শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছেলের দেহ পুঁতে তপস্যা, সিদ্ধিলাভের চেষ্টা তান্ত্রিকস্য়েতর অভিলাষ

দেবজ্যোতি মুখারজী

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০৭:১৬ পিএম, ২২ জুলাই ২০২০ বুধবার

মেঝ ছেলের দেহ ঘরের ভিতর পুঁতে রেখে তার উপর তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করাই ছিল তান্ত্রিক মা'য়ের অভিলাষ।কিন্তু, বড় ছেলের চিৎকারে সব পন্ড হয়ে যায়। অবশেষে তান্ত্রিক মা গ্রেপ্তার হয়।        নাগরাকাটা ব্লকের কুর্তি চাবাগানের আপার ডিভিশন শ্রমিক বস্তিতে গত শনিবার ও রবিবার ঘটে যাওয়া ঘটনার অনুসন্ধান করে এমনটাই জানা গেছে। 
আমাদের দেশে আদিবাসী সমাজে অনেক কু সংস্কার রয়েছে। অনেকেই এই কুসংস্কারকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে কিম্বা অর্থ রোজগার করতে চায়। এর জন্য চলে ঝাড়ফুক, তুকতাক জাদুটোনা,তন্ত্রমন্ত্র  ইত্যাদি। যারা এসব করে তাদের সমাজের অন্যান্যরা সমিহ করে চলে। অনেকে আবার এরকম লোকের কাছে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে যায়। কেউ আবার জলপোড়া, তেলপোড়া ইত্যাদির জন্য যায়। 
এতে তান্ত্রিকদের সমাজে পতিপত্তি বাড়ে। এই প্রতিপত্তির লোভে অনেকে তন্ত্রবিদ্যার চর্চা শুরু করে। এজন্য নিদ্বিষ্ট গুরুর পরামর্শ অনুযায়ী চলে চলে তন্ত্র চর্চা। এইরকম তন্ত্র চর্চা করতো কুর্তি চাবাগানে আপার ডিভিশনের মহিলা কুন্তি(হিরামনি) উরাও।চট জলতি কথা বলা। বাড়িতে আলাদা ঘরে পুজা ও তন্ত্র চর্চা করা চলত। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ও নানান কবচ। এহেন মহিলাকে অন্যান্যরা বেশ সমিহ করত। চা বাগানের অন্যান্যদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। 
ডুয়ার্সের চাবাগান এলাকায় ঘুরলে এরকম তান্ত্রিক বা জাদুটোনা করার অনেক জনকে পাওয়া যাবে। এরা অনেক কুসংস্কারের বসে অদ্ভুত কাজ করে 
এরকম এক তন্ত্র চর্চা কারীর  কাছ থেকে জানাগেছে,?    কৃস্নপক্ষের আমাবস্যা, চর্তুদশী, ত্রয়দশী এসব তিথি ও শনিবার, মঙ্গলবার যোগ থাকলে সিদ্ধিলাভের জন্য অনেকেই এসব কাজ গুরুর নির্দেশ মতো করে। ওই মহিলা সম্ভবত এরকম করেছিল। 
কুর্তি চাবাগানের অন্যান্য শ্রমিকদের থেকে জানা গেছে, ওই মহিলা তার ঘরে তিন ফুট গভীর গর্ত খুড়েছিল। শনিবার রাত ৯.৩০ মি নাগাদ যখন চাবাগানের শ্রমিক বস্তির অন্যান্যরা ঘুমের আয়োজনে ব্যাস্ত তখন তান্ত্রিক মা  তার নিজের মধ্যম পুত্রের উপর অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজা শুরু করে। বছর দশের মেঝো ছেলেকে মেরে গর্তে পোঁতার উদ্যোগ নেয়।মায়ের এই আচরনে সবাই নির্বাক হয়ে যায়। কিন্তু, বড় ছেলে চিৎকার করে বাইরে বেরিয়ে আসে। বিকট চিৎকারে অন্যান্য শ্রমিকরা বেরিয়ে আসে। তাদেরকে বড়ছেলে মা'য়ের কান্ড কারখানা জানায়। এরপরই অন্যান্য শ্রমিকরা ওই বাড়ির মধ্যে ঢুকে আজব কান্ড দেখে হতবাক হয়ে যায়। তারাই ছেলেটিকে বাঁচায়। এরপর পুলিশ ডেকে ওই মহিলাকে তুলে দেয়।   
দেখা গেছে, অন্ধ কুসংস্কারের বশে মানুষ নিজের অভিলাষ পূরন করতে এসব অপকর্ম করে। অভিলাষ পূরন হয় কিনা জানা যায় না। কিন্তু, ক্ষতি অনেক হয়ে যায়। 
সভ্য জগতে এসব অবিশ্বাস্য হলেও আমাদের সমাজে বহু জায়গায় এসব কাজকর্ম হয়। কুর্তি চাবাগানের ঘটনা তার এক নজির।