ধুঁকছে নতুন তিন ব্যাংক
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
দৈনিক জাগরণ
প্রকাশিত : ০৬:৫৮ পিএম, ১ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
তৃতীয় প্রজন্মের ৪৭ ব্যাংকের পর অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে তিনটি ব্যাংকের অবস্থা ভালো নয়। ব্যাংকগুলো হলো- ফারমার্স ব্যাংক, এনআরবি (নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিজ) কর্মাশিয়াল ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। ২০১৩ সালে ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। এর পর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর আরও দুটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে সীমান্ত ব্যাংক। যা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্য বিশেষায়িত হিসেবে গঠিত হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে পুলিশের জন্য কমিউনিটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও তিনটি ব্যাংক। একইদিন ব্যাংকগুলো অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় উত্থাপন করা হয়।
ফারমার্স ব্যাংক :
সূত্র জানায়, ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর আগেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ভবন ভাড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকটি জালিয়াতি করে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়ে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ফারমার্স ব্যাংকের আরও কিছু জালিয়াতি উদঘাটিত হয়। বর্তমানে ব্যাংকটি থেকে আমানতও তুলতে পারছেন না অনেক গ্রাহক- এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। জালিয়াতির কারণে এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্যাংকটির সেসময়ের চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পদত্যাগে বাধ্য হন অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীও। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীমকে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক :
দেশে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা নিয়ে দীর্ঘদিন দাবি ছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের। এ দাবির প্রেক্ষিতে তিনটি এনআরবি ব্যাংক অনুমোদন পায়। ব্যাংকগুলো হলো- এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটিতে ৭৫০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম ছাড়াও ৬৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার সন্দেহজনক শেয়ার থাকার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ব্যাংকটিতে সুদ মওকুফ ও পরিচালকদের মধ্যে বিতরণকৃত ঋণেও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া পরিচালকদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। অনিয়মের দায় নিয়ে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রকৌশলী ফরাছত আলী। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দেওয়ান মুজিবুর রহমানকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক :
অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে পদ হারিয়েছেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের দুই পরিচালক। তারা হলেন- রতনপুর গ্রুপের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান এবং এম মোয়াজ্জেম হোসেন। এর মধ্যে মাকসুদুর রহমান সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দেননি। বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি হয়ে যাওয়ায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান পদ হারিয়েছেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন।
চালু হয়নি করেসপন্ডিং ব্যাংকিং :
নতুন ব্যাংকগুলো এখনও বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে করেসপন্ডিং ব্যাংকিং চালু করতে পারেনি। এ কারণে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম একরকম শুরুই হয়নি বলা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য :
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জাগরণকে বলেন, যেকোনো ব্যাংকের অনিয়মের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব ব্যাংক যাতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।