ব্রেকিং:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

মঙ্গলবার   ২৪ জুন ২০২৫   আষাঢ় ১০ ১৪৩২   ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

সর্বশেষ:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

কবিতা - বাল্যবিবাহ

এইচ .এম .রিয়াজুল হক

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২৫ ১০ ১০ ৩৭   আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ ১০ ১০ ৩৭




বাল্যবিবাহ
এইচ .এম .রিয়াজুল হক
WBCS ( Exe), বিডিও, উলুবেড়িয়া -১ ব্লক


কাজীপাড়ার মাঠে সন্ধ্যে নামে ধীরে -
আকাশে এক পশলা শালিক ডাকে ,
একটি কিশোরী দাঁড়ায়ে চুপে,
ভেজা চোখে ক্ষীন কন্ঠে করুন স্বরে বলে-
" স্যার ,আমি বর না-বই চাই।"
এ জগতে আমারো তো কিছু আছে ঠাঁই!"

কাঁচা গলায় ধরা পড়ে সাহসের সুর।
মাটির ঘরে স্বপ্নে জ্বলে আলোর নূর।


বাবা দিন এনে দিন খায়।
মায়ের হাতে পুঁথি নয়, হাড়ি আর কড়াই।
স্বপ্নগুলো যেন চালের কুঠুরিতে  ঘুমায়।
তবুও মেয়েটি স্বপ্ন দেখে। একাধিক কন্যার মাঝে,
উপেক্ষিতা কন্যাটি -
আজ দাঁড়িয়েছে নিজের অধিকারে।
গাঢ় কালো চোখে জ্বলে দীপ্তি।
না ছিল সাজ, না ছিল অভিমান-
শুধু ছিল ভবিষ্যতের এক জ্বলন্ত আহবান।

কিন্তু বাবার চোখে গভীর ভাঁজ, চিন্তার ভারাক্রান্ত প্রহর।
এ মেয়ের বিয়ে না হলে বাকিরা যে পথের পাথর।

মুরাদ বাবু বলেন জোরে- এখনই বিয়ে ?
আইন কি তবে খেলো?
যদি মেয়ের বিয়ে দাও তবে জেলের ভাত গিলো।

আমি পাশে দাঁড়িয়ে বলি- সরকার আছে পাশে ভয় কিসের ভাই?
আগে মাধ্যমিক পাস করুক তারপরেই বর চাই।
আছে কন্যাশ্রী, রূপশ্রীও পাশে। সরকারও চায় তোমাদের জয়।
পড়ালেই মিলবে সরকারের সম্মান ।
২৫ হাজার টাকার সেই প্রাপ্তির সন্ধান।

বিয়েটা ঠেকলো , ফিরল বই হাতে -
আজ ফিরোজ জানালো, সে পাস করেছে ভালো ফল হাতে।

বুকের গভীরে খেলে গেল এক অজানা গর্ব।
একজন আমলার ভূমিকায় যেন কিছুটা সফল তরঙ্গ।
আমলা হয়ে মনে জাগে নীরব অহংকার ।
একটি জীবন আলোর পথে এটা কি কম পুরস্কার ?


কিন্তু এদিকে বাতাস বদলায়-
তপনার ভেকুটালে বাজে অন্য এক সুর ।
প্রেমে পড়ে কিশোরী -
১৪ বছরের মন ভরপুর।
ইমামের ছোঁয়ায় গলে যায় বিবেকের প্রতিরোধ,
অবৈধ প্রেমে হৃদয় তার হেরে যায় নীরব রোধ।

বিয়ে ঠিক হয় গোপনে- বিয়ের খবর পেয়ে ছুটে যান আইয়ুব বাবু ।
মন্ডপ থেকে পাত্রীকে তুলে আনে ফিরোজ।
সাথে পিতা-মাতা আসেন
বিডিও অফিসে।

আপনি কেন নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন?
মা উত্তর দেয় -"এমন বর কি রোজই পাওয়া যায়?
তাছাড়া এ তো হামেশাই হয়।"

সমাজের পচা স্রোতে গা ভাসিয়ে যায়।
একটা সমাজের আত্মসমর্পণ যেন কানে বাজে।

আর বাবা?
বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে কটাক্ষে বলে- " বর যাত্রী এসে গেছে।
স্যার বিরিয়ানির  কি হবে তবে?"

তার দৃষ্টি এক প্লেট মাংস আর বিরিয়ানির দিকে।
না -মেয়ের ভবিষ্যৎ নয়।

আমি ভাবি,
শেষ ভরসা সেই স্কুল ছাত্রী।
সে তো জানে পড়াশোনা মানে মুক্তি।
সে তো বুঝবে বিয়ে নয়, বই চাই।

কিন্তু, না -
একি ? এ তো অন্য কথা।
ভিন্ন এক ভাষা।

পড়াশুনায় নেই উৎসাহ। চোখে নেই কোন স্বপ্ন !
নেই বিপ্লব !
আছে মোবাইলে স্ক্রিনে পাত্রী সাজার স্বপ্ন ।
আর এক ঝলক সোনার গয়না।

লজ্জা-শরম-সামাজিকতাবোধ হারিয়ে সে বলে,
বিডিওর চোখে চোখ রেখে কন্ঠে দৃঢ়তায়-
" স্যার, বই না বর চাই। "

স্বপ্ন যেন ছিড়ে যায় বারংবার।
স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইলাম ।
হৃদয়ে হাহাকার বাজে,
এ কেমন ভবিষ্যৎ ?
এ কেমন সমাজ সাজে ?

আমার প্রাণে বাজে বিষণ্ন বীনা ।
এ কোন পরাজয়ের মুখ, যেখানে মেয়ে নিজেই অন্ধকারকে বরণ করে?
এটাই কি  তবে ভবিষ্যৎ ?
এটাই কি আমাদের শত বর্ষের শিক্ষার ফল?

একটি সমাজ যেন নুয়ে পড়ে।
একটা কবি থমকে দাঁড়ায়। একটা জাতি তার ভবিষ্যৎ গিলে ফেলে ।

একদিকে লাল সূর্য ওঠে। অন্যদিকে মেঘে ঢাকা ছায়া ।

এক মেয়ে পড়তে চায়-
আর এক মেয়ে নিজেকেই নিজে হারায়।

আমি অবাক হইনা-
আর আমি কষ্ট পাই ।
কারণ আমি চাই বহিরার মেয়েটিকে।
যে চোখে স্বপ্ন রাখে, বুকেও রাখে সাহস ।
আমি চাইনা  ভেকু টালের সুর ।
যেখানে মেয়েরা প্রেমে বিক্রি হয়ে যায় ।
যেখানে মায়ের বলে -
"এটা তো হামেশাই হয়। "

আমি চাই ,
মেয়েরা বলুক-
আমি পড়তে চাই ।
বর নয়, বই চাই ।
বাঁধা নয়, মুক্তি চাই।


এই বাংলায় আজও দুই পথ চলে -
একটি বহিরার দিকে, আলোয় ভরা ।
অন্যটি ভেকু টালের অন্ধ, আচ্ছন্ন ।
আর আমি দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায় বলি -

"আমি চাই, সেই বহিরার মেয়ে-
চাই না ভেকু টাল।"

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর