ব্রেকিং:
আরজি কর মেডিকেলে ২০০ কোটির দুরনীতি, একাধিক প্রভাবশালীর জোগ থাকার সম্ভাবনা নলপুরে বেলাইন সেকান্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস চলতি মাসেই ২০ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা, রয়েছে নিম্নচাপের সম্ভাবনাও আগ্রা- লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু রায়গঞ্জের কুলিকে শিশুর প্রাণ বাচিয়ে ডুবে মৃত্যু তরুণের গাজোলে মাটি খুড়তে গিয়ে উদ্ধার ১৬টি রুপার মুদ্রা

সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মুর্শিদাবাদের সুতিতে শুট আউট। CSK-তে যাচ্ছেন ঋষভ? সামনে এল বড় খবর

ভারতের মূল সুর বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য আজ প্রশ্নের মুখে

মনিরুজ্জামান (বিটু)

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৪ ০৮ ০৮ ২০  

ভারতের মূল সুর বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য আজ প্রশ্নের মুখে   

 

 মনিরুজ্জামান (শিক্ষক জঙ্গিপুর হাই স্কুল)               

ভারতীয় জীবন ও সংস্কৃতির মূল মন্ত্র হলো বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য । সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি এই মূলমন্ত্র কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রনায়কদের দ্বারা লঙ্ঘিত হচ্ছে । কবির ভাষায় ভারতের অন্তরের মূল সুর ধ্বনিত হয়েছে "--নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান" । ভারত নামক তীর্থক্ষেত্রে শক, হুন, পাঠান, মোগল এক দেহে লীন হয়ে গিয়েছে । বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তাদের স্বতন্ত্র কৃষ্টি-কালচার নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা ভারতীয় । বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের গর্ব ও কম নয় । 

 

কিন্তু সমস্যা তখন দেখা যায় যখন গণতন্ত্রের চাবি উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রনায়কদের হাতে চলে যায় । গোটা বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর সত্যতার সহজে উন্মোচিত হয় । যেমনি হিটলার, মুসোলিনি, গ্যারিবল্ডি, এরা মানবতার চরম অবক্ষয় ঘটেয়েছে । গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে ,ভারতের সংবিধান স্বীকৃত মিলন মেলার মিষ্টি সুর , কোথাও যেন অন্তর্হিত হচ্ছে । রাষ্ট্র যদি জাতীয়তা বোধ জাগ্রত করার পরিবর্তে মানুষে মানুষ বিদ্বেষ ছড়ায় তাহলেই মানবিক অবমূল্যায়ন শুরু হয় । দেশের অগ্রগতি ও পশ্চাৎপদতা নির্ভর করছে রাষ্ট্রের উপর । তবে অগ্রগতির স্বরূপটা এক এক জনের কাছে একেক রকম । পৃথিবী যখন এগিয়ে চলেছে তখন কেউ যদি প্রাচীন সংস্কৃতি নিয়ে এগোতে চায় তবে সেটা হবে মুর্খামি । বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে অগ্রগতি কোনোভাবেই সম্ভব নয় । কোন রাষ্ট্রপ্রধান যদি একটি মন্দির, একটি স্ট্যাচু ও গরুর গোবর ও মূত্র নিয়ে গবেষণা করে ভাবে বিরাট কাজ করেছি তবে সে মূর্খের স্বর্গে বসবাস করছে ।

 

মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে । তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় কারন হলো ধর্মীয় সংকীর্ণতা । নিজের ধর্মের প্রতি অনুরাগ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু তার পরিণতিতে পরও ধর্মের প্রতি বিদ্বেষের ফল হয় মারাত্মক । আমাদের দেশে এরকম ঘটনা বেশি ঘটে । দায়িত্বজ্ঞানহীন ও প্রকৃত ধর্মীয় বোধহীন কিছু ধর্মীয় নেতা সাধারণ মানুষের মধ্যে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতা জাগিয়ে তোলে । ওইসব নেতা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এই ধরনের কাজ করে থাকে । তার ফল হয় মারাত্মক । মনে রাখতে হবে ধর্মীয় ভাইরাস কোভিড ১৯ এর চেয়েও ভয়ানক । ফলস্বরূপ গুজরাট দাঙ্গার বীভৎস রূপ আমাদের কাছে উন্মোচিত হয়েছে । সম্প্রতি দিল্লি দাঙ্গা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে । এছাড়া ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের প্রায়ই ছোটখাটো দাঙ্গার খবর পাওয়া যাচ্ছে । নিজের ধর্ম অপরে উপরে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । কে কি খাবে ,কোন পোশাক পরিধান করবে ,কোন ভাষায় কথা বলবে ,কাকে বিয়ে করবে --এগুলো একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার ।রাষ্ট্রের এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা সমীচীন নয় ।ধর্মের ষাঁড়েরা সাধারণ মানুষকে যেখানে-সেখানে পিটিয়ে মারছে । এক্ষেত্রে বেশিরভাগ ষাঁড়দের শিকার হচ্ছে মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন । উত্তর প্রদেশ বিহার মধ্যপ্রদেশ রাজস্থান এমনকি কর্নাটকে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে । সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত না থাকলে এতগুলো মানুষ মারা যেত না । মানুষকে পিটিয়ে মেরে, তার ভিডিও করে নেট দুনিয়ায় ছেড়ে দিচ্ছে তবুও তারা উপযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে না । নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার পরেও পুলিশের ভূমিকা আমাদের আহত করেছে । গরু কে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে । গরুকে কেউ পূজো করতেই পারে, তাকে মা বলতেও পারে,Q1 তাতে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয় । কিন্তু গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে তা কোনভাবেই অভিপ্রেত নয়। ফ্রিজে মাংস থাকলে বা কারো ব্যাগে মাংস থাকলে তাকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, এটা কোন সভ্য সমাজে চলতে পারে না।

 

 

রাষ্ট্রের কাজ প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া । সরকার কি পেরেছে সুরক্ষা দিতে ? বিজেপি শাসিত মণিপুরে দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকশো মানুষ মারা গিয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ গৃহ ছাড়া ।ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।উত্তরপ্রদেশ যেন প্রাচীন যুগে ফিরে গেছে । দলিতদের প্রতি অমানবিক অত্যাচার চরম হারে বেড়ে গিয়েছে । কাউকে ধর্ষন করে পুড়িয়ে দিচ্ছে, কাউকে পিটিয়ে হত্যা করছে ,রীতিমতো জঙ্গল রাজ চলছে । অপরদিকে আসামে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ এনআরসির নামে অসহ্য কষ্টের মধ্যে দিন পার করছে । সরকার ইউএপিএ নামক একটি আইন তৈরি করেছে । হাজার হাজার কাশ্মীরি কে এই আইনে জেলে পুরেছে; এগুলো কি অমানবিক নয় ? যারা কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলন করছে তাদের কেউওএই আইনে গ্রেফতার করা হচ্ছে । যে সমস্ত শিল্পী,সাহিত্যিক, সমাজকর্মী ,সাংবাদিক ,সরকারের অমানবিক কর্মসূচির সমালোচনা করছে তাদের কেউও এই আইনে গ্রেফতার করা হচ্ছে । ভারতবর্ষের বুদ্ধিজীবীদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে । সরকার সিবিআই , ইডি , এনআইএ , এর মত সংস্থাগুলোকে নিজের মতো করে কাজে লাগাচ্ছে । সিবিআই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি লোধা মন্তব্য করেছিলেন "সিবিআই খাঁচায় বন্দী তোতা পাখি" । মানুষ সঠিক বিচার পাচ্ছে না । ভীম করে গাও ;গুজরাট, দিল্লির গণহত্যার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার কদর্য রূপ আমরা দেখেছি । ইসরাত জাহান এর বিচার প্রক্রিয়া ও আমরা দেখেছি । ইউএপিএ ধারায় যে সমস্ত মানুষগুলোকে গ্রেপ্তার করছে তার বেশিরভাগই নির্দোষ । ১০০০০ জনকে গ্রেপ্তার করলে দোষ প্রমাণিত হয় মাত্র ২০০ জনের । অর্থাৎ 2%। । জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কেউও সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে । সরকারের সম্পদ কয়েকটি কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দিয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরী করা হয়েছে । সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া । ৩৫ টাকা লিটারের পেট্রোল ১০০ টাকার দামের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে । কয়েক জন মানুষ ব্যাংকের সমস্ত টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়ে গেছে । তার ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে আপামর সাধারণ মানুষকে । ইজরাইল থেকে পেগাসাস এর সাহায্যে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের ফোন হ্যাক করা হচ্ছে । সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আজকে তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে । মানুষ যাবে কোথায় ? ইতিমধ্যে বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যে ইউনিফর্ম সিভিল কোড অর্থাৎ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাভ করা হয়েছে ।ভারতের মতো দেশে এই ধরনের আইন কোনোভাবে প্রযোজ্য নয়। এক্ষেত্রে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ।পারস্পারিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে মূল সুর তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে । আমাদের উদ্দেশ্য হবে unity in diversity অর্থাৎ বৈচিত্রের মধ্যে ভারত আত্মার অন্তরের যে ঐক্য ও সমন্বয়ের সুর নিহিত আছে তাকে ধারণ করায় হলো আমাদের মূল লক্ষ্য ।

 

           

 

Puspaprovat Patrika
এই বিভাগের আরো খবর