সংলাপ অব্যাহত থাকবে:ওবায়দুল কাদের
জাগরণ প্রতিবেদক
দৈনিক জাগরণ
প্রকাশিত : ১২:৪৭ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
‘আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে, সংলাপ অব্যাহত থাকবে। সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বহু প্রতিক্ষার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে সংলাপ চলে ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের। এসময় ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন ড. কামাল হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।
সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, সভা-সমাবেশ তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে’।
এসময় নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে তিনি বলেছেন, সভা-সমাবেশে বাধা না দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে ঐক্যফ্রন্টকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রয়োজনে একটি কর্নার করে দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরোও বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও ভদ্রতার সঙ্গে শালীনতার সঙ্গে জবাব দেওয়া হয়েছে’।
সংলাপের পরিবেশের বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ড. কামাল হোসেনসহ সবার কথা আমাদের নেত্রী অখণ্ড-মন নিয়ে শুনেছেন। একজন দুইবার, তিনবার, চারবার কথা বলেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) একবারও অধৈর্য হননি। আমাদের পক্ষ থেকেও আমাদের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন’।
মন্ত্রী আরোও বলেন, ‘ছোট পরিসরে বসার ব্যাপারে আমাদের নেত্রী বলেছেন, তাঁর দ্বার উন্মুক্ত। আগামী ৮ তারিখ পর্যন্ত আরও কয়েকটি সংলাপ আছে। তাঁরা এলেই হবে। তাঁরা যদি মনে করেন আসা দরকার। আমাদের ইনফরমেশন দিলেই চলবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে কথা তাদেরই জিজ্ঞেস করুন।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাদের (ঐক্যফ্রন্ট) অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।’
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘না, এসব কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আমার মনে হয় প্রাইম মিনিস্টার যেসব যুক্তি দিয়ে কথা বলেছেন, তাদের নেতৃবৃন্দ অনেকেই কনভিনসড হয়েছেন বলে আমরা মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের দাবি ছিল সাত দফা। তবে প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। একটি ব্যাপার পরিষ্কারভাবে বলেছি, ড. কামাল হোসেন সাহেবের চিঠির উত্তরেও একটি কথা লেখা ছিল। সেখানে বলা ছিল, সংবিধানসম্মত সকল বিষয় আলোচিত হবে, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়। কাজেই উই ক্যান নট গো বিয়ন্ড দ্য কনস্টিটিউশন।’ এসময় মন্ত্রী প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি সংলাপে নাকচ হয়েছে দাবি করে বলেন ‘পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সংসদ ভেঙে নির্বাচন হয় না, নির্বাচনের সব দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। শিডিউল ঘোষণার পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ইলেকশন কমিশনের ওপর ন্যস্ত হবে। কাজেই এসব বিষয়ে তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, তাদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই।’
রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে সংলাপে ড. কামাল হোসেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছ থেকে তালিকা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। সেই তালিকা দেখে যেটা রাজনৈতিক মামলা মনে হবে, সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিষয়ে কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা আইনের ব্যাপার, আদালতের বিষয়। আইন আদালতের বিষয়ের সঙ্গে সংলাপে কোনো বিষয় আসতে পারে না। যে দুটি মামলায় তাঁর দণ্ড হয়েছে, এটা কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলা। আমাদের নেত্রী এটাই বলেছেন, এটা তিনি ফাইল করেননি। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলা। সে সরকারের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বিএনপির লোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা ছিল। সেগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট হয়েছে, কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি।’
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, সরকার প্রধান বলেছেন, ইভিএম আধুনিক পদ্ধতি, সাপোর্ট করি। তবে এবার ইভিএম হয়তো নির্বাচন কমিশন সীমিতভাবে ব্যবহার করবে। এতে আমাদের সমর্থন থাকবে। তবে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভোট পর্যবেক্ষণে সকারের কোনো আপত্তি থাকবে না।
নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনকে আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আপনিই বলুন, আপনিও তো ইলেকশন করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বহু নির্বাচনই হয়েছে এই দেশে। এসব নির্বাচনের মধ্যে কেবলমাত্র ২০০১ সালেই একবার সেনাবাহিনীকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশে সেনাবহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল না। কাজেই এখন কেন চান?’