রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন শাকিলা

অনলাইন ডেস্ক

দৈনিক জাগরণ

প্রকাশিত : ০৪:১৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

কুমিল্লার মেয়ে শাকিলা সরকার। তিন ভাইবোনের মধ্যে শাকিলা বড়। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন শাকিলা। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি শাকিলা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে শাকিলা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একদিন সামাজিক বনায়নের জন্য ঘুরতে গেলাম। সালমানপুরে আগে থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ‘প্রজন্ম শিশু পাঠশালা’ ছিল। সেখানে ‘পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামক সংগঠন কর্তৃক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনা করানো হতো। যারা স্থানীয় বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও টাকার অভাবে বা বাবা-মার অজ্ঞতার কারণে পড়ার বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করতে পারে না এমন শিশুদের নিয়েই এই পাঠশালা। আমি এর যুক্ত হই এবং বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি।’

প্রজন্ম শিশু পাঠশালায় শিশুদের ক্লাস করানো হয় বিকেল বেলা যখন সবার নিজ নিজ স্কুল ছুটি হয়। শিশুরা যাতে ঝরে না যায় এবং প্রতিদিনের পড়া যেন প্রতিদিন শিখে ভালো ফল করতে পারে সেটাই লক্ষ্য এই পাঠশালার।

সুবিধাবঞ্চিত অথচ অত্যন্ত মেধাবী শিশুদের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান শাকিলা। তাই তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ছোটবেলায় শাকিলা নিজের কষ্টকে খুব কাছে থেকে দেখতে পেয়েছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন না পাওয়ার বেদনা। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন কৃষক। সামান্য জমি চাষ করে যা উৎপাদন হতো তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চালাতেন। বাবার কাছে চাওয়ামাত্র অনেক কিছু পাইনি, খাতা-কলম এমনকি পরীক্ষার ফি, তারপরও বাবা-মার অনুপ্রেরণায় আজ এতদূর এসেছি।’

শিশুরা ঠিকঠাক পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে কিনা খোঁজ নিতে শাকিলা  শিশুদের বাড়ি যান। শাকিলা জানান, পাঠশালায় প্রায় রেজিস্টার্ড ১৫০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে। অনেকে এখান থেকে ভালো ফল করে বিভিন্ন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই ক্লাস নেই। ওদেরও অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। অনেক শিশু পড়াশোনা করতে চাইলেও বাবা-মা আগ্রহী হন না। টাকা পয়সার সমস্যা তো আছেই। ফলে কেউ একদিন অনুপস্থিত থাকলে নিজে খোঁজ নেই। বাবা-মাকে বোঝানোর চেষ্টা করি।’

নিজে শিক্ষার্থী হয়েও শিশুদের পড়াশোনার খরচ কীভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটা নতুন ব্যাচ আসার পর শিশুদের জন্যে মোটামুটি যারা সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক তাদের কাছে যাই। সেই টাকা দিয়ে খাতা, কলমসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনি।’ শাকিলা সরকার ‘পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ’ সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন-২০১৬’ তে সেরা সংগঠক হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রীর হাত থেকে চে গুয়েভারা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পদক পেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের ‘জাতীয় যুব সংসদ’ নামে একটি সংগঠনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন। 

//রাইজিংবিডি//