মঙ্গলবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩১   ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কবে

অনলাইন ডেস্ক

দৈনিক জাগরণ

প্রকাশিত : ০৬:৪৫ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৮ শুক্রবার

আগামী সংসদ নির্বাচন এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত হলেও কবে ভোট নেওয়া হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। ভোটের দিন নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মধ্যে ২৭ ডিসেম্বর আলোচনা থাকলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কারণে তাতে ভাটা পড়েছে। নতুন করে শোনা যাচ্ছে ৩০ বা ৩১ ডিসেম্বরের কথা। অবশ্য জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকেও ভোটের দিন নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। তবে ৩০ ডিসেম্বরই রয়েছে সর্বাধিক আলোচনায়। সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ওই দিনই ভোট নেওয়া হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হবে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন। অবশ্য ভোট কবে নেওয়া হবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে ডিসেম্বরের শেষভাবে ভোট নেওয়ার কথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ও ইসি সচিব এরই মধ্যে একাধিকবার জানিয়েছেন। সরকারেরও প্রত্যাশা ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হোক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ একাধিক মন্ত্রী ডিসেম্বরে ভোটের কথা জানিয়েছেন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভোট নেওয়ার জন্য তারা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের একাধিক দিন প্রাথমিকভাবে ঠিক করে রেখেছিল। এর মধ্যে ২৭ ডিসেম্বেই সর্বাধিক আলোচনায় ছিল। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ২৭ ডিসেম্বর ভোট নেওয়া হবে। তার এ বক্তব্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে নির্বাচন কমিশন। পরদিনই কমিশন বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, অর্থমন্ত্রী তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ভোটের তারিখ জানিয়েছেন। কমিশন এখনও তারিখ ঠিক করেনি।
অবশ্য অর্থমন্ত্রীও বিতর্কে পড়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। পরদিন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ভোটের তারিখটি তিনি অনুমানের ওপর বলেছেন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তাদের পরিকল্পনায় থাকলেও ২৭ ডিসেম্বর ভোট নেওয়ার দিন রেখে তফসিল দিলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্ক হতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে কমিশনের ওপর সরকারের প্রভাব বিস্তারের।
এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একটি তারিখ গণমাধ্যমকে জানালে ইসি কিছুটা বিব্রত হয়। পরে কমিশন একদিন এগিয়ে এনে ভোটের দিন রেখে সেই অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করে।
এসব বিবেচনায় কমিশন ২৭ ডিসেম্বর বাদ দিয়ে নতুন করে ভোট নেওয়ার কথা ভাবছে। এক্ষেত্রে বড় দিনসহ অন্যান্য সরকারি ছুটি বিবেচনায় নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নিয়ে নতুন করে চিন্তা করছে কমিশন। অবশ্য ২৯ ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিন (শনিবার) হলেও এদিনও ভোট দিন হিসেবে আলোচনা রয়েছে। কারণ, শনিবার সরকারি ছুটি হলেও এদিন ভোট নেওয়ার নজির কমিশনের রয়েছে।

গত ১৫ অক্টোবর কমিশন সভায় ইসি সচিবালয় থেকে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরা হয়েছে। তবে এতে ভোটের সম্ভাব্য কোনও দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়নি। ওইদিন সচিবালয় থেকে যে ৯৯টি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে তাতে নভেম্বরের ১-১০ তারিখের মধ্যে তফসিল ঘোষণা, একই মাসের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা, মনোনয়নপত্র যচাই-বাছাই, বাছাই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলি এবং আপিল শুনানির কথা বলা হয়েছে। আর ডিসেম্বরে প্রার্থীতা প্রত্যাহার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ এবং প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচারণা শুরু হবে বলে বলা হয়েছে। ভোট নেওয়ার বিষয়ে ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট নেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বার্ষিক পরীক্ষা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে কয়েকদিন আগেই চিঠি দিয়েছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা এখনও নির্বাচনের দিন নিয়ে কমিশনে কোনও আলোচনা করেননি। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সিইসি মহোদয় নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনও মন্ত্রী বা এমপি ভোট নেওয়ার দিন বলে দিলে সেটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা ভোটের তারিখ ঠিক করবো না। কমিশন সার্বিক দিক বিবেচনা করে যে দিনটিকে উপযুক্ত মনে করে সেদিনই ভোট হবে।’
তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘কোনও মন্ত্রী একটা ভোটের তারিখ বলে দিলেন বলেই সেদিন ভোট নেওয়া যাবে না— এই নীতিতেও আমরা বিশ্বাসী নই। যদি তা-ই হয় তাহলে আমাদের হাতে যে কয়টা দিন রয়েছে তার একেকটিকে যদি একেকজন ভোটগ্রহণের দিন বলে ঘোষণা দেন, তাহলে তো আমরা কোনও তারিখই নির্ধারণ করতে পারবো না। আর এখানে যে বা যারা ভোটের তারিখ বলছেন, এটা তাদের নিজস্ব মতামত। কমিশনের সঙ্গে কথা বলে কেউ কোনও তারিখ দেননি।’

অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোটগ্রহণ শেষ করতে চান। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছেন। কারণ, জানুয়ারিতে গেলে নতুন ভোটার তালিকার একটি বিষয় চলে আসবে। তাছাড়া জানুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণের বিষয় রয়েছে।


সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন