শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রহস্যজনকভাবে ছুরি দিয়ে গলা কাটা কিশোরী উদ্ধারে চাঞ্চল্য

দিদারুল ইসলাম, করিমগঞ্জ আসাম

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ১০:১১ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২০ বুধবার

বাড়ি থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরত্বে মামার বাড়ি আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার মুল্লাগঞ্জ বাজারের এক বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের ট্রায়াল রোমের ভিতরে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কাটা কিশোরী উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে নিলামবাজার থানা এলাকার মুল্লাগঞ্জে।
ঘটনার খবর দেওয়া হয় থানায় কিন্তু ঘটনা মুল্লাগঞ্জে আর পুলিশ গিয়ে পৌঁছেছিল সীমান্ত বালিয়ায়! দীর্ঘ বিলম্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোয় সৃষ্টি হয় তীব্র জনক্ষোভের।
টিউশন পড়তে যাওয়ার কথা ছিল নিজের পার্শবর্তী এলাকা ব্রাহ্মণশাসনে, তাহলে মুল্লাগঞ্জে কেন গেল? আত্মহত্যাই যদি করবে তাহলে এত দূরে কেন যাবে? ঘটনাটি আদৌ আত্মহত্যার না খুনের প্রচেষ্টা এনিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছে ঘটনা সংঘটিত হওয়া বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক সহ আরেক ব্যবসায়িকে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে রক্তাক্ত একটি ধারালো ছুরিরি। ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ নিলামবাজার পুলিশ।
বুধবার দুপুর আনুমানিক পৌনে দুটা নাগাদ নিলামবাজার থানা এলাকার মুল্লাগঞ্জ বাজারে থাকা আব্দুল হকের বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের ট্রায়াল রোমেই ঘটনাটি সংঘটিত হয়। ঘটনার বিবরণ মতে, অন্যান্য গ্রাহকের সঙ্গে ওই কিশোরীও আব্দুল হকের বস্ত্র প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিজের জন্য জামা-কাপড় দেখা শুরু করে। এক পর্যায়ের তার পছন্দের জামা গায়ে পড়ে দেখার জন্য ট্রায়াল রোমে গিয়ে দীর্ঘ সময় বেরোয়নি। এরই মধ্যে হঠাৎ গলার আওয়াজ পেয়ে দোকানের মালিক ট্রায়াল রোমের দিকে লক্ষ্য করে কিশোরীটি ভিতরে রক্তাক্ত অবস্থায় বসে রয়েছে দেখে উপস্থিত থাকা অন্যান্য গ্রাহক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে বাহিরের ব্রেঞ্চে নিয়ে আসেন।
শুরু হয় কিশোরীর পরিচয় খোঁজাখুঁজি, মুহুর্তেই স্থানীয়রা জড়ো হয়ে রক্তাক্ত কিশোরীর পরিচয় জানতে চাইলে গলার খাদ্যনালী সহ বড় ধরনের কাটা থাকায় কথা বলতে অক্ষম হওয়ায় তাকে দেওয়া কাগজ-কলম। তখন সে তার নাম ও মামার বাড়ির ফোন নম্বর লিখে দিলে পরিচয় পাওয়া যায়।
এদিকে, ঘটনাটি ঘিরে বহু প্রশ্নের সৃষ্টি হলেও যতদূর অনুমান করা হচ্ছে ঈদের কাপড় কিনতে মামার বাড়ির বাজারে এসেছিল সে। তবে নিজে থেকে গলায় ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা না অন্য কেউ গলায় কোপ দিয়ে খুন করতে চেয়েছিল, এনিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হিজিম গ্ৰামের বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক ফুজাইল আহমদের কন্যা সাজিদা আক্তার (১৬) প্রতিদিনের মত টিউশন ক্লাস করতে ব্রাহ্মণশাসনে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে অনুমানিক বারোটা নাগাদ। পরে খবর নিয়ে জানা গেছে এদিন সে টিউশনে যায়নি।
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক ভাবে রক্তাক্ত গলা কাটা কিশোরীকে উদ্ধার করে নিলামবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা ভালো নয় দেখে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কিন্তু গলার অপারেশনের ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
শেষ খবরে জানা গেছে, বেশ সঙ্কটজনক অবস্থায় এসএমসিতে জীবন যুদ্ধ শুরু হয়েছে দশম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত গান্ধাই হাইয়ার সেকেন্ডারী স্কুলের ছাত্রী সাজিদা আক্তারের।
অন্যদিকে, নিলামবাজার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো ছুরি ও একটি স্কুল বেগ উদ্ধার করেছে। এবং বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল হক সহ একই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা আব্দুস সুফান নামের আরেক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয়।