ব্রেকিং:
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বেওয়া-২ পঞ্চায়েতের নিশিন্দ্রা গ্রামে ভোটার তালিকা ভুয়ো ভোটার। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার উদ্যোগে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা সভা। ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট এমকে ফাইজির গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সামশেরগঞ্জে পথসভা SDPI এর ফের সামশেরগঞ্জের হাউস নগর ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে পথদুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা গাড়িচালকের জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

রোববার   ১২ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২৬ ১৪৩২   ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

সর্বশেষ:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

অনুগল্প - অশ্রু

মোঃ ইজাজ আহামেদ

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২৫ ১৩ ০১ ৪২   আপডেট: ৩ আগস্ট ২০২৫ ১৩ ০১ ৪২



অশ্রু
মোঃ ইজাজ আহামেদ

এসেছে আষাঢ় মাস। পুকুরে-নদীতে উঠেছে খুশির ঢেউ। আকাশের মাঠে আনন্দে খেলছে মেঘশিশুরা। বৃষ্টি নামছে। মাটির মাঠে খেলছে ছেলেরা। আনন্দে বৃষ্টির ফোঁটারা লাফাচ্ছে, লাফাচ্ছে ছেলেপুলেরা। গাছের পাতারা নাচছে। ছাদে সঙ্গীত জুড়েছে বৃষ্টিরা।

              বৃষ্টিতে স্নানরত ও বৃষ্টির মিউজিকে বিমোহিত ছাদের নিচে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরে দুঃখ ভরা নয়নে চেয়ে আছে ছয় বছরের ফাইয়াজ। সে একটি নামিদামি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে, প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুধু পড়ার চাপ। তার আর্থিক স্বচ্ছল বাবা-মা কয়েকটি গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত করেছে যাতে সে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে মেশার অবসর না পায়। তারা মনে করে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মিশলে ছেলে ভালোভাবে মানুষ হবে না, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে উঠবে। সকালে টিউশন, তারপর স্কুল, স্কুল থেকে ফিরে আবার টিউশন, শুধু হাত-মুখ-পা ধোয়া ও খাবার খাওয়ার জন্য ঘণ্টা খানেকের বিরতি তার জন্য বরাদ্দ। আজ মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষক মহাশয় আসেননি।

         তাই জানালার বাইরে ছেলেগুলোর দিকে তাকাবার সময় পেয়েছে ফাইয়াজ আর তার মনে তাদের সঙ্গে খেলার বাসনা তাড়না দিচ্ছে। সে জানে তার বাবা-মা মনের ইচ্ছা পূরণ করতে দেবে না তবুও সে তার মনের আকাঙ্ক্ষা দমিয়ে রাখতে পারল না। সে বলে উঠল, "মা দেখ, ছেলেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে খেলছে আর কত আনন্দ করছে! আমিও তাদের সঙ্গে খেলতে চাই।" তার মা বলল, "না বাবা না, তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে। ছেলেগুলো ভালো না, তারা পড়াশোনা করে না, সারাদিন টো টো ঘুরে আর খেলে, পড়তে বসার নামই নেয় না। তোমাকে ভালো করে পড়াশোনা করে মস্ত বড় মানুষ হতে হবে। আর তাদের সঙ্গে মেশার কথা মুখে উচ্চারণ করো না, তোমার আব্বু শুনলে তোমাকেও বকবে আর আমাকেও বকা দেবে। তুমি তো জানো সে কত রাগী!" ফাইয়াজ বলল, "ঠিক আছে মা, আমি আর বলব না।" 

                তার মা ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আর সে বাইরে হাত বাড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তার হাতে টপ টপ করে পড়ে আকাশের অশ্রু, তার চোখ থেকেও গাল বেয়ে চুঁইয়ে পড়ে জলের ফোঁটা। সে মনে মনে ভাবে স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে তার দিনগুলো কত সুন্দর ছিল! সে সারাদিন আপন মনে খেলত, তার খেলার সাথি ছিল অনেক ধরনের খেলনারা। বড়দের ফোনে কথা বলতে দেখে সেও হাতে কোনো খেলনা বা কাঠের টুকরো বা কোনো কিছু মোবাইল ভেবে কানে ধরে খেলনাদের সাথে কথা বলত। এখন শুধু পড়া আর পড়া। তার যত রাগ স্কুলের উপর গিয়ে পড়ে। পিঠে ব্যাগভর্তি বই-খাতা বয়ে নিয়ে যেতেও তার মনোকষ্ট হয়, তার অবাক লাগে। তার শৈশবটাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিযোগিতার চাপে হাঁপিয়ে উঠছে শৈশব, শৈশবের আনন্দ ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কালো আকাশের পানে বিস্মিত মনে অশ্রুসিক্ত ঝাপসা নয়নে তাকাল ফায়াজ।


©® মোঃ ইজাজ আহামেদ (©®Md Ejaj Ahamed)

Puspaprovat Patrika