শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘প্রধানমন্ত্রী চাইলেই খালেদার জামিন সম্ভব’

জাগরণ রিপোর্ট  

দৈনিক জাগরণ

প্রকাশিত : ০৪:৪২ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, টেকনোক্র্যাট হিসেবে নির্বচনকালীন সরকারে বিএনপির প্রতিনিধি রাখা সম্ভব। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা আছে একদিনে তার সবকটিতে জামিন দেয়াও সম্ভব।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক নেতা এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে মানববন্ধন থেকে আরও বক্তব্য রাখেন- গণস্বাস্থ্য  কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া প্রমুখ।
খন্দকার মাহবুব বলেন, জাতীয় সংসদে বিএনপির লোক নাই, তাই বলা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির প্রতিনিধি থাকবে না। তবে সংশোধিত সংবিধানে আছে নির্বাচনকালীন সরকারে  টেকনোক্র্যাট নেয়া যাবে। সুতরাং টেকনোক্র্যাট হিসেবে তাদের (বিএনপির প্রতিনিধি) নেয়া যায়। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তি ও তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন জন্য আমরা করণা চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছি আইন অনুযায়ী দেশে একটি সাংবিধানিক নির্বাচন হবে। জনগণ ভোট দেবে। জনগণের ভোটই তাদের মুক্তি দেবে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে খন্দাকর মাহবুব বলেন, আপনার (প্রধানমন্ত্রী) বোঝা উচিত খালেদা জিয়া একজন অসুস্থ মানুষ, তাকে কীভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো রয়েছে, সেগুলো একদিনের মধ্যে জামিন দিতে পারেন আপনি। যখন দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা হবে তখন বোঝা যাবে খালেদা জিয়া কতটা দোষী। কিন্তু এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি না দিলে বাংলাদেশের মাটিতে আপনি নির্বাচন করতে পারবেন না। তিনি বলেন, সংবিধানে যে বিধান আছে সংসদ বাতিল করে দিয়ে নির্বাচনে আসুন এবং নির্বাচনকালীন সরকারে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করুন।
সরকারের সময় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে এমন মন্তব্য করে সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, ঐক্যফ্রন্টের যে আলাপ-আলোচনা তা শেষ হয়ে যায়নি। সংবিধান মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের  মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য। প্রধানমন্ত্রী আপনি বলছেন; সংবিধান সংবিধান। আমরা বলছি সংবিধান বর্তমান অনির্বাচিত সংসদ সদস্য দিয়ে সংশোধন করেছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য। এই সংশোধিত সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে রয়েছে সংসদ নির্বাচন দুভাবে হতে পারে। সংসদ শেষ হওয়ার অর্থাৎ ৫ জানুয়ারির ৯০ দিন পূর্বে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হতে পারে। এরপর (৫ জানুয়ারি) সংসদ বাতিল হয়ে যাবে। তাহলে জানুয়ারি মাসের পরে আপনি নির্বাচন করুন, আপনার কথা থাকবে আমাদের কথাও থাকবে। সংসদ তখন বহাল থাকবে না’ বলেন খন্দকার মাহবুব। 
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার বলেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বচন চান, সব ভালো কথা বলেছেন। এখন ভালো কথাগুলো কাজে পরিণত করার অপেক্ষায় আছে।
ঐক্যফ্রন্টে সাত দফাকে তিনটি ভাগে ভাগ করার কথা উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রথমটা সংসদ ভেঙে দেয়া, দ্বিতীয়টা নির্দলীয় সরকার এবং তৃতীয়টা খালেদা জিয়া ও অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি। তৃতীয় অংশটা কাজে পরিণত করা খুব সোজা। কেননা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে তা ফৌজদারি হলেও বিষয়টা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জাফরুল্লাহ বলেন, আমি খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার চাই না। তার প্রতি সুবিচার করা হোক। সুবিচার করা হলে তার প্রথম শর্ত হলো তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া। তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হবে সুবিচার, সুশাসনের প্রথম পদক্ষেপ। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপেও বলেছি তাকে জামিনে মুক্তি দিন। জামিন দিয়ে বিচারের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দুটি সাংবিধানিক সমস্যার কথা বলা হয়েছে। আমি বলি এটার হয় তো একটা মিটিংও হবে না। ড. শাহদীন মালিক, আসিফ নজরুলের মতো যারা আইনজ্ঞ আছে তাদের নিন, সরকার  থেকে দুজন নিন। ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলে এর সুরাহা হতে পারে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সামরিক বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিলে এক এগারোর পুনরাবর্তন হবে। 
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারের অনেক বাবুরা আছেন যারা চাইবে খালেদা জিয়ার নামে অকারণে মামলা দিয়ে হাসিনাকেই জনসম্মুখে হেয় করতে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আপনার যে পোষা প্রাণীগুলো আছে তাদের থেকে সাবধান থাকেন। তা না হলে এটা দেশের জন্য বিপদ।