কবি অনিমেষ সরকারের ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার নিলেন বেদশ্রুতি মুখার্জী
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১০:০৪ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২০ শুক্রবার
অনিমেষ সরকার
জন্ম ১৯৯৭ ডিসেম্বর ১৩
কবিতার প্রতি আকৃষ্ট ছোট থেকেই।
২০১৬ সালে আত্মপ্রকাশ
ইতিমধ্যেই অনেক পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। পেয়েছেন বিভিন্ন সন্মাননা ।
২০১৯ -এ প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়
স্বভাবে স্পষ্ট বক্তা এবং নীরবতা পছন্দ করেন
ওয়েব ডুয়ার্স নামের ব্লগজিন সম্পাদনা করেন।
নমস্কার, শুরু করছি আজকের অনলাইন ইন্টারভিউ সেশন, সঙ্গে আছেন অনিমেষ সরকার, উত্তরবঙ্গের তরুণকবি... অনিমেষের সাহিত্যের প্রতি টান এতটাই যে পলিটেকনিক ছেড়ে বাংলা নিয়ে পড়া... ক্লাস সেভেনে স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা রিজেক্টেড হওয়ায় কলমে জেদ কবিতা লেখায় প্রাণিত করে, তারপর ২০১৭ তে মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা দিয়ে উঠে আসা, খুব কম সময়ে যথেষ্ট সাফল্য লাভ। চলুন কবি অনিমেষ সরকারের সঙ্গে গল্পচ্ছলে আড্ডা দিয়ে আরো কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক...
১/ উত্তরবঙ্গে কবিতা লেখা না গ্রুপিং কোনটা বেশী হয় ? আপনি কোন পর্যায়ে ?
অনিমেষ:- আমি গ্রুপিংএ বিশ্বাসী না। কবিতা একাই লিখতে হয় একাই লিখি।
আড্ডা দেওয়ার জন্য বন্ধু আছে।তবে গ্রুপ নেই।
২/ কখনও মনে হয় না উত্তরবঙ্গে লিখে পরিচিতি পেতে যতটা কষ্ট হয় কলকাতায় আরও সহজে পেতে পারতেন?
অনিমেষ:-মনে হয় তবে লেখাই তো মূল সময় বলে দেবে।।আসলে নিজের মাটিতে ভালোবাসা পেতে সবার ভালো লাগে।
৩/ উত্তরের সম্পাদিত পত্রিকা গুলো সেই প্রতিষ্ঠিত নামের জন্য মুখিয়ে থাকে ।।কোথাও মনে হয় না তরুণদের জন্য কিছু নেই উত্তরে ?
অনিমেষ:-একদম ঠিক তবে ৯০% । এরা প্রতিষ্ঠিত তরুণ এবং পরিচিত নামের জামা ধরে পড়ে থাকে। ঘুরঘুর করে পেছন পেছন। নাম বলবো না সবাই জানে। আমার খুব অপছন্দ তাদের। আমার লেখা থাকে না তার জন্য নয় , আমার লেখা হয়তো যোগ্য নয় তবে ওদের কাজকর্ম ই পা-চাটা স্বভাবের।
১০ শতাংশ আছে তরুণদের জন্য পত্রিকা। নাম বলে দিচ্ছি উত্তরের কবিমন , কবিস্টেশন , শিলিগুড়ি জংশন , মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা , চা পাতা( ব্লগজিন) জল্প-ই পত্রিকা , কবিতা করিডোর আরও বেশ কিছু।
৪/ প্রিন্ট পত্রিকা না ব্লগজিন কোথায় স্বাচ্ছন্দ্য লিখতে?
অনিমেষ-দুটোতেই।
৫/ কবিতাগোষ্ঠী না ইনডিপেনডেন্ট লেখা?
অনিমেষ:- ইনডিপেনডেন্ট লেখা।কবিতা গোষ্ঠী হয়তো কখনও পরিচিতি পাওয়াতে পারে তবে ইনডিপেনডেন্ট লিখলে নিজের লেখাই যথেষ্ট সময়ের কাছে পৌঁছোতে।
৬/ কবিতা গোষ্ঠী/ প্রকাশক বন্ধু বৃত্ত কি বাড়তি সুযোগ এনে দেয় বলে মনে হয়?
অনিমেষ:- হ্যাঁ এনেই দেয় অনেক ক্ষেত্রে।
৭/ফেসবুকে এত কবি, এটা কি ভালো সৃষ্টির পথে অন্তরায়? সাহিত্য কি ইদানিং সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে না?
অনিমেষ:- "কেউ কেউ কবি ,সকলেই নয়"
না ভালো সৃষ্টির পক্ষে অন্তরায় কিছুই নয়।।কবিতা হয়তো এখন পাঠক এত লিখিয়ের মধ্যে পড়তে পারবে না স্বল্প সময়ের বেস্টসেলার কবি , স্বল্প সময়ের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কবি যার আদৌ লেখা কি লেখা না বোঝা দায় তাতে অনেকেই আড়ালে থেকে যাবেন। উপেক্ষিত থেকে যাবেন তেল বাজারে। তবে সময় কথা বলবেই সময়ের উপর সমস্ত নির্ভর করবে। আমরা যদি আজকেই সব চাই তাহলে কী পাব!
লেখা একটা সাধনা শুদ্ধ হয়ে সাধনা করে যেতে হবে। তবে যদি কখনও কিছু লেখা যায়। যে আদতেই লিখতে পারে তার সৃষ্টি কে আটকাবে! হয়তো পরিচিতি নাও পেতে পারে কিন্তু তার কলম আগুন জন্ম দেবেই।
৮/ পিডিএফ সংখ্যা না প্রিন্টেড পত্রিকা কোনটা আপনার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য?
অনিমেষ:- আমি সব পড়ি । তবে পিডিএফ বেশীক্ষণ ভালো লাগে না পড়তে। এত মোবাইল ল্যাপটপ ঘাঁটতে ভালো লাগে না। তবুও দুটোই আমার পছন্দ।
৯/ প্রথম বইটার নাম নপুংসক ফিনিক্স, এত আনকনভেশনাল নাম কেন?
অনিমেষ:- ওই তো চেষ্টা ছিল ইউনিক কিছু নাম দেওয়ার। আমার কাব্যগ্রন্থটি ছিলোই পরীক্ষামূলক । অন্যদের মতো চিরাচরিত পথ বাছতে ইচ্ছে করেনি।
আর ফিনিক্সের ইতিহাস তো জানেন ই আর নপুংসক নিশ্চয় বলে দিতে হবে না। বইটা পড়ার পর পাঠক ডিসাইড করুক ঠিক নাম কি না।
তবে আমার জন্য ইউনিক নাম আর পাঠকের মনে গেঁথে রাখার জন্য নামটি।।
১০/ ছন্দের ক্ষেত্রে এক্সপেরিমেন্ট এর বড্ডো অভাব মনে হচ্ছেনা কি কখনো আপনার লেখায়?
অনিমেষ:- প্রচুর । কবিতা তো লিখি, ছন্দ নিয়ে নাড়াচাড়া করি না ।
১১/ প্রতিটি লেখার মাঝখানে টুইস্ট, শেষে এসে পাঠককে সজোরে ধাক্কা মারা হয়, এটা কি কোনো স্ট্রাটেজি? নাকি আনকনসাশলিই উঠে আসে?
অনিমেষ:- এটা বলে ফেললে আমাকে আর কেউ পড়তে চাইবে না। তাই থাকুক না আমার গোপন নিউক্লিয়ার অস্ত্র হয়ে।
১২/আপনার কবিতায় মার্কসিস্ট সমাজতন্ত্র এত কেন উঠে আসে? মার্কসবাদে বিশ্বাসী কি ?
অনিমেষ:- আর সমাজের নোংরা দিক থেকে শুরু করে সমাজের অনেক কিছুই দেখেছি দেখছি তাই আমার কলম পীড়িত শ্রেণীর দিকে ঝুঁকে যায় । ওদের জন্য লিখতে চাই
আমি এত লজিক , তত্ব পড়িনি । মার্কসবাদে বিশ্বাসী কি না জানি না তবে মার্কসবাদ সত্যি এটাও সত্য।
১৩/প্রিয় তিন পত্রিকা যাতে লিখে মনের আরাম পান?
অনিমেষ:- উত্তরের কবিমন ,মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা ,অর্বাচীন।
১৪/উত্তরবঙ্গের স্কোপহীনতায় আক্ষেপ হয় না?
অনিমেষ:- আমার কোনো কিছুই নিয়ে আক্ষেপ নেই। মাঝে মাঝে রাগ ওঠে আর কি। সবাই বড়ো নামের পেছনে দৌড়োয়।
১৫/ এই প্রজন্মে আপনার প্রিয় তরুণ কবি কারা?
অনিমেষ:- শুভ্রদীপ রায় ,সুভান ,সুমন মল্লিক ,নীলাদ্রি দেব,তাপস দাস , উদয়ার্ণব , পঙ্কজ ঘোষ ,বিপ্লব সরকার , পিযুষ সরকার,বিকাশ দাস
উদয় সাহা , সত্তাপ্রিয় , খোকন ,অনন্যা দাশগুপ্ত ,অভিশ্রুতি , গৌরাঙ্গ মন্ডল, সৌমাল্য , সুকান্ত দাস, কনিষ্ক ,শৈলেন ,অর্পণ ,সম্পিতা আরও অনেক অনেক নাম । এই প্রজন্মে কাকে বাদ দিয়ে কার নাম বলবো।
১৬/এপ্রজন্মের সেরা পাঁচ সম্পাদকের নাম?
অনিমেষ:- খুব চাপ আমার পক্ষে।।নাম জানিইনা সম্পাদকদের সেরকম।
লেখা দরকার লিখি সম্পাদক চিনে আমার কাজ নেই।
১৭/কোথাও কি মনে হয় সূর্যের আলোয় নতুন তারার আলো মিটমিট করছে মানে প্রাচীন কবিদের ঔজ্জ্বল্যে উত্তরের নবীনেরা ততটা লাইমলাইট পাচ্ছে না, যতটা তাঁদের প্রাপ্য?
অনিমেষ:- প্রাচীন কবিরা তারা নিজেদের স্বতন্ত্রতায় আলোকিত।
এখানে দাদা দিদি মামা মামি ,কাকা বৌদি চলে । আর পরিচিত তরুণ মুখ হলে সেও ওই দলের ভেড়া । উঠতি কবিরা তখন চুনোপুটি ওদের গোয়ালের গরুর মতো দাদা বৌদির দেওয়া ঘাস খেয়ে কবিতা লিখতে হয়।।যদিও সময় বদলেছে। প্রত্যেকেই নীরবতা মেইনটেইন করে চলা শিখছে। তবুও কিছু গরুর দলে গাঁধা আছে ,থাকেই তাদের জন্য বাকীদের সস্তা ভাবা হচ্ছে।
কবিদের সাথে পশুদের তুলনা করলাম স্বয়ং অনুকূল ঠাকুর ও আমাকে ক্ষমা করবেন না।
তবে এখনকার তরুণ কবিরাও প্রত্যেকেই তুখোড়।
১৮/শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আপনার কবিতা ভীষণ সাহসী, মনে হয় না কি, কবিতাকে একটু মার্জিত হতে হতো?
অনিমেষ:-হ্যাঁ কতবার মনে হয় লিখতে বসলেই । তবে ওটাই আমার নিজস্বতা। মার্জিত করলে আমার আর এক লাইন ও লেখা হবে না।
১৯/ব্যক্তিজীবনের বিরহ কী আপনার কবিতাকে একঘেয়ে করে তুলছে বলে মনে হয়?
অনিমেষ:- সুখী মানুষ আর রাগী মানুষ আর যাই পারুক ,কবিতা লিখতে পারে না।
তাই
ব্যক্তিজীবনে বিরহ থাকবেই , আর থাকলে আত্মরতি হবেই। কোনোকিছুই একঘেয়ে নয়।
২০/ফ্রাস্টেশন ডিপ্রেশন কে কী সযত্নে লালন করে, আদর করে বসিয়ে খাওয়ান শুধুমাত্র কবিতা লেখার জন্যই?
অনিমেষ:- হ্যাঁ । তাছাড়া ফ্রাস্টেশন ডিপ্রেশন দূর করার ক্ষমতা কার আছে!
আমি না চাইলে স্বয়ং কেউই পারবে না দূর করতে। ফ্রাস্টেশন হচ্ছে বেবী আর পুষে রাখা হচ্ছে ল্যাকটোজেন।
বাচ্চা রাখবো আর খাওয়াবো না!
২১/ইদানীং ম্যাথামেটিক্যাল স্ট্রাকচার এ প্রচুর কবিতা লেখার চল উঠেছে, আপনার কলমে এমনটা দেখিনা কেন?
অনিমেষ:- যারা অঙ্কে ভালো ছাত্রছাত্রী তারা পারে লিখতে
অনেকে আবার গাঁজাখুরি অঙ্কের মতো গজামিল করে রেখে দেয় । তাই এত চলাচল। আর কবিতা তো যে যেমন পারে লেখে।
আমি অঙ্কে ভালো ছাত্র কখনোই ছিলাম না। কম্পাস ধরতে হাত কাঁপতো আবার কবিতা লেখা এমনিতেই কঠিন। তার উপর অঙ্ক , এতটা শিক্ষিত পারদর্শী আমি নই। হামি Avarage student
২২/গদ্যে কেন সেভাবে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছে না? তাহলে কী ধরে নিতে হবে, অনিমেষ সরকার শুধুই কবি, অল রাউন্ডার নন?
অনিমেষ:- কবি শব্দটায় প্রবল আপত্তি থাকলেও এখানে একটু ইন্টারাপ্ট করবো আপনাকে ।
গদ্য খুব কম লিখি , আসেইনা মাথায়।
গল্প উপন্যাস লেখার মতো ধৈর্য্য নেই আমার।
অদৃশ্য ট্রেন্ড ধরার আছে। তবে কিন্তু আমার গদ্যের পাঠক আছে। যতটুকুই লিখি ।
২৩/সমাজের জন্য কীভাবে সার্ভ করতে চান?
অনিমেষ:- সমাজ ! সমাজটা নোংরা । আমার এই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলেও এই সমাজ আমাকে আমার যোগ্য অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে।তবে আমি অনাথ শিশুদের জন্য কিছু করতে চাই। প্ল্যান আছে নিজের আশ্রম খুলবো। সেখানে দায়িত্ব নেবো সবার।
২৪/আপনার কবিতাকে দুর্বোধ্য এবং বহুল ব্যঞ্জনাধর্মী বলা হয়, মনে হয় না, এটা যেন ঠিক উচ্চবিত্তের এলিটিজমরূপী বিরিয়ানী দাওয়াত, সাধারণ উপেক্ষিত?
অনিমেষ :- পাঠক ব্লাইন্ড ফোল্ড পরে ঘুরে বেড়ায় । যারা ওই নেকুপুষু প্রেম ,পেজ কালচার বিরহ , লিকলিকে দুর্বল কবিতা গিলে তাদের জন্য আমার লেখা যদি না হয় সেটাই ভালো। তবে হ্যাঁ নেকুপুষু কবিতার বাইরে চেষ্টা করি সহজ ভাষায় লেখার যেটা সবার জন্য হবে।
আর থাকলো বিরিয়ানি দাওয়াত !, সে সাধারণ পাঠক নেকুপুষু ন্যাকামার্কা কবিতা থেকে নিয়ে নিক।
২৫/ইদানিং অনেক নামকরা কবিরাও নিজেদের পেজে বা ওয়ালে টু লাইনার লিখে ইউথকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন, যেটা ইয়াং জেনারেশনের স্টেটাসে ঘোরে, কিন্তু আপনার হাতে টু লাইনার দেখা যায় না কেন? তবে কী কলেজ বা ইউনিভার্সিটির পাঠক চান না?
অনিমেষ:- সত্যি বলতে অত পারি না। টু লাইনার আসেই না। যাও আসে সে অত সমাদর পায় না।
কারো দাদাভাই ,দিদিভাই ,মাম্মাম ,কাকামনা ,জেঠু ,দিদিয়া ,দাদাভাই নই কিনা।
তবে যারা লেখে সত্যিই টু লাইনার তারা পারে দু লাইনে বোঝাতে পাঠককে।
আমি মুখ্যসুখ্য মানুষ
আর কলেজ ইউনিভার্সিটির পাঠক ওরা মাম্মাম ,দিদিয়াদের কাছে যাক । কবিতা পড়তে। ওদের জন্য ওটা বেস্ট। যারা পাঠক সত্যিই তারা কলেজ হোক বা ভার্সিটি খুঁজে নেবে তাদের পছন্দের লেখককে যদি সত্যিই পাঠক হয়।।
২৬/মোটা মাইনের সিকিওরড জব না কবিতা কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
অনিমেষ:- তিনমাস আগে প্রশ্ন করলে বলতাম কবিতা ।
আপাতত লকডাউনের মাঝেই বাবার মৃত্যু হয়েছে।।সুতারং এখন মোটা মাইনের জব। খেতে হবে তো।
স্যাটিসফেকশন পরে আসবে।।
২৭/মনে হয় একদিন সংসারের জাঁতাকলে কবিতা পিষে যেতে পারে?
অনিমেষ:- মনে তো হয় । তবে মা কে দেখভাল করতে গিয়ে যদি কবিতা পিষে যায়। যাক । প্রিয়জনদের জন্য মরতেও রাজি সেখানে কবিতা! ও তো আমার অংশ তাই হোক, পিষে যাক।
২৮/এখন নতুন কি আসতে চলেছে আপনার ইউনিক কলমে?
অনিমেষ:- ইউনিক বুঝি না। আমার কলমে গরু ঘাস খায় , গাধা কবি চড়ায় , ছাগল ভেড়ার দলে মিশে যায়। তাই নতুন কিছু জানি না।
কলমে আপাতত স্যারকাস্টিক মিমস আসবে।
২৯/গিটারিস্ট গাইয়ে অনিমেষ সরকার না কবি অনিমেষ- ডিপ্রেশনের অ্যান্টিডোজ কে?
অনিমেষ:- চুপিচুপি সত্যি কথা বলি,
গিটার পুরোপুরি পারি না বাজাতে। গানের কন্ঠটাও খ্যাকশেয়ালের মতো। তবুও করি মন চায়
আর অ্যান্টিডোজ পাহাড় , নদী আর আমার ছোট ছোট মুহূর্তে খুশী হয়ে যাওয়া।
৩০/আচ্ছা একটা কমন প্রশ্ন রাখছি, রবীন্দ্রনাথ না আধুনিক কবিতা?
অনিমেষ:- আমার সিলেবাসের প্রশ্ন ।।
রবীন্দ্রনাথ না
আধুনিক কবিতা বললে বলবো আধুনিক কবিতা রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন। তাই যা পাই তাই খাই ,যা পারি লিখি ওঁনার ছোঁয়ার বাইরে থাকতে চাই।
যদিও উনিই সব লিখে গেছেন আমাদের আর লেখার দরকার কী?
তবুও আমি যে ঠিক কি চাই জানি না।
সম্পাদক বন্ধুরা বলে আমি রবীন্দ্র বিরোধী ঠিক না হলেও অস্বীকার করি তাঁকে।
কিন্তু আমি নিজেকেই কখনও স্বীকার করতে পারলাম না ওঁনাকে অস্বীকার করার প্রশ্ন নেই।।উনি শাশ্বত ,চিরন্তন ,বাস্তব।
তবে আমি ওঁনার থেকে দূরে থাকতে চাই। ওনার লেখা সংক্রামক । ওঁনাকে পড়লেই ওঁনার লেখা গিলে খাবে আমাদের। তাই দূরে থাকি যেন এই চিন্তায় না ভুগতে হয় উনিই সব লিখে গেছেন যখন আমরা কী লিখবো।
৩১/আজকাল কবিতা লেখার পাশাপাশি কবিকে নতুন কবিদেরও প্রমোট করতে হচ্ছে পাশাপাশি নিজের প্রমোশন এবং মার্কেটিং টাও দেখতে হচ্ছে, ফেসবুক পেজ বানাতে হচ্ছে, নিয়মিত কবিতা পোস্ট করে পাঠক ধরে রাখতে হচ্ছে, এতকিছু করাটা কোথাও যেন মনে হয় না, তাঁর শিল্পীসত্তাকে ক্ষুণ্ন করে তাকে ব্যবসায়ী বানিয়ে দিচ্ছে?
অনিমেষ:- সবই স্ট্রাটেজি সবকিছুই গেম। যে লেখার সে ঠিক লিখবে। তাই নো কমেন্টস। বিতর্কিত বিষয় এটা। বলতে গেলে আদতে কেউ শুনবেও না কেউ বুঝবেও না।।আমি নিজেই বুঝে পাইনা।।
৩২/সিনিয়র কবিদের থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন?
অনিমেষ:- হ্যাঁ পেয়েছি, পাই , আবার লাথটাও ভালো করে জোটে । সামনে পেছনে।।।তবে সব খারাপের ভালো আছে।।
সুবীর সরকার।, শৌভিক রায় , শুভ্রদীপ রায় , শুভেন্দু দেবনাথ। আফজাল আলি ,উদয় সাহা ,উদয়ার্ণব দা ,তন্ময় বসাক দা, সৌভিক বণিক ,
আরও অনেকেই আছেন যারা সবসময় সহযোগিতা উপদেশ অনুপ্রেরণা দেয়।
৩৩/কবিবাসর, সাহিত্য সম্মেলনে সবাই নিজের লেখা পড়তে যান, কেউ আদৌ কারোর লেখা শুনতে আগ্রহী?
অনিমেষ:- নিজের লেখা পড়তেই তো যান। আমিও চাই পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে। অত সময় নেই অন্যদের কবিতা শোনার। আই হ্যাভ টু ডু মেনি থিংস ছবি তোলা , প্রেম করা , সুড়সুড়ি দেওয়া ,ফেবুতে পোস্টানো। গল্প করা।
কবিতা পড়েছি ,টিফিন খেয়েছি , এবার বাড়ি যাই ছবিও তোলা হয়েছে অনেক।
তবে সবকিছুরই ব্যতিক্রম আছে অনেকেই কবিতা শুনতেই যান।অনেকেই অন্যের কবিতা শোনেন। তবে সেটা খুব কম। কানে তুলো গুঁজে বসে থাকা।
৩৪/এইমুহুর্তে কবিতায় কলকাতা না ঢাকা কোনটা এগিয়ে?
অনিমেষ:- সরল সহজ উত্তর ঢাকা।
৩৫/ওয়েব ডুয়ার্স এর সম্পাদক অনিমেষ না কবি অনিমেষ- কাকে এগিয়ে রাখবেন?
অনিমেষ:- সবে এক দুই বছর হলো সম্পাদনায় এসেছি । আর তাও বিক্ষিপ্ত ভাবে। এমন কিছু কাজ ও করতে পারিনি যেখানে নিজেকে সম্পাদক হিসেবে এগিয়ে রাখবো। সবে এসেছি আগে নিজে লেখা শিখি তারপর সম্পাদক হিসেবে নিজেকে ভাববো।
আর কবি অনিমেষ! আমি কবিতার মতো কিছু একটা লিখিয়ে। আদৌ কবিতা হয় কি না সন্দেহ!
৩৬/প্রশ্ন:-ব্যক্তি অনিমেষ, কবি অনিমেষ কোনটা দেখবেন?
অনিমেষ:- ব্যক্তি অনিমেষ কেই এগিয়ে রাখবো । ব্যক্তি অনিমেষ না হলে কবি অনিমেষ এর প্রশ্নই নেই।
৩৭/প্রশ্ন:-আপনার পরিচিতির পেছনে আনন্দ বাজার পত্রিকা আর আজকাল পত্রিকার অবদান রয়েছে সেটা সবাই জানে । দুটোতেই আপনাকে নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে।কতটা ভালো লাগে পত্রিকায় নিজেকে এইভাবে দেখতে?
অনিমেষ:- দেখুন এটা সত্যি আনন্দ বাজার পত্রিকা আর আজকাল সংবাদ পত্রে আমাকে নিয়ে দুবার লেখা হয়েছিল যার কৃতিত্ব প্রথম জন শৌভিক রায় এবং দ্বিতীয় জন সুবীর সরকার। এই দুজন ব্যক্তির জন্য ।
নিজের ছবি দেখলে ,নিজের সম্পর্কে কোথাও লেখা পড়লে আনন্দ হবে এটিই স্বাভাবিক।
৩৮/প্রশ্ন :-সন্মান পরিচিতির পেছনে ছুটতে দেখিনি কোনোদিন আপনাকে কেন?
অনিমেষ-পরিচিতি যতটুকু ফেসবুক দিয়ে গেছে যে কজন মানুষ পড়েন জানেন তাই অনেক। অথচ এমনটা তো হবার ছিলো না। সন্মান পরিচিতির পেছনে ছুটে লাভ নেই কাজ করে যাওয়াটাই মূল।
শেষে কাজটাই থাকবে।।
৩৯/প্রশ্ন :-আক্ষেপ কিছু!প্রেমিকা হারানোর?
নাহ্। আমি কোনোকিছুর জন্য আক্ষেপ করি না।
৪০দশ বছর পর নিজেকে কীভাবে দেখতে চান?
অনিমেষ- দশ বছর পর নিজেকে দেখতেই চাই না।।করোনা চলছে এরমধ্যে মরে গেলে আর কী দেখবো।।তবে একটা ভালো কবিতা লিখতে চাই এটাই মূল।।
আর দশবছর অনেক দূরে আগামীকালই আমি একটা একাডেমি পুরষ্কার চাই। পাওয়া যাবে কি ! কেউ দেবে ?
৪১/শেষপাতে রেপিড ফায়ার-
১/রবীন্দ্রনাথ না আধুনিক কবিতা?
২/ সম্পাদনা না লেখালেখি?
৩/ পাহাড় না সমুদ্র?
৪/লাভ ম্যারেজ না অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ?
কনসাশলি কন্ট্রৈভার্সিয়াল পপুলারিটি না কনফিডেন্স ইন ইনার স্কিলস?
৫/ফুডি মুডি বোহেমিয়ান অনিমেষ না চুজি ম্যাচিউর অনিমেষ- আসলটা কে?
অনিমেষ-
১/ পাস
২/ লেখালেখি
৩/ পাহাড়
৪/ বিয়ে আর স্ত্রী প্রেমিকা সবাই বিষাক্ত তাই দূরে এসব থেকে।
কন্ট্রোভার্সি করে আলোয় আসতে চাই ,তারপর ইনার স্কিল । কনফিডেন্স আমার নিজের উপর আছে পাঠকের উপর নেই।
৫ / দুটোই সময় অনুযায়ী। আমার মুখ এক মুখোশ অনেক
ধরা দিতে চাই না। আমাকে জেনে গেলে মানুষ ঘৃণা করবে তাই ধরা দেবো না।
আপনার আগামীদিনের লেখালেখি এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য একরাশ শুভেচ্ছা সহ এতটা সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন, নমস্কার...
অনিমেষ:-আপনাকেও ধন্যবাদ, ভালো থাকুন।