শাসকদলের মদতে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য
মালদা : দেবাশীষ পাল
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১০:০৮ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২২ বুধবার
প্রায় প্রশাসনের নাকের ডগা তে এই কাজ করা হচ্ছে। শীতকালে শুকিয়ে যাওয়া নদী বক্ষ ভরাট করে প্লট করে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনটাই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর থানা এলাকার সুলতান নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষন্তা মৌজার অন্তর্গত কালকোষ নদী বক্ষে। বিঘ্নিত হচ্ছে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ এই নদীর বিভিন্ন অংশে স্থানীয় কিছু জমি মাফিয়া নদীর বুকে মাটি বোঝাই করে উঁচু জমি তৈরি করে সেটাকেই প্লট করে ২ থেকে ৩ কখনো বা ৫ লক্ষ টাকা কাঠায় বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে সংকীর্ণ হয়ে আসছে নদী। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের। উল্লেখ্য হরিশ্চন্দ্রপুর কুমেদপুর স্টেশনের মধ্যবর্তী রাঘবপুর ১৪ নম্বর রেল ব্রিজের নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কালকোষ নদী। বিহার থেকে এই নদী সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েত, মালিওর ১, মালিওর ২,সদলিচক এবং ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফুলহরে গিয়ে মিশেছে। এলাকায় খাড়ি বলে পরিচিত হলেও আসলে কালকোষ ফুলহরের শাখা নদী। রাঘবপুর খন্তা প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ এই নদীর বিভিন্ন অংশে জমি মাফিয়াদের নেতৃত্বে মাটি ভরাট করে জমি বিক্রি চলছে অবাধে। নজর নেই প্রশাসনের। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ গত ২০১৭ সালের বিধ্বংসী বন্যায় এলাকার বিভিন্ন খাল বিল খাড়ি এবং শাখা নদীগুলি এই ভাবে ভরাট হয়ে যাওয়াতেই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে। তবুও সীমাহীন ভাবে এই সমস্ত খারি এবং নদীগুলিতে জল নামতেই শুরু হচ্ছে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। ট্রাক্টরে করে বাইরে থেকে মাটি নিয়ে এসে নদী ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে। এদিন রাঘবপুর এলাকায় রেল ব্রিজের নিচে গিয়ে ধরা পরল এমনই এক চিত্র। এই এলাকা থেকে দূরেই হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক অফিস। তবুও কেন এই ভাবে নদীর চুরির ক্ষেত্রে ব্লক প্রশাসন নিষ্ক্রিয়তা দেখাচ্ছে এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।এদিকে এলাকার বিরোধীরা নদী ভরাট করে জমি বিক্রির পেছনে শাসকদলের নেতাদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের অভিযোগ তুলেছেন।
সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান ওয়াইদুর রহমান বলেন, সকালে খবরটি শুনতে পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থলে আসি। দেখতে পায় মাটি ভরাট হয়েছে। প্রশাসনকে বলবো তদন্ত করতে। যারাই যুক্ত থাকুক বাঁচবে না।
সিপিআইএমের জেলা কমিটির সদস্য শেখ খলিল বলেন, শাসকদলের মধ্যে এই ঘটনা ঘটছে। তৃণমূলের জন্যই প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আমরা এই নিয়ে ব্লক- প্রশাসনের দ্বারস্থ হব। সুরাহা না হলে জেলা প্রশাসনের কাছে যাব।
বিজেপি জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া, তৃণমূলের মদতে নদী ভরাট করে জমি বিক্রী করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের হেলদোল নেই। এরা যা পাবে সব বিক্রী করে দেবে। এদের সরকারে থাকার কোনো অধিকার নেই।
ফরোয়ার্ড ব্লক জেলা কমিটির সদস্য অজিত কুমার সাহা বলেন, এই নদীতে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গরিব মানুষেরা মাছ চাষ করত। তৃণমূলের মাফিয়ারা নদী ভরাট করে বিক্রি করে দিচ্ছে। একমাত্র সংবাদমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ এই অন্যায় আটকাতে পারবে।
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের ভূমি সংস্কারক আধিকারিক সুরজিৎ কুমার দাস জানান, ঘটনাটি জানা নেই। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিও এই এলাকায় জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নতুন কোন ঘটনা নয়। এর আগেও নদী ভরাটের অভিযোগ উঠেছিল। সংবাদ মাধ্যমের খবরের জেরে তখন নড়ে-চড়ে বসেছিল প্রশাসন। এলাকার প্রভাব শালীদের মদতেই জমি মাফিয়ারা বারবার সাহস পাচ্ছে মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এই ধরনের ঘটনা রোখা যাবে না।