ব্রেকিং:
আরজি কর মেডিকেলে ২০০ কোটির দুরনীতি, একাধিক প্রভাবশালীর জোগ থাকার সম্ভাবনা নলপুরে বেলাইন সেকান্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস চলতি মাসেই ২০ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা, রয়েছে নিম্নচাপের সম্ভাবনাও আগ্রা- লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু রায়গঞ্জের কুলিকে শিশুর প্রাণ বাচিয়ে ডুবে মৃত্যু তরুণের গাজোলে মাটি খুড়তে গিয়ে উদ্ধার ১৬টি রুপার মুদ্রা

বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মুর্শিদাবাদের সুতিতে শুট আউট। CSK-তে যাচ্ছেন ঋষভ? সামনে এল বড় খবর

বাংলায় অমুসলিমদের ইসলাম চর্চা

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৯ ০৯ ৪৫  

বাংলায় অমুসলিমদের ইসলাম চর্চা
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল 

      শত শত বছর ধরে পাশাপাশি অবস্থান করলেও বাংলার হিন্দু ও মুসলমানরা পরস্পরকে ভাল করে বুঝতে চেষ্টা করেনি, এরূপ একটা অভিযোগ বা উপলব্ধি আমাদের অনেকেরই রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ঘটনা ঘটার জন্য দুটো সম্প্রদায়ের পরস্পরকে জানার এই অনাগ্ৰহ অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করা হয়। পরস্পরকে যথেষ্ট পরিমাণে না জানার কারণে কিছু কিছু বিস্ময়কর বিভ্রাটও ঘটে থাকে।যেমন, বাঙালি বলতে এখনও আমরা অনেকেই শুধুমাত্র হিন্দুদেরই বুঝে থাকি। ধারণাটা এই রকম- মুসলমানদের একটাই পরিচয় তারা মুসলমান; তারা বাঙালি, বিহারী অথবা মারাঠি হতে পারে না। বাংলার কোনো মুসলমানকে ভালো বাংলা বলতে শুনে কোনো কোনো হিন্দু বিস্মিত হন, কারণ তাদের ধারণা হল, মুসলমানদের মাতৃভাষা বাংলা নয়; উর্দু অথবা আরবি।দুর্গা, কালী, সরস্বতী, শিব, গণেশ প্রভৃতি দেবদেবীর নামে আলাদা আলাদা পুজোর মতোই যে মুসলমানদের দুটো ঈদের পৃথক নামকরণ- ঈদ উল ফিতর এবং ঈদ উল আযহা- রয়েছে, তাও অধিকাংশ হিন্দু প্রতিবেশীর অজানা। পরস্পরকে ঠিকঠাক না জানার এই আবহের মধ্যেই সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কিছু উচ্চবর্গীয় ব্যক্তিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কে খুব নিঁচু মনোভাব পোষণ করতে দেখা যায়।ন্যায্য সমালোচনার সীমা ছাড়িয়ে মুসলমানদের ধর্ম ও শিক্ষা-সংস্কৃতিকে তীব্র আক্রমণ করে তাঁরা সম্প্রীতির সম্মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। তবে আশার কথা এই যে, অন্যায্য উপেক্ষা ও কটাক্ষের বিপরীতে ইসলাম ও মুসলমানদের আন্তরিকভাবে জানতে উদ্যোগী হয়েছেন এমন বিখ্যাত অমুসলমান ব্যক্তির সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাঁদেরই কয়েকজনের কথা বর্তমান নিবন্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
      বাংলার নবজাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত  রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) ইসলাম ধর্মের মূল সত্যকে অনুধাবন করতে সচেষ্ট হন। ইসলামের সুফিবাদ তাঁকে আকৃষ্ট করে। একেশ্বরবাদ নিয়ে তিনি ফারসি ভাষায় রচনা করেন 'তুহফাত-উল-মুয়াহিদ্দীন'।বইটির ভূমিকা লেখা হয় আরবি ভাষায়। বাংলার নবজাগরণের আরেক পুরোধা ব্যক্তিত্ব ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন (১৮৩৮-১৮৮৪) ইসলাম সম্পর্কে জানতে খুব আগ্ৰহী ছিলেন। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত তাঁর একটি গ্ৰন্থ হল 'হাফেজ'।
      মুসলমানদের প্রধান ধর্মগ্ৰন্থ পবিত্র কোরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদ করেন বিশিষ্ট ব্রাহ্ম নেতা গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৫-১৯১০)। ইসলামি সাহিত্য সাধনায় তিনি যেভাবে আত্মনিয়োগ করেন তা এককথায় অভূতপূর্ব। ইসলাম চর্চার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ওপর জোর না দিয়ে তিনি অভিজ্ঞ মাওলানাদের কাছে আরবি উর্দু ফারসি ভাষা শেখেন। ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে পাণ্ডিত্য অর্জন করার জন্য তাঁকে মৌলভী বলা হত। আবার হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সব সম্প্রদায়ের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিলেন বলে মানুষ তাঁকে ভালোবেসে 'ভাই' বলতো। গিরিশচন্দ্র ইসলাম বা মুসলিম সমাজ সম্পর্কে মৌলিক গ্ৰন্থ রচনার পাশাপাশি মুসলমান পণ্ডিতদের লেখা বহু বইয়ের বঙ্গানুবাদ করেন।যেমন, মধ্যযুগের প্রখ্যাত পারস্য কবি শেখ শাদির  'গুলিস্তান ও বুস্তান' গ্ৰন্থের কয়েকটি গল্পের বঙ্গানুবাদ করে প্রকাশ করা হয় 'হিতোপদেশমালা'। বিভিন্ন ওলি-আওলিয়ার জীবন কাহিনি অবলম্বনে রচিত ফারসি কবি মাওলানা ফরিদ উদ্দীন আত্তারের গ্ৰন্থ 'তাযকিরাতুল আওলিয়া'র বঙ্গানুবাদ 'তাপসমালা' গিরিশচন্দ্রের একটি বড় কাজ।পূর্বে উল্লেখিত রামমোহন রায়ের 'তুহফাত-উল-মুয়াহিদ্দীন'-এর বঙ্গানুবাদ করে তিনি ধর্মতত্ত্ব পত্রিকায় প্রকাশ করেন। 'মহাপুরুষচরিত' গ্ৰন্থে হযরত ইব্রাহিম, দাউদ, মুসার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। তিন খণ্ডে প্রকাশিত 'জীবনচরিতমালা' শীর্ষক গ্ৰন্থে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনের নানান দিকের ওপর আলোকপাত করা হয়। ভাই গিরিশচন্দ্রের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুস্তক হল 'ইমাম হাসান ও হোসাইন'; প্রথম চার খলিফার জীবন নিয়ে 'চারিজন ধর্মনেতা'; হযরত খাদেজা, ফতেমা, আয়েশা ও রাবেয়ার জীবন সম্পর্কে 'চারি সাধ্বী মোসলমান নারী'; ফারসি থেকে ধর্মীয় নীতি কথার অনুবাদ 'তত্ত্বরত্নমালা'; হাদিসের বঙ্গানুবাদ 'হাদিস-পূর্ব বিভাগ' ও 'হাদিস-উত্তর বিভাগ' ইত্যাদি। কুরআনের বঙ্গানুবাদ বাংলা সাহিত্যে গিরিশচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ অবদান। তিনি পর্যায়ক্রমে মোট ১২ খণ্ডে এই অনুবাদ কর্ম সমাপ্ত করেন। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে।একজন অমুসলমানের  কুরআনের বঙ্গানুবাদ নিয়ে মুসলিম সমাজের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে গিরিশচন্দ্র কিছুটা সন্ধিহান ছিলেন।৩২ পৃষ্ঠার প্রথম খণ্ডে তাই অনুবাদকের নাম রাখা হয়নি। কিন্তু এক এক করে  খণ্ডগুলো যতই প্রকাশিত হতে থাকে ততই সেগুলো মুসলিম সমাজে প্রশংসিত হতে দেখা যায়। মুসলমান পাঠকরা সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় পত্র প্রেরণ করে অনুবাদককের নাম প্রকাশের আবেদন জানান- "কুরআনের উপরিউক্ত অংশের অনুবাদ এতদূর উৎকৃষ্ট ও বিস্ময়কর হইয়াছে যে, আমাদিগের ইচ্ছা অনুবাদক সমীপে স্বীয় নাম প্রকাশ করেন।যখন তিনি লোকমণ্ডলীয় এতোদৃশ্য উৎকৃষ্ট সেবা করিতে সক্ষম হইবেন তখন সেই সকল লোকের নিকট আত্মপরিচয় দিয়া তাঁহার উপযুক্ত সম্ভ্রম করা উচিৎ।" ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত সম্পূর্ণ খণ্ডে অনুবাদক হিসেবে গিরিশচন্দ্র সেনের নাম উল্লেখ করা হয়। 
      গদাধর চট্টোপাধ্যায় অর্থাৎ হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংস (১৮৩৬-১৮৮৬) ইসলাম সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেও তিনি দ্বিধা করেননি। সব ধর্মকেই সত্য মনে করতেন বলেই তাঁর দার্শনিক উপলব্ধি হয়েছিল- যত মত, তত পথ। বিভিন্ন ধর্মের মূলগত ঐক্যকে খুব সহজ করে তিনি তুলে ধরেছেন, "আমার ধর্ম ঠিক,আর অপরের ধর্ম ভুল- এ মত ভালো না। ঈশ্বর এক বই দুই নাই। তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে।কেউ বলে গড, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে কৃষ্ণ, কেউ বলে শিব, কেউ বলে ব্রহ্ম।যেমন, পুকুরে জল আছে- হিন্দু বলছে জল, খ্রিস্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি; কিন্তু বস্তু এক।এক একটি ধর্মের এক একটি পথ- ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায়।যেমন, নদী নানা দিক থেকে এসে সাগর সঙ্গমে মিলিত হয়।" রামকৃষ্ণের ভাবশিষ্য নরেন্দ্রনাথ দত্ত অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) ইসলামের সাম্যের আদর্শ খুব পছন্দ করতেন। তিনি তাঁর 'হজরত মহম্মদ' প্রবন্ধে বলেন,"মহম্মদ নিজ জীবনের দৃষ্টান্ত দ্বারা দেখাইয়া গেলেন যে, মুসলমানদের মধ্যে সম্পূর্ণ সাম্য ও ভ্রাতৃভাব থাকা উচিত। উহার মধ্যে বিভিন্ন জাতি, মতামত,বর্ণ বা লিঙ্গভেদ কিছু থাকবে না।" তিনি তাঁর 'প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য' প্রবন্ধে লেখেন,"দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়াছে,সেথায়ই আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা,জাতীয়তা আজও বর্তমান।" বিবেকানন্দ মনে করতেন,"মুসলমানের ভারত বিজয় নিপীড়িত দরিদ্রের মুক্তির রূপ নিয়ে দেখা দিয়েছিল। সেই কারণে আমাদের এক পঞ্চমাংশ লোক মুসলমান হয়ে গেছে। শুধু তরবারির দ্বারা সেটা সম্ভব হয়নি।"(স্বামী বিবেকানন্দ ও ইসলাম ধর্ম -বিমলানন্দ শাসমল)। 'বৈদান্তিক মস্তিষ্ক ও ইসলামীয় দেহ' দ্বারা মাতৃভূমি ভারতের মুক্তি ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী ছিলেন। হিন্দু-মুসলমান সকলের উদ্দেশ্যেই তিনি বলতে চেয়েছিলেন,"বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর/জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।"
      বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের পিতা দ্বিজদাস দত্ত (১৮৪৯-১৯৩৪) ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি।অধ্যাপনা সহ একাধিক সরকারি চাকরি করেন। কিন্তু পুত্রের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের শাস্তি হিসেবে তাঁকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অবসরগ্ৰহণ করতে বাধ্য করা হয়। বিভিন্ন ধর্মের সারসত্যকে উপলব্ধি করতে তিনি সচেষ্ট হন। তাঁর একটি গ্ৰন্থের নাম ছিল 'সর্বধর্মসমন্বয়'। তিনি গীতা, বাইবেল ও কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেন। তাঁর লেখা 'ইসলাম' বইটি তৎকালীন মুসলিম সমাজে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। 
       কৃষ্ণকুমার মিত্র (১৮৫২-১৯৩৬) স্বদেশী আন্দোলন ও ব্রাহ্ম সমাজের বিশিষ্ট নেতা ছিলেন। ব্রিটিশ প্রশাসনের চাপে পড়ে তিনি কলেজের অধ্যাপক পদ ছাড়তে বাধ্য হন। জাতীয়তাবাদী বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা 'সঞ্জীবনী'-র সম্পাদক হিসেবে তিনি সবসময় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের প্রচার করেন। তাঁর লেখা একটি উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ হল 'মহম্মদ-চরিত'।
       কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) অন্য সকল বিষয়ের মতোই ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা লিখেছেন। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানিয়ে একাধিকবার বার্তা পাঠান তিনি। এই রকম একটি বার্তায় তিনি লেখেন,"ইসলাম পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্মের একটি। এই কারণে ইহার অনুবর্তীগণের দায়িত্ব অনেক।...অদ্যকার এই পুণ্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে মুসলিম ভ্রাতৃদের সহিত একযোগে ইসলামের মহাঋষীর উদ্দেশ্যে আমার ভক্তি উপহার অর্পণ করিয়া উৎপীড়িত ভারতবর্ষের জন্য তাহার আশীর্বাদ ও সান্ত্বনা কামনা করি।" 'মুসলমান ছাত্রের বাংলা শিক্ষা' প্রবন্ধে তিনি বলেন,"বাঙালি মুসলমানের সহিত বাঙালি হিন্দুর রক্তের সম্বন্ধ আছে, এ কথা আমরা যেন কখনও না ভুলি।" 'নকলের নাকাল' প্রবন্ধে তিনি ঐতিহাসিক সত্য উল্লেখ করেন,"মুসলমান রাজত্ব ভারতবর্ষেই প্রতিষ্ঠিত ছিল।বাহিরে তাহার মূল ছিল না। এই জন্য মুসলমান ও হিন্দু সভ্যতা পরস্পর জড়িত হইয়াছিল। পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদানের সহস্র পথ ছিল।"
       বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার রায় বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৯) খুব যত্ন নিয়ে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত গ্ৰন্থ 'প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান'। ঐতিহাসিক রামপ্রাণ গুপ্ত (১৮৬৯-১৯২৭) বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। তাঁর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ হল 'হজরত মোহাম্মদ', 'মোগল বংশ', 'রিয়াজ উস সালাতিন', 'পাঠান রাজবৃত্ত', 'ইসলাম কাহিনী'।
      শিক্ষাবিদ ও বহু গ্ৰন্থের রচয়িতা ক্ষিতিমোহন সেন (১৮৮০-১৯৬০),যিনি সম্পর্কে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ঠাকুরদা, আরবি ও ফারসি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থের নাম হল 'ভারতে হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সাধনা'।
    রাজনীতিবিদ মানবেন্দ্রনাথ রায়ের (১৮৮৭-১৯৫৪) লেখা একটি অসাধারণ পুস্তিকা হল 'The Historical Role of Islam' বা 'ইসলামের ঐতিহাসিক অবদান'। এই বইয়ের ভূমিকায় তিনি লেখেন,"পৃথিবীর কোনো সভ্য জাতিই ভারতীয় হিন্দুদের মতো ইসলামের ইতিহাস সম্বন্ধে এমন অজ্ঞ নয় এবং ইসলাম সম্বন্ধে এমন ঘৃণার ভাবও পোষণ করে না।" তিনি বিশ্বজুড়ে ইসলামের অবিশ্বাস্য বিস্তারের কারণ নির্দেশ করেছেন,"ইসলামের এই বিজয় অভিযানের কারণ ছিল এক অভূতপূর্ব বৈপ্লবিক সুরের মধ্যে লুকিয়ে; গ্ৰীস,রোম, পারস্য, চীন এমনকি ভারতবর্ষেরও প্রাচীন সভ্যতায় ঘুণ ধরে যাওয়ায় বিপুল জনসাধারণ যে চরমতম দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হল তা থেকে বাঁচিয়ে ইসলাম এক আলো ঝলকিত দেশের নির্দেশ তাদের দিতে পেরেছিল বলেই এই অসাধারণ বিস্তার সম্ভব হয়েছিল।"
      ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সুরজিৎ দাশগুপ্তের (১৯৩৪-২০১৯) দুটি বিখ্যাত বই হল 'ভারতবর্ষ ও ইসলাম' এবং 'ভারতীয় মুসলমানদের সংকট'।
      সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরস্পরের প্রতি উন্মাসিক মনোভাব প্রদর্শন আমাদের দেশে একটা স্থায়ী সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে। রাজনৈতিক কারণে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের তীব্রতা কখনও বাড়ে কখনও কমে। ধর্মীয় বিধির ব্যাখ্যাকাররাও বিভেদ সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারেন। কিন্তু অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত চিন্তাশীল ও সৃজনশীল ব্যক্তিদের সবসময় সংঘাতের পরিবর্তে সমন্বয় সাধন করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হয়।এই কাজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিশ্চয়ই কম নয়, কিন্তু সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব অবশ্যই বেশি। কারণ, সংখ্যালঘুর উৎপাত প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে না পারলেও সংখ্যাগুরুর উৎপাত সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর