একগুচ্ছ কবিতা
জেরিন সুলতানা (বাংলাদেশ)
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৯:৫৮ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
জেরিন সুলতানা (বাংলাদেশ)
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
মাঝে মাঝে কিছু শব্দকে ভালোবেসে আগলে রাখি
বসতে দেই আমার পাশে ।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
মাঝে মাঝে কিছু শব্দকে উড়িয়ে দেই নীল আকাশে
রঙিন খামে ভরে কিছু কথা উড়ে যায় মেঘের দেশে।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
প্রবল আহ্লাদে কিছু শব্দের সাথে খেলা করি,
এলোমেলো শব্দের জাল বুনি মনের অবর্তমানে।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
কিছু শব্দের গায়ে হাত বুলিয়ে,
ঘুম পাড়িয়ে দেই পরম মমতায়
কিছু শব্দকে আদর দিয়ে রুপকথার গল্প শোনাই।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
কিছু শব্দের ঠোঁটে ভালোবাসা বুনি
হৃদয় কেঁপে উঠে প্রেমের আভাসে।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
কিছু শব্দের সাথে অভিমান
করে চলে যাই তারার দেশে।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
কিছু শব্দকে স্পর্শ করি প্রিয়তমর হৃদয় ভেবে,
হৃদয়ের হাহাকার এক নিমেষে উধাও হয়ে যায় ।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
খুব তৃষ্ণায় ছন্দ মিলিয়ে কথা সাজাই
স্বচ্ছ কিছু শব্দের জলে তৃষ্ণা মেটাই ।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
ঘুম না আসা রাতে কিছু শব্দকে শুতে দেই
আমার পাশ বালিশে , আমার ঘুম এসে যায়।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
কিছু শব্দ কে সাথে নিয়ে পাড়ি দেই মাইলের পর মাইল
আমার হাতের আঙ্গুলে কিছু শব্দের আঙ্গুল
আমাকে নিয়ে যায় দূর অজানায়।
আমি ঠিক কবিতা লিখতে জানি না
মাঝে মাঝে কিছু শব্দের প্রেমে পড়ে যাই
কিছু শব্দকে নিয়ে সংসার সাজাই।
যে কথা হয়না বলা
জেরিন সুলতানা (বাংলাদেশ)
আমি বকুল হয়ে ঝরে পড়বো
তুমি এসে আমায় কুড়িয়ে নিও,
মাতাল হাওয়ার মতো উড়ে এসে জুড়ে বসবো
তোমার কবিতার খাতায় !
দেখে নিও তোমার জমিয়ে রাখা অভিমান, মন খারাপ, সব হুট করেই হয়ে যাবে উধাও। তোমার দুঃশ্চিতায় ভারী হওয়া কপালে আর নির্ঘুম চোখ দুটোতে কাঠগোলাপের স্পর্শ দেবো !
আর মুঠো মুঠো স্বপ্ন মেখে দেবো চোখের পাতায় ।
তোমাকে এক মূহুর্ত একটু দেখায়
আমার শত বছরের আয়ু বেড়ে যায়,
শত যুগের বিষন্নতার ইতি ঘটে তোমার এক টুকরো হাসিতে ।
আমি অবুঝ হয়ে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি ,
নিজেকে মনে হয় সদ্য জন্মানো পাপহীন শিশুর মতো ।
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি পাখি হয়ে যাই !
উড়ে বেড়াই দিক থেকে দিগন্তে
ঘুমন্ত হৃদয় জেগে উঠে এক আকাশ হাসি নিয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো।
আমি ভেসে বেড়াই তোমার আকাশে মেঘের রানী হয়ে
তোমার বুকের সীমানায়!
যদি কখনো তোমার মনের আকাশে মেঘ জমে,
গুমোট হাওয়ার উষ্ণতায় চোখ বেয়ে বৃষ্টি ঝরে
কষ্ট এসে আকরে ধরে চারিপাশ ,
তুমি খুব কাছে আমায় ডেকে নিও
আমি পৃথিবীর সকল খুশি ছিনিয়ে আনতে পারবো
শুধু তোমার ডাকবার অপেক্ষায় ।
কল্পনায় তুমি
জেরিন সুলতানা (বাংলাদেশ)
তুমি বলেছিলে আমাদের স্মৃতি মাখানো সময়গুলো বাঁধিয়ে রাখবে তোমার সোবার ঘরের দেয়ালে
রোজ ঘুমোতে যাবার আগে দু-চোখ বুলিয়ে নেবে পরম মমতায়
তুমি বলেছিলে যেদিন তুমি পাশে থাকবে না সেদিন খুব বৃষ্টি হবে
তোমার অনুপস্থিতি যদি আমাকে খুব করে কাঁদায়, আমি কষ্ট পাই
কষ্ট গুলো বৃষ্টি হয়ে আঁচড়ে পরবে আমার শুষ্ক আঙ্গিনায়
তোমার চোখ, মুখ ,তোমার হাসি আমি খুঁজে ফিরবো দিক থেকে দ্বিগন্তে ।
তোমার দূরত্ব আমাকে খুব করে কাঁদাবে
আমি চিৎকার করে সেদিন ডাকবো তোমাকে !
আমার সে চিৎকার হয়তো পৌঁছাবে না তোমার কাছে
অথবা ,আমার মত তুমিও সেদিন , দুচোখ ভাসাবে আমাদের স্মৃতিগুলো ভেবে ।
তুমি আমার কল্পনাতেই ছিলে
বাস্তবতার সীমানা পেরিয়ে তোমার আনাগোনা ছিলো বড্ড অসহায়!
তাইতো কল্পনায় সংসার সাজাই রোজ , কল্পনার কবিতা লিখি তোমাকে নিয়ে
নীরব কবিতা! ভালোবাসার কবিতা , অভিমানের কবিতা
তোমাকে না দেখা সময় গুলোয় জন্ম দেবে বিচ্ছিরি অনুভূতির
সে অনুভূতিরা দল বেঁধে খুঁজে ফিরবে বুকের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আমার সেই তুমিটাকে।
অন্ধকার ঘরে নিঃশ্বাস গুলো দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হবে !
নিজেকে মনে হবে উত্তাল সমুদ্রের এক বিষন্ন নাবিক!
যার সামনে পেছনে গভীর জলরাশী
সে নিরুপায় হয়ে জীবনের শেষ প্রহর গুণছে!
অনিশ্চিত অপেক্ষা ,
তোমাকে এক নজর দেখার অপেক্ষা
তোমাকে ভালোবাসি বলার জন্য ছটফট করতে করতে আমি হয়তো সেদিন
ঝরে পরবো ঝরে পড়া শিউলির মতো ।
তোমার হাতের আঙুলে আর একটি বার আঙুল রাখবার জন্য উন্মাদের মত চিৎকার করতে থাকবো , হয়তোবা!
সেদিন আমার ভীষণ কষ্ট হবে জানো তো ?
যেদিন আমি জানবো , চাইলেই তোমাকে ছোঁয়া যায় না !
চাইলেই দেখা যায় না তোমার হাসি মাখা মুখ '
তুমি হারিয়ে যাবে আকাশের নীলের মাঝে মেঘ হয়ে
আর আমি হারাবো তোমাকে ভালোবাসবার অধিকার,
তাইতো সমস্ত নিয়মের বাইরে গিয়ে কল্পনায় তোমাকে পাওয়া
কল্পনায় তোমার সাথে আমার ছোট্ট সংসার।