রোববার   ১২ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২৭ ১৪৩২   ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

উন্নয়ন ও নিরাপত্তার খাতিরে উচ্ছেদ অভিযান সামশেরগঞ্জে, ব্যবসা হারা হাজারো ব্যবসায়ী

সফিকুল ইসলাম: সামশেরগঞ্জ ,মুর্শিদাবাদ

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০৯:২২ এএম, ৬ আগস্ট ২০২৫ বুধবার | আপডেট: ০৯:২২ এএম, ৬ আগস্ট ২০২৫ বুধবার

শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদের  ধুলিয়ান, ডাকবাংলো সংলগ্ন ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের আশপাশে উচ্ছেদ অভিযান। ফ্লাইওভার নির্মাণের লক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রশাসনের তরফে দোকানপাট ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসনের আধিকারিক এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ কর্মী।  উন্নয়নের তাগিদে এই সিদ্ধান্ত, তবে জীবিকাহানির শঙ্কায় কাঁপছেন ব্যবসায়ীরাযেখানে একদিকে সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ এগোচ্ছে, অন্যদিকে শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী তাঁদের বহু বছরের দোকান হারিয়ে কার্যত দুঃখের  প্রতিচ্ছবি তাদের চেহারায় । অনেকেই ৪০-৫০ বছর ধরে রাস্তার ধারে ব্যবসা করে পরিবার চালিয়ে আসছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক প্রবীণ দোকানদার আতাউর রহমান ও শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে এই রাস্তায় ব্যবসা করছি। আগেও রাস্তা চওড়া করতে কিছু অংশ কেটেছিল। এবার পুরো দোকানটাই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল।” যদিও তিনি জানান আমাদের এর আগে নোটিশ দিয়েছিল নিজে থেকে তুলে নেওয়ার জন্য। ভাবিনি পুরোটাই নিয়ে নেবে তাই যেটুকু অবশিষ্ট ছিল আজ সরকারের আধিকারিকরা এসে বলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়। আর একজন অন্যদিকে জানান , ডাকবাংলো এলাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। জাতীয় সড়ক ১২—যা উত্তরবঙ্গ এবং আন্তর্জাতিক সড়ক সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ করিডর—প্রায়শই যানজটে আটকে পড়ে। দিনের পাশাপাশি রাতেও চলাচল ব্যাহত হয়। এমন অবস্থায়, ফ্লাইওভার নির্মাণ একান্ত প্রয়োজনীয়। এর ফলে একদিকে যানজট কমবে, অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কমবে। এই যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থনীতির সাথেও  জড়িত।
উচ্ছেদের আগে ব্যবসায়ীদের সরকারি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে নির্ধারিত তারিখের আগে দোকানের সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া যায়। অনেকে আগেভাগে সরিয়ে নিলেও, অনেকেই শেষ পর্যন্ত প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁদের ধারণা ছিল এতটা জায়গা নেওয়া হবে না। ফলে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই যখন বুলডোজার চালানো শুরু হয়, তখন ভিড় জমে যায় রাস্তায়। অনেকের মন খারাপের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। দীর্ঘদিনের এই জায়গার সঙ্গে ভালোবাসা সে তো হবেই। উচ্ছেদ হওয়া চা  ব্যবসায়ী তরিকুলের একটাই অনুরোধ—ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষে যদি কোনও অংশ খালি থাকে, সেই অংশে যেন তাঁদের পুনরায় ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয়।তাঁদের কথায়, যদি সামান্য কিছু জায়গা বাঁচে থাকে, সেটায় যেন নতুন কেউ এসে দখল না করে। আমরা যারা এত বছর ধরে ব্যবসা করছি, তারাই যেন সেই জায়গায় আবার দাঁড়াতে পারি।”ঘটনাস্থলে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয় মানুষের ভিড় জমে উঠে। সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন করা হয় শামশেরগঞ্জ থানার বিপুল পুলিশ বাহিনী। রাস্তায় বারবার মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হয় যেন অযথা জমায়েত না করেন , এবং জাতীয় সড়কের কাজের  কেও যেনো কোনও বাধা না দেই। অন্যদিকে, বন দপ্তরের আধিকারিকদের তরফে ঘোষণা করা হয়, পারমিশন ছাড়া কোনও গাছ কাটা যাবে না—যদি কেউ আইনভঙ্গ করেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন রাস্তার দুই ধারে কিছু বট গাছ রয়েছে।উল্লেখ্য যে,উন্নয়নের স্বার্থে ফ্লাইওভার নির্মাণ আজ সময়ের দাবি হলেও, এই প্রকল্পের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ আজ জীবিকা হারানোর মুখে। তাঁদের পাশে প্রশাসন কীভাবে দাঁড়াবে, পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—এখন সেদিকেই তাকিয়ে  ব্যবসায়ীরা।