসি কার্যকর হয় সাত বছর পর ২০২০ সালের ২০শে মার্চ।অন্য একজন অপরাধের দিন বয়সের দিক থেকে নাবালক ছিল বলে ছাড়া পেয়ে যায়।

      প্রাথমিক ভাবে ধর্ষণ ও হত্যা সংক্রান্ত অপরাধের বিচার হয় সেশন কোর্টে। সাধারণত সেশন কোর্ট রায় দিতে সময় নেয় এক থেকে দুই বছর। মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলা করা হয় প্রথমে হাইকোর্টে এবং তারপর সুপ্রিম কোর্টে। শুনানি শেষ করে রায় দিতে বিরক্তিকর রকমের বিলম্ব ঘটে এই দুই আদালতে।সবশেষে রাষ্ট্রপতির কাছেও কিছুদিন প্রাণভিক্ষার আবেদন জমা পড়ে থাকে। এখন ভারতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার ব্যাপারে সচেষ্ট বা সিরিয়াস নয়। কাজেই পাবলিক চাইলেও তিলোত্তমার বিষয় বিস্মৃত হওয়ার আগে বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ধারণা বা পারসেপশানের ভিত্তিতে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় না। 'অন্ধা কানুন' যথেষ্ট পরিমাণে সাক্ষ্য, তথ্য ও প্রমাণ না পেলে কোনো অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে না। যে অপরাধে শাস্তি যত কড়া সেই অপরাধে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য সাক্ষ্য, তথ্য ও প্রমাণ তত শক্তপোক্ত হতে হয়। আর জি কর-এ তিলোত্তমার ঘটনায় তথ্য, প্রমাণ নষ্ট, বিকৃত ও লোপাট করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই'কে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ (সারকামসটানশিয়াল এভিডেন্স) সংগ্ৰহের ওপর জোর দিতে হবে। তা করা না হলে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের ঘটনাতেও কেউ শাস্তি পাবে না যা অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সম্ভ্রান্ত পেশার একজন উচ্চশিক্ষিত মহিলা একটা মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষণ ও খুনের শিকার হওয়ার পরও বিচারব্যবস্থা অপরাধীদের শনাক্ত ও শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে সমাজে নারী সুরক্ষার প্রশ্নে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

       জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন পরিচালনায় বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁরা তাঁদের আন্দোলনের অরাজনৈতিক চরিত্র বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের আন্দোলনের প্রতি 'সংহতি' জানাতে আসা সাংসদ, বিধায়ককে গো ব্যাক স্লোগান শুনিয়ে যেভাবে বিদেয় করেছেন তা সত্যিই সাহসী সিদ্ধান্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার গত তেরো বছরে আর কোনো আন্দোলনকে এতটা গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়নি। ডাক্তারদের দাবি মেনে একগুচ্ছ পুলিশ ও স্বাস্থ্য আধিকারিককে অপসারণ করা হয়েছে। আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্ৰিক বেহাল অবস্থা নিয়েই চিকিৎসকরা সরব হয়েছেন। এজন্য স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সংস্কার সাধনে এই আন্দোলনের একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিলোত্তমার নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী সকল ব্যক্তির শাস্তি এবং সুস্থ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, এই মুহূর্তে নাগরিক সমাজের বলিষ্ঠ দাবি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তন করার জন্য নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় কিন্তু অনাচার অসহনীয় হয়ে উঠলে সরকারকে পদক্ষেপ করতে বাধ্য করার জন্য যেকোনো সময়েই গণ আন্দোলন সংঘটিত হতে পারে।

০৮:১৪ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

প্রসঙ্গ: বাংলা ভাগের বিদঘুটে প্রস্তাব 

প্রসঙ্গ: বাংলা ভাগের বিদঘুটে প্রস্তাব 

প্রসঙ্গ: বাংলা ভাগের বিদঘুটে প্রস্তাব 
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল
কাবিলপুর, মুর্শিদাবাদ, ৭৪২২৩৭, 

     পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিকে অবস্থিত কোনো কোনো ভূখণ্ডের পশ্চিমবঙ্গ থেকে পৃথক হওয়ার দাবি প্রায় চার-পাঁচ দশকের পুরনো। সম্প্রতি সেই দাবির কথা আবার শোনা যাচ্ছে। তবে দাবি করার ধরন কিছুটা বদলেছে।এতদিন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেরিয়ে গিয়ে গোর্খাল্যান্ড, কামতাপুর বা গ্ৰেটার কোচবিহার গঠনের দাবি সংশ্লিষ্ট এলাকায় আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে।এবার তা ভারতের সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। এতদিন এই ধরনের প্রস্তাব কোনো মূল প্রবাহের রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে করা হয়নি। এবার দলগতভাবে না হলেও বিজেপির একাধিক সাংসদ ও বিধায়ক এই প্রস্তাব পেশ করেছেন।এতদিন বাংলা ভাগের আন্দোলনকে সহিংস হতে দেখা গেছে।এবার অন্তত তা না হয়ে বাংলা ভাগ সম্পর্কিত প্রস্তাব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশ্লেষকদের তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মনে করা হচ্ছে যে, অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে ভালো ফল করতে না পেরে কেন্দ্রের শাসকদল সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ও ভূখণ্ডকে নতুন আঙ্গিকে বিভাজিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। 
      আমরা সকলেই জানি যে, প্রশাসনিক সুবিধার কথা বলে ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। ব্রিটিশরা বাঙালির ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদী চরিত্র তথা উত্তাল আন্দোলনের মোকাবেলা করতে মুশকিলে পড়ছিল।তাই তারা বাঙালিকে হিন্দু-মুসলমানে বিভাজিত করে সেই ঐক্যকে ভাঙতে চেয়েছিল। সেই লক্ষ্যে বাংলাকে হিন্দু ও মুসলিম প্রধান দুই এলাকায় বিভক্ত করা হয়। কিন্তু সেই সময়েও সাম্প্রদায়িক বিভেদে বিশ্বাসী বাঙালির থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী বাঙালির সংখ্যা অনেক বেশি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। ধারাবাহিক আন্দোলনের জেরে ব্রিটিশরা ১৯১১ সালের ১২ই ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়।তবে বাঙালির ওপর প্রতিশোধ নেয় ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার মধ্য দিয়ে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় আবার বাংলা ভাগ হয়। পূর্ববঙ্গ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী ভারতের অন্যতম অঙ্গরাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ তার বর্তমান আকার ও আয়তন পরিগ্ৰহ করে।
      পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিকে অবস্থিত আটটি জেলা- দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদা- একত্রে উত্তরবঙ্গ হিসেবে অভিহিত। উত্তরবঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার আসন রয়েছে যথাক্রমে ৮টি ও ৫৪টি। জনসংখ্যা আনুমানিক ২ কোটি।এই এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ২০১৪ সালে শিলিগুড়িতে একটি রাজ্য সচিবালয় স্থাপন করা হয়েছে যা উত্তরকন্যা নামে পরিচিত। জলপাইগুড়িতে রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের একটি সার্কিট বেঞ্চ। এখানে মাসে গড়পড়তা ১৫ দিন করে সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চ বসে। উত্তর-পূর্ব ভারত হল বিশালায়তন ভারত রাষ্ট্রের একটি ভৌগলিক অঞ্চল ও প্রশাসনিক বিভাগ। অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, মেঘালয় ও সিকিম- এই আটটি রাজ্য উত্তর-পূর্ব বিভাগের অন্তর্গত।  রাজ্যগুলোর একত্রে লোকসভা আসন সংখ্যা ২৫ এবং জনসংখ্যা আনুমানিক ৫ কোটি। প্রথম সাতটি রাজ্যকে 'সপ্তভগিনী' এবং সিকিমকে 'ভ্রাতারাজ্য' বলা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিকিম ১৯৭৫ সালের ১৬ই মে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। 
      বিজেপির রাজ্য সভাপতি, বালুরঘাটের সাংসদ, শিক্ষা ও উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। তাঁর মতে, উত্তরবঙ্গের সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতের মিল রয়েছে এবং এজন্য প্রথমটি দ্বিতীয়টির সাথে সংযুক্ত হলে উন্নয়নের প্রশ্নে অনেক উপকৃত ও লাভবান হবে। সুকান্ত বাবুর বক্তব্যকে সঠিক বলা শক্ত। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি কোনো দিক থেকেই এই দুই এলাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্যের সন্ধান পাওয়া যায় না। উন্নয়নের দিক থেকেও 'সপ্তভগিনী' উত্তরবঙ্গের থেকে এগিয়ে নেই। চীনের সঙ্গে দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানা থাকা অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে তো ভারতের টেনশনই দূর হয় না। ১৯ লাখ বাঙালিকে বেনাগরিক বানিয়ে আসামে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে তার নজির গোটা দেশে আর কোথাও আছে কি? উত্তরবঙ্গের মানুষ সেখানে ডিটেনশন ক্যাম্প পরিদর্শন করতে যাবে? ত্রিপুরা কবে অগ্ৰসর রাজ্য হিসেবে গণ্য হল? নাগাল্যান্ডে নাগা জঙ্গিদের আন্দোলন কি একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছে? মনিপুরকে কি জ্বলতে দেখা গেল না? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, শান্তি-  কোন্ মানদণ্ডে উত্তর-পূর্ব বিভাগ উত্তরবঙ্গের থেকে কয়েক কদম  এগিয়ে রয়েছে যে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সংযুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে? আসলে, ওই দুই অংশের মিলন ঘটিয়ে সুকান্ত বাবুরা একটি বিজেপির বেল্ট তৈরি করতে চাইছেন। প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যে, বিজেপির সরকার ও সাংসদরা গত দশ বছরে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে বলার মতো কোনো কাজ করেছেন কি? দার্জিলিংয়ের চা ও মালদার রেশম শিল্পের ক্রমাবনতি রোধের কোনো প্রয়াস কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি।গঙ্গার ভাঙনে মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক ব্লকের বাড়ি ঘর, জমিজমা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। গঙ্গা ভাঙন একটি জাতীয় সমস্যা কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোনো পদক্ষেপ করছে না। মুখে উন্নয়ন আর কাজে বঞ্চনা!
       বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ দাবি করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে গ্ৰেটার কোচবিহার রাজ্য গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই অনন্ত মহারাজের বিরুদ্ধে কোচবিহারে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সহিংস আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ছিল। তিনি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভয়ে একসময় আসামে আত্মগোপন করে থাকতেন।
        ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সংসদে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও মালদা এবং বিহারের  কিষানগঞ্জ, কাটিহার, পূর্ণিয়া ও আরারিয়া- এই ছয়টি মুসলিম অধ্যুষিত জেলা নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্যাপক অনুপ্রবেশের কারণে এই জেলাগুলোতে জনবিন্যাস বদলে গেছে। তাঁর মতে, মুসলমানদের অতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি ও হিন্দুদের উদ্বেগজনক হারে সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। নিশিকান্ত দুবের এই প্রস্তাব ও পর্যবেক্ষণে উগ্ৰ সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি অত্যন্ত স্পষ্ট। মিথ্যাচারও রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের একজন সাধারণ সাংসদের মস্তিষ্কে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ভূখণ্ড নিয়ে কোনো পরিকল্পনা রচিত হওয়া অভিপ্রেত নয়। তাঁর প্রস্তাব বা পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ঘটনা হল, একবিংশ শতাব্দীর ভারতে রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশ ধর্তব্যের মধ্যে রাখার মতো কোনো বিষয়ই নয়। যা বাস্তবে হয় না তাই নিয়ে মাতামাতি করা মতলববাজদের কাজ। বাংলা ও বিহারে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বা অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবেই একটি আনুবীক্ষণিক ব্যাপার। প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে অমর্যাদা ও জ্বালা যন্ত্রণা ভোগ করতে কেন আসবে? এখানে এসে তারা কী পাবে? তাছাড়া, জীবনযাত্রার মানের দিক থেকেও কি ভারতীয় মুসলমানরা বাংলাদেশী মুসলমানদের থেকে খুব ভালো জায়গায় অবস্থান করে? কাজেই বাংলাদেশের মুসলমানরা দলে দলে ভারতে ঢুকে পড়ছে, এমন অভিযোগের মধ্যে কোনো সত্যতা নেই। 
       মুর্শিদাবাদ ও মালদায় ব্রিটিশ আমল থেকেই মুসলমানের সংখ্যা বেশি। মুর্শিদাবাদকে প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হিসেবেই ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৮ই আগস্ট'৪৭ সেটি পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ত্রিদিব চৌধুরী, শশাঙ্ক শেখর সান্যাল, অতীশ সিনহা, প্রণব মুখার্জি, অভিজিৎ মুখার্জি, ননী ভট্টাচার্য, প্রমথেশ মুখার্জি ও অধীর রঞ্জন চৌধুরী প্রমুখ হিন্দু ব্যক্তিরা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো মুসলিমপন্থী দল এখানে সুবিধা করতে পারে না। বিভিন্ন সময়ে মুর্শিদাবাদে রাজনৈতিক সংঘর্ষ হলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হতাহত অথবা লুটপাটের ঘটনা সেভাবে ঘটতে দেখা যায় না। মুসলমানদের হাতে হিন্দুদের অত্যাচারের দৃষ্টান্ত প্রায় নেই বললেই চলে।
      মুসলিম সমাজে জনবিস্ফোরণ ঘটার যে কথা বলা হয় তাও ঠিক নয়। ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী একজন মুসলমান পুরুষ চারজন মহিলাকে বিয়ে করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এমন বিয়ের সংখ্যা হয়তো এক লাখে একটি। আবার কারোর একাধিক বউ থাকলেই যে তার এক-দেড় ডজন ছেলেমেয়ে থাকবে, এই ধারণাও বাস্তবসম্মত নয়।গোটা দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে এবং তাতে মুসলিম সমাজের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। গত দুই দশকে জন্মহার হ্রাস পাওয়ার হার হিন্দুদের থেকে মুসলমানদের মধ্যে বেশি। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও কেরালা প্রভৃতি যে রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ২৫ শতাংশের বেশি সেখানে জন্মহার দুই শতাংশের কম। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বিহার প্রভৃতি যে রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ২০ শতাংশের কম সেখানে জন্মহার তিন শতাংশের বেশি।এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।এখন অধিকাংশ মুসলিম দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো না কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে। দুটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের 'ফ্যামিলি প্ল্যানিং' প্রায় একই রকম হয়। দশজন হিন্দু শিক্ষকের সন্তান সংখ্যার সঙ্গে দশজন মুসলমান শিক্ষকের সন্তান সংখ্যার বিশেষ ফারাক থাকে না।অনুরূপ ভাবে, দারিদ্র্য পীড়িত ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত দুটো হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের অনিয়ন্ত্রিত সন্তান উৎপাদনের মধ্যে মিল রয়েছে। মুসলিম সমাজকে সবসময় অশিক্ষিত, গোঁড়া, বিজ্ঞান বিরোধী, উগ্ৰ, দরিদ্র মনে করা সঙ্গত নয়। ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে এখন আধুনিকতার উপাদানের অভাব নেই।মুসলমানরা হিন্দুদের মতোই দোষ-গুণ নিয়ে ভারতীয় সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ।  
       গণতান্ত্রিক সংসদীয় রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক মনোভাব ও মতাদর্শ নিয়ে রাজনীতি করা দল ও ব্যক্তিদের গরিব মেহনতি মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য নানা ধরনের কূটকৌশল গ্ৰহণ করতে হয়। মানুষের রুটি রুজির সমস্যার সমাধান না করে ধর্ম ও সম্প্রদায় কেন্দ্রিক ইস্যু খুঁচিয়ে তুলতে হয়।কেন্দ্রের প্রধান শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা সেটাই করছেন। তবে স্বস্তির কথা হল,মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবঙ্গ নিয়ে যেসব ভুলভাল ও বিভ্রান্তিমূলক প্রস্তাব উত্থাপন করা হচ্ছে তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। কারণ, এইসব বিতর্কিত বিষয় সংসদে পাশ করার জন্য সরকারের যে সংখ্যাধিক্য থাকা দরকার এখন তা নেই।

১১:৪৬ এএম, ৪ আগস্ট ২০২৪ রোববার

বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন ও কিছু আনুষঙ্গিক কথা

বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন ও কিছু আনুষঙ্গিক কথা

বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন ও কিছু আনুষঙ্গিক কথা 

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল

কাবিলপুর, মুর্শিদাবাদ

 

        অবিভক্ত বাংলার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের একটা ইতিহাস ছিল।১৯৪৭ সালে ভারত তথা বঙ্গবিভাজনের পর থেকে পূর্ববঙ্গে সেই পরম্পরার প্রকাশ ঘটতে দেখা যায়। পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলন বিশ্ববাসীকে ১৯৫২ সালে এক রক্তস্নাত ২১শে ফেব্রুয়ারি উপহার দেয় যা ২০০০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে।ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে পূর্ববঙ্গের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে নতুন দেশ বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতা লাভের পর বিগত অর্ধ শতাধিক বছরে বহুবার বাংলাদেশের রাজপথকে রক্তাক্ত আন্দোলনে ব্যস্ত হতে দেখা গেছে। ২০২৪ সালের 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বাধিক সহিংস আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

     ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭২ সালেই সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ প্রথা প্রবর্তন করে। সংরক্ষিত আসন সংখ্যার শতাংশ নির্ধারিত হয় এরূপ: মুক্তিযোদ্ধা-৩০, নারী-১০, জেলা-১০, জনজাতি-৫, প্রতিবন্ধী-১, মোট ৫৬ শতাংশ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর দুই দশক ধরে এই সংরক্ষণ বা কোটা স্থগিত রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করেন। মুক্তিযোদ্ধা থেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পর্যন্ত কোটা সম্প্রসারিত করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে কোটা প্রথা রদ করেন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা শাসন ক্ষমতায় ফিরে আসেন এবং সেই সঙ্গে ফিরিয়ে আনা হয় সংরক্ষণ। ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদেরও সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়।২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের তীব্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনা সরকার জনজাতির জন্য ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষণ বজায় রেখে বাকি ক্ষেত্রগুলো থেকে সংরক্ষণ তুলে দেয়। ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ই জুন হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের পক্ষে রায় দেয়। এর প্রতিবাদে ছাত্র সমাজ পথে নামে। আবার কোটা সংস্কারের দাবি ওঠে।সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক ভাবে বলা হয় যে, আদালতের রায় নিয়ে সরকারের কিছু করার নেই। কিন্তু আন্দোলনের চাপে পড়ে সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। সুপ্রিম কোর্ট ১০ই জুলাই হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে ৭ই আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে। ১৪ই জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা অনুষ্ঠানে আন্দোলনকারীদের খুব কড়া ভাষায় সমালোচনা করার পাশাপাশি বলেন যে, সংরক্ষণ মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা পাবে না তো কি রাজাকারদের নাতিপুতিরা পাবে? তাঁর এই মন্তব্য আগুনে ঘি ঢালার সামিল হয়।আন্দোলনকারীরা তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করে স্লোগান দেয়, "চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার! তুই কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার! বলছে কে? বলছে কে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার!" আন্দোলন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। সুপ্রিম কোর্টে কোটা মামলার শুনানি এগিয়ে আনা হয়। ২১শে জুলাই সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরিতে সাত শতাংশ কোটা রাখার কথা জানায়- মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে হাসিনা সরকার ২৩শে জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু সাত-আট দিনের আন্দোলনেই বাংলাদেশ কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। আবাসিক হলগুলো থেকে পড়ুয়াদের বের করে দেওয়া হয়।ভারত, নেপাল ও ভুটানের শিক্ষার্থীরা স্বদেশে ফিরে যান।গোলাগুলি, লাঠালাঠি, ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে কমবেশি দুশো জন ছাত্র, পুলিশ ও সাধারণ মানুষ নিহত এবং দু'হাজার জন আহত হন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। প্রচুরসংখ্যক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হয়। তাণ্ডবের শিকার হয় রাজধানীর মেট্রোরেল, টোল প্লাজা, টিভি'র কার্যালয়, ইন্টারনেটের কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার। একটা জেলে হামলা চালিয়ে আটশো'র বেশি বন্দীকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করা হয়, সেনা নামানো হয়, দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

      বাংলাদেশে সরকারি চাকরির প্রধান পরীক্ষা বিসিএস বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। এটা একটা ত্রিস্তরীয় পরীক্ষা যা সম্পন্ন হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগে। প্রথম পর্যায়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখানে যারা কোয়ালিফাই করে তারা দ্বিতীয় পর্যায়ে লিখিত পরীক্ষায় বসে। এই মূল পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয় তাদের তৃতীয় পর্যায়ে সাক্ষাৎকার বা মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়। বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত সাফল্যের হার মাত্র দুই শতাংশের মতো। এই পরীক্ষার কোনো পর্যায়েই চাকরিপ্রার্থীদের কোটাগত সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং, চাকরির মেধা তালিকায় সত্যিকারের মেধাবী ছেলেমেয়েরাই ঠাঁই পায়। এজন্য কোটায় চাকরি প্রাপকরা একেবারে নিম্ন মেধার অথবা অযোগ্য, এমন মনে করা সঙ্গত নয়। ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে এখন সরকারি চাকরিতে ১৭ লক্ষ আসন রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের কম। এদিক থেকে দেখলে দেশের এক শতাংশেরও কম মানুষের জন্য চাকরিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ অস্বাভাবিক বলেই মনে হয়। 

       বাংলাদেশের রাজনীতি ও আন্দোলনে দুটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ হলো মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার। ইংরেজি 'ফ্রিডম ফাইটার' পশ্চিমবঙ্গে 'স্বাধীনতা সংগ্রামী' হলেও বাংলাদেশে 'মুক্তিযোদ্ধা'। তবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে একটুখানি ফারাক আছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম অহিংস ও সহিংস উভয় পথেই পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধ ছিল পুরোপুরি সহিংস। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন কয়েক দশক ধরে চললেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মূলত ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলেছিল। ১৯৭২ সালে ঘোষিত দ্য বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাইটারস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সংজ্ঞা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত যেকোনো সংগঠিত ফোর্স বা দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত কোনো সংগঠিত দলের সদস্য না হন অথবা হয়েও সক্রিয় ভূমিকা না রাখেন তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন না। শাসকদলের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাতেও পরিবর্তন ঘটতে দেখা গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হয়েছে কিন্তু সেসব তালিকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এবং বিতর্কের অবসান হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের একটি হিসাব অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সর্বোচ্চ সংখ্যা এক লাখ তিরাশি হাজার। এখন হয়তো বেঁচে আছেন এক লাখ এবং তাঁদের সকলেরই সরকারি চাকরি পাওয়ার বয়স পার হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়েদেরও অধিকাংশের বয়স পার হওয়ার মুখে। এখন তাঁদের নাতিপুতিরা কোটার সুবিধা ভোগ করেন।

       ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরোধীদের একটা অংশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিল না। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতে পাকিস্তানপন্থী বাঙালি এবং উর্দুভাষী অবাঙালি অভিবাসীদের নিয়ে '৭১ সালের মে মাসে খুলনায় গঠিত আধা সামরিক বাহিনী রাজাকার নামে পরিচিত হয়। রাজাকাররা পাক সামরিক বাহিনীকে বাংলাদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো দুষ্কর্মে সহায়তা করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর রাজাকারদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালায়।বিগত এক দশকে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে দেখা গেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফার্সি রেজাকার শব্দের অর্থ হলো স্বেচ্ছাসেবক। রেজাকার অপভ্রংশে হয়েছে রাজাকার। বাংলাদেশে রাজাকার একটি অপমানসূচক শব্দ যার অর্থ বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক বা দেশদ্রোহী।আল বদর ও আল শামস নামে আরও দুটি আধা সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর প্রায় এগারো হাজার জনের একটি তালিকা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকার প্রকাশ করলেও নানা ভুল ও অসঙ্গতি ধরা পড়ায় তা শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

       বাংলাদেশের যেকোনো আন্দোলনে ভারত বিদ্বেষী স্লোগান উঠতে দেখা যায়। এবারও আন্দোলনকারীদের মিছিল থেকে আওয়াজ উঠেছে, "ভারত যাদের মামাবাড়ি বাংলা ছাড় তাড়াতাড়ি।" আসলে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ককে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভালো চোখে দেখে না। তারা অভিযোগ করে যে, হাসিনা ভারতের কথায় চলে। তাদের হাসিনা-বিরোধিতা ভারত-বিরোধিতায় পরিণত হয়।আবার বাংলাদেশে অনেক মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন আছে যারা মানসিকভাবে পাকিস্তানপন্থী। এরা সুযোগ পেলেই ভারতবিরোধী বক্তব্য পেশ করে। ক্রিকেট খেলাতে ভারতের পরাজয় ও পাকিস্তানের বিজয় কামনা করে। অনুরূপ কাণ্ডকারখানা অবশ্য ভারতেও ঘটতে দেখা যায়। এদেশের হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো কারণে অকারণে পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে আনে। পাকিস্তান ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিতলেও তাদের মুখ ভার হয়। যখন তখন বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ করা হয়। 'ঘুসপেটিয়া' বলে অপমান করা হয়।

       বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র এখনও যথেষ্ট বিকশিত হয়নি। এবছর জানুয়ারি মাসে টানা চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনার সরকার গঠিত হয়। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ গ্ৰহণ করেনি। চল্লিশ শতাংশের কম ভোট প্রদত্ত হয়। বিভিন্ন আন্দোলন পরিচালনা ও তা দমন করার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ভাবধারার অভাব অনুভূত হচ্ছে। বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো ছাত্রকে গুলি করে মেরে ফেলা কোনো সভ্য সমাজের পুলিশের কাজ হতে পারে না।স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও দেশবাসীকে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের সমর্থক হিসেবে বিভাজিত করা সমীচীন নয়।সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে দুর্বৃত্তদের অনুপ্রবেশের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বকে এব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের কারণে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যাতে সম্পর্ক খারাপ না হয় তার জন্য উভয় দেশের নাগরিক সমাজকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

১১:৩২ এএম, ২৭ জুলাই ২০২৪ শনিবার

নতুন ফৌজদারি আইন: উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়

নতুন ফৌজদারি আইন: উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়

নতুন ফৌজদারি আইন: উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল 

 

      আইন (ল) হল কতকগুলো বিধিবিধান বা নিয়ম-কানুন যা রাষ্ট্র রচনা করে তার নাগরিকদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে। নাগরিক যখন তার স্বীকৃত অধিকারের সীমা লংঘন করে তখন আইন ভঙ্গের ঘটনা ঘটে। আবার নাগরিককে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করাও আইন বিরোধী কাজ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র তথা সরকারও অভিযুক্ত হতে পারে। আদালত আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তি এবং আইন ভঙ্গের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আমাদের দেশে আইন মূলত দুই ধরনের- দেওয়ানি (সিভিল) ও ফৌজদারি (ক্রিমিনাল)। দেওয়ানি আইনের অধীনে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পত্তি, অধিকার ও দায়িত্বের প্রশ্নে উদ্ভূত বিরোধ বা মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। দেওয়ানির বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানানো যায় না। অভিযোগকারীকে সরাসরি আদালতে যেতে হয়। অন্যদিকে, চুরি, ডাকাতি, হামলা, হত্যা, প্রতারণা, লুটপাট, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, অপহরণ, জালিয়াতি প্রভৃতি অপরাধমূলক ঘটনা ফৌজদারি আইনের অন্তর্ভুক্ত। ফৌজদারির বিষয়ে থানা ও আদালত দুই জায়গাতেই অভিযোগ জানানো যায়। ফৌজদারি মামলায় জেল, জরিমানা ও মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি হতে পারে।

     এতদিন ভারতীয় ফৌজদারি আইনের তিনটি অংশের নাম ছিল- ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (১৮৬০), ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট (১৮৭২) ও কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর (১৯৭৩)। আইপিসি বা ভারতীয় দণ্ডবিধি হল ভারতে সংঘটিত নানান ধরনের অপরাধের বিবরণ ও তাদের শাস্তির বিধান সম্পর্কিত প্রধান আইন। জেল, জরিমানা ও মৃত্যুদণ্ডের রায় আইপিসি'র বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী হয়ে থাকে। চালু হবার পর থেকে ব্রিটিশ আমলে তো বটেই স্বাধীন ভারতেও এই বিধির অনেক সংশোধন ও সম্প্রসারণ হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ায় যেকোনো অভিযোগকে সত্য প্রমাণ করা জরুরি।এই কাজটি আইইএ বা ভারতীয় সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী করা হয়। সাক্ষ্য আইন স্থির করে দেয়, মামলায় প্রমাণ হিসেবে কোন তথ্য (ফ্যাক্ট) দেওয়া যাবে অথবা যাবে না এবং কে কীভাবে সাক্ষ্য দেবে। সূচনার পর থেকে সামান্য আধুনিকনিকীকরণ ও সংযোজন ছাড়া সাক্ষ্য আইনে বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি।সিআরপিসি বা ফৌজদারি কার্যবিধির প্রধান কাজ হল বিভিন্ন অপরাধের তদন্ত, অনুসন্ধান তথা বিচার প্রক্রিয়ার অভিমুখ নির্ধারণ করা।সিআরপিসি'র নির্ধারিত পথে সমগ্ৰ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। সিআরপিসি ফৌজদারি মামলার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জেলা ও দায়রা আদালত, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ও পদাধিকারীদের ক্ষমতা ও এক্তিয়ার নির্ধারণ করে। বিভিন্ন অপরাধকে শ্রেণিবদ্ধ করে। অর্থাৎ, কোনো অপরাধ জামিনযোগ্য (বেলেবল) নাকি জামিনযোগ্য নয় অথবা আমলযোগ্য (কগনিজেবল) নাকি আমলযোগ্য নয় তা স্থির করে। আদালতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফর্মের বয়ান তৈরি করে। সিআরপিসি গঠন করা হয় ১৮৮২ সালে এবং পুনর্গঠিত হয় ১৮৯৮ সালে। ১৯৭৩ সালে পুনরায় আমূল পরিবর্তন ঘটানো হয়। বিগত পঞ্চাশ বছরে সিআরপিসি অন্তত ১৮বার সংশোধন করা হয়েছে। সংবিধান (কনস্টিটিউশন) দেশের সর্বোচ্চ আইন। মৌলিক কাঠামো বজায় রেখে সেই সংবিধানও শতাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। কাজেই ফৌজদারি আইনে টুকটাক পরিবর্তন ঘটানোর মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।

       কিন্তু এবার অনেক বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর প্রণীত ও ২০২৪ সালের পয়লা জুলাই প্রবর্তিত নতুন ফৌজদারি আইনে তিনটি অংশের নামই বদলে দেওয়া হয়েছে। আইপিসি, আইইএ ও সিআরপিসি'র নতুন নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বি এন এস), ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম (বি এস এ) ও ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বি এন এস এস)। ঔপনিবেশিক নাম বাদ দেওয়ার জাতীয়তাবাদী যুক্তির আড়ালে নতুন নামকরণের মধ্যে দেশের প্রধান শাসকদলের সংস্কৃত ও হিন্দি ভাষার প্রতি বিশেষ আগ্ৰহের প্রতিফলন ঘটেছে। নতুন নামে শুধু ভাষা নয় ভাবনারও পরিবর্তন ঘটেছে। আইপিসি'র ইংরেজি 'পেনাল'-এর অর্থ দণ্ড বা শাস্তি। কিন্তু বিএনএস'র 'ন্যায়'-এর ইংরেজি হল জাস্টিস। সিআরপিসি'কে 'কার্যবিধি'র মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে 'নাগরিক সুরক্ষা' নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে নতুন নামে নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ পেলেও সরকার বা শাসকদলের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় দূর হচ্ছে না। এর কারণ হল, ইতিমধ্যে তাদের 'আচ্ছে দিন', 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ', 'খাবো না খেতেও দেবো না' প্রভৃতি সুমধুর ভাষ্যের মর্মান্তিক পরিণতি হতে দেখা গেছে।ফৌজদারি আইনের নতুন নামের ক্ষেত্রেও 'মুখে এক কাজে আর এক' করার অভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে হয়।

        প্রয়োজন থাক বা না থাক মোদি সরকারের কিছু করে দেখানোর একটা ঝোঁক রয়েছে। ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী সংসদ ভবন ভালো অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিশ্বের বৃহত্তম সংসদ ভবন সেন্ট্রাল ভিস্তা নির্মাণ, গুজরাটের নর্মদায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বিশ্বের উচ্চতম (১৮৩ মিটার) মূর্তি স্থাপন, গুজরাটের মোতেরা স্টেডিয়ামকে প্রায় সাতশো কোটি ব্যয়ে পুনঃনির্মাণ করে নরেন্দ্র মোদীর নামে বিশ্বের বৃহত্তম স্টেডিয়ামে পরিণত করার মতোই নামধাম পাল্টে দিয়ে নতুন ফৌজদারি আইন প্রণয়ন করে সরকার একটি 'কীর্তি' স্থাপন করতে চেয়েছে। এত ধুমধাম করে যে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে পুরনো আইনে কিছু সংযোজন ও বিয়োজন তথা সংশোধনীর মাধ্যমেও সেই কাজটি করা সম্ভব ছিল। যেমন, আইপিসি'র ২৩টি অধ্যায় (চ্যাপ্টার) ও ৫১১টি ধারা (সেকশন) বিএনএস'তে হয়েছে যথাক্রমে ২০ ও ৩৫৮। আইইএ'র ১১টি অধ্যায় ও ১৬৭টি ধারা বিএসএ'তে হয়েছে যথাক্রমে ১২ ও ১৭০।সিআরপিসি'র ৩৭টি অধ্যায় ও ৪৮৪টি ধারা বিএনএসএস'তে হয়েছে যথাক্রমে ৩৯ ও ৫৩১। অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তি একই থাকলেও বদল করা হয়েছে ধারা নম্বর। যেমন, হত্যার শাস্তির ধারা ছিল ৩০২, হয়েছে ১০৩। হত্যার চেষ্টা ৩০৭ থেকে ১০৯, ধর্ষণ ৩৭৫ থেকে ৬৩, শ্লীলতাহানি ৩৫৪ থেকে ৭৪, প্রতারণা ৪২০ থেকে ৩১৮, মানহানি ৪৯৯ থেকে ৩৫৬ ইত্যাদি।

       আইন শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষার প্রয়োজনে দেশে সুসংহত অপরাধমূলক আইন থাকা জরুরি। কিন্তু সেই আইন কখনও নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার পরিসরে আইন বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু নতুন ফৌজদারি আইনের অন্যতম লক্ষ্য হল বিরোধী কণ্ঠস্বরকে জব্দ করা। কারণে অকারণে একজন নাগরিকের আইনের চোখে অপরাধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পান থেকে চুন খসলেই বিপদ! আসলে নাগরিক সমাজকে আইনের ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করে তোলার কৌশল গ্ৰহণ করা হয়েছে। পেশাগত দাবিতে, রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রচারে, সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার অধিকার খর্ব করতে চাওয়া হয়েছে। সমাজের শিক্ষিত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রগতিশীল চিন্তাবিদদের উগ্ৰ সাম্প্রদায়িক সমাজবিরোধী মানবতাবিরোধী জঙ্গি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে একাকার করে দিয়ে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনের সাহায্যে আরও বেশি করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পথকে প্রশস্ত করা হবে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের শাসকদলে আসতে বাধ্য করা হবে। বিগত এক দশকে এমন ভুরিভুরি দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, বিরোধী দলে থাকার সময় যে ব্যক্তি ছিল কয়লার মতো কালো সেই ব্যক্তি শাসকদলে যোগদান করে হয়ে গেছে দুধের মতো ধবধবে সাদা। 

         নতুন আইনে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তিকে আরও কড়া ও কঠিন করা হয়েছে। যেমন, মৃত্যুদণ্ডের প্রাবল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।আইপিসি'তে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল ১১টি ক্ষেত্রে, বিএনএস-এ তা হয়েছে ১৫টি। অথচ বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ডের কথা ভাবা হয়ে থাকে।আধুনিক বিশ্বে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের জনপ্রিয় দাবির কথাও বিস্মৃত হওয়া উচিৎ নয়।অনেকগুলো ক্ষেত্রে কারাবাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।এখন থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ হল আমৃত্যু কারাবাস। চোদ্দো বছর কারাদণ্ড ভোগের পর বন্দির আচার আচরণ বিবেচনা করে মুক্ত করার যে রীতি ছিল তা রদ করা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ বহু গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন আইনের 'ন্যায়' আর 'নাগরিক সুরক্ষা' জেল, জরিমানা ও মৃত্যুদণ্ডের বহর দেখে লজ্জা পাচ্ছে! আসলে নতুন আইনে দেশের সর্বোচ্চ আইন তথা সংবিধানের মৌলিক ভাবনাকে অস্বীকার করতে চাওয়া হয়েছে।

       ন্যায় সংহিতার ১১১ নম্বর ধারায় যেভাবে 'সংগঠিত অপরাধ'কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তাতে জরুরি পরিষেবায় বাধাদানের অভিযোগ তুলে যেকোনো গণআন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে দেওয়া সম্ভব। এর ফলে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলন করার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে।

        ইউএপিএ,২০১৯ (আন-লফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) একটি দমনমূলক আইন। বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার কথা বলা হলেও মুক্তচিন্তার কণ্ঠস্বরকে জব্দ করার জন্য বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাঁদের বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে। ইউএপিএ থাকছেই, এবার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে আরও কঠোর ভাবে মোকাবেলা করার সংস্থান রাখা হয়েছে বিএনএস-এর ১১৩ নম্বর ধারায়। সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। এই আইনে সমাজের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, সমাজকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

       আইপিসি'র ১২৪এ ধারা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতা (সেডিশন) সম্পর্কিত। সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল সাত বছরের কারাবাস। ব্রিটিশ সরকার ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এই ধারায় অভিযুক্ত করে কারাবন্দি করত। নতুন ফৌজদারি আইনে সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতার কথা নেই। কিন্তু বিএনএস-এর ১৫২ ধারায় যা রয়েছে তা আরও মারাত্মক।এই ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির কথা, লেখা, ছবি বা অন্য কোনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে উস্কানি দিচ্ছে অথবা দেশের সার্বভৌমত্ব, একতা ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করতে প্ররোচনা যোগাচ্ছে বলে মনে হলে সেই ব্যক্তি অভিযুক্ত হবেন। শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সরকারের অথবা শাসকদলের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব নিয়ে চলতে থাকা যেকোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এই ধারায় ধরে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। 

      নতুন ফৌজদারি আইনে পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্ৰেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে পুলিশ হেফাজতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বাড়বে বলে মনে হয়। তদন্ত প্রক্রিয়ার উপরেও গোপন বোঝাপড়ার প্রভাব পড়তে পারে। গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে পুলিশি রাষ্ট্র শোভা পায় না।

      বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার ক্ষেত্রেও নতুন আইন কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে বলে মনে হয় না। প্রথম শুনানির ৬০ দিনের মধ্যে চার্জ গঠন এবং শেষ শুনানির ৪৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শুনানির সর্বোচ্চ সংখ্যা কিংবা প্রথম শুনানি ও শেষ শুনানির মধ্যে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবধানের ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি। অর্থাৎ 'তারিখ পে তারিখ' চলতেই থাকবে। 'জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড'-এর অবসান ঘটবে না। টাকা যার বিচার তার, এই ধারণাও দূর হবে না।

       আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কার দরকার। কিন্তু শুধুমাত্র ফৌজদারি আইনের কিছু অধ্যায় ও ধারার রদবদল ঘটিয়ে এই সংস্কার সাধন করা সম্ভব নয়। এর জন্য আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিচারপতি ও আদালতের কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে। পুলিশের কাজ ভাগ করে দিতে হবে। কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে, কেউ তদন্তের কাজে নিয়োজিত থাকবে। আইন নিরপেক্ষ তথা 'অন্ধ' থাকবে।পক্ষ যদি নিতেই হয় তবে দুর্বলের পক্ষ নিতে হবে।মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রমে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কিত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করা হোক। আইন সম্পর্কে সচেতনতা কম বয়স থেকেই গড়ে উঠুক।

০৬:২৪ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৪ শনিবার

জাতি সত্তা, ভাষা সত্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ডঃ শহীদুল্লাহ

জাতি সত্তা, ভাষা সত্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ডঃ শহীদুল্লাহ

জাতি সত্তা, ভাষা সত্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ডঃ শহীদুল্লাহ

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

 

জাতি সত্তা, ভাষা সত্তা ও ধর্ম নিরপেক্ষতা, এই তিনটি বিষয় নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ তোলপাড়। তোলপাড় আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশ। সমস্ত মৌলবাদীরা কি ধর্মীয় মৌলবাদী, কি ভাষাগত মৌলবাদী, কি জাতিগত মৌলবাদী, সমস্ত মৌলবাদী শক্তিগুলিই আজ দেশে দেশে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মানবতার সামনে এক গভীর চ্যালেঞ্জ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে এই উপমহাদেশে তথা অবিভক্ত ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতি সত্তাগত স্বাতন্ত্র্য ও ভাষাগত স্বাধিকারের আপোষহীন সংগ্রামী বরেণ্য ভাষাতত্ত্ববিদ ডঃ শহীদুল্লাহকে স্মরণ করতে চাই। ইংরেজ শাসনাধীনে ১৮৮৫ সালের ১০ই জুলাই তিনি অবিভক্ত বাংলার অধুনা পশ্চিমবাংলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন এবং ১৯৬৯ সালের ১৩ই জুলাই তৎকালীন পূর্ব্বপাকিস্থানের ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন। শৈশব থেকেই ডঃ শহীদুল্লাহ ছিলেন একজন সংস্কারমুক্ত মানুষ। এবং বলা যায় যে তিনি ছিলেন চিন্তায় ও ভাবনায় গতানুগতিকতা বিরোধী একজন বিপ্লবী চেনতার অনন্য সাধারণ মানুষ। সাধারণের মধ্যে আজও প্রকাশ্যে--অপ্রকাশ্যে এই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে সংস্কৃত হোল বেদ--বেদান্তের ভাষা, দেব-ভাষা, হিন্দুদের ভাষা। আর আরবী হোল কোরাণ ও হাদিসের ভাষা, ইসলামের ভাষা। স্বভাবতঃই মুসলিমরা পড়বে আরবী, হিন্দুরা পড়বে সংস্কৃত। ডঃ শহীদুল্লাহ এই গতানুগতিক ভ্রান্ত ধারণাকে দুপায়ে দলে পিষে, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান লেন এই ক্ষেত্রে। তাঁর বক্তব্য ছিল যে ভাষা কোন বিশেষ ধর্মের বা কোন জাতির বিষয় নয়। ভাষা হোল বেগবতী নদীর ধারার মত। ধর্ম দিয়ে বা জাতপাত দিয়ে তাকে বাঁধা যায় না। এই বাঁধার চিন্তাটাই হোল নির্বোধের হাস্যকর প্রয়াস মাত্র। এই অবস্থান থেকে ডঃ শহীদুল্লাহ সংস্কৃত ভাষা নেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে। মৌলবাদী হিন্দু ও মৌলবাদী মুসলিমরা এতে রে রে করে ওঠে। একদিকে উলেমাপন্থীরা অর্থাৎ মুসলিম মৌলবাদীরা বলতে থাকেন--"মুসলিম ঘরের একটি মেধাবী-উজ্জ্বল সন্তান, সে কোথায় আরবি নিয়ে পড়বে এবং বড় হয়ে ইসলামী ভাবধারা ও ইসলামী সংস্কৃতি চর্চায় মূল্যবান অবদান রাখবে, তা না করে সে কিনা বেদ বেদান্ত উপনিষদের ভাষার দিকে, হিন্দুদের ভাষার দিকে ঝুঁকেছে ও ঝুঁকছে। কোন মোমিন ভাই কি এটা মানতে পারে?

অন্যদিকে, গোঁড়া হিন্দুরা, বিশেষ করে সংস্কৃত পণ্ডিতরা বলতে থাকেন--সংস্কৃত পড়বে হিন্দুরা। তারা এটা পড়ে হিন্দু সংস্কৃতিকে জানবে ও বুঝবে। তা না করে কিনা মুসলিম ঘরের ছেলেরা সংস্কৃত শিখবে! এ অসহনীয়। এ মানা যায় না। হিন্দু ধর্মের তথা দেবভাষা সংস্কৃতের পবিত্রতা এতে বিনষ্ট হবে। শহীদুল্লাহর এই স্পর্ধাকে রুখতেই হবে।

শেষ পর্যন্ত, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখার্জী আসরে নামেন। হিন্দু মৌলবাদী ও মুসলিম মৌলবাদী উভয় মৌলবাদী শক্তিকে ক্ষুরধারভাষায় তিনি আক্রমণ করেন এবং বলেন যে কোন ভাষা কোন বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। সব ভাষার দ্বার সবার কাছে উন্মুক্ত। যে কেউ যে কোন ভাষা নিয়ে চর্চা করতে পারে--এটা তার জন্মগত অধিকার। ধর্মের দোহাই পেড়ে কেউই এক্ষেত্রে কারোর আগ্রহকে দমিত করতে পারে না। দমন করার বা বাধা দেবার কোন চেষ্টা হোল একটি দানবীয় বর্ব্বরতা। এইভাবে স্যার আশুতোষ মুখার্জীর বলিষ্ঠ হস্তক্ষেপে ছাত্র শহীদুল্লাহ সংস্কৃত নিয়ে পড়ার সুযোগ পান। সাম্প্রদায়িকতাবাদী মৌলবাদী হিন্দু ও মুসলিমরা লেজ গোটাতে বাধ্য হয়। 

ধর্ম নিরপেক্ষতার পথে তথা ভাষাগত প্রশ্ন নিয়ে তরুণ শহীদুল্লাহর এইভাবে চলা শুরু। তিনি বাংলা, উর্দূ, আরবি, সংস্কৃত, ইংরাজী সহ ২৪টি ভাষা রপ্ত করেছিলেন। এর মধ্যে ১৬টি ভাষায় তিনি ছিলেন ভীষণ তুখোড়। সাবলীল ভাবে লিখতে, পড়তে, কইতে পারতেন--তাঁর এই ভাষাগত বহুমুখীতা তাঁকে সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে তুলেছিল। তিনি ছিলেন এক সাত্ত্বিক সুন্নী মুসলিম। কিন্তু, কোন ধর্মীয় সংকীর্ণতা তাঁর মনটাকে কলুষিত করতে পারেনি। শিয়া, সুন্নী, হিন্দু, মুসলিম, খৃশ্চান, সকল ধর্মের সকল মতের মানুষের প্রতি তিনি ছিলেন শ্রাদ্ধাশীল। অন্যভাবে বলতে গেলে বলা চলা যে বিবিধ ভাষার চর্চা তাঁকে একজন উদার আন্তর্জাতিকতাবাদী তথা বহুত্ববাদী মানুষে পরিণত করেছিল।

পরাধীন ভারতবর্ষে জন্মে মাতৃভূমির মুক্তির জন্য তাঁর যে দায়, তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে মুসলিম মৌলবাদী উলেমা ও হিন্দু মৌলবাদী পণ্ডিতদের সমস্ত বাধাকে উপেক্ষা করে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের অকুতোভয় হস্তক্ষেপে তিনি কিভাবে সংস্কৃত নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই লড়াই একদিকে তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতার ভিতকে আরো শক্তপোক্ত করেছিল। অন্যদিকে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে তাঁর শ্রদ্ধা গভীরভাবে বেড়ে গিয়েছিল। তবে একটি বিষয় তাঁকে আমরণ পীড়া দিয়েছে তা হোল এই যে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মত একজন আপোষহীন ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের সন্তান হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, যিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী সাম্প্রদায়িক হিন্দু মহাসভার নেতা। ডঃ শহীদুল্লাহ মনে করতেন যে এই দুই অশুভ শক্তির দ্বন্দ্ব বিবেকানন্দ--রবীন্দ্রনাথ--নজরুলের বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করেছে।

স্মরণ রাখা দরকার যে একজন ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী ভাবনার ভাষাবিদ হিসাবে তাঁর সকল ধর্ম ও সকল ভাষার প্রতি সম মর্যাদা বোধ ছিল। কিন্তু, এতদৃসত্ত্বেও তিনি জাতি সত্তার প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। ধর্মের ভিত্তিতে জাতপাত বিভাজনকে তিনি ধিক্কার দিয়েছেন। এই জন্যেই তিনি জিন্না ও ইকবালের সঙ্গে সহমত হতে পারেননি। তিনি তাই মুসলিম লীগে না গিয়ে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁর দৃষ্টিতে জাতিসত্তা চিহ্নিত করার মানদণ্ড মোটেও ধর্ম নয়, সেটা হোল ভাষা ও সংস্কৃতি। তাই তিনি বলতেন আমরা হিন্দু হই, মুসলিমই হই, যাই হই না কেন, সবার আগে আমরা বাঙালী। এই বাঙালী জাতিসত্তার প্রশ্নে তিনি ছিলেন লৌহদৃঢ়। তিনি ছিলেন এর অতন্ত্র প্রহরী।

অন্যভাবে বলতে গেলে বলা চলে যে ডঃ শহীদুল্লাহ মোটেও উগ্র বাঙালীয়ানার প্রবক্তা ছিলেন না। তিনি সব ভাষার প্রতি ছিলেন সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু, এই শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েও তিনি সব সময় মনে রাখতেন ও অন্যকে মনে করিয়ে দিতেন যে তিনি একজন বাঙালী, বাংলা তাঁর মাতৃভাষা এবং বিবেকানন্দ--রবীন্দ্রনাথ--নজরুলের আদর্শপুষ্ঠ বাঙালী সংস্কৃতির তিনি একজন অন্যতম ধারক ও বাহক। তাই পরাধীন ভারতবর্ষে রাষ্ট্র ভাষার প্রশ্নে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের বিতর্কে যুক্তি ও আবেগ উভয় দিয়েই বোঝানোর চেষ্টা করেন যে উর্দূ বা হিন্দী অবশ্যই সমৃদ্ধ ভাষা। কিন্তু বাংলা ভাষার সঙ্গে সমৃদ্ধির কষ্টিপাথরের বিচারে এই দুই ভাষার স্থান অনেক অনেক পরে। জিন্না ও ইকবালকে তিনি ভাষার বিবর্তনের তথ্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে জন্ম ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে উর্দূ ও হিন্দী বাংলার কাছে বহুগুণে ঋণী। কাজেই উর্দূ বা হিন্দী নয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করলে ইতিহাসের সঙ্গে সুবিচার করা হবে। 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী, ও সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফুর খান জাতীয় কংগ্রেস বনাম মুসলিম লীগের রাষ্ট্র ভাষাগত বিতর্কে ডঃ শহীদুল্লার অবস্থানকেই সমর্থন করেছিলেন। গান্ধীজী, সীমান্ত গান্ধী, শরৎচন্দ্র বসু ও কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ লাহিড়ী প্রমুখদের তীব্র বিরোধীতা সত্ত্বেও যখন দেশ বিভাগ অনিবার্য হয়ে উঠলো, তখন ইকবালের দেওয়া পাকিস্থান শব্দটিতে তীব্র আপত্তি জানিয়ে ডঃ শহীদুল্লাই বলেন যে খণ্ডিত বাংলার পূর্ব্ব অংশকে পূর্ব্ব পাকিস্থান না বলে তাকে পূর্ব্ববাংলা নামকরণ করা হোক। কিন্তু, উগ্র ভাষাগত মৌলবাদীরা তাঁর এই প্রস্তাব মানেননি। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকাতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখদের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি সংগঠন তৈরী করেন যার লক্ষ্য হয় পূর্ব্ব পাকিস্থান নামকে পরিবর্তন করে পূর্ব্ববাংলা রাখা এবং বাংলা ভাষা ও বাঙালী সংস্কৃতির অস্তিত্বকে রক্ষা করা। 

পাকিস্থান কর্তৃপক্ষ ডঃ শহীদুল্লাকে পাকিস্থান উর্দূ একাডেমির সভ্য করে। সেখানেও তিনি বাংলা, উর্দূ, বেলুচি, পাঞ্জাবী সহ বিভিন্ন ছোট ছোট "Dialects" বা উপভাষা ও সংস্কৃতি সমূহের সম মর্যাদা ও সমবিকাশের কথা বলেন। কিন্তু পাক কর্তৃপক্ষ তাঁর সে কথায় কর্ণপাত করেননি। সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোল এই যে অবিভক্ত পাকিস্থানে জনসংখ্যার সিংহভাগই বাংলায় কথা বলতেন। স্বভাবতঃই বাংলাই অবিভক্ত পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিৎ বলেই অনেকের মত ডঃ শহীদুল্লাহও মনে করতেন। কিন্তু পাক শাসক গোষ্ঠী সে কথায় কোন গুরুত্বই দেননি--তার পরিণতি আমাদের সকলেরই জানা।

মোট কথা, জাতি সত্তা, ভাষা সত্তা ও ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রশ্ন নিয়ে উপমহাদেশীয় লড়াই বা বিশ্ব জোড়া লড়াই দীর্ঘদিনের এবং সেই লড়াইয়ে নমস্য একাধিক নামের মধ্যে ডঃ শহীদুল্লাহও একটি সম্মানিত ও সর্ব্বজন শ্রদ্ধেয় নাম। সারা পৃথিবীতে, বিশেষ করে ভারত, পাকিস্থান ও বাংলাদেশে এই তিনটি বিষয়ই আজ বিপন্ন। বিশেষ করে আমাদের দেশে, অশোক, আকবর, দারাশিকো, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের দেশে হিন্দু ও মুসলিম উভয় মৌলবাদ, এবং উগ্র হিন্দী আধিপত্যবাদ আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, ছোট বড় সকল জনগোষ্ঠীর জাত সত্তা ও ভাষাগত সত্তাকে বিপন্ন করছে। এর বিরুদ্ধে জাতি ধর্মনির্বিশেষে সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জাতি সত্তা ও ভাষাগত সত্তাকে রক্ষা করতে হবে, এটাই হোল ডঃ শহীদুল্লাহর প্রয়াণ দিবসে তথা প্রয়াণ পক্ষে সময়ের দাবী। 

 

      

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

ঠিকানা-শরনিয়ার বাগান

পোষ্ট-টাকী, পিন-৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

০৫:৫২ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৪ শনিবার

ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একাধিক অসুখে ভুগছে

ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একাধিক অসুখে ভুগছে

ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একাধিক অসুখে ভুগছে

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল

 

     সাম্প্রতিক নিট (NEET-ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট) কেলেঙ্কারি ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার অবস্থা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। নিট-ইউজি (আন্ডার গ্ৰ্যাজুয়েট) পরীক্ষার দুর্নীতি প্রকাশ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নিট-পিজি (পোস্ট গ্ৰ্যাজুয়েট) পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিয়োগের পরীক্ষা ইউজিসি-নেট (ইউনিভার্সিটি গ্ৰ্যান্টস কমিশন-ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট)।মানবদেহের চিকিৎসা যেভাবে পরিষেবা থেকে পণ্য হয়ে উঠছে তাতে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। জনস্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করে যেভাবে ব্যবসার বৃহৎ ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুরবস্থা দূরীকরণে সকলের সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

     চিকিৎসকরা হলেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই চিকিৎসক তৈরি করার পদ্ধতির মধ্যেই গুরুতর গলদ রয়েছে। এই পদ্ধতি যেমন মেধার সাথে আপস করছে তেমনি দুর্নীতির প্লাবন দ্বার খুলে দিচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞানের সিলেবাস ও নিট-এর সিলেবাসের মধ্যে বেশ কিছুটা বৈসাদৃশ্য রয়েছে।আর, এই দুটো পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন অনেকটাই আলাদা।এজন্য নিট-এর প্রস্তুতির সঙ্গে স্কুলের পঠনপাঠনের খুব একটা সম্পর্ক নেই। যারা চিকিৎসক হওয়ার পরিকল্পনা করে তারা উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। এজন্য তারা থিয়োরির ক্লাস নয়, শুধুমাত্র প্র্যাকটিক্যাল ও প্রজেক্টের জন্য স্কুল যাওয়াকেই যথেষ্ট মনে করে। অর্থাৎ চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শিক্ষার্থীদের কাছে স্কুলের তেমন গুরুত্ব থাকে না। মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের বিদ্যালয়বিমুখতাকে শিক্ষা ব্যবস্থার একটি নেতিবাচক দিক হিসেবেই দেখা দরকার।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বকে অস্বীকার করে প্রথাবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে না।নিট ও উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞানের বিষয় অর্থাৎ জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যার পাঠক্রমের মধ্যে প্রভেদ না রেখে নিটের সিলেবাসে কিছু বাড়তি অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এতে মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের পক্ষে দুটি পরীক্ষাতেই ভালো ফল করার সম্ভাবনা বাড়বে। এখন যে পড়ুয়া উচ্চমাধ্যমিকে জোর দেয় সে নিটে ভালো করে না আর যে নিটে জোর দেয় সে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো করে না। একজন পড়ুয়ার খুব কাছাকাছি সময়ে দেওয়া দুটো পরীক্ষায় দুরকম ফল হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

    ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা সর্বভারতীয় না হয়ে রাজ্য ভিত্তিক হওয়া উচিৎ। ২০১৭ সালে জাতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট চালু হওয়ার আগে সেটাই ছিল।যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিকেন্দ্রীকরণের বদলে সবকিছু কেন্দ্রীকরণের প্রচেষ্টা কেন? পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে বলতে পারি, কয়েক বছর পূর্ব পর্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী পড়ুয়ারা দু'একজন প্রাইভেট টিউটর অথবা জেলার অভ্যন্তরে কোনো কোচিং সেন্টারের সাথে সংযুক্ত থেকে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় (JEE) সফল হয়ে ডাক্তারি পড়েছে। আর, এখন নিটের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ভালো কোচিং সেন্টারের সন্ধানে অনেককেই রাজ্যের বাইরে চলে যেতে দেখা যাচ্ছে।প্রচুর টাকা পয়সা খরচ হচ্ছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেয়ে অথবা পড়াশোনার চাপ সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে বসছে। কয়েক বারের চেষ্টায় অসফল হয়ে অনেকের ছাত্রজীবনে ও কর্মজীবনে অন্ধকার নেমে আসছে। তারা ডাক্তার হতে গিয়ে জীবনযুদ্ধে চিররোগী হয়ে পড়ছে।কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলোর রমরমা ব্যবসায় কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না।

       মেডিক্যাল কলেজ ও এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি) কোর্সের আসন সংখ্যা প্রায় প্রতি বছরই বৃদ্ধি পায়। সেটাই স্বাভাবিক। এন এম সি (ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশে মেডিক্যাল কলেজ ও এমবিবিএস-এর আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৭০৬ ও ১০৯১৪৫। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি কলেজের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৮৬ ও ৩২০ আর তাদের আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫৮৮০ ও ৫৩২৬৫। অর্থাৎ, চিকিৎসক তৈরির সরকারি আয়োজনকে প্রায় ধরে ফেলেছে বেসরকারি উদ্যোগ এবং অদূর ভবিষ্যতে হয়তো অতিক্রম করে যাবে। ২০২৪ সালে নিট-ইউজি'র পরীক্ষার্থী ছিল ২৩ লক্ষ ৩৩ হাজার। সর্বমোট ৭২০ নম্বরের পরীক্ষায় পাস নম্বর নির্ধারিত হয় ১৩৮। অর্থাৎ, ২০ শতাংশের কম নম্বর পেয়েও একজন পরীক্ষার্থী ডাক্তারি পড়ার যোগ্যতা অর্জন করছে। এত কম নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও পাস করা যায় না। স্কুল শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এর থেকে অনেক বেশি পার্সেন্টেজ পেতে হয়। অতি সাধারণ বা নিম্ন মেধার পড়ুয়ারা ডাক্তার হলে তো খুব মুশকিল! নেট-ইউজি'র পুরো প্রশ্নপত্রটাই এমসিকিউ (মাল্টিপ্ল চয়েস কোশ্চেন) দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ কিছু লেখার দরকার নেই। চারটি বিকল্প থাকে। সেখান থেকে সঠিকটা চিহ্নিত করতে হয়। এরূপ একমাত্রিক পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে পড়ুয়াদের জ্ঞান, বোধ, বুদ্ধি, উদ্ভাবনী শক্তি ও স্মরণ শক্তি তথা সামগ্ৰিকভাবে মেধা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায় না।মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে যে পেশাজীবীদের সঙ্গে সেই চিকিৎসকদের মেধার সাথে কখনও আপস করা উচিৎ নয়। সত্যিকারের মেধাবী ও পরিশ্রমী পড়ুয়ারাই যাতে ডাক্তার হয় তা নিশ্চিত করা দরকার।এজন্য বর্তমানে মেডিক্যালের যে পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে তা পাল্টানো এবং পাস নম্বর বাড়ানো জরুরি।

       এমবিবিএস কোর্স করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ সরকারি কলেজ। এর একটা বড় কারণ সরকারি কলেজে পড়াশোনা করার খরচ বেসরকারি কলেজের তুলনায় অনেকটাই কম। পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স সরকারি কলেজে সাকুল্যে ২-৩ লাখ টাকায় হয়ে যায়। এর ফলে মধ্যবিত্ত তো বটেই এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারের পড়ুয়াকেও আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় না।কিন্তু বেসরকারি কলেজে পড়ার খরচ ৭০ লাখের উপরে শুরু হয় এবং তা ১ কোটি থেকে ১.৫ কোটিতে পৌঁছায় যা কেবলমাত্র উচ্চবিত্তদের পক্ষেই অ্যাফোর্ড করা সম্ভব।সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোর্স ফি-এর মধ্যে এমন বিশাল ব্যবধান আমাদের 'সমাজতান্ত্রিক' দেশে কতটা যুক্তিযুক্ত ভেবে দেখা দরকার। বেসরকারি কলেজের ফি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্ধারিত হওয়া উচিত।

     নিট-ইউজি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যে মেধা তালিকা তৈরি হয় তার প্রথম দিককার স্থানাধিকারীরা সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়।কে কোন কলেজে ভর্তি হতে পারবে সেটাও নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেয়। ২০২৪ সালে ২৩ লাখ ৩৩ হাজার পরীক্ষার্থী ছিল। উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লক্ষ। প্রথমদিককার ৫৬ হাজার প্রার্থী সরকারি কলেজে ভর্তি হবে। বাকি ৫৩ হাজার আসনে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে।বেসরকারি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধা তালিকার ক্রমিক নম্বরের কোনো গুরুত্ব নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বেসরকারিতে ৫৫০ নম্বর পাওয়া পড়ুয়ার যতটুকু অধিকার ১৫০ নম্বর পাওয়া প্রার্থীরও ততটুকু অধিকার। মেধার কোনো মূল্য নেই। আসলে এখানে পুরোটাই টাকার খেলা। যার টাকা আছে সে ন্যূনতম কোয়ালিফাইং নম্বর পেয়েই ডাক্তারি পড়ার ছাড়পত্র পেয়ে যাবে আর, যার টাকা নেই সে দুই-চার নম্বর কম পাওয়ার কারণে সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারেনি বলেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না।নিটে ৭৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া দরিদ্র পরিবারের ছেলেটি বা মেয়েটি ডাক্তার হতে পারবে না কিন্তু ২০ শতাংশ নম্বর পাওয়া ধনী পিতামাতার সন্তানের গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলবে।এই ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবেই ভালো মানের চিকিৎসক তৈরির পরিপন্থী।

      ভারতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করার অত্যধিক খরচের জন্য প্রতি বছর লক্ষাধিক নেট উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশ, ইউক্রেন, চীন প্রভৃতি দেশে পাড়ি দেয়। বাংলাদেশে ৩০-৪০ লাখে ও ইউক্রেনে ২০-২৫ লাখে ডাক্তারি পড়া যায়। চীনে আরও কম টাকায় ডাক্তারি পড়ানো হয়। তাহলে ভারতে প্রাইভেট কলেজে এমবিবিএস কোর্সে কোটি টাকার গল্প কেন? আসলে আমাদের দেশের সরকার স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধি আর কোটিপতি বাবামায়ের সন্তানের চিকিৎসক হওয়ার পথ প্রশস্ত করতেই নিটের নিয়মাবলি রচনা করেছে।

      নিট পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতির পেছনেও একটি বড় কারণ প্রাইভেট কলেজের ফি। যাদের ৮০-১০০% নম্বর পাওয়ার মতো মেধা নেই বা বলা যায় যাদের সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই তাদের একাংশ প্রশ্নপত্র কেনার চেষ্টা করে। ৩০-৪০ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে ভালো ফল করে সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারলে বেসরকারি কলেজে পড়ার খরচ ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। দুর্নীতির মধ্যেও অঙ্ক রয়েছে! সুতরাং, দুর্নীতি বন্ধ করার একটা উপায় হিসেবেও প্রাইভেট কলেজের ফি কমানো দরকার।

       বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর টাকা খরচ করে যারা ডাক্তার হয় তাদের অনেকেই চেষ্টা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই টাকা তুলে নেওয়া যায়। ডাক্তার হয়ে 'মানবসেবা'র কথা বিস্মৃত হয়ে তারা অর্থ উপার্জনে মনোনিবেশ করে। সরকারি বেতনে তাদের পোষায় না। তারা সরকারি চাকরির পরওয়া করে না। সরকারি চাকরি পেলে ভালো, না পেলেও ক্ষতি নেই। প্রাইভেট চেম্বার ও প্রাইভেট হাসপাতাল তথা নার্সিংহোমই যথেষ্ট।যত রকম ভাবে সম্ভব পেশেন্ট পার্টির পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হবে। প্রথমত, চার-পাঁচ মিনিটে রোগী দেখে একটা প্রেসক্রিপশন লিখে চার-পাঁচশো টাকা 'ভিজিট' নেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজন না থাকলেও প্রেসক্রিপশনে এক বা একাধিক টেস্ট লিখে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে 'কমিশন' খেতে হবে। টেস্ট যত দামী হবে কমিশন তত বেশি হবে। তৃতীয়ত, ওষুধ ব্যবসায়ীদের এজেন্ট তথা মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের কথা মতো কাজ করে 'গিফট' নিতে হবে। এভাবেই অনৈতিক উপায়ে দৈনিক হাজার হাজার অথবা লক্ষাধিক টাকা উপার্জন নিশ্চিত করা হবে। টাকার জোরে বেসরকারি কলেজ থেকে ডাক্তার হয়ে যখন অনেকেই এত উপার্জন করে তখন যারা মেধার জোরে সরকারি কলেজ থেকে ডাক্তার হয়েছে তারা প্রথমজনদের থেকে কম উপার্জনকে মেনে নিতে পারে না। তখন তারাও প্রথমজনদের পথ অবলম্বন করে। দুটি ক্ষেত্রেই কিছু ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু সাধারণ প্রবণতা হল আজকাল অর্থের জন্য চিকিৎসকদের 'ভগবান' থেকে 'কসাই' হতে আপত্তি নেই। চিকিৎসকদের এই অসুস্থ মানসিকতা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক।

      ওষুধ ব্যবসা সাংঘাতিক মুনাফার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।ওষুধ কোম্পানি ও চিকিৎসকদের একাংশের যোগসাজশে অত্যন্ত চড়া দামে বাজারে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকে ব্যবহৃত স্ট্রেপ্টোকাইনেজ ইনজেকশন পেশেন্ট পার্টিকে কিনতে হয় ৯ হাজার টাকা দিয়ে, অথচ ইনজেকশনটির প্রকৃত মূল্য ৭০০-৯০০ টাকা। টাইফয়েডে ব্যবহৃত মনোসেফ ট্যাবলেটের পাইকারি মূল্য ২৫ টাকা, কিন্তু ফার্মেসি থেকে দ্বিগুণ অর্থ দিয়ে কিনতে হয়। ডায়ালাইসিসের একটি ৫০০ টাকার ইনজেকশন পেশেন্ট পার্টিকে কিনতে হয় ১৮০০ টাকা দিয়ে। সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ১৫০ টাকার অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে ডাক্তার হয়তো প্রেসক্রাইব করছেন ৫৪০ টাকা মূল্যের কোনো অ্যান্টিবায়োটিক। বাজারে একটি আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট করলে দিতে হয় ৭৫০ টাকা, রেডিওলজিস্ট পায় ২৪০ টাকা, বাকিটা ডাক্তারের কমিশন।এম আর আই করতে ডাক্তারের কমিশন ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। 

       স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল বদল দরকার। কিন্তু বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়নের যুগে তার খুব একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সরকার শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে ক্রমাগত হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ যত কমবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও শোষণ তত বাড়বে। মূল্যবোধ ও মানবিকতার অবক্ষয় আরও ত্বরান্বিত হবে। জনসচেতনতা ও গণপ্রতিরোধ ছাড়া অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয়।

০৪:৩৮ পিএম, ৫ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার

আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে সুতিতে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা

আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে সুতিতে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা

আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে সুতিতে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা

মোঃ ইজাজ আহামেদ

 

সুতি, ১৯ এপ্রিল: আজ আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মাননীয় খলিলুর রহমানের সমর্থনে

সুতির ছাবঘাটী কে.ডি বিদ্যালয় ময়দানে জনসভায় উপস্থিত ছিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মোহাম্মদ আখরুজ্জামান, বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস, বিধায়ক জাকির হোসেন, বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ জেলার সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা, তৃণমূল কংগ্রেসের সুতি ২ ব্লক সভাপতি লতিফুর রহমান, সহ সভাপতি মাসুদ রানা প্রমুখ নেতা নেতৃবৃন্দ। এদিন জনসভায় মানুষের উপচে পড়া ভীড় দেখা যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত নেতা-নেত্রীগণ জনকল্যাণমুলক ও উন্নয়নমুলক কাজের কথা আলোকপাত করেন জনতার কাছে। জনস্রোতে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থনের আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়

। 

১০:২০ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার

জঙ্গীপুরে অনুষ্ঠিত হলো কংগ্রেস- বাম জোট প্রার্থীর জনসভা

জঙ্গীপুরে অনুষ্ঠিত হলো কংগ্রেস- বাম জোট প্রার্থীর জনসভা

জঙ্গীপুরের মহম্মদপুরে অনুষ্ঠিত হলো কংগ্রেস- বাম জোট প্রার্থীর জনসভা

মোঃ ইজাজ আহামেদ

 

জঙ্গিপুর: ১৩ এপ্রিল শনিবার বিকেলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী মুর্তজা হোসেনের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হলো জঙ্গীপুরের মহম্মদপুরের হলুদ মিল মোড়ে। প্রধান বক্তা ছিলেন পার্লামেন্টের বিরোধী দলনেতা, পি সি সি চেয়ারম্যান, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন লোকসভা প্রার্থী মর্তুজা হোসেন, মোঃ মিরকাশিম, মোহন মহাতো প্রমুখ নেতা নেতৃগণ। এদিন তাঁরা বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি সহ দেশে চলমান অন্যান্য সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এদিন জনসভায় মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। 

১০:৫৫ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০২৪ রোববার

নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কিত কিছু ভাবনা 

নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কিত কিছু ভাবনা 

নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কিত কিছু ভাবনা 

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল 

 

      সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার সংসদীয় শাসনব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে লোকসভা, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত বা পৌরসভা- এই তিনটি প্রধান ভোট।অর্থাৎ, দেশের প্রতিটি শহর ও গ্ৰামে প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত তিনবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনকে এখন গণতন্ত্রের উৎসব বলা হচ্ছে। এদিক থেকে দেখলে লোকসভা নির্বাচন দেশের বৃহত্তম উৎসব।একইভাবে বিধানসভার ভোট সংশ্লিষ্ট রাজ্যের এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন গ্ৰামীণ এলাকার সবচেয়ে বড় উৎসব।রাষ্ট্র, রাজ্য অথবা স্থানীয় এলাকার সরকার গঠনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত উৎসব অনেকসময়ই উপভোগ্য থাকে না। নানাবিধ কারণে অনেকের কাছেই এই উৎসব আনন্দদায়ক হওয়ার পরিবর্তে বিরক্তিকর ও আতঙ্কজনক হয়ে ওঠে। এজন্য সমগ্ৰ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কিভাবে আরও সহজ, সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করার অবকাশ রয়েছে।   

      লক্ষ্য করলে দেখা যায়, স্বাধীন ভারতে ১৯৫২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৭২ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থায় বেশকিছু নিয়মের রদবদল করা হয়েছে।যেমন, ৬১তম সংবিধান সংশোধনী, ১৯৮৯-এর মাধ্যমে ভোটাধিকারের ন্যূনতম বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়। ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনের সময়ে (১৯৯০-১৯৯৬) একাধিক উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধন হতে দেখা যায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার দিন থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য আদর্শ আচরণবিধি (মডেল কোড অব কনডাক্ট) কার্যকর করা হয়। প্রচারণার জন্য প্রার্থীদের ব্যয়ের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হয়। প্রচারণায় সাম্প্রদায়িক ও বর্ণভিত্তিক মন্তব্য নিষিদ্ধ করা হয়। ভোট প্রচারের সময় মন্ত্রিসভা তথা আইনসভার সদস্যদের সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।১৯৯৩ সালে সকল ভোটারের জন্য সচিত্র পরিচয় পত্র বা এপিক চালু করা হয়। এখন ভোটার লিস্টেও ভোটারের ফটো থাকে। বাড়ি বাড়ি ভোটার স্লিপ পৌঁছে দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্ৰহণ করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে ভোটগ্ৰহণ কেন্দ্রে গিয়েও একজন ভোটারের কোনো প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ইভিএম-এ 'নোটা' বোতাম সংযুক্ত করা হয়। ভিভিপ্যাট থেকে ভোটার দেখে নিতে পারেন তিনি যে প্রার্থীকে ভোট দিলেন তিনিই সেই ভোট পেলেন কিনা। আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটপ্রদান পর্ব শেষ হবার অব্যবহিত পরে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রেই ভোট গণনা করা হতো, এখন তা দিন কয়েক পর বিডিও অফিসের তত্ত্বাবধানে করা হয়। আগে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ভোটকর্মীদের ব্যক্তিগত ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হতো, এখন ভোটকর্মীদের নিজ নিজ বিধানসভা এলাকায় ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়। গত শতক পর্যন্ত এক দিনেই ভোট গ্ৰহণ করা হয়েছে, এখন তা অধিকাংশ রাজ্যে একাধিক দফায় করা হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন রাজ্য পুলিশ এবং তাৎক্ষণিক ভাবে নিযুক্ত লাঠিধারী ভলান্টিয়ার। এখন লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া করা হয় না। কাজেই বলা যায়, আমাদের দেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নানান সংযোজন-বিয়োজন বা পরিবর্তন ঘটেই চলেছে।

      নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের ধারাবাহিকতায় আরও কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার বলে মনে হয়।যেমন- এক, ভোটাধিকারের ন্যূনতম বয়স কয়েক বছর বাড়ানো উচিত কারণ একজন ব্যক্তির মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হওয়ার জন্য আঠারো বছর বয়স যথেষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা শেষ করতেই সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর বয়স ২৪-২৫ বছর হয়ে যায়। আমাদের দেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর। ভোটাধিকারের ন্যূনতম বয়সও ওটাই করা যেতে পারে। দুই, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা হোক যাতে মানুষ বিভিন্নভাবে এতে সামিল হতে পারে। ১৯৫২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনো লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রদানের জাতীয় গড় ৭০ শতাংশ অতিক্রম করেনি। ৩০ শতাংশ ভোটারের ভোটদানে বিরত থাকা সংসদীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে স্বাস্থ্যকর পরিসংখ্যান হতে পারে না। একজন ভোটার ব্যস্ততা, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও যাতে সে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা দরকার। অনলাইনে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করি। তাহলে 'ডিজিটাল' ভারতে অনলাইনে ভোট গ্ৰহণে অসুবিধা কোথায়? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কলকাতা হাইকোর্ট ই-মেল ও হটসআপের মাধ্যমে মনোনয়ন পত্র পেশ করার অনুমতি দিয়েছিল। তিন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে একটা ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হোক। যেটা ছাড়া একজন নাগরিকের পক্ষে কোনো সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব নয় সেটা ছাড়া একজন নাগরিক আইনসভার সদস্য হবেন কেন? ছোটবেলা থেকে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া না শিখে সমাজবিরোধী ও অসামাজিক কার্যকলাপ করতে করতেই অনেকের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটছে এবং তারা জনপ্রতিনিধিও হয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। চার, ভোট প্রক্রিয়ার দীর্ঘীকরণ রোধ করা হোক। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়েছে ১৬.৩.২৪ তারিখ।মোট সাত দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে।প্রথম দফা (১৯.৪.২৪) থেকে অন্তিম দফার (১.৬.২৪) ব্যবধান ৬ সপ্তাহ। ভোট গণনা হবে ৪.৬.২৪ তারিখ। অর্থাৎ নির্ঘণ্ট ঘোষণা থেকে গণনা দীর্ঘ ৮০ দিনের ব্যাপার। ১৭তম লোকসভা নির্বাচনও সাত দফায় অনুষ্ঠিত হয়।নির্ঘণ্ট ঘোষণা থেকে গণনা চলে ৭২ দিন ধরে। ভোটদান পর্বকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থেই এমন প্রলম্বিত সূচির প্রয়োজনীতার কথা বলা হলেও বাস্তবে উল্টোটাই ঘটতে দেখা যায়। ভোট প্রক্রিয়া যত দীর্ঘমেয়াদী হয় প্রার্থীদের পক্ষে বাহুবল ও অর্থবল দেখানোর সময় ও সুযোগ তত বৃদ্ধি পায়। নির্বাচন পর্ব কম সময়ের মধ্যে সাঙ্গ হলে সাধারণ ভোটাররা অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত বা বিভ্রান্ত না হয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি অনুযায়ী ভোট দিতে পারেন।সমগ্ৰ ভোট প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জনজীবন ও প্রশাসনিক কাজকর্মকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিৎ। পাঁচ, অন্তর্বর্তী নির্বাচন রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা দরকার।বিকল্প সরকার গঠনের নিশ্চয়তা তৈরি না করে কোনো ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটানো যাবে না, এই মর্মে আইন প্রণয়ন করতে হবে। ঘন ঘন ভোট যজ্ঞের আয়োজন দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য ও স্থায়ী উন্নয়নের পরিপন্থী।ছয়, ভোট গ্রহণ করতে গিয়ে ভোটকর্মীদের অমানসিক চাপ সহ্য করতে হয়। তাই কোনো সরকারি কর্মচারী-শিক্ষকই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকর্মী হতে চান না। প্রিসাইডিং অফিসার নানান ধরণের ফর্ম পূরণ করতে করতেই নাজেহাল হয়ে পড়েন।এত বেশি নিয়মাবলী প্রয়োগ করার কথা বলা হয় যে, বুথের মধ্যে সেসব মনে রাখা ও কার্যকর করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ এগুলোর সঙ্গে ভোটকর্মীদের নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন ও সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করার খুব একটা সম্পর্ক নেই। অজস্র অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্রের হিসেব রাখার পরিবর্তে ভোট গণনা করার জন্য যেটুকু তথ্য দরকার ভোটকর্মীদের কেবল সেটুকুই প্রস্তুত করতে বলা হোক। লক্ষ্যের থেকে উপলক্ষ্যকে বড় করে ভোটকর্মীদের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে ফেলা বন্ধ হোক। সাত, ইভিএম ও অন্যান্য কাগজপত্র ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া এবং ভোট গ্রহণ শেষে সেগুলো সংগ্ৰহ করার দায়িত্ব সেক্টর অফিসারের ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে। অর্থাৎ ডিসি-আরসি'র কাজ করবেন সেক্টর অফিসার আর সেক্টর অফিসারের সঙ্গে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ভোটকর্মীদের বোঝাপড়া হবে। আট, কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার জন্য অথবা সামগ্ৰিকভাবে ভোটের কাজে দীর্ঘদিন ধরে পঠনপাঠন বন্ধ রেখে স্কুল-কলেজ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। আমরা যেন মনে না করি- সবার উপরে ইলেকশন সত্য তাহার উপরে নাই।

       সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় দেশের সকল নাগরিকেরই কমবেশি রাজনীতি সচেতন হওয়া দরকার।এই সচেতনতা শুধু ভোটের সময় রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের ভাষণ শুনে তৈরি হয় না। সারা বছর চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে হবে। ভোটের সময় তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সরকার গঠনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে সহজ ভাবে গ্ৰহণ করতে হবে। রাজনীতিতে শাসক পক্ষ ও বিরোধী পক্ষ উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানুষ ঠিক করবে কোন দল কোন দায়িত্ব পালন করবে। ভোট নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি ভালো নয়। আজকের দিনে রাজনীতিতে চরম অবক্ষয়ের জন্য জনগণের অজ্ঞতাও অনেকাংশে দায়ী।

০২:০৫ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের জনপ্রিয়