ব্রেকিং:
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বেওয়া-২ পঞ্চায়েতের নিশিন্দ্রা গ্রামে ভোটার তালিকা ভুয়ো ভোটার। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার উদ্যোগে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা সভা। ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট এমকে ফাইজির গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সামশেরগঞ্জে পথসভা SDPI এর ফের সামশেরগঞ্জের হাউস নগর ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে পথদুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা গাড়িচালকের জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

রোববার   ১২ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২৭ ১৪৩২   ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

সর্বশেষ:
জামাইবাবুর হাতে ধর্ষিতা নাবালিকা

শামসেরগঞ্জে ফের গঙ্গার থাবা: তলিয়ে গেল একাধিক ঘরবাড়ি, ভিটেছাড়া একাধিক পরিবার

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৫ ১১ ১১ ২৫   আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫ ১১ ১১ ২৫

রবিবার থেকে আবারো শুরু হয়েছে সামসেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙ্গন,প্রতি বছর বর্ষা এলেই শামশেরগঞ্জে ফিরে আসে আতঙ্কের ছবি—গঙ্গার ভাঙন। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। গঙ্গার জলস্তর বাড়তেই ফের শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিবপুর গ্রাম। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে একাধিক বসতবাড়ি এবং বাড়ি বাঁধার জমি। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, গঙ্গার ভাঙন এখানে নতুন নয়—এ যেন প্রতি বছরের নিত্য সঙ্গী। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ। কেউ মাথা গুঁজেছে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, কেউ আবার আশ্রয়হীন অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে। এখনও পর্যন্ত মেলেনি কোনও স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, রাজ্য ও কেন্দ্র—উভয় সরকারই শামশেরগঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হলেও সমস্যা মেটাতে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। রাজনৈতিক তরজাও কম নয়। শাসক দলের দাবি, ফারাক্কা ব্যারেজের আওতাধীন ১২০ কিলোমিটার আপ এবং ডাউনস্ট্রিম এলাকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব , কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্র সরকার তা কমিয়ে ১৭ কিলোমিটারে দায়িত্ব নিয়েছে। এই নিয়ে শাসকদল কেন্দ্রকে দায়ী করছে।অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোনও আর্থিক সহায়তা মেলেনি। রাজ্য সরকার যদিও কয়েকশো কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ভাঙন রোধে, কিন্তু কাজের মান ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।শিবপুরের ফুলচাঁদ মণ্ডল, যিনি নিজের বাড়ি হারিয়েছেন গঙ্গার গর্ভে, ক্ষোভের সঙ্গে জানান—পাঁচ বছর ধরে ভাঙন চলছে, কিন্তু সঠিকভাবে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রাজ্য যে টাকা দেয়, সেটা নিচ থেকে কাজের জন্য নয়, শুধু ওপর দিয়ে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। বোল্ডার বা কংক্রিট দিয়ে যদি পাকা বাধ তৈরি হতো, তাহলে এই বিপর্যয় হতো না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুললেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে।যারা কাজ করছে, তারাই আমাদের থ্রেট দিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় সাংসদ এশা খান চৌধুরী প্রতি অভিযোগ, সে তো কোনোদিন আমাদের এলাকায় আসেননি, তার কাছ থেকে কোনও সহযোগিতাও মেলেনি।"একই অভিযোগ শোনা যায় জাহানারা খাতুনের কণ্ঠে "আমার বাড়ি এখন ঝুলন্ত অবস্থায়। গঙ্গা একে একে টেনে নিচ্ছে। যারা আগে নদীতে ঘর হারিয়েছিল, তারা আমার বাড়িতে ছিল। এবার আমারই বাড়ি চলে যাচ্ছে। আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছি, কিন্তু কোথায় যাব, জানি না। সরকারের কাছে অনুরোধ, অন্তত ভবিষ্যতে আর কেউ বাড়ি হারা না হয়, আমাদের মত এমন পরিণতির শিকার না হয়। আমাদের একটাই দাবি স্থায়ী থাকার ব্যবস্থা হোক।”তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় বিধায়ক আমিরুল ইসলাম জানান—টানা বৃষ্টিপাত ও ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার ফলে নদীতে প্রবল স্রোত তৈরি হয়েছে, যার ফলে ভাঙন বেড়েছে। রাজ্যের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই জল ছেড়ে দিচ্ছে ফারাক্কা ব্যারেজ, সে নিয়ে অভিযোগ করেছেন তিনি। রাজ্য সরকার গত বাজেটে গঙ্গা প্রতিরোধে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের পক্ষে পুনর্বাসন ও ভাঙন রোধ—দু’টোই সামলানো সম্ভব নয়।"পুরো রাজ্যের ভাঙ্গন পূর্ণবাসন সামলানো রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় ভয় মিলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে ।তিনি আরো অভিযোগ করেন, “কেন্দ্রকে একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও তারা কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিধানসভা থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকে, কিন্তু তাঁরা কার্যত নীরব দর্শক হয়ে বসে আছেন।”ভাঙন-আক্রান্ত মানুষদের একটাই আবেদন— রাজনীতি নয়, হোক কার্যকর সমাধান। নদী শাসনের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ ও পূর্ণ পুনর্বাসনের দাবি এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর