বদরপুর এসটিসির পুকুরে পেট্রোলপাম্প গোপনে লিজের তোড়জোড় কর্তৃপক্ষের
আবুল সাহিদ , শিলচর আসাম
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৯:৪৪ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২১ রোববার
বদরপুরের অসম রাজ্য পরিবহণ নিগম (এএসটিসি) চত্বরে জলাশয় বা পুকুরটি সরকারের অবহেলা ও অযত্নে জলজ উদ্ভিদ ও ঘাসের জঙ্গলে ছেয়ে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এসটি রোডের একাংশ ব্যবসায়ীর ফেলা আবর্জনায়ও ভর্তি। অথচ, এই পুকুর এক সময় আশপাশের এলাকার মানুষের এমনকী,পানীয় জলের অভাব পূরণও করতো। তা ছাড়া, শহর বদরপুরে বিপদ-আপদে বিশেষত কোনও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে আগুন নেভানোর কাজে দমকল বাহিনীর কাছে জলাশয়টি ছিল জলের উৎস। কিন্তু এএসটিসি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ও অযত্নে বর্তমানে পুকুরটি বুজে যাওয়ার অপেক্ষায়। এটা রীতিমতো দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন সংলগ্ন এলাকার লোকজন। নিগমের নিজস্ব প্রয়োজনে ও যাত্রীদের জন্য নির্মিত (যদিও দৈন্যদশাগ্রস্ত) শৌচালয়ে ব্যবহারে এই পুকুরের জল ছিল একমাত্র ভরসা।
কিন্তু বদরপুর শহরের বহু স্মৃতি-বিজড়িত এএসটিসি কমপ্লেক্সকে পরিকল্পিতভাবে পরিত্যক্ত করে তোলা ও এই পুকুরটি সবার অলক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে লিজ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলে জানা যায়। কাথাটি পাঁচকান হওয়ার পর সরকারি তরফে এধরনের পদক্ষেপ নেওয়াকে কোনওভাবে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নন স্থানীয় জনগণ। প্রসঙ্গত,বদরপুরের এএসটিসি কার্যালয়টি দীর্ঘদিন থেকে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের কোনও পদক্ষেপ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে বলে কেউ বলতে পারেন না। পুকুর থাকা সত্বেও জলের অভাবে যাত্রীরা শৌচালয় ব্যবহারে অপারগ। চত্বরেই অর্ধ জলমগ্ন ও ভগ্নদশাগ্রস্ত দু'টি কোয়ার্টার অবশিষ্ট। কর্মচারী বলতে একজন সুইপার ও একজন ড্রাইভার এই দুই কোয়ার্টারের বাসিন্দা। বদরপুর থেকে শিলচর চলাচলকারী একটি বাস পার্কিং করা থাকে মেন রোডের পাশে। অথচ, এই চত্বরে ছিল বাস রাখার দু-দুটো গ্যারেজ। ছিল মাঝারি সাইজের চাতাল। এবং পুকুর ও কোয়ার্টারের মাঝামাঝি স্ট্যান্ড থেকে নির্বিঘ্নে বাসের গমন-প্রস্থানের পাকা রাস্তা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি ও সরকারি অবহেলায় বহু বছর ধরেই পুরো চত্বর জুড়ে ছেয়ে আছে আগাছার জঙ্গল। এখানেই রয়েছে বুজে যাওয়ার অপেক্ষায় শহরের একমাত্র সরকারি পুকুর বা জলাশয়টি। ইদানিং এই পুকুরটি নিয়ে শহরময় চলছে জোর চর্চা। কারণ, এই স্থানটিতে পুকুর বুজিয়ে একটি পেট্রোল পাম্প গড়ে তোলার তোড়জোড় অনেকেরই নজরে পড়ে। ইতিমধ্যে দু-দুবার বদরপুরের এএসটিসি চত্বর পরিদর্শন করে যান জনা কয়েক সরকারি কর্মকর্তা। বিভিন্ন আ্যঙ্গেল থেকে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ছবিও। বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখ এড়িয়ে যায় নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রাজ্য সরকার বদরপুরেরই জনৈক ব্যক্তিকে পুকুরটি লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এতে স্থানীয় নাগরিক সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারা লিজের বিরোধিতা করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি স্মারকপত্র দেন। প্রশ্ন তোলেন, স্থানীয় অগ্নিনির্বাপক বাহিনী যে জলাশয়টিকে আশ্রয় করে গোটা এই অঞ্চলের সুরক্ষা দিয়ে আসছে দীর্ঘকাল, কোন্ যুক্তিতে তা হাতছাড়া হবে ? তা ছাড়া, নবীনচন্দ্র কলেজ লাগোয়া এলাকায় পেট্রোল পাম্প স্থাপনের ফলে বিপদের ঝুঁকি প্রচুর। শুধু তাই নয়, কলেজের মুখোমুখি রয়েছে বদরপুর পাব্লিক হাইস্কুল, এমই স্কুল ও এলপি স্কুল। রয়েছে দুটি বেসরকারি কলেজও। পেছনেই বসত এলাকা। তাই এখানে পেট্রোল পাম্পের অনুমতি দেওয়া মানেই বিপদ ডেকে আনা। অসম গণ পরিষদ দলের প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল ইসলাম তালুকদার, বরাক উপত্যকা উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রউফ বড়ভূঁইয়া, বুন্দাশিল জিপি লেভেল কো-অপারোটিভ সোসাইটির পক্ষে রেহানা খাতুন, জয়নাব বেগম সহ অনেকের সাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপির মাধ্যমে বিষয়টি অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করা হয়। সরকারের কাছে তারা আবেদন করেন যে, জলাশয়টিকে স্বস্থানে রেখে বাস যাতায়াত এবং পার্কিঙের ব্যবস্থা ফের গড়ে তোলা হোক।