বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য

হক নাসরিন বানু

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০৭:৫৫ এএম, ১৫ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

এক ব্যক্তির গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো পুরাতন মালদায়। পুরাতন মালদা থানার মঙ্গলবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের পাড়াদিঘি গ্রামে চোর সন্দেহে ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বেঁধে লাঠি, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে, চপার দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল স্থানীয় গ্রামের একটি আদিবাসী পরিবারের সাত জনের বিরুদ্ধে । বুধবার রাত ১১ টা নাগাদ এই ঘটনার পর প্রতিবেশী হামলাকারী অভিযুক্তরা এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়েছে।  রাতেই মঙ্গলবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত পাড়াদিঘি  পুরাতন মালদা থানার পুলিশ খবর পেয়ে পৌঁছায় । ওই গ্রামের রাস্তার মোড়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে রক্ত মাখা অবস্থায় মৃত ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,  মৃতের নাম সঞ্জয় আহেরি (৩৭)। পেশায় শ্রমিক ছিলেন তিনি।  অবিবাহিত সঞ্জয়ের  বাড়িতে বাবা, মা, বোন সকলেই রয়েছেন।  গত ৬  মার্চ প্রতিবেশী নির্মল সোরেনের বাড়িতে নগদ ৪০ হাজার টাকা কয়েক ভরি সোনা-চাঁদির গয়না ও বেশ কিছু ঘরোয়া  জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায় । আর এই  ঘটনায় সঞ্জয়কেই চোর সন্দেহ করে নির্মল সোরেন ও তাদের পরিবার।পুলিশ জানিয়েছে,  ৬ মার্চ চুরির ঘটনার পর সঞ্জয়ের উপর হামলা হতে পারে এই ভয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল সে। যদিও চুরির ব্যাপারে থানায় কোনো অভিযোগ সেই সময় হয় নি। পরবর্তীতে এই চুরির ঘটনাটি নিয়ে পুরাতন মালদা থানায় নির্মল সেনের পরিবার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।  কয়েকদিন পর এই চুরির বিষয়টি চুপচাপ হয়ে যায়।  এরপরই ১৩ মার্চ সকালে সঞ্জয় পাড়াদিঘি গ্রামে তার নিজের বাড়িতে ফিরে আসে।  সঞ্জয়কে দেখতেই তাকে ধরে নিয়ে বিচার করার জন্য নির্মল সোরেন তার ভাই রমেন সোরেন এক আত্মীয় তালু মুর্মু তাদের পরিবারের অন্যান্য আত্মিয়রা তৎপরতা শুরু করে দেয় । প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে , বুধবার রাতে সঞ্জয়ের বাড়ির লোকেরা পাশের গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলেন।  সেই সুযোগেই প্রতিবেশী নির্মল সোরেন ও তার পরিবারের সাত জন সদস্য সঞ্জয়কে একা পেয়ে বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়।  ওই বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে সঞ্জয় আহেরিকে  দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় । আর এরপরেই চলে ব্যাপক গণপিটুনি । চপার দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। গনপিটুনির মুহুর্তের মধ্যে  মৃত্যু হয় সঞ্জয়ের।  এরপরই অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।
মৃত সঞ্জয়ের বাবা দুলাল আহেরি এবং বোন সোনিয়া মাল পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছেন,  তার ভাই চুরি করেছে কিনা সেটা প্রমান হয় নি।  যেহেতু আমাদের বাড়ির পাশেই নির্মলদের  চুরির কিছু খালি বাক্স পড়েছিল।  তাই ওরা আমাদের সঞ্জয়কে চোর সন্দেহ করেছিল । এবং তাকে খুন করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছিল।  এই ভয়ে সঞ্জয় কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়েছিল।  বুধবার সে বাড়ি ফিরে আসে । আর তার পরে যে ওকে এভাবে পিটিয়ে খুন করা হবে তা ভাবতেই পারি নি । রাতে যখন আমরা পাশের গ্রামে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলাম । সেই সময় প্রতিবেশী অভিযুক্তরা সঞ্জয়কে পিটিয়ে খুন করে।
মৃতের বাবা দুলাল আহেরি জানিয়েছেন,  অভিযুক্ত প্রতিবেশী নির্মল সোরেন, রমেন সোরেন , তালু মুর্মু, মনিকা হেমরম, সোনামণি হাঁসদা সহ সাত জন মিলে আমার ছেলে সঞ্জয় আহেরিকে চোর অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করেছে ।অভিযুক্তদের গ্রেফতারে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি।
পুরাতন মালদা থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা জানিয়েছেন,  পাড়াদিঘি এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে।  মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।  গণপিটুনির জেরে এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।  পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।  অভিযুক্তদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।