শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বরাকে প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসা শুরু করলো গ্রীন হিলস

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০৫:২৭ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার

বরাক উপত্যকার প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে সম্পূর্ণ একটি কোভিড কেয়ার সেন্টার শুরু করল মেহেরপুরের গ্রীন হিলস। সোমবার দুপুর থেকে সেখানে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১২টি শয্যা এবং ৪ টি আইসিইউ থাকছে। নিজস্ব ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মী ছাড়াও বিদেশ থেকে দুই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হবে। আসামের দুই সন্তান একজন আমেরিকা এবং অন্যজন লন্ডনে করোনা চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। তারা ভিডিও কলের মাধ্যমে এখানে চিকিৎসারত রোগীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। প্রয়াত চিকিৎসক ডাঃ রাহুল গুপ্তের নামে এই কোভিড কেয়ার সেন্টারটি উৎসর্গ করা হয়েছে।
১০ আগস্ট স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সঞ্চালকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি লিখে জেলার প্রায় সবকটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে বলা হয়েছিল, তারা যেন রেপিড এন্টিজেন টেস্ট পরীক্ষার পরিকাঠামো গড়ে তোলেন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রীন হিলস হাসপাতাল আরএটি বুথ চালু করে। এবার উপত্যকার প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে তারা ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে থাকা করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করেছে।সোমবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি শুরু হয়, বেশ কয়েকজন রোগী প্রথম দিনেই ভর্তি হন। সারা আসাম বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সংস্থার পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়। গ্রীন হিলস হাসপাতালে কর্ণধার রুদ্র নারায়ন গুপ্ত, সাউথসিটি হাসপাতালে তরফে মৃদুল মজুমদার সহ অরিজিৎ দাস, রঞ্জন সিং, প্রণবাশীষ রায়, রজত গুপ্ত এবং নিত্যানন্দ গোয়ালা এই সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দেন।
রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত বলেন, ‘১৯৭০ এর দশকে আমাশা প্রায় মহামারীর রূপ নিয়েছিল, সেই সময় দিল্লি থেকে ডাক্তারী পাশ করে আসা ডাঃ রাহুল গুপ্ত রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এর প্রায় ৫০ বছর পর আবার আমরা মহামারীর মুখোমুখি হয়েছি। প্রয়াত রাহুল গুপ্তের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই হাসপাতলে কোভিড কেয়ার ইউনিট চালু করা হচ্ছে। হয়তো এতে আগামীতে অন্যান্য চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে কেননা মানুষের মধ্যে এখনও করোনা ভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্ক রয়েছে। তবে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্ব হচ্ছে যেকোনও পরিস্থিতিতে রোগীর পাশে থাকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় শোনা যাচ্ছে অনেকেই শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন, এই ভীতি সাধারণ মানুষকে ঘরে আটকে রাখছে এবং চিকিৎসার অভাবে বা দেরিতে চিকিৎসা পাওয়ার দরুন মৃত্যু ঘটছে। আমরা এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জন্য বিশ্বাসযোগ্য একটি চিকিৎসাকেন্দ্র হয়ে উঠতে চাই। আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করছেন তারা অনেকেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং বিজয়ী হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এবার তারা কভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকবেন। তরুণ চিকিৎসক ডাঃ পারমিতা চক্রবর্তী সম্প্রতি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন, তিনি আমাদের সেন্টারে বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন। পুরোপুরি ভাবে একটি কোভিড কেয়ার সেন্টার বানানো এবং চালাতে নানান খরচ রয়েছে। সবকিছু সামলে চিকিৎসা পরিষেবার একটি মূল্য ধার্য করা হয়েছে যেটা সাধারণ রোগীর জন্য সহজ হয়। যারা সাধারন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন তাদের জন্য প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা এবং যারা আইসিইউ পরিষেবা নেবেন তাদের জন্য প্রতিদিন সাড়ে ছয় হাজার টাকা খরচ ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া যদি কারও অক্সিজেন থ্যারাপির প্রয়োজন হয়, তার জন্য আলাদা খরচ লাগবে। ঔষধের জন্য আলাদা খরচ রয়েছে। প্লাজমা থ্যারাপির ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য নেওয়া হবে।”এর আগে প্রথম হাসপাতাল হিসেবে বিনামূল্যে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট পরিষেবা শুরু করেছিল গ্রীন হিলস। এব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, জেলায় যত বেশি সম্ভব মানুষের পরীক্ষার পরিকাঠামো গড়ে তুলতেই বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক স্তরের মানুষের সোয়াব স্যাম্পল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্য নিয়েই সম্প্রতি আমাদের জানানো হয়েছিল আমরা হাসপাতালে রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতে পারবো। আমরা শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং একটি জায়গার যোগান দেব। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে টেস্টিং কিট সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগান দেওয়া হবে। ফলে এই পরিষেবাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে থাকবে। যেখানে পরীক্ষা হচ্ছে তার পাশেই একটি বিশেষ জায়গা রাখা হয়েছে। যারা পজিটিভ হচ্ছেন, তাদের সেখানে প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে চিকিৎসার জন্য অনুমতি নিতে হলে যে ফর্ম ভরতে করতে হয় সেটাও আমরা রেখেছি।
মৃদুল মজুমদার এদিন রুদ্র নারায়ণ গুপ্তের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালে কোভিদ কেয়ার সেন্টার খোলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্যাপার। কোভিড নিয়ে এখনো সমাজের মধ্যে প্রস্ত্রতা চরমে ফলে পুরো ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। তবে এই দুঃসময়ে ব্যবসার কথা না ভেবে মানুষের পাশে দাড়ানোই আমাদের কর্তব্য। তিনি যে উদ্যোগটি নিয়েছেন এতে আশা করি সফল হবেন। ভবিষ্যতে তার পথ অনুসরণ করে আমরা হয়তো পদক্ষেপটি নেওয়ার সাহস অর্জন করতে পারব।”