কবির কলমে সমাজসেবা
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৮:৫১ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার
নদীয়ার কল্যাণীর অধিবাসী প্রত্যূষা সরকার। কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বছর দুয়ের মধ্যেই। প্রথম প্রকাশ ২০১৬ সালে নিরন্তর পত্রিকায় কবিতা লিখে। এরপর সরকারি ও বেসরকারি নানান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে কবিতা পাঠ করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির কবিতা উৎসব ও কবিতা কর্নারে তার কবিতা পাঠ সকলকে চমকে দিয়েছিলো। লেখালিখির পাশাপাশি ভয়েজ আর্টিস্টের কাজ করে সামান্য কিছু পারিশ্রমিক পান। তার কথায়, "কবিতা লিখে পয়সাকড়ির আশা আমি কোনও দিনই করিনি। তবে সামান্য যা কিছু পাই মানুষের কাজে ব্যয় করার চেষ্টা করি। এ বয়সে এসে তো আর মা বাবার কাছে হাত পাতে যায় না!"। প্রত্যূষার জন্ম ১৯৯৫ সালে কল্যাণীতে। প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১৮ তারপর ২০১৯ আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায়। ইংরাজি সাহিত্যে অনার্স বি.এড। ২০২০ কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত তার তৃতীয় কবিতার বই "ঈশ্বর থোড়ি না দেখছেন" এবং পরবর্তীতে করোনা ও আমফান বিধ্বস্ত কলেজস্ট্রিটের পাশে দাঁড়াতে তার প্রথম গল্পের বই "বৃষ্টি রঙের নাকছাবি" প্রকাশিত হয়। মাত্র পঞ্চাশ টাকায় সাতটা গল্প বিক্রি করে তিনি অনলাইনে এই বই থেকে উঠে আসা সমস্ত অর্থ বইপাড়াকে দেন। "মাত্র ২০০০ টাকা পেয়েছি। তবুও এটা আমার কাছে মাত্র নয়। আমার মনে আছে, কলেজে পড়ার সময় বাবা রোজ আমাকে বাসভাড়া হিসেবে দশ টাকা করে দিতেন। আমি হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। আর ফেরার পথেই পড়তো একটা ছোট্ট বস্তি। বাচ্চাগুলোর জন্যে টাকা জমিয়ে বিস্কুট লজেন্স কিনতাম। ওরা হাতে পেয়ে কতো খুশি হতো। আমার তো সামর্থ্য বেশি নেই, তবু যা ছিলো বা আছে সবটাই তাদের জন্যে... বর্তমানে 'সাহিত্যক্যাফে' নামে একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদনা করছি, বলতে পারেন এটা আমার আর আমার কবিবন্ধু সৈকত ঘোষের ব্রেন-চাইল্ড। এখান থেকেও যেটুকু পাই ডোনেট করে দি। আমি তো খেতে পাই, আমার মাথায় ছাদ আছে। যেদিন থাকবে না, সেদিন নিজেরটুকু সরিয়ে বাকিটা ওদেরকেই দেবো।" লকডাউনে তাঁর থেকে উপকৃত হয়েছেন অনেকেই। তিনি 'ড্রিমিং বীজ ফাউন্ডেশন' নামে একটি এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গাছ লাগানো কর্মসূচি গ্রহণ করে দরিদ্রদের মধ্যে চাল ডাল ইত্যাদি বন্টন করছেন। গত সাতদিন আগে "ডোরাকাটা অন্ধকার পেরিয়ে" নামে তার আরও একটি নতুন কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, "বইওয়ালা বুক ক্যাফে রয়েলটি হাতে দিলেই আমি সমস্ত টাকা এনজিওকে দেবো বলে ঠিক করেছি। আমার কবিতা লিখতে আসা তো সমাজসেবী হিসেবে কাজ করতে পারবো বলেই। ভালো থাকুক ওরা। ভালো থাকুক সমাজ। তাই সমস্ত রয়ালটির অধিকারী ওরাই। আমি শুধু বলবো, প্রতিটি মানুষকে অল্প অল্প করে এগিয়ে আসা উচিৎ। ভালো কাজ করলে তো মনও ভালো থাকে। একজন মানুষ যদি তার রোজগারের ১%ও দেয় তবুও সেই এক এক করতে করতে পরিমানটা একশোতে গিয়ে পৌঁছাবে।"