ব্রেকিং:
আরজি কর মেডিকেলে ২০০ কোটির দুরনীতি, একাধিক প্রভাবশালীর জোগ থাকার সম্ভাবনা নলপুরে বেলাইন সেকান্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস চলতি মাসেই ২০ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা, রয়েছে নিম্নচাপের সম্ভাবনাও আগ্রা- লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু রায়গঞ্জের কুলিকে শিশুর প্রাণ বাচিয়ে ডুবে মৃত্যু তরুণের গাজোলে মাটি খুড়তে গিয়ে উদ্ধার ১৬টি রুপার মুদ্রা

সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মুর্শিদাবাদের সুতিতে শুট আউট। CSK-তে যাচ্ছেন ঋষভ? সামনে এল বড় খবর

পাকিস্তান ছাড়লেন আসিয়ার আইনজীবি

জাগরণ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০১৮ ১২ ১২ ০০  

ব্লাসফেমি মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসিয়া বিবিকে গত বুধবার বেকসুর খালাস দেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এ মামলায় আসিয়া বিবির পক্ষের আইনজীবি সাইফুল মালুক নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় পাকিস্তান ছেড়েছেন।

তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, নিরাপত্তাহীনতার কথা চিন্তা করেই তাঁকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। নিকটজনদের পরামর্শেই তিনি দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি কোন দেশে গিয়েছেন তা জানাননি।

আসিয়া বিবির স্বামীর আশ্রয় প্রার্থনা

 রয়টার্সে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় আসিয়া বিবির স্বামী আশিক মসিহ নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে যুক্তরাজ্য,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন ।

বার্তায় তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আসিয়া বিবি এরই মধ্যে অনেক যন্ত্রণা ভোগ করেছে।সে ১০ বছর কারাগারে কাটিয়েছে। আমার মেয়ে তার মাকে দেখার জন্য মারা যাচ্ছে।পাকিস্তানে আমরা ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েছি।

আসিয়া বিবিকে আশ্রয় দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। আন্তর্জাতিকভাবে তার মৃত্যুদন্ডের আদেশকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে ব্যাপকভাবে নিন্দা করা হচ্ছে।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে কট্টরপন্থী কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের সমর্থকরা। ইসলামাবাদ, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডিসহ বড় বড় শহরে রাস্তা অবরোধ করে সহিংস বিক্ষোভ করে তারা।বিচারকের মৃত্যুদণ্ডের দাবিও তোলে।

টানা তিন দিনের বিক্ষোভে কার্যত পাকিস্তান অচল হয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমনে গত শুক্রবার দেশের প্রধান শহরগুলোতে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় সরকার।

বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্য শুক্রবার দিনই উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠন তাহরিক-ই-লাব্বাইক-এর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের সরকার একটি চুক্তি করেছে। সে চুক্তিতে বলা হয়েছে, আসিয়া বিবি যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফলে আসিয়া বিবির দেশ ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।

এদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, আসিয়া বিবিকে রক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একটা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে এবং আমরা সেটি মোকাবেলা করছি। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই যে তাঁর জীবন ঝুঁকিতে নেই।

আসিয়া বিবি কেন অভিযুক্ত হয়েছিলেন?

আদালত সূত্রে জানা যায়; আসিয়া বিবি, যার পূর্ণ নাম আসিয়া নোরেন। তিনি ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর চার সন্তান রয়েছে ।

জুন ২০০৯ সালে প্রতিবেশী নারীদের সাথে বাক-বিতণ্ডার সময় আসিয়া বিবি ইসলামের নবী মোহাম্মদকে অপমান করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।প্রতিবেশী ওই নারীরা মাঠে ফসল ফলানোর কাজ করছিলেন।আসিয়া বিবি একটি কাপে করে ঐ নারীদের বালতির পানি খেয়েছিলেন। তাদের পাত্র ব্যবহার করায় ওই নারীরা আসিয়ার ওপর ক্ষেপে ওঠে।, যেহেতু আসিয়া অমুসলিম( খ্রিস্টান), তার স্পর্শ করা ঐ পানি তারা আর খেতে পারবে না, কারণ ঐ পানি এখন অশুচি হয়ে গেছে। এ নিয়ে তর্ক শুরু হওয়ার পর নারীরা আসিয়াকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হতে বলেন। এবং অভিযোগ করেন আসিয়া  মহানবী মুহাম্মাদ (সা:) নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন।

পরে আসিয়া বিবিকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে মারধর করা হয়। অভিযোগকারীরা দাবি করেন, সে সময় আসিয়া বিবি ইসলামের নবী মোহাম্মদকে অবমাননা করার কথা স্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তদন্তের পর আসিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১০ সালে ব্লাসফেমি অভিযোগে আসিয়া বিবিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন লাহোরের আদালত। যদিও তিনি সবসময় বলেছেন তনি নির্দোষ,  কিন্তু গত আট বছর তিনি নির্জন কারাবাসে অতিবাহিত করেছেন।

এই মামলা নিয়ে পাকিস্তানে এতো অস্থিরতা কেন?


পাকিস্তান ইসলামিক রিপাবলিকান দেশ। ইসলাম ধর্ম অবমাননার জন্য কঠোর আইনের পক্ষে পাকিস্তানে জোরালো জনমত রয়েছে।

কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদরা প্রায়ই এ আইনের আওতায় কঠোর শাস্তি সমর্থন করেন।

কিন্তু সমালোচকরা বলেন, অনেক সময় ব্যক্তিগত বিরোধের বিষয়ে প্রতিশোধ নেবার জন্যও ব্লাসফেমি আইনকে ব্যবহার করা হয়।

এসব অভিযোগ খুবই ঠুনকো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হয়।

 পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনে যারা দোষী সাব্যস্ত হয় তাদের বেশিরভাগই আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের।

১৯৯০ সাল থেকে ব্লাসফেমির অভিযোগ তুলে পাকিস্তানে অন্তত ৬৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

কিন্তু ৯০'র দশক থেকে বেশ কিছু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ব্লাসফেমি আইনে সাজা পেয়েছেন।পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৬ শতাংশ খ্রিস্টান।

আসিয়া বিবি ব্লাসফেমি আইনের অধীনে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত প্রথম নারী ছিলেন।

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর