পুলিস বস্তাভর্তি খুচরো পয়সা গুনে নাজেহাল
শঙ্কর গুপ্তা
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১১:১০ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
উত্তর দিনাজপুর
ফ্যাসাদে রায়গঞ্জ থানার পুলিস চুরি যাওয়া খুচরো পয়সা উদ্ধার করে। নাজেহাল হলেন থানার পুলিস কর্মীরা বস্তাভর্তি খুচরো পয়সা গুনতে । অবশেষে সব কয়েন গুছিয়ে মিলল ৬৫৮৬ টাকা। সম্প্রতি রায়গঞ্জের শীতগ্রাম সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের ভল্ট কেটে দুষ্কৃতীরা টাকাপয়সা চুরি করে নিয়ে যায়। তদন্তে নেমে পুলিস একজন ধরে এবং তার হেফাজত থেকে একবস্তা খুচরো পয়সা উদ্ধার হয়। এক, দুই এবং পাঁচ টাকার কয়েন ওই বস্তায় ছিল। এত পরিমান খুচরো গুনতে গিয়ে সোমবার রায়গঞ্জ থানার পুলিসকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হতে হয়। যদিও খোয়া যাওয়া টাকা পুলিস এখনও উদ্ধার করতে পারেনি।
উত্তর দিনাজপুর পুলিস সুপার সুমিত কুমার বলেন, শীতগ্রামে একটি সমবায় সমিতির অফিসে চুরির ঘটনায় আমরা একজনকে ধরেছি। পানিশালার একটি মাঠ থেকে খুচরো পয়সা উদ্ধার হয়েছে। ওই ঘটনায় যুক্ত অন্যান্যদের খোঁজ চলছে।
চলতি মাসের ৪ তারিখ রায়গঞ্জের শীতগ্রামের একটি কৃষি সমবায়ের ভল্ট গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে ৬ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা চুরি হয়েছিল। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত বুধবার রাতে রায়গঞ্জের শীতগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ মহীগ্রাম থেকে পুলিসের তদন্তকারী দল এক বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম ইয়াসমিন আলি। বৃহস্পতিবার ধৃতকে আদালতে পাঠিয়ে পুলিস তাকে ১২ দিনের জন্য হেফাজতে নেয়। ধৃতকে এরপর টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী অফিসাররা। তাকে জেরা করেই পুলিস জানতে পারে ওই গ্রামের একটি মাঠে বস্তাভর্তি করে খুচরো পয়সা রাখা হয়েছে। রবিবার রাতে পুলিস পানিশালায় যায় এবং সেখান থেকে বস্তাভর্তি ওই খুচরো পয়সা উদ্ধার করে। ভল্ট কেটে টাকা চুরি করার পরে ওই জায়গাতে বসেই দুষ্কৃতীরা টাকা গুনেছিল বলে তদন্তকারী পুলিস অফিসাররা মনে করছেন। চুরি করা টাকা মধ্যে নোটগুলি নিয়ে গেলেও খুচরো পয়সা নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে ভেবেই তারা কয়েন বোঝাই বস্তাটি সেখানে রেখে পালিয়ে যায়।
এদিকে, সোমবার রাতে পানিশালা এলাকার মাঠ থেকে বস্তা বোঝাই খুচরো পয়সা উদ্ধার করার পর তা রায়গঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার কয়েকজন পুলিস কর্মীকে ওই কয়েন গুনতে লাগানো হয়। তাঁরা একবস্তা খুচরো পয়সা গুনতে গিয়ে হিমশিম খান। কার্যত নাকাল হন। শেষপর্যন্ত সেই কয়েন গোনার কাজ শেষ করা হয়। পুলিস এই ঘটনায় অন্যান্য জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি চালানো শুরু করেছে।
শীতগ্রাম সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভল্টটি গ্যাস কাটার দিয়ে কাটা হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিস বুঝতে পারে ওই ঘটনার পিছনে বড়সড় পরিকল্পনা ছিল। যে পদ্ধতিতে গ্যাস কাটার দিয়ে ভল্ট কাটা হয়েছে তা পুরো পাকা হাতের কাজ ছিল। ওই জায়গায় যে টাকা রাখা হয় তা দুষ্কৃতীরা আগে থেকে খোঁজখবর নিয়ে অভিযানে গিয়েছিল। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, ওই অপারেশনটি চালানোর জন্য দুষ্কৃতীরা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেছিল। অফিসারদের দাবি, ওই ঘটনায় জড়িতরা বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছিল। এক্ষেত্রে ধৃত ইয়াসমিন আলি স্থানীয় তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেছিল বলেই পুলিসের তদন্তে উঠে এসেছে।
প্রসঙ্গত, রায়গঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কিছুদিন আগে ভল্ট কেটে টাকা চুরির চেষ্টা হয়েছিল। সেক্ষেত্রেও দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্কের জানালার গ্রিল ভেঙে ভিতরে ঢুকে গ্যাস কাটার দিয়ে ভল্ট কাটার চেষ্টা করেছিল। যদিও ওই ঘটনায় ব্যাঙ্কের কোনও টাকা খোয়া যায়নি। ওই দুষ্কৃতী দলটি এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান।