করোনা আতঙ্কে সারাদিন বাইরে,পরে অ্যাম্বুলেন্স পেলেও মৃত্যু বৃদ্ধের
অবুল সাহিদ শিলচর আসাম
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১১:১৩ এএম, ১৭ আগস্ট ২০২০ সোমবার
আক্ষরিক অর্থেই কাছাড় জেলায় বিনা চিকিৎসায় একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছেন। রবিবার শৌচালয়ে গিয়ে আর ঘরে ফিরতে পারলেন না শিব কলোনি চণ্ডীচরণ রোডের আশুতোষ ভট্টাচার্য। ৭৯ বছরের বৃদ্ধ আশুবাবু, স্ত্রী গৌরীদেবীর বয়স ৭৫ বছর। নিঃসন্তান দম্পতি আর্থিক দিক থেকেও দুর্বল। ভাড়াঘরে থাকেন। কিছুদিন ধরে অসুস্থতা বোধ করছিলেন আশুবাবু। বার্ধক্যজনিত কারণে সমস্যা লেগেই থাকে, এর ওপর চিকিৎসার জন্য অর্থকড়িরও তো প্রয়োজন।
কিন্তু রবিবার সকালে শৌচালয়ে গিয়ে ঘরে ফেরার পথে রাস্তাতেই পড়ে যান। স্ত্রী দৌড়ে যান বটে, কিন্তু ৭৫ বছরের বৃদ্ধার পক্ষে আশুবাবুকে টেনে ঘরে আনা সম্ভব হয়নি। তিনি ডাকাডাকি, কান্নাকাটি করলে প্রথমে প্রতিবেশীদের কয়েকজন আসেন বটে, কিন্তু করোনা আতঙ্কে কেউ তাঁকে ধরতে রাজি হননি। ফলে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত উঠোনেই পড়ে রইলেন বৃদ্ধ। পাশে বসা অসহায় বৃদ্ধা। কড়া রোদে স্বামীর মাথায় একবার ছাতা ধরেন, একবার জল ছিটিয়ে দেন।প্রতিবেশীরা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ১০৮-এ বার বার ফোন করলেও সাড়া মেলেনি। শেষে খবর পেয়ে ছুটে যান সদ্যনিযুক্ত টাউন কংগ্রেস সভাপতি সজল বণিক। তিনিও ১০২, ১০৪, ১০৮-এ ফোন করে হয়রান। ডিডিএমএ-র কন্ট্রোল রুমে ফোন করেও সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করেন সজলবাবু। শেষে ফোনে পেয়ে যান অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সাত্তায়ানকে, কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। তাও বেলা সাড়ে ১২ টায়। অ্যাম্বুলেন্স যায় বিকেল ৩ টায়। এ বার নতুন সমস্যা। অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যে দুইজন গিয়েছেন, তাঁদের পক্ষে আশুবাবুকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। কে সাহায্য করবেন এই করোনা পর্বে। এগিয়ে গেলেন সজলবাবুই। ধরাধরি করে তুলে দেন অ্যাম্বুলেন্সে। একঘণ্টার মধ্যে গৌরীদেবীর কাছে খবর পৌছয়, আশুবাবু আর নেই।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. ভাস্কর গুপ্ত জানান, ১০৮ অ্যাম্বুলেন্স আশুতোষ ভট্টাচার্যকে নিয়ে মেডিক্যালে পৌছায় বিকেল পৌনে চারটায়। শুরুতে রেপিড অ্যান্টিজেন কিটে করোনা টেস্ট হয়, রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। দ্রুত তাঁরা আরটিপিসিআর টেস্টের ফল জানতে চান। ততক্ষণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সাড়া দেননি। আধ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ভাস্করবাবু জানান, আশুবাবু প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।