শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না হতে দেয়া হবে না: বিএনপি

জাগরণ রিপোর্ট 

দৈনিক জাগরণ

প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পিএম, ১ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার


সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেয়া সাত দফা দাবি না মানলে একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। 
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’য় সাজা দেয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মোট ৫ ঘন্টার গণঅনশন কর্মসূচি পালন করে  বিএনপি। গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এসব কথা বলেন। বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পানি পান করিয়ে অনশন কর্মসূচি ভঙ্গ করান। 


এর আগে গণঅনশন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে এখন বিচার ব্যবস্থা চলছে। তার প্রমাণ গত দুই দিনে খালেদা জিয়ার মামলার রায় হয়েছে। 
তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থাকেও তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে দেশে আর গণতান্ত্রিক দেশ নেই, স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে।
গণতন্ত্রের সঙ্গে খালেদা জিয়া ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছেন দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র মানেই খালেদা জিয়া। তাই আজ তার মুক্তির দাবিতে আমরা অনশন করছি।’ তিনি জানান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যখন বলা হলো-আপনার সাজা বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন তিনি বলেছেন, ‘তারা যত সাজা দিতে চায় দিক, আমি মাথা নত করবো না।’
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পরাজিত করার কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সকল গণতান্ত্রিক দাবি আদায় করবো।’


অনশনে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। এই সাজা দেশের মানুষ মানে না। সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছেন, যেখানে প্রধান বিচারপতি নিরাপদ নন, সেখানে সাধারণ মানুষ বিচার পাবে না।’


খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না জানিয়ে মোশাররফ বলেন, ‘দেশের জনগণের দাবি সকল দলের অশংগ্রহনে নির্বাচন হতে হবে। এটা শুধু জনগণের নয়, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো একযোগে বলেছে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে। এর জন্য আমরা ১১ দফা দাবি দিয়েছি। প্রথম দফা দাবিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হবে না হতে দেয়া হবে না। সংলাপে সাত দফা দাবির বাস্তবায়ন ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাবো না।’ 


সংলাপে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে রাজপথে আন্দোলনের হুমকিও দেন বিএনপির  এই সিনিয়র নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার একদিকে সংলাপের কথা বলছে। অপরদিকে ব্যাপকভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। আমাদের নেত্রীর সাজা ৫ বছর থেকে ১০ বছর করেছে। এগুলো আমাদের কাছে ভালো আলামত বলে মনে হচ্ছে না।’


মওদুদ বলেন, আমরা ভেবেছিলাম আমাদের নেত্রী খালাস পাবেন। কিন্তু যা হয়েছে সেটি নজিরবিহীন। আমরা এটা গ্রহণ করি না। যতদিন পর্যন্ত আমাদের নেত্রীর মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
এ সময় দলের নেতাকর্মীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে আন্দালনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
অনশনে অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায় ৭ দিনের মধ্যে ধুলোর মতো উড়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে ১০ বছর করা হয়েছে। নতুন করে আরেকটি মামলায় ৭ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। এসব টিকবে না। 


নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। আমাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করা যাবে না। সংলাপের নামে কোনো ধাপ্পাবাজি চলবে না।’
মহানগর নাট্যমঞ্চ (কাজী বশির মিলনায়তন) প্রাঙ্গণে কার্পেট বিছিয়ে অনশনে বসেন নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের রায় বাতিলের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা যায়। 


অনশনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান  মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন  চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপির ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।


খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি আয়োজিত এ গণঅনশনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনও অংশ নেন।
এদিকে বিএনপির অনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চের আশ-পাশে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।