বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হরিশ্চন্দ্রপুরে ১৬ দফা দাবিতে পাটগোলা শ্রমিকদের ধর্মঘট

মহঃ নাজিম আক্তার

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০৮:০৭ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

হরিশ্চন্দ্রপুরঃমালদা 

হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত আইএনটিটিইউসি সংগঠনের প্রায় চারশো পাটগোলা শ্রমিক ন্যায্য মজুরি বৃদ্ধি সহ ১৬ দফা দাবিতে শনিবার ধর্মঘট পালন করলেন।এদিন হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের সমস্ত পাটগোলা গুলি বন্ধ ছিল।হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতাল মোড় থেকে সাইকেল রেলি করে প্লেকার্ড ও পতাকা নিয়ে শ্রমিকরা তুলসীহাটা, হরিশ্চন্দ্রপুর ও বারদুয়ারী এলাকার পাটগোলা গুলিতে আই এন টি টি ইউ সি সংগঠনের পতাকা লাগিয়ে ধর্মঘট  শুরু করেন ।শান্তিপূর্ণ ভাবে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা ধরে ধর্মঘট চলে।এদিন ধর্মঘটে উপস্থিত ছিলেন মালদা জেলা কিষাণ সেলের সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমান, হরিশ্চন্দ্রপুর - ১ নং ব্লকের  তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিমান ঝা, ব্লক সহ সভাপতি ফেসান আলি, হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের আই এন টি টি ইউ সি'র পাট শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি রাধে শাম বড়াই, পাট শ্রমিক সংগঠনের   সাধারণ সম্পাদক সাজেমূল ইসলাম ও সভাপতি জাকির হোসেন সহ এলাকার নেতাবৃন্দরা ।  
মালদা জেলা কিষাণ সেলের সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমান জানান, 'পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হল পাটশিল্প৷পাটগোলা মালিকের অন্যায্য মজুরিতে হরিশ্চন্দ্রপুরের চারশো পাটগোলা শ্রমিকের জীবন বিপন্ন৷ এই শিল্পের সাথে যুক্ত হাজার হাজার পাটচাষি পরিবারও বিপন্ন হয়ে পড়েছে৷ বাজার দরের সাপেক্ষে মজুরি না দেওয়া, অর্ধাহার, পেশাবাহিত রোগাক্রান্ত জীবন–এ সবে পিষ্ট পাটগোলায় কাজ করা শ্রমিকরা৷
পাটগোলা শ্রমিকদের দাবিগুলির প্রতি অবহেলার কারণেই এই শ্রমিকদের আজ এই দশা৷ হরিশ্চন্দ্রপুর, বারদুয়ারী, তুলসীহাট ও কুশিদা প্রভৃতি এলাকায় যে পাটগোলাগুলি গড়ে উঠেছে  সেখানে আজ শ্রমিক জীবন ভয়াবহরূপে আক্রান্ত, বিধ্বস্ত৷'

পাটগোলা শ্রমিক সাজেমূল ইসলাম, জাকির আলি, মহঃদুলাল, সুশান্ত দাস ও বিকাশ দাসরা জানান, 'সপ্তাহে সাতদিন সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সামান্য মজুরিতে বারো ঘন্টা কাজ করতে হয় ।একজন শ্রমিককে মাত্র সত্তর টাকার বিনিময়ে দেড়শো কেজি ওজনের পাটের বেল বাধতে হয় ।বারো ঘন্টা দৈহিক পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে  একজন শ্রমিক তিন থেকে চার টার বেশি বেল বাধতে পারেন না । এই সামান্য ২১০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা  রোজগারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।ছেলে মেয়েদের কোনো ভালো স্কুলে পড়াতে পারি না ।সু-চিকিৎসার অভাবে অনেক শ্রমিককে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়।'

সাজেমূল ইসলাম ও ইব্রাহিমরা আরও জানান, 'সাত সকালে পান্তা ভাত খেয়ে একনাগাড়ে বারো ঘন্টা কাজ করতে করতে হাফিয়ে উঠি ।দেড়শো কেজি ওজনের পাটের বেল মাথায় তুলে গাড়ি লোড এবং আনলোড করা সাধ্যের বাইরে ।তারা এই কাজ দীর্ঘবছর ধরে করে আসছে ।কেউ কেউ আবার পূর্বপুরুষ ধরে করে  আসছে।এই কাজে যারা যুক্ত তাদের চল্লিশ বছর পেরোতে না পেরোতে বার্ধক্য নেমে আসে।অস্বাস্থ্যকর পাটগোলা পরিবেশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার  ফলে অনেক শ্রমিক শ্বাসকষ্ট ও টিবির মতো মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যান অথচ মালিক পক্ষ তার পরিবারকে কোনো আর্থিক সাহায্য করেন না।যেমন মহেন্দ্রপুর গ্রামের পাটগোলা শ্রমিক রবিজুল(৩৫) ও হলদি বাড়ির রতন দাস(৪০), ইসলামপুরের মদনাই(৩৮) প্রায় পাঁচ থেকে দশ বছর আগে টিবি  ও  শ্বাসকষ্ট রোগে মারা গেলে আজও পর্যন্ত সরকারি ভাবে বা মালিক পক্ষর কাছ থেকে  কোনো আর্থিক সাহায্য পাননি।বছরের দুই থেকে তিন মাস পাটগোলা মালিরা কাজ বন্ধ রাখেন ।তাই সংসারের খরচ  জোগাড় করতে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যেতে হয় ।

এ দিনের ধর্মঘটে শ্রমিকরা মালিক পক্ষের প্রতি বিভিন্ন দাবি  জানান,'পাটের বেলের ওজন দেড়শো কেজি ওজন থেকে কমিয়ে  একশো পঁচিশ কেজি ওজনের করতে হবে।যাতে সব শ্রমিক মাথায় করে লোড এবং আনলোড করতে পারে।একটি বেল বাধার পারিশ্রমিক সত্তর টাকা থেকে  একশো টাকা  করতে হবে ।চল্লিশ বছরের উর্ধ্বে  শ্রমিকদের একটা ভাতার  ব্যবস্থা করে দিতে হবে ।অকালে মৃত্যু শ্রমিকদের এককালীন কিছু টাকা দিয়ে পরিবারকে সাহায্য করতে  হবে ।বছরের বারো মাসে কাজ দিতে হবে । সমকাজে সম পারিশ্রমিক দিতে হবে।শ্রমিকদের নিখরচে বিমা করাতে হবে।রমজান মাসে মুসলিম শ্রমিকদের একটু ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।বাজার দর মূল্যের সঙ্গে তাদের পারিশ্রমিক  বাড়াতে হবে ।'