ব্রেকিং:
আরজি কর মেডিকেলে ২০০ কোটির দুরনীতি, একাধিক প্রভাবশালীর জোগ থাকার সম্ভাবনা নলপুরে বেলাইন সেকান্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস চলতি মাসেই ২০ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা, রয়েছে নিম্নচাপের সম্ভাবনাও আগ্রা- লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু রায়গঞ্জের কুলিকে শিশুর প্রাণ বাচিয়ে ডুবে মৃত্যু তরুণের গাজোলে মাটি খুড়তে গিয়ে উদ্ধার ১৬টি রুপার মুদ্রা

মঙ্গলবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩১   ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মুর্শিদাবাদের সুতিতে শুট আউট। CSK-তে যাচ্ছেন ঋষভ? সামনে এল বড় খবর

তাহেরের খুনিদের বিচারে মামলা হলো না

মাহমুদুল আলম

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৪ ০২ ৩৪  

কর্নেল তাহেরকে হত্যার দায়ে কথিত সামরিক আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।  কর্নেল তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দেয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন আদালত।ওই নির্দেশের পর সাড়ে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও খুনের মামলা হয়নি বিচারকের বিরুদ্ধে। শহীদের মর্যাদাও দেয়া হয়নি কর্নেল তাহেরকে।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ৭ই নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী বিপ্লব সংঘটিত হয়।যার ফলে খালেদ মোশাররফ সরকারের পতন ঘটে।

পরবর্তীতে এক হত্যা মামলায় সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। ২০১১ সালের ২২ মার্চ হাইকোর্ট ওই রায়কে অবৈধ ঘোষণা করে।২০১৩ সালের ২০ মে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট। এরপর এত সময় পেরিয়ে গেলেও রায় কার্যকর করা হয়নি।

আজ ৭ই নভেম্বরকে সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) এ বিষয়ে কথা হয় কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহেরের সঙ্গে। রায় কার্যকর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দৈনিক জাগরণকে তিনি বলেন,রায়ের কোন কিছুই পালন হয়নি।হাইকোর্টের রায়ের পর আমরা আর এ বিষয়ে যোগাযোগ করিনি। এই সংসদ সদস্য বলেন,আদালত সরকারকে এই নির্দেশ দিয়েছেন।আমরা আশা করছি সরকার তা পালন করবে।

 

বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো.জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছিলেন।জানতে চাইলে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী (পরবর্তীতে আপিল বিভাগের বিচারপতি হয়ে বর্তমানে অবসরে আছেন) বলেন,রায়টি কার্যকর না হয়ে থাকলে তা দুর্ভাগ্যজনক। রায় কার্যকর হওয়া উচিত ছিল।

তিনি বলেন,তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বিচারের নামে প্রহসন করেছিলেন।যে আইনে বিচার করেছিল,ওই আইনে ফাঁসির বিধানই ছিল না।

রায়ে বলা হয়েছে,জিয়ার পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার তাহেরকে বিচারের নামে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিলো।জিয়াউর রহমান জীবিত না থাকায় তার বিচার সম্ভব না হলেও এই হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে তাকে খুঁজে বের করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করতে হবে।

রায়ের শেষ দিকে প্রয়াত উপন্যাসিক হুমায়ূন আহমদের কিছু কথা উদ্ধৃত করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রসহনের এক বিচার শুরু হলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। -- কর্নেল তাহেরসহ অভিযুক্ত সর্বমোট ৩৩ জন। মামলার প্রধান বিচারকের নাম কর্নেল ইউসুফ হায়দার। -- মামলা চলাকালীন এক পর্যায়ে কর্নেল তাহের প্রধান বিচারকের দিকে তাকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন,আমি আমার জীবনে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ দেখিছি,আপনার মতো ক্ষুদ্র মানুষ দেখিনি।

 

সামরিক ওই বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের,ভাই আনোয়ার হোসেন ও আরেক ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ,বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ মোট ছয় জন।

রায়ে বলা হয়েছে,কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড এই কারণে হত্যাকাণ্ড যে, ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের মনস্থির করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলে। এর এক পর্যায়ে সেনানিবাসে আটক জিয়াউর রহমান জাসদ নেতা তাহেরের সহায়তায় মুক্তি পেয়ে ক্ষমতা নেয়ার পর তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই রায়ের পর ২১ জুলাই ভোরে যুদ্ধাহত সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

রায়ে বলা হয়েছে, যেদিন সামরিক বিধি জারি করা হয় তার পরদিনই ট্রাইব্যুনাল তথাকথিত বিচারকার্য শুরু করে।

এই মামলার রায়ের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে খ্যাতিমান সাংবাদিক লরেন্স লিফশুজ এবং বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের লেখা বিবেচনায় আনা।

ব্যারিস্টার মওদুদের ডেমোক্রেসি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ বইয়ের উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়,বইয়ে লেখক অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন যে,এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার মনস্থির করেছিলেন।

রায়ে বলা হয়েছে,যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জেনারেল জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং তিনি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনেছেন বলে তার বইয়ে দাবি করেছেন সেহেতু তাকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

এ বিষয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে বলেন, মামলার শুনানির এক পর্যায়ে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আদালত কক্ষে এলে তার লেখা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করি।তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই এই কথাগুলো শুনেছেন এবং তিনি এই বক্তব্য ও বইয়ের লেখক।

জেডএস

 

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর