ব্রেকিং:
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বেওয়া-২ পঞ্চায়েতের নিশিন্দ্রা গ্রামে ভোটার তালিকা ভুয়ো ভোটার। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার উদ্যোগে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা সভা। ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট এমকে ফাইজির গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সামশেরগঞ্জে পথসভা SDPI এর ফের সামশেরগঞ্জের হাউস নগর ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে পথদুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা গাড়িচালকের জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

রোববার   ১২ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২৬ ১৪৩২   ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

সর্বশেষ:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

শিক্ষার্থীদের গবেষণা সংস্কৃতি : ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে আন্তর্জাতিকখ্যাত প্রফেসর কালিয়াচক কলেজে

পুষ্প প্রভাত ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৪ ০২ ৫৪   আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৪ ০২ ৫৪

শিক্ষার্থীদের গবেষণা সংস্কৃতি : ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে আন্তর্জাতিকখ্যাত প্রফেসর কালিয়াচক কলেজে

 

কলেজ মানেই শুধু সিলেবাসের পড়াশোনা, পরীক্ষার প্রস্তুতি আর চাকরির প্রতিযোগিতায় নিজেকে তৈরি করার দৌড়—এমন ধারণা আজ আর যথেষ্ট নয়। নতুন শিক্ষানীতি (NEP 2020) সেই পুরোনো কাঠামোকে ভেঙে শিক্ষার্থীদের কেবল পাঠ্যবই নয়, বরং গবেষণা ও অনুসন্ধানের নতুন জগতে প্রবেশের দিশা দেখাচ্ছে। ঠিক এই লক্ষ্যকেই সামনে রেখে কালিয়াচক কলেজ আয়োজন করল এক অভিনব ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম।

 

উৎসবমুখর পরিবেশে নবতর উদ্যোগ

 

কলেজের রিসার্চ অ্যান্ড এক্সটেনশন কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ভিড় জমেছিল চতুর্থ বর্ষের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অতিথিদের। কলেজের সুশোভিত সম্মেলন কক্ষ ভরে উঠেছিল আলোচনার আবহে, জ্ঞানী-গুণীদের কথায়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজিবর রহমান।

 

সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলেন বিশ্বখ্যাত গবেষক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক, আশুতোষ চেয়ার প্রফেসর এবং বিভাগীয় প্রধান ড. অমিত দে। তিনি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চশিক্ষার সিলেবাস প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর পারিবারিক পটভূমিও গবেষণা-ইতিহাসে সমৃদ্ধ—বাবা অমলেন্দু দে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ। তাই স্বভাবতই, তাঁর বক্তৃতার প্রতি সবার আগ্রহ ছিল তুঙ্গে।

 

গবেষণার শিকড় খোঁজা

 

উদ্বোধনী ভাষণে অধ্যক্ষ ড. নাজিবর রহমান বলেন,

“গবেষণা হল জ্ঞানের শিকড়ের সন্ধান। বর্তমান যুগে শিক্ষা বইপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং চিন্তার গভীরে পৌঁছে আমাদের কৌতূহলের উত্তর খুঁজে পাওয়াই প্রকৃত শিক্ষার সূচনা। NEP 2020 সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা গবেষণার জগতে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীলতা ছড়িয়ে দেবে।”

 

প্রফেসর অমিত দে-র অনুপ্রেরণা

 

মূল বক্তৃতায় প্রফেসর অমিত দে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন—

“গবেষণা মানে শুধু সমস্যার উত্তর খোঁজা নয়, বরং সমস্যা নির্ধারণ, ভাবনার কাঠামো তৈরি, তথ্য-তত্ত্বের বিশ্লেষণ এবং সমাজের প্রকৃত অবস্থা অন্বেষণ। একজন গবেষক কখনও কোনও আইডিয়াকে ছোট করে দেখেন না। প্রকৃত গবেষণা শুরু হয় কৌতূহল থেকে। তাই ভয় নয়, আগ্রহ আর চর্চার মধ্য দিয়েই গবেষণার পথে এগিয়ে যেতে হবে।”

 

তিনি আরও যোগ করেন, NEP 2020 শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের গবেষণার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শুধু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই নয়, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য, এমনকি মানবিক শাখাতেও মৌলিক অনুসন্ধান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ

 

অনুষ্ঠান পরিচালনা ও আলোচনায় অংশ নেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গজেন বড়ুই, আইকিউএসি সমন্বয়কারী ড. সুব্রত দাশ এবং গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে—গবেষণাভিত্তিক কারিকুলাম তৈরি, শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে গবেষণার অভিজ্ঞতা দেওয়া এবং ভবিষ্যতের জন্য সমন্বিত শিক্ষা-পরিকল্পনা গড়ে তোলা।

 

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

 

প্রোগ্রামে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দেখা যায় প্রবল উৎসাহ। অনেকেই বলেন, এতদিন গবেষণা বলতে তাঁরা ভাবতেন কেবল পিএইচডি বা বড় গবেষণাগার। কিন্তু এই আলোচনার পর তাঁরা উপলব্ধি করেছেন, আসলে প্রতিটি বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে এবং সঠিক দিকনির্দেশ পেলে স্নাতক পর্যায় থেকেই গবেষণার যাত্রা শুরু করা সম্ভব।

 

আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এটি শুধু প্রথম পদক্ষেপ। আগামী দিনে আরও কর্মশালা, গবেষণা প্রকল্প ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হবে।

 

গবেষণার পথে নতুন সূচনা

 

এই অনুষ্ঠান শুধুমাত্র একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম নয়, বরং কালিয়াচক কলেজের শিক্ষাজীবনে গবেষণার নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলার এক প্রেরণাদায়ক সূচনা। বক্তাদের ভাষণ ও আলোচনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে—শিক্ষা শুধু চাকরির প্রস্তুতি নয়, বরং সমাজ ও মানবতার প্রতি দায়িত্বশীল অনুসন্ধান।

 

যেমন প্রফেসর অমিত দে বলেছেন, “কোনও প্রশ্ন ছোট নয়, বরং প্রতিটি কৌতূহলই গবেষণার শিকড়।” আর সেই শিকড় থেকেই আগামী দিনে হয়তো জন্ম নেবে নতুন জ্ঞানের অরণ্য।

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর