শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চোখ-হাত-পা-নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের রোগী জিনাত আবার যাবে ভারতে

রিকু আমির

দৈনিক জাগরণ

প্রকাশিত : ০৮:১০ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৮ রোববার

 

চোখ-হাত-পা-নাকসহ দেহের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রক্তক্ষরণের রোগী জিনাত ভারতের তামিলনাড়ুতে অবস্থিত ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) দ্বিতীয় দফা যাবে ।

নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জিনাতের বাবা মামুন বিশ্বাস জাগরণকে জানান, ১ আগস্ট থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সিএমসিতে চিকিৎসা চলেছে। আবার নভেম্বরের ২৬ তারিখে যেতে হবে।

জিনাত হ্যামোলেক্রিয়া নামক রোগাক্রান্ত বলে ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকরা ২০১৬ সালে জানিয়েছিলেন।

সিএমসির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। তবে সময় লাগবে, চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

বর্তমানে জিনাতের অবস্থা অনেক ভাল, আগের মতো রক্তক্ষরণের হচ্ছে না বলে জানান তার বাবা।

চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মামুন রাতদিন এখান থেকে ওখানে ছুটছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য তহবিল থেকে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। মামুন বলেন, মানুষের সহযোগিতা ছাড়া মেয়েকে ভাল করা সম্ভব না।

২০১৬ সাল থেকে গত রোজার মাস পর্যন্ত দেশে দেখানো হয় জিনাতকে। মামুনের অভিযোগ- কেউ আমাকে সমাধান দিতে পারেননি, উল্টো সম্মানহানিকর, অশালীন মন্তব্য শুনতে হয়েছে কিছু চিকিৎসকের কাছ থেকে। এজন্য দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আমার ভরসা চলে গেছে।

জিনাতের মধ্যে ২০১৬ সালে এই সমস্যা দেখা দেয় প্রথম বারের মতো। মামুন জানান, প্রথমে আনা হয় ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে। এরপর বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগে। এ বিভাগ রেফার করে গাইনি বিভাগে। তারপর সালাউদ্দিন হাসপাতালে দেখানো হয় প্রখ্যাত চক্ষু চিকিৎসক অধ্যাপক দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হককে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে গ্রামে ফেরেন মামুন। হঠাৎ অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত নেয়া হয় বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে একে একে নেয়া হয় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও চক্ষু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগে। এরপর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে ঢাকার হাইটেক মাল্টি কেয়ার হাসপাতাল। এখানে অবস্থার অবনতি ঘটায় প্রায় এক মাস ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয় জিনাতকে।

সর্বশেষ গত রমজান মাসে ঢাকা মেডিকেলে ছিলেন জিনাত। ঈদুল ফিতরের তিন-চারদিন আগে ব্যর্থ হয়ে গ্রামে ফেরেন জিনাত। তবে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে জিনাতের হ্যামোল্যাক্রিয়া হয়েছে।

জিনাতের বাবা মামুন বিশ্বাস আরও জানান, জিনাতের চোখ-নাক-কান এমনকি নাভি দিয়েও রক্ত বের হয়। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারায় জিনাত। দিনে ৪-৫ বার এমন ঘটনা ঘটে। এমনও হয়েছে- জিনাত নিজ হাতে খাবার খেতে বসেছে, তখন মনের অজান্তে নাক-চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে খাবার প্লেটে।

বর্তমানে জিনাত আছেন তার নানার বাসা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার পাগলা এলাকায়। তার বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। কলেজ হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন তিনি।