নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকবে না: কাদের
জাগরণ প্রতিবেদক
দৈনিক জাগরণ
প্রকাশিত : ০৭:০৪ পিএম, ৭ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকবে না।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সরকারের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা কিছু কথা বলেছেন। এটা আমাদের দেশে হয় না। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের নিয়ম নেই। কিন্তু সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। টাস্কফোর্স হিসেবে তারা যেখানেই প্রয়োজন, সেখানেই কাজ করবে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষ, আলোচনা চলবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে তারা এসেছেন এবং আলোচনা হয়েছে। মন খুলে কথা বলেছেন তারা। আমরাও বলেছি। তাদের সঙ্গে এটা দ্বিতীয় দফার সংলাপ। আজকে (বুধবার) তারা যে দাবিগুলো নিয়ে এসেছেন তা হচ্ছে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার আগে তারা কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চান। কিছু বিষয়ে ঐকমত্য চান। এর মধ্যে মূল কথা হচ্ছে সংসদ যেদিন বসেছে সেদিন থেকে হিসেব করে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তারা সংলাপে প্রস্তাব দিয়েছেন নির্বাচন সংসদের মেয়াদ শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে করার। কিন্তু এটা সংবিধানের বাইরে।
এছাড়া লেভেল প্লেইং ফিল্ড, বিদেশি পর্যবেক্ষক, রাজবন্দিদের মুক্তি, এসব বিষয়ে আমাদের নেত্রী বলেছেন, ‘এসব দাবি মেনে নিতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। শিডিউল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনই এসব করবে। তাদের লেভেল প্লেইং ফিল্ডের ব্যাপারেও আমরা সম্মত। আমাদের মন্ত্রীরা নিজেদের এলাকায় জাতীয় পতাকা ব্যবহার করবে না। সরকারি সুযোগ সুবিধা নেবে না। সার্কিট হাউস ব্যবহার করবে না, সরকারি গাড়ি ব্যবহার করবে না। কোনো প্রকার সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করবে না। অন্য এমপিদের কোনও ক্ষমতা থাকবে না।
তিনি বলেন, তবে সংবিধানের বাইরে কোনো কিছু মানা সম্ভব নয়। কিছু কিছু প্রস্তাব আছে যেগুলো মেনে নিতে আমাদের আপত্তি নেই। তারা প্রস্তাব দিয়েছেন সংবিধানের মধ্যেই। কিন্তু বিষয়টাতো সংবিধানের বাইরে। তাদের প্রস্তাব ও সংবিধানের সঙ্গে বিশাল একটা গ্যাপ আছে। তারপরও যাওয়ার সময় তাদের অনেকটা নমনীয় মনে হয়েছে।
এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তারা সংসদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। কিন্তু সে দাবি মানা সম্ভব নয়। একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘ আপনারা আসুন আমি একটা অবাধ ও সুষ্ঠু ইলেকশন আপনাদের দেখাতে চাই। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করুন। নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে গিয়ে কোন ফাঁক- ফোকর দিয়ে কোনও অপশক্তিকে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেবেন না। এটা আপনাদের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। আমাদের সকলের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে।’
তিনি বলেছেন, সংলাপ হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। দেশের ইতিহাসে এ ঘটনা আর ঘটেনি। আলোচনা হয়েছে। এবং আলোচনার পরিবেশটা ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঐক্যফ্রন্টের ১১ জন নেতা সংলাপে বসেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ ১১ নেতা গণভবনে প্রবেশ করেন। সংলাপে অংশ নেওয়া ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতারা হলেন বিএনপির স্হায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, দলের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দলের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের পক্ষে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডা. দীপু মণি, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, স ম রেজাউল করিম, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২০ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ করে।
এসআর/জেডএস/এমটিআই