যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন, অতঃপর...
গোলাম মোস্তফা
দৈনিক জাগরণ
প্রকাশিত : ০৫:৪৪ পিএম, ৭ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার
পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি আমেরিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটছেই না। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর এ পরিস্থিতি বিশেষভাবে ঘোলাটে হয়ে ওঠে। দেশটিতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে এ অস্থিরতার ফলাফল বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করল। যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ তথা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নিয়ন্ত্রণ হারাল ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। দীর্ঘ ৮ বছর পর ডেমোক্র্যাটরা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নিয়ন্ত্রণ হাতিয়ে নিল। তবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে জয় পেয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। বিগত দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণ ছিল রিপাবলিকান পার্টির।
ইতোমধ্যে প্রাপ্ত ফলাফলে নিম্নকক্ষের ২০৪টি আসনে জয় নিশ্চিত করেছে ডেমোক্র্যাটরা; অপরদিকে রিপাবলিকানরা জয় পেয়েছে ১৮৭টি আসনে। হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য আসন প্রয়োজন ২১৮টি। সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টের প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন অনেকটাই নির্ভর করে কংগ্রেসের দুই কক্ষে তার দলীয় শক্তি। অর্থাৎ উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন দেখা দেয়। নচেৎ প্রেসিডেন্ট হয়ে পড়েন অনেকটা নখদন্তহীন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর পরপর হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে, অর্থাৎ দু’বছরের মাথায় হয় মধ্যবর্তী নির্বাচন। এ নির্বাচনে জনগণ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে তাদের সন্তোষ বা অসন্তোষ প্রকাশের সুযোগ পায়। আর তাই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মানুষ কী ভাবছে এবং তার আবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কতটুকু, তা এ নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে যায়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে বিভেদ সৃষ্টিমূলক কর্মকা-, বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক উসকানি, নারী কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক অপকৌশলের কারণে তিনি এখন বিশ্বজুড়ে সমালোচনার সম্মুখীন। তা ছাড়া মুক্তবাজার অর্থনীতির বিরোধিতা, বহুপাক্ষিক বাণিজ্যব্যবস্থা সমর্থন না করা, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে অসহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যেও ডোনাল্ড ট্রাম্প-সমালোচকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুক্তবিশ্ব ও মুক্তবাণিজ্যে বিশ্বাসী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা, বিশেষ করে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় মনে করে, ট্রাম্প এ দেশটিকে বিশ্বসমাজের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষয়িষ্ণু বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা আবার স্থায়ী করে নিচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বেচ্ছাচারী, অপরিণামদর্শী ও অরাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে। চারিত্রিক ও নৈতিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে বেপরোয়া এমন একটি মানুষ কী করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন, তা নিয়ে বিশ্ববাসী সমালোচনায় মুখর।
তবে আশার কথা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় আমেরিকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকায় এখন বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন, স্টক মার্কেট আকাশ ছোঁয়া। সবচেয়ে ভালো করছে আমেরিকার ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি বা প্রতিরক্ষা কারখানাগুলো। সস্তা তেলে চলছে আমেরিকার কারখানাগুলো। আর উৎপাদিত মারণাস্ত্র কিনছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো চড়া দামে।
বিগত দিনগুলোয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন বিতর্কিত ও অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ এবং কর্মকান্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার(ইমপিচমেন্ট) আশঙ্কাও অনেকে প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেসের উভয় কক্ষে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল বলে এতদিন হয়তো তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় সে শঙ্কা প্রকট হয়ে দেখা দেবে। যদি সে সংকট থেকে কোনোমতে তিনি বেঁচেও যান, তা হলেও প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে তার পক্ষে কোনো আইন পাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং বিভিন্ন আইন পাস করার ব্যাপারে তার হাত-পা বাঁধা পড়তে পারে।