মন ও মায়া
রহিমা আক্তার মৌ
প্রকাশিত: ৯ আগস্ট ২০২৪ ২০ ০৮ ৫৮
প্রায় ঘন্টাখানেক টিভির গানবাংলা চ্যানেল দিয়ে বসে আছে মায়া। পুরো নাম ফারজানা আক্তার মায়া। পরিবারের সবাই মায়া বলে ডাকলেও বাবা মা দুজনে ওকে ফারজানা নামেই ডাকে। ভিন্ন নাম ও আছে ওর, তা শুধু একজনের জন্যেই। টিভির রিমোট হাতে নিয়ে কয়েকটা চ্যানেল ঘুরে ঘুরে গানবাংলায় এসে থেমে যায়। এত্ত এত্ত চ্যানেলের মাঝে কোনটাই ওর ভালো লাগে না। মন চলে যায় ছোট্ট বেলার দিকে। সময় ১৯৯৬ সালের আগের কথা। টিভিতে চ্যানেল বলতে ওই একটাই বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন)।
পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতো একএকটা প্রোগ্রাম বা সিনেমার জন্য। সিনেমার চেয়েও ওর প্রিয় ছিলো সিনেমার গান। গানের অনুষ্ঠানের নাম ছিলো 'ছায়াছন্দ'। অন্য আর যাই দেখুক বা না দেখুক সপ্তাহে একদিন এটা দেখার জন্য সে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতো। ওই সময় কেউ তাকে ডেকেও পেতো না। দুই একবার যে ডেকেছে সে এমন মেজাজ দেখেছে যে আর সাহস পেতো না। এরপর এলো ব্যক্তিমালিকানাধীন চ্যানেল এটিএন বাংলা। তার পরের হিসাব আর মনে রাখার নয়। এতোগুলো চ্যানেলের মাঝে আজ একটু আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে না মায়া। বাধ্য হয়ে গানবাংলাই ভরসা। তিনটা বাংলা গানের পর একটা ইংরেজি গান। ইংরেজি গানের মানে না বুঝিলেও ওদের মিউজিক ভালো লাগে। মিউজিকের তালে তালে নিজেও.......
ইউটিউব দেখার গতি নেই কারণ ইন্টারনেট বন্ধ। মোবাইলে কারো সাথে কথা বলবে তার পথ বন্ধ। ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জার সব বন্ধ। থাকার মাঝে ওই টিভির চ্যানেল গুলো। ভাগ্য ভালো আজ তবুও টিভি চলে। গতকাল প্রায় ৭/৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ, পানি বিহীন থাকতে হয়েছে তাদের। হঠাৎ করে গতপরশু রাত ১১ টায় ঘোষণা এসেছে, 'রাত ১২ টার পর থেকে কারফিউ শুরু, পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজপথে থাকবে সেনাবাহিনী'।
মায়ার কাছে কারফিউ মানে ১৯৭১। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এই শব্দের সাথে ওর নতুন পরিচয়। রাতেই টের পেয়েছিলো বিদ্যুতের মিটারে টাকা নেই। টাকা না থাকলেই টোঁ টোঁ করতেই থাকে বিদ্যুতের মিটারগুলো। এ এক অসহ্য বিষয়। রাত ১০ টার দিকে কার্ড নিয়ে মিটারে পাঞ্চ করে। মোবাইলের লোনের মতো কিছু অগ্রিম টাকা পাওয়া যায়। যা পরে টাকা রিচার্জ করলে সেখান থেকে কেটে নেয়। আহা! কি দয়ার শরীর আমাদের প্রযুক্তির। সেই হাওলাতি রিচার্জের টাকায় চলছিলো টিভিটা। সেখানেই কারফিউর খবর।
বিদ্যুতের অফিস খোলে সকাল নয়টায়। এর আগে ঢুকাতে হলে দোকান থেকে করতে হবে। সেই দোকান দূরে তার মাঝে কারফিউ। তাই একমাত্র ভরসা বিদ্যুতের অফিস। কারফিউ ভেতর দিয়ে রাসেল বের হতে চায়, ওকে একা বের হতে না দিয়ে সাথে ওর রিফাত চাচাও যায়। অনেক চড়াই উৎরাই পার করে ৩ ঘন্টা পর কার্ডে টাকা রিচার্জ করে বাসায় আসে। মিটারে দিতেই নতুন সমস্যা। মিটার বড্ড অভিমান করেছে তাই টাকা নেয় না। আবার সেই বিদ্যুতের অফিসে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ সেরে বাসায়। সব মিলিয়ে ৭/৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহীন। সেই থেকে আজ তো বেশ ভালো। টিভি চলে, ফ্যান ঘুরে, বাসায় পানিও আছে। কিন্তু মায়ার মন ভালো নেই।
প্রতিমাসে মোবাইলে নেট ও মিনিটের সে প্যাকেজ নেয় সেটার মিনিট শেষ হলেও শেষ হয়নি নেট। তাই নেট দিয়েই কথা বলতো সবার সাথে। তিনদিনে এই নেই নেই শুনতে শুনতে ও ক্লান্ত। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কল না হলে কেউ কারো নাম্বার দিয়ে কল করতে দিচ্ছেনা এখন। কারণ মোবাইল রিচার্জ সমস্যা। তিনদিনের মাঝে ওর কল এসেছে মাত্র ৫টি। তাও একমিনিট করে কথা। কিন্তু একটা নাম্বারের কলের অপেক্ষা ওর প্রতিমুহূর্তের। অপেক্ষার সে কল আসে না। জিরো ব্যালেন্স এর জন্য নিজেও মিস কল দিতে পারছে না।
মেজাজ খারাপ করে টিভি বন্ধ করে বের হয়ে ছাদে যায়। ছাদের মধ্যখানে ছোট্ট একটা পিলারের গোড়া। দেখতে টুলের মতো। ওখানে বসলে চারপাশের কিছুই দেখা যায় না। তবুও মায়া সেখানেই বসে আছে। হাতে মোবাইল। উঠার সময় হেডফোন আনতে ভুল করেনি। মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে নিজের করা কিছু ভিডিও দেখে। মোবাইলে কোন গান তোলা নেই, ইউটিউবেই গান শুনতো। তাই পুরানো ভিডিও গুলোই ভরসা।
একটার পর একটা ভিডিও দেখছে আর শুনছে। ভিডিও চেঞ্জ হলেই শরতের আকাশের মতো ওর মন ভালো হয় আর খারাপ হয়। আনন্দের স্মৃতিগুলো মন খারাপের এন্টিবায়োটিক এর কাজ করলেও বেদনার ভিডিওগুলো ওকে এতোটাই ক্ষত করে দেয় যে একটা বেদনার ভিডিও দেখার পর তিনটা আনন্দের দেখলেও মন আর ভালো হয় না। অথচ ও ছাদে এসেছে মন ভালো করতে।
মধ্য ছাদ থেকে উঠে চারপাশ ধরে হাঁটছে। সূর্য এখন পশ্চিম আকাশে ঢুলতে ঢুলতে গোধূলির ঠিক পূর্বক্ষণ। বাইরে যেমন কোন শব্দ নেই নেই মোবাইলেও। নেট অন থাকলে টুং টুং শব্দ হয় বলে ম্যাসেঞ্জার আর নোটিফিকেশন এর শব্দ অফ করা ছিলো। এখন সেটাও অন করতে পারছে না। অগত্য একটু পরপর মোবাইল দেখে যদি অপ্রত্যাশিত ভাবে নেট চলে আসে।
হাঁটতে হাঁটতে মহসিনকে মনে পড়ে যায়। অবশ্য হটাৎ করে মনে পড়া নয়, তবে এমন গোধূলি বেলায় ওকে মিস করাটা মায়ার একটা রুটিন। মহসিন খুব কমই ওকে মায়া নামে ডাকে। ফারজানা মায়া নামকে ও তিনটা ভাগে ভাগ করেছে। ফার থেকে ফারা, জানা থেকে জান আর মায়া। এই তিনটা নামেই সে ডাকে। তবে পরিস্থিতি আর মুডের উপর নির্ভর করে। আজ মায়ার মন খারাপের মূল কারণ তিনটি। এক- নেট না থাকা, দুই- মোবাইলে টাকা না থাকা, তিন- মহসিনের সাথে কথা বলতে না পারা।
মোবাইলে ম্যাসেজ আসলে যে শব্দ হয় তা হল। দ্রুত মোবাইলের লক খুলে দেখে রিচার্জের ম্যাসেজ। কেউ একজন ওর নাম্বারে বাইশ টাকা পাঠিয়েছে। গোধূলির এই মুহুর্তে ওর মুখে ঠোঁটে একচিলতে হাসি। মনে হল দম ফিরে পেয়েছে বা কোমা থেকে বেঁচে ফিরেছে কেবিনে। টাকার অংক যাই হোক ও এখন মিসকল দিতে পারবে মহসিনকে। মিসকল পেয়ে নিশ্চয়ই ও কল দিবে। ভাবনা ছাদেই কল দিবে নাকি বাসায় গিয়ে।
কতদিন মহসিন চেয়েছিলো দুজনে ছাদে উঠবে, ঘুরবে গল্প করবে। কিন্তু সেসবের কিছুই হয়নি। ভাবনার জগৎ থেকে বের না হতেই মোবাইল বেজে উঠে, তাকিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার।
'হ্যালো' মায়ার কথা।
'হ্যালো জান আমি তোমার জানপাখি'
হাসতে আসতে মায়ার জবাব,
'ওরে আমার জানপাখি, এই গোধূলি বেলায় তোমায় আমি কোথায় রাখি'
'পরে রাখিও, বল বাইশ টাকা পেয়েছো?'
'হ্যাঁ পেয়েছি।'
'ওকে পরে কথা হবে।'
মহসিন লাইন কেটে দেয়। মায়ার মন কিছুটা ভালো হয়ে উঠে। ভালো হওয়ার দুইটা কারণ। এক - মোবাইলে রিচার্জ এসেছে, দুই- মহসিন কল দিয়েছে।
কিন্তু এটা কার নাম্বার থেকে কল দিলো। তা ভাবতে ভাবতে ছাদ থেকে বাসায় আসে। সন্ধ্যা পার হয়ে রাত ১১ টা। মহসিনের মোবাইল থেকে ম্যাসেজ এসেছে,
'ফ্রি থাকলে আর কথা বলতে পারলে মিস কল দিও, অনেক কথা জমা আছে'
১১টা সাঁতাশ মিনিটে মিসকল দেয় মায়া। ওপাশ থেকে কল দেয় মহসিন।
'মিস ফারজানা মায়া আপনি কি আমায় শুনতে পাচ্ছেন?'
হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি মিস্টার মহসিন আল আরাফ।'
শুরু হয় ওদের কথা বলা। সময় যাচ্ছে তার নিয়মে। জমে থাকা কথারা বেরিয়ে আসছে ছাত্রদের আন্দোলনের মিছিলের মতো। পরপর তিনদিন মায়া বাসার বাইরে যায় কাজের নাম করে। অথচ সে কাজে যায়নি। মিছিলে গিয়েছিলো শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে সহমত প্রকাশ করতে। বাসায় এসে কাউকে বলতে পারেনি সেকথা। সব খুলে বলেছে মহসিনকে।
মায়ার কথা শেষ হতে না হতেই মহসিন জানায় ও একটা ভালো কাজ করেছে তার বিনিময়ে ওকে কিছু চাইতে বলল। ও কয়েকটা মোবাইল নাম্বারে কিছু রিচার্জ চাইলো। সেভাবেই মায়ার নাম্বারে বাইশ টাকা দিলো। শুধু মায়াকে নয়, বাবা মা ভাই বোন থেকে শুরু করে দুজন কলিক আর পাঁচজন শিক্ষার্থীর নাম্বারে কিছু কিছু রিচার্জ দিয়ে দিলো। মহসিনের কথাগুলো শুনে মায়ার মন ভালো হয়ে গেলো। ওরা ঠিক করে নিলো নেট না আসা পর্যন্ত রুটিন করে সকাল সন্ধ্যা শুধু দুই মিনিট করে কথা বলবে। সাথে সাথে মায়া বলে উঠে,
'তাতেই তোমার মায়ার মন ভালো থাকবে'
লেখকঃ সাহিত্যিক প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক,
- আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`
- আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`
- POEM - UNTOLD WORDS !
- Poems
- Poems
- Poems
- POEM - BY THE WAYS OF PARADISE
- Article - Zein lovers
- Poem - On the Open Eyelashes Shadow I Weave
- একগুচ্ছ কবিতা
- Poem - Centuries Later
- Poem - Mystery Remains
- অনুষ্ঠিত হল অরঙ্গাবাদ ব্রাইট ফিউচার অ্যাকাডেমির বার্ষিক অনুষ্ঠান
- সুতি পাবলিক স্কুল ও কোচিং সেন্টারের উদ্বোধন
- Poem - Your Hazelnut Eyes!!!!
- Poem - Life Is Melody
- একগুচ্ছ কবিতা
- Poem - Twilight
- Poem - Love in the Autumn Leaves
- রাজনীতিতে অসতের প্রবেশ,প্রতিবাদী না হলে সমূহ বিপদ
- রাজনীতিতে অসতের প্রবেশ,প্রতিবাদী না হলে সমূহ বিপদ
- রাজনীতিতে অসতের প্রবেশ,প্রতিবাদী না হলে সমূহ বিপদ
- Poem - Missing the Sky
- Poem - Missing the Sky
- Poem - The Philosophy of the Eyes
- Poem - Silence
- Poem - When the Pen Abandons You
- POEM - LEAVE
- দ্বিতীয়বারের জন্য হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্র্যাম্প
- দ্বিতীয়বারের জন্য হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্র্যাম্প
- Poem - Centuries Later
- Poem - Mystery Remains
- POEM - UNTOLD WORDS !
- Poem - On the Open Eyelashes Shadow I Weave
- একগুচ্ছ কবিতা
- Poems
- POEM - BY THE WAYS OF PARADISE
- Poems
- Poems
- Article - Zein lovers
- আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`
- আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল `জন জাতীয় গৌরব দিবস ২০২৪`
- রায়গঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপির চমক? প্রচারে সিপিএম ত
- মালদায় পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ মন্ত্রী সাধন পান্ডের
- কালিয়াচকে বোমের আঘাতে যখম দুই লিচু ব্যবসায়ী
- Poem - Occasional Poetry
- POEM - CELEBRATING POETRY
- সৌমেন্দু লাহিড়ী
সৌমেন্দু লাহিড়ীর কবিতা- `আর্জি` - অঙ্কিতা চ্যাটার্জী কলম
ন্যানো গ্রাম বিষ : কবি আত্মা ও কাব্য আত্মা - আহত সাংবাদিক
রাহুল গান্ধীর পাঁচগ্রামের জনসভা আহত এক সাংবাদিক - TO SOMETIMES, JUST SOMETIMES
- ইজাজ আহামেদ
বেকারত্বের গ্লানি - রায়গঞ্জে
মোড়ক উন্মোচনেই শব্দলিপি-র সশব্দ দৃপ্ত পদচারণ - খুন হওয়া বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ নিয়ে শ্রীরূপার শোক মিছিল
- Poem - Oak Leaf
- আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা মৈত্রেয়ী দেবী
- দীপা দাসমুন্সির দেওয়াল লিখন ইসলামপুর কংগ্রেসের