উদার আকাশ ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা উদ্বোধন করলেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২০ শনিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত হল 'উদার আকাশ ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৭। উদ্বোধন করলেন বাংলার প্রখ্যাত লেখক ও পুরাণ-রামায়ণ-মহাভারত-গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে লেখক তাঁর ঢাকুড়িয়ার বাসভনে এই পত্রিকাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বিখ্যাত লেখক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর হাতে উদার আকাশ ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ তুলে দিলেন সম্পাদক ফারুক আহমেদ ও সহ সম্পাদক মৌসুমী বিশ্বাস। বিশ্বজোড়া করোনাকালীন দুর্যোগের মধ্যে যখন বহু স্বনামধন্য পত্রিকা ছাপাখানার মুখ দেখতে পাচ্ছে না কিম্বা অনেকেই অনলাইনে পিডিএফ ফর্মাটে দায় সারছেন তখন স্বমহিমায় আরও বৃহৎকলেবরে দুই বাংলার উল্লেখযোগ্য লেখকদের সঙ্গে নতুন প্রতিভাবানদের লেখা সযত্নে দু'মলাটের মধ্যে ধরে প্রকাশিত হয়েছে উনিশ বছরের ঐতিহ্যশালী উদার আকাশ পত্রিকাটি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উদার আকাশ পত্রিকার সহ সম্পাদক মৌসুমী বিশ্বাস, রাইসা নূর।
উভয়বঙ্গের প্রায় ১৬১ জন সাহিত্য-যোদ্ধার প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। এতে রয়েছে ৩৩টি প্রবন্ধ, ২১টি গল্প, ৯৪টি কবিতা, ৩টি অনুবাদ কবিতা, ছড়া, একটি সাক্ষাৎকার ও ২টি স্মরণ। এছাড়াও রয়েছে ‘উদার আকাশ’-এর বিগত দুটো সংখ্যার পাঠ প্রতিক্রিয়া, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে ছড়ার মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি, মানবসেবা সংক্রান্ত প্রতিবেদন, আধুনিক বাংলা কবিতা: স্বপ্ন সম্ভাবনা সংক্রান্ত সুবোধ সরকারের তুখোড় আলোচনা, সাংস্কৃতিক সংবাদ, সর্বোপরি পশ্চিমবাংলার ২৩টি জেলাকে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সহযোগী সঙ্গী করতে পেরেছি। এই বিষয়টি আমাদের আনন্দের কারণ হয়েছে। আমরা নতুন বিভাগ শুরু করেছি ‘কিতাব-চর্চা’। বলছিলেন সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
২৫৬ পাতার এই সংকলন যাদের লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁরা হলেন প্রবন্ধে চন্দ্রপ্রকাশ সরকার, খাজিম আহমেদ, জয়ন্ত ঘোষাল, সুমন ভট্টাচার্য, মনিরুল ইসলাম, মীরাতুন নাহার, মইনুল হাসান, জহির-উল-ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, তৈমুর খান, আবু রাইহান, আবেদা সুলতানা, সাইফুল সেখ, প্রদিতি রাউত প্রমা, শান্তনু মন্ডল, শান্তনু প্রধান, শুভেন্দু মন্ডল, শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, একরামূলল হক শেখ প্রমুখ।
এই সংকলনে কবিতা লিখেছেন সুবোধ সরকার, জহর সেনমজুমদার, নাসের হোসেন, মুহম্মদ মতিউল্লাহ, পাবলো শাহি, তুষার ভট্টাচার্য, গোলাম রসুল, সৌমিত বসু, অংশুমান কর, এবাদুল হক, তাজিমুর রহমান, আবদুস শুকুর খান, গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, আশিস সান্যাল, অমল কর, হান্নান আহসান, হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়, মোনালিসা রেহমান প্রমুখ।
‘উদার আকাশ’ সৃজনশীল সাহিত্য নির্মাণ আর বৌদ্ধিক চিন্তাচর্চার ক্ষেত্রে প্রায় দুদশক সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে। সাহিত্যপত্রটি প্রাতিষ্ঠানিকতা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র ব্যক্তিউদ্যোগে এতখানি পথ পেরিয়ে এসেছে। বস্তুত ‘উদার আকাশ’ সাহিত্য সংস্কৃতিপত্রটি আর নিঃসঙ্গ পদাতিক নয়। এই দুদশকে অগণন শুভানুধ্যায়ীর সন্ধান আমরা পেয়েছি। স্বভাবতই ‘উদার আকাশ’ আজ খোদ একটি সাহিত্য আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে-এ বড় অনির্বচনীয় শ্লাঘার বিষয়।
হরেক কিসিমের বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ঝোড়ো উপস্থিতি ‘প্রিন্ট মিডিয়া’কে প্রায় কোনঠাসা করে ফেলতে উদ্যত তেমন সময়ে ‘উদার আকাশ’ সব বিপত্তিকে তুষারস্তূপের ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছে; শুধু তাই নয় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট চিন্তক পত্রিকাটিতে তাঁদের মেধাজাত সাহিত্যফসলগুলো প্রকাশ করছেন। তরুণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, বর্ষীয়ান এক সাংস্কৃতিক যোদ্ধাকে নিয়ে, যিনি ৫৫ বছর ধরে একটি উপেক্ষিত জাতির মর্যাদার লড়াই-এ ক্লান্তিহীন রয়েছেন; তৎপরবর্তীর সঙ্গে সামনে এগোচ্ছেন। কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিলে পৌঁছান সম্ভব হবে সহৃদয় সুহৃদদের পৃষ্ঠপোষকতায়।
বর্তমান সংখ্যাটি সম্পর্কে দুচারকথা বলা যাক। কোভিড ১৯ এর সুবাদে এই সংখ্যাটি নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের সীমাহীন অসুবিধের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়—সব বিপত্তিকে অতিক্রম করে ২৫৬ পাতার এই বিশাল সংখ্যাটি প্রকাশ করা সম্ভব হল; আমাদের শুভানুধ্যায়ী তার পৃষ্ঠপোষকবর্গের সহায়তায়।
উভয়বঙ্গের প্রায় ১৬১ জন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আর বৌদ্ধিক ক্ষেত্রে সতত ক্রিয়াশীল যোদ্ধার প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। আমরা তৃপ্ত হই; আরও কাজ করার রয়েছে। ৩৩টি প্রবন্ধ, ২১টি গল্প, ৯৪টি কবিতা, ৩টি অনুবাদ কবিতা, ছড়া আর কবিতা সর্বমোট ১০৫টি, একটি সাক্ষাৎকার, ২টি স্মরণ ‘উদার আকাশ’-এর বিগত দুটো সংখ্যার পাঠ প্রতিক্রিয়া। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্য ছড়ার মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি, মানবসেবা সংক্রান্ত প্রতিবেদন, আধুনিক বাংলা কবিতা: স্বপ্ন সম্ভাবনা সংক্রান্ত সুবোধ সরকারের তুখোড় আলোচনা, সাংস্কৃতিক সংবাদ, সর্বোপরি পশ্চিমবাংলার ২৩টি জেলাকে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সহযোগী সঙ্গী করতে পেরেছি। এই বিষয়টি আমাদের আনন্দের কারণ হয়েছে। আমরা নতুন বিভাগ শুরু করেছি ‘কিতাব-চর্চা’।
পরিশেষে প্রচ্ছদ, অলংকরণ, চিত্রণ, ইলাসট্রেশন, অঙ্গসজ্জা ইত্যকার ক্ষেত্রে প্রচ্ছদ শিল্পী সারফুদ্দিন আহমেদ, ‘পারফেকশন’-এ আগ্রহী ছিলেন। তিনি সফল হয়েছেন। গৌরগোপাল ভৌমিক অভিজ্ঞ শিল্পী। তাঁর কাজের মান বরাবরই গ্রহণযোগ্য।
প্রবন্ধের ক্ষেত্রে জয়ন্ত ঘোষাল নিজস্ব খোঁজে পৌঁছে গেছেন ‘বাঙালি মননের মিশ্র সংস্কৃতি’র জগতে। সুমন ভট্টাচার্যের বিশেষ প্রবন্ধ আত্ম-বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ‘বাঙালি ক্রমশ বাংলাতেই কোনঠাসা’ হয়ে পড়েছে। বস্তুত ১৯১১ সালের পর থেকে বাঙালি শুধু ভারতের ক্ষেত্রে নয়, বাংলাতেই তারা অপাঙতেয় হয়ে পড়েছে। এখনই সচেতন না হলে বহু অবাঞ্ছিত লোক এখানে হানা দেবে।
বাংলাদেশের প্রাবন্ধিক মনিরুল ইসলাম মুসলিম বাঙালির বিদ্যাসাগর খানবাহাদুর আহসানউল্লাকে আলোর পাদপ্রদীপে সর্বোদয় ভবানী সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। মীরাতুন নাহার পশ্চিম বাংলায় রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনকে পুনরুজ্জীবিত করার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। তিনি সরল ভাবনা মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন। মাইনুল হাসান এবঙ্গে সুপরিচিত একজন প্রাবন্ধিক। বেশকিছু গ্রন্থ তাঁর বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। তিনি বুদ্ধি ও বিবেকের মুক্তি আন্দোলনের প্রায় প্রধান নায়ক কাজী আবদুল ওদুদ সম্পর্কে একটি বৌদ্ধিক চর্চা করেছেন। দুর্বোধ্য বিষয়কে মইনুল এত সহজভাবে উপস্থাপন করেন যা বিশেষ প্রশংসার যোগ্য। পণ্ডিতস্মণ্যতা তাঁকে গ্রাস করেনি।
বহু গ্রন্থপ্রণেতা আমিনুল ইসলাম একজন প্রতিষ্ঠিত প্রাবন্ধিক, ক্রমেই পরিচিত হয়ে উঠছেন জহির-উল-ইসলাম, কবি তৈমুর খান, অতি সচেতন সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক আবু রাইহান, আবেদা সুলতানা, সাইফুল সেখ প্রাবন্ধিক মনিরুদ্দিন খান ‘নওসের আলি খাঁ ইউসুফজয়ীর মারফত স্বরূপসন্ধান করেছেন। তরতাজা তরুণ, অতিমেধাবী ছাত্র, নিরন্তর লেখাপড়ায় আন্তরিক, ‘মর্যাদার সন্ধানে রত এমন একটি দৈনিক সংবাদপত্রের’ তরুণ সাংবাদিক গোলাম রাশিদ কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাংবাদিক সত্তা সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন।
প্রদিতি রাউত প্রমা, শেখ মকবুল ইসলাম, বহারুল হক, রিফতি আহমেদ, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, মোহাম্মদ শামশুল আলম, শান্তনু মণ্ডল, শান্তনু প্রধান, শুভেন্দু মণ্ডল নানা বৈচিত্র্যের প্রবন্ধ উপহার দিয়েছেন।
বাঙালি জাতির শ্লাঘার প্রতীক কবি শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে সৈয়দ মাজহারুল পীরভোজের একটি তন্বিষ্ঠ আলোচনা, সুজাউদ্দিন সেখের সমাজ দর্পণ, বিশ্বমানব স্বামীজী বিবেকানন্দ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন অধ্যাপক শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।
কোন একটি গ্রন্থের বিষয়কে ফালাফালা করে চিরে বিশ্লেষণের মারফত এমনভাবে নির্যাসটিকে বের করে নিয়ে আসেন একরামূল হক শেখ—চমৎকৃত হই। শুধু তাই নয়, আলোচিত গ্রন্থটির সাযুজ্য রয়েছে—এমন বিষয়গুলোকে সম্পৃক্ত করে প্রায় একটি প্রবন্ধ দাঁড় করিয়ে দেন।
চারদশক ধরে সমাজ বদলের বীজ বুনে যাচ্ছে শীস প্রতিবেদনটি মানবসেবা মূলক প্রবন্ধের রূপ পেয়েছে। লিখেছেন সহ-সম্পাদক মৌসুমী বিশ্বাস।
এম সদর আলি ‘পাঠ প্রতিক্রিয়া’য় হৃদয়কে দীর্ণ করে দেয় এমন একটি প্রশ্ন তুলেছেন, যে বিষয়টি এই উপমহাদেশে অমিমাংসিত রয়ে গেছে—সেটি হল এই—একজন হিন্দু বাংলাদেশের ঢাকা ছেড়ে কেন কলকাতায় আসবে, একজন মুসলমান কেন কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় যাবে? কে ব্যাখ্যা দেবে? ইনএকপ্লিকেবল।
অরূপ চন্দ্র, কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্তের ‘নিরন্ন, কর্মহীন’ মানুষের ধ্রুপদী চিত্রন সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
ফারুক আহমেদ ‘উদার আকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক জাহিরুল হাসানের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যেটি একটি পূর্ণ প্রবন্ধের মর্যাদা পেতে পারে। জাহিরুল হাসানের সাহিত্যসেবা ও বাঙালিকে সহযোগিতার প্রয়াস দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
‘উদার আকাশ’ পত্রিকার চারিত্রিক বৈশিষ্টে প্রবন্ধের প্রাধান্য লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠে। বিগত দশ বছর ধরে বর্ষীয়ান ইতিহাসবেত্তা-গবেষক খাজিম আহমেদ 'উদার আকাশ' পত্রিকায় ব্যাপক পরিশ্রমজাত প্রবন্ধ ফারুক আহমেদের জন্য বরাদ্দ করে রাখেন। ২০১৬ থেকে ২০১৯ তক ভয়ংকর ‘ডেডলি ডিজিজ’ ভারতবিখ্যাত চিকিৎসক (ড. আববার আহমেদের মতে) এর সঙ্গে অসম লড়াই করছিলেন, প্রকৃতি এবং অদৃশ্য কোন মহান শক্তি তাঁকে আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছে।
অনুপস্থিত চার বছরের জন্য চারটি প্রবন্ধ তাঁর অশেষ প্রিয়ভাজন ফারুক আহমেদকে দিয়েছেন—অতলান্তিক গুরুত্ব আরোপ করে নয়া গবেষণাজাত প্রবন্ধ নির্মাণগুলো সম্পাদক ছেপেছেন। বস্তুত এই চারটি রচনার জন্য খাজিম আহমেদ উভয়বঙ্গের পাঠক-সুহৃদদের আপনজন হয়ে উঠবেন।
গল্প কবিতা বিভাগে স্বনামধন্য কবি ও সাহিত্যিকরা কলম ধরেছেন। সাহিত্য আকাশে জ্বলজ্বল করছে উদার আকাশ প্রকাশন উদার জীবনের অন্বেষণ।