করোনায় স্বাস্থ্যকর্মীরা লড়ছেন হাসপাতালে,বাইরেটা সামলাচ্ছে পুলিশ
দিদারুল ইসলাম করিমগঞ্জ আসাম
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৯:১৮ পিএম, ১৩ মে ২০২১ বৃহস্পতিবার
করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে মানুষকে রক্ষা করতে মাটি কামড়ে লড়ছে পুলিশ.
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মারণ ভাইরাসের ছোবলে মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরিয়ে আনতে জীবন বাজি রেখে লড়ছেন সমস্ত আসামের সঙ্গে বরাক উপত্যকার চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁদের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে মানুষকে রক্ষা করতে মাটি কামড়ে লড়ছে পুলিশ। তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। সংক্রামক ব্যাধি হোক বা না হোক, রোগে আক্রান্ত মানুষকে সেবা দিয়ে, চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা চিকিৎসক ও চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাজ।সেটা কোনোভাবেই পুলিশের নয়। এখন সেখানে করোনাভাইরাস এনে দিয়েছে এক ভিন্ন বাস্তবতা। সেই বাস্তবতা দুনিয়াজুড়ে। এখানে ‘ব্যবস্থাপত্র’ হিসেবে চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক নতুন দাওয়াই যার নাম ‘নৈশ কার্ফু ’। যেন জীবন বাঁচাতে ওষুধ ও নৈশ কার্ফু —দুটো দাওয়াই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই নৈশ কার্ফু বাস্তবায়নের কারিগর হচ্ছেন পুলিশ। ঘরে থাকলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হবে না। তাই মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশ কখনও চালাচ্ছেন লাঠি, কখনও অসহায়ের সহায় হচ্ছেন। করোনাভাইরাস রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা, চিকিৎসাশেষে বাসায় পৌঁছে দেয়া, কখনও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি করা, এমনকি অভাবী মানুষের জন্য বরাদ্দ সরকারি ত্রাণ যেন চুরি না হয়, সেজন্যও তারা ভূমিকা পালন করছেন। আগলে রাখছেন সবাইকে। আচরণে, দায়িত্ব পালনে, কর্তব্যবোধে পুলিশ আজ যেন ত্রাতার ভূমিকায়। পুলিশের এমন অনন্য ভূমিকা বরাক উপত্যকার মানুষ অতীতে কখনও দেখেছ কি না, সন্দেহ!
ভাইরাস আতঙ্ক অনেকের মধ্যে জাগিয়েছে মৃত্যুভয়। মারণ ভাইরাসের বিস্তার যত ঘটছে, ততই আতঙ্ক বাড়ছে। আতঙ্কে লোপ পাচ্ছে হিতাহিত জ্ঞান। গুলিয়ে যাচ্ছে শত্রু-মিত্র বোধ। হয়তো এমনটাই হয়। কারণ এমন বিপদের মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা বরাকের মানুষের নেই। নেই এমন দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার অভিজ্ঞতা। হয়তো সেই কারণেই এই অস্থিরতা। এমন এক বিরল পরিস্থিতিতে পুলিশ পরিণত হয়েছে ভরসা আর আস্থার প্রতীকে। স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন লড়ছেন হাসপাতালের অন্দরে, তখন বাইরেটা সামলাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ মানেই ইউনিফরম, হাতে লাঠি, কাঁধে বন্দুক অথবা কোমরে পিস্তল। এতদিন বেশিরভাগ মানুষের কাছে অধিকাংশ পুলিশের ভাবমূর্তি এমনটাই ছিল। তাই পুলিশের কথা শুনলেই টানটান হতো শিরদাঁড়া। শক্ত হয়ে যেত চোয়াল। কিন্তু, করোনাভাইরাসের আবহে সেই ভাবনা বদলের সময় হয়েছে। লাঠির বদলে পুলিশের হাতে মাইক্রোফোন। হুমকি নয়, শোনা যাচ্ছে ঘরে থাকার আহ্বান। প্রাণঘাতী রিভলবারের খাপে এখন জীবনদায়ী স্যানিটাইজার। পথচলতি মানুষের হাত জীবাণুমুক্ত করে পুলিশ পরিয়ে দিচ্ছে মাস্ক। করোনার ঢাল। এতদিন পুলিশ ছিল আইনের রক্ষকের ভূমিকায়। আইনকে মানতে বাধ্য করাই ছিল প্রধান কাজ। ফলে আইন ভঙ্গকারীর সঙ্গে পুলিশের সংঘাত ছিল অনিবার্য। কিন্তু, আজ পুলিশ শাসক থেকে হয়ে গিয়েছে সহায়ক। বদলে গিয়েছে চিত্রনাট্য। মানুষ যখন করোনার ছোবল থেকে বাঁচতে আটকা পড়েছে ঘরে, তখন গ্রাম থেকে গঞ্জ, শহরের রাজপথ থেকে অলিগলি, শুধুই পুলিশের পদচারণা। করোনাভাইরাসের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লড়ছে বুক চিতিয়ে। বীর যোদ্ধার মতো। ‘করোনা জোন’-এর নাম শুনলে যখন ভয়ে মানুষের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে, তখন পুলিশ ছুটছে সেখানেই। গড়ে তুলছে ব্যারিকেড। মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তুলে নিচ্ছে কাঁধে। পুলিশ হয়ে উঠছে আপনজন। কোনো এলাকায় অচেনা কেউ ঢুকলে চ্যালেঞ্জ করছে। সেই সূত্রেই কোথাও কোথাও মিলছে করোনা আক্রান্তের হদিস। অসুস্থকে হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে। বাঁচছে পরিবার। বেঁচে যাচ্ছে গ্রাম।করোনা মহামারির কালে তুলনামূলকভাবে আইনশৃঙ্খলার ঝক্কি কম। নেই ট্রাফিকের চাপ। তাই সমস্ত ফোর্স আজ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল। হ্যাঁ সেই পুলিশই এখন এক ফোনে পৌঁছে যাচ্ছে এলাকায়। দূর করছে সমস্যা, মেটাচ্ছে চাহিদাও।ছোটবেলায় শোনা, বিপদে পড়লে বন্ধু চেনা যায়। ধর্মগ্রন্থও সেকথাই বলছে। উৎসবে, বিপদে, রাজদ্বারে, দুর্ভিক্ষে, শ্মশানে যে পাশে থাকে সেই হল প্রকৃত বন্ধু। সেই বন্ধুর কর্তব্য পালন করতে গিয়েই আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ। তবু তারা কর্তব্য পালনে অবিচল। মারণ ভাইরাসের ছোবলে কেউ মারা গেলে যখন পরম আত্মীয়ও মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে, তখন পুলিশই হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভরসা।করোনা-ঝড় নিশ্চয়ই একদিন থেমে যাবে। পৃথিবীটা আবার শান্ত হবে। তখন পুলিশ হয়তো আবার পুলিশই হয়ে যাবে। হয়তো আবার উঠবে অভিযোগের আঙুল। সম্পর্কের সংঘাতে পাশাপাশির অবস্থান বদলে আমরা হয়তো আবার হব মুখোমুখি। তবে করোনাকালে পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকার কথা আমাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতে হবে।