রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

Malda

পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

দেবাশীষ পাল, মালদা

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০১:১৫ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২২ সোমবার

মালদা;২১নভেম্বর: পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পদচ্যুত হওয়াই ক্ষোভ প্রকাশ করে পদত্যাগ করলেন বর্ষিয়ান নেতা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে দলের বিরুদ্ধে উগরে দিলেন ক্ষোভ। পঞ্চায়েত ভোটে দলের ফলাফল খারাপ হবে দাবি ওই নেতার। যদিও গোষ্ঠী কোন্দলের কথা মানতে নারাজ ব্লক সভাপতি। প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মুখে না বললেও কার্যত মেনে নিয়েছেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা। চরম অসস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। তীব্র কটাক্ষ বিজেপির। তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন শেখ দানেশ। ২০১৯ সালে মৌসম বেনজির নূর জেলা সভানেত্রী থাকা কালীন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই সামলেছেন ব্লক সহ-সভাপতির দায়িত্ব। কিন্তু দুই মাস আগে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকে ব্লক সভাপতি পরিবর্তন হয়। হজরত আলীর জায়গায় ব্লক সভাপতি হন তবারক হোসেন চৌধুরী। দুই মাস পর নতুন ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে ব্লক কমিটি ঘোষণা হয়। সেই কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পাননি শেখ দানেশ। তাকে ব্লক কমিটির সাধারণ সদস্য করে রাখা হয়েছে। লিস্ট সামনে আসতেই ক্ষুব্ধ ওই নেতা। সোমবার লিখিত ভাবে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন ব্লক সভাপতিকে। তারপরেই সংবাদ মাধ্যমের সামনে উগরে দিয়েছেন দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ। শেখ দানেশ দাবি করেছেন গোষ্ঠী কোন্দলে জর্জরিত তৃণমূল। একটি ব্লকে তিন-চারটি করে গোষ্ঠী। গোষ্ঠী কোন্দলের জন্যই তাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে। তিনি যে ভাবে দলের কাজ সামলেছেন সেখানে তার পদোন্নতি হওয়া উচিত। কিন্তু এই ভাবে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াই তিনি অপমানিত বোধ করেছেন। দলের মধ্যে দুর্নীতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। দাবি করেছেন এরকম চললে পঞ্চায়েত ভোটে খারাপ ফলাফল করবে দল। তবে তিনি দলত্যাগ করছেন না। সাধারণ কর্মী হিসেবে দলে থেকে যাবেন। এদিকে এই ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। প্রাক্তন ব্লক সভাপতি হজরত আলী জানিয়েছেন উনি দক্ষ নেতা ছিলেন। সে ক্ষেত্রে ওনাকে পদ থেকে সরিয়ে দিলে খারাপ লাগতে পারে। তবে আমি দায়িত্বে থাকাকালীন এরকম কোন অভিযোগ ছিল না। উনি যা যা অভিযোগ করেছেন ভোটের ফলাফলে সেটা বোঝা যাবে। পাল্টা ব্লক সভাপতি তবারক হোসেন চৌধুরীর দাবি গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ মিথ্যা। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় দলের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া হবে। এদিকে এই নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র খোঁচা দিয়েছে বিজেপি। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কর্মীরাই নেতাদের নিয়ে খেলবে এমনটাই কটাক্ষ বিজেপির।

 তৃণমূল নেতা তথা পদত্যাগী শেখ দানেশ বলেন, দলের মধ্যে এখন প্রচুর গোষ্ঠী। আগে এরকম ছিল না। মানুষের পদোন্নতি হয় আমার অবনতি হল। টিভি খুললে দেখা যায় এই জেলাতে দুর্নীতি। এরকম হলে দলের ফল খারাপ হবে। যদিও আমি দল ছাড়বো না সাধারণ কর্মী হিসেবে থেকে যাব।

প্রাক্তন ব্লক সভাপতি হজরত আলী বলেন, আমি যে সময় দায়িত্বে ছিলাম তখন কোন গোষ্ঠী ছিল না। উনি দায়িত্বের সঙ্গে নিজের কাজ সামলেছেন। তবে উনি যেটা অভিযোগ করেছেন সেটা ওনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল দেখলে বোঝা যাবে।

হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তবারক হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের দলের মধ্যে কোন গোষ্ঠী নেই। এটা মিথ্যা কথা। লিখিত ভাবে ওনার পদত্যাগ পত্র আসলে আমরা কথা বলব। ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকতেই পারে সেটা দলের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া হবে।

উত্তর মালদা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ আগরওয়াল বলেন, একজন বর্ষিয়ান নেতাকে এই ভাবে পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে এরকমই হয়। ভোট আসলে প্রত্যেকটা বুথে গোষ্ঠী দেখা যাবে। তৃণমূলের নেতা কর্মীরাই তাদের ভেতরের দুর্নীতি সামনে আনছে।

প্রসঙ্গত বিগত পঞ্চায়েত ভোট থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এ যথেষ্ট ভালো ফলাফল করেছে শাসকদল। ৯ টা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে নয়টা গ্রাম পঞ্চায়েতই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। কিন্তু বারবার প্রকাশ্যে এসেছে দুর্নীতি থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে এই ধরনের ক্ষোভ বিক্ষোভ স্বাভাবিক ভাবে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। মুখে না বললেও যথেষ্ট অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব।

 

বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকটিতে ক্লিক করুন https://youtube.com/c/PuspaProvat