সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশ মৃতদেহ গ্রহণকরতে অস্বীকারকরায় গরুচোরের শেষকৃত্য সম্পন্ন

দিদারুল ইসলাম, করিমগঞ্জ আসাম

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০৬:৪৭ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার

আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি ভুবরিঘাট চাবাগানে গরু চুরি করতে আসার পর গণধোলাইয়ে মৃত বাংলাদেশের তিন গরু চোরের মধ্যে থেকে দুইজনের পরিচয় উদ্ধার হওয়ার পরও মৃতদেহ সমঝে নিতে অস্বীকার করে বাংলাদেশ। দীর্ঘ আট দিনের মাথায় বিএসএফ – বিজিবি চারবার করে পতাকা বৈঠক ডেকে গরু চোরের তথ্য বিজিবির হাতে তুলে দেওয়ার পরও বিজিবির পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ার দরুন শেষমেষ জেলা পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে করিমগঞ্জে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল তিনজন গরু চোরের ।
গত ১৯ জুলাই গন রোষের শিকার হয়ে মৃত্যুর আট দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও বাংলাদেশ প্রশাসনের কোন সহযোগিতা না থাকার দরুন শেষমেশ সোমবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।শহর সংলগ্ন কবরস্থানে সোমবার সন্ধ্যায় দাফন করা হয় । উল্লেখযোগ্য যে পাথারকান্দিতে মৃত্যু হওয়া তিনজন গরু চোরের মধ্যে দুইজনের পরিচয় উদ্ধার করা হয়েছিল ।ঘটনার দুদিন পরই বাংলাদেশের মৌলবিবাজার জেলার বড়লেখা পুলিশের পক্ষ থেকে তা স্বীকার করা হয় এবং বাংলাদেশের স্থানীয় এবং জাতীয় গন মাধ্যম পরিচয় উদ্ধারের শিরোনাম দখল করে । বিজিবিকে দেওয়া মৃত তিনজনের ফটো সূত্র থেকে বড়লেখা পুলিশ তদন্তে নামলে পরের দিন দুই ব্যক্তি বড়লেখা উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা বলে সনাক্ত করা হয়।গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, নিহত দুই ব্যক্তির নাম নুনু মিয়া এবং জুয়েল আহমেদ । তারা আবার সম্পর্কে চাচা ভাতিজা । পেশায় অটো চালক । বিগত কিছুদিন থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। তাদের পরিবারের এক সদস্য ফটো দেখে নিজেদের পরিবারের লোক বলে তাদের সনাক্ত করেন।
অন্যদিকে সেখানকার গণমাধ্যম দাবি করে যে পরিবারের লোকেরা তাদের বাড়ির লোকের লাশ সমঝে নিতে যোগাযোগ করেছিলেন বিজিবি লাঠিটিলা ক্যাম্পে।স্থানীয় চ্যায়ারম্যান বিজিবির হাতে পরিচয় পত্র সহ সার্টিফিকেট জমা করেন। কিন্তু কোন রহস্যজনক কারণে বিজিবি গোটা ঘটনা অস্বীকার করে বিএসএফের কাছে । সোমবার সকালে ফের একবার বিএসএফের তরফ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরের সূত্র সহ চিঠি পাঠানো হয় ৫২ নং বিজিবিকে । কিন্তু গোটা দিনভর কোন ধরনের সদুত্তর না পাওয়ার দরুন ১৩৪ নং বিএসএফ এবং জেলা পুলিশ মৃত তিন ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ।এদিকে গণধোলাইয়ে মৃত্যু হওয়া তৃতীয় ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধার হয়নি আট দিনের মাথায়ও। যার কারণে বেওয়ারিশ হিসাবেই ধরে নেওয়া হয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিচয় গোপন করার অভিযোগ উঠে বিভিন্ন মহলে। উল্লেখযোগ্য যে গত এক জুন ঠিক একই ভাবে গরু চুরি করতে আসার পর গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে এক বাংলাদেশের গরু চোরের মৃত্য হয় পাথারকান্দির পুতনি চা বাগানে । শেষে বাংলাদেশের জুড়ি উপজেলার সোনারূপা চাবাগানের বলে পরিচয় উদ্ধার হওয়ার পর সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে বিজিবিকে লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ। এছাড়া গত ১২ জুলাই বাংলাদেশি কয়েদিকে মৃত্যুর একমাস দশদিন পর করিমগঞ্জে কবর দেওয়া হয়েছিল। শায়েদ আলি নামের ষাট বছর বয়সের এক বৃদ্ধ মার্চ মাসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। মে মাসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাঁকে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । গত ১ জুন শিলচর মেডিক্যাল কলেজেই সেই বৃদ্ধ মৃত্যুবরণ করেন। বাংলদেশের গাজীপুর জেলার লোক এই শায়েদ আলি। তাঁর দেশের বাড়ির তথ্য সহ বিজিবিকে এবিষয়ে অবগত করলে লাশ গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করে। শেষপর্যন্ত একমাস দশদিন পর ১২ জুলাই কালিমহাবীর রোডের গ্রেভইয়ার্ড এ শায়েদ আলিকে কবর দেওয়া হয়।