মালদা;;১৪জুন: মুকুল রায়ের দলত্যাগ নিয়ে এই মুহূর্তে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি থেকে ফের সপুত্র তো ফিরে গেলেন তৃণমূলে। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছে বিজেপিতে ভাঙ্গনের আশঙ্কা। উঁচু তলা থেকে নিচু তলার সব ক্ষেত্রেই এই আশঙ্কা চিন্তায় রেখেছে বিজেপি নেতৃত্ব্দের। এই আবহতেই ভাঙন ধরল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর বিজেপিতে। হরিশ্চন্দ্রপুর ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য যোগদান করলেন তৃণমূলে। কংগ্রেস পরিচালিত ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েত দখলের দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। এদিকে তৃণমূলের এই দাবিকে কটাক্ষ করেছেন ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান বিমানবিহারী বসাক। আর এই যোগদানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি।ভিঙ্গল গ্রাম-পঞ্চায়েতে মোট ১৩ জন সদস্য রয়েছে। তার মধ্যে ৯জন সদস্য কংগ্রেসের, ৩ জন সদস্য তৃণমূলের, একজন বিজেপির। বিজেপির একজন তৃণমূলে যোগ দেওয়া তে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা হল ৪। তবে পঞ্চায়েত দখলের দাবি করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। হরিশ্চন্দ্রপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য অমল চন্দ্র সাহা।এই যোগদান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান, হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জিয়াউর রহমান, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আদিত্য মিশ্র, হরিশ্চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূল নেতা সঞ্জীব গুপ্তা সহ অন্যান্য দলীয় নেতৃত্বরা। বর্তমানে ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেস পরিচালিত। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করছেন এই যোগদানের পর ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েত তারা দখল করবেন।যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এদিকে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য অমল চন্দ্র সাহা বলেন," তৃণমূলে যোগদান করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এই দল মা মাটি মানুষের দল। মানুষের জন্য কাজ করে। বিজেপি শুধু ভেদাভেদের রাজনীতি করে। ওখানে থাকতে পারছিলাম না। মমতা ব্যানার্জির আদর্শে তৃণমূল একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে কাজ করব। নিজের দায়িত্ব পালন করব।" এই প্রসঙ্গে তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন," আজ ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির সদস্য অমল চন্দ্র সাহা মমতা ব্যানার্জির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করলেন। আর অতি শীঘ্রই কংগ্রেস পরিচালিত এই পঞ্চায়েত আমরা দখল করব। কারণ কিছুদিন আগে এই পঞ্চায়েতের প্রধান ত্রাণ বন্টন নিয়ে দলবাজি করেছিলেন। যা নিয়ে ওই পঞ্চায়েতের অনেক সদস্য ক্ষুব্ধ। তারা প্রধান বদল করতে চাইছেন। আমরা সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া মেনেই এই পঞ্চায়েত দখল করব।" যদিও তৃণমূল নেতার এই প্রতিক্রিয়াকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান বিমান বিহারী বসাক। তিনি পাল্টা বলেছেন,"আমরা যখন মেজরিটি নিয়ে পঞ্চায়েত দখল করে ছিলাম তখনও বলেছিল পঞ্চায়েত ওদের। এখন বিধানসভা ভোট শেষ হতেই আবার বলছে। এ সব প্রোপাগান্ডা। আর বিজেপির সদস্য কোথায় গেল তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। তবে বিজেপির সদস্যকে নিয়ে যদি তৃণমূলকে পঞ্চায়েত দখল করতে হয় তা তৃণমূলের জন্যই দুর্ভাগ্য। আমাদের সদস্যদের বহুবার ভয় দেখিয়েছে, টাকার প্রলোভন দেখিয়েছে। পঞ্চায়েত তো জনগণের ওরা নিজের মনে করলে করুক। আমার আর বিশেষ কিছু বলার নেই।" এদিকে এই যোগদানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। বিজেপি নেতার রূপেশ আগরওয়ালা বলেন," বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় যদি ফের তৃণমূলে ফিরে যেতে পারেন। যিনি এর আগে কোন দিন ভোটে জিতেন নি। বিজেপির টিকিটে জিতলেন। ইনি তো সামান্য একজন পঞ্চায়েত সদস্য। যারা এ দল ও দল করে।মূলত তারা কোনো দলের নয়। তারা স্বার্থান্বেষী।যারা বিজেপির প্রকৃত সৈনিক তারা ছিল আছে এবং থাকবে।" এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দলবদল বাংলার ফুটবল ময়দানের দল বদলের খেলাকেও হার মানাবে। উঁচু থেকে নিচের স্তর সর্বক্ষেত্রেই চলছেই দলবদলের খেলা। ভোটের আগে বিজেপিতে যোগদানের ঢল নেমেছিল। ভোট শেষ হতেই এখন উলটপুরান। তবে হরিশ্চন্দ্রপুরে বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যের এই দলবদল নিয়ে রীতিমতো সরগরম হরিশ্চন্দ্রপুরের রাজনীতি।