আর জি কর-কাণ্ড: অভূতপূর্ব ঘটনায় নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৮:১৪ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার
আর জি কর-কাণ্ড: অভূতপূর্ব ঘটনায় নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল
কাবিলপুর , মুর্শিদাবাদ
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল বাংলা তথা ভারতের একটি প্রসিদ্ধ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান। কলকাতায় এটার প্রথম পথচলা শুরু হয় ১৮৮৬ সালে। একটা সংগঠিত প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা পায় ১৯১৬ সালে। খ্যাতনামা চিকিৎসক তথা প্রতিষ্ঠাতা সচিব রাধাগোবিন্দ করের (১৮৫২-১৯১৮) নামানুসারে বর্তমান নামকরণে পরিচিত হচ্ছে ১৯৪৮ সাল থেকে। এখানকার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আসন সংখ্যা হল যথাক্রমে ২৫০ ও ১৭৫। সিনিয়র ও জুনিয়র মিলিয়ে মোট চিকিৎসক সংখ্যা ৭০০। শয্যা সংখ্যা দেড় হাজার।
৯ই আগস্ট, ২০২৪ সকালে দ্বিতীয় বর্ষের স্নাতকোত্তর শিক্ষানবিশ (পিজিটি) একজন মহিলাকে (৩১) আর জি করের একটি সেমিনার কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই তরুণী চিকিৎসক টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটিতে ছিলেন। তিনি ৮ই আগস্ট দিবাগত রাত্রে নৈশভোজ সেরে একটু ঘুমোচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি নৃশংস নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর শরীরে গুরুতর আঘাত ও ধর্ষণের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রথমে এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলা হয়। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং এবং যথাযথ তদন্তের দাবি জানাতে থাকেন। ময়না তদন্তের ভিডিওগ্ৰাফি করা হয়। মৃতার বাবা-মাকে অবশ্য ঠিকমতো দেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। তাড়াহুড়ো করে শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে কার্যত কর্তব্যরত অবস্থায় একজন তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ভূ-ভারতে আর কখনও ঘটেছে বলে মনে হয় না। এই অভূতপূর্ব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তাও নজিরবিহীন। এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ প্রতিবাদ কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মাসাধিককাল ধরে সংঘটিত হয়েছে তা এই বঙ্গে স্মরণাতীত কালের দেখা যায়নি।আট থেকে আশি সকলেই সোচ্চার। শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী, যৌনকর্মী, ক্রীড়ামোদী, আইনজীবী, চিকিৎসক, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী, ছাত্র, যুব প্রায় সব পেশার মানুষ ও পেশাগত সংগঠনকে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে একাধিকবার মিছিলে ও সমাবেশে সামিল হতে দেখা গেছে।জীবনে প্রথমবার প্রতিবাদ জানাতে পথে নেমেছেন এমন মানুষের সংখ্যাও অজস্র। পশ্চিমবঙ্গে বোধহয় এতবড় নাগরিক তথা অরাজনৈতিক আন্দোলন আর কখনও গড়ে ওঠেনি।গণ আন্দোলনের ইতিহাসে সংযুক্ত হয়েছে নতুন ধারা- মেয়েদের রাত দখল। একটি উচ্চমানের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে একজন চিকিৎসকের যৌন নিপীড়ন ও হত্যার ঘটনা যে যত্রতত্র ঘটে চলা আর পাঁচটা ধর্ষণ-খুনের ঘটনার থেকে অনেকটাই আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে, এটা সকলেরই উপলব্ধির মধ্যে এসেছে। এজন্য রাজ্য ও দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বময় ধ্বনিত হয়েছে 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস', 'জাস্টিস ফর আর জি কর', 'জাস্টিস ফর তিলোত্তমা' প্রভৃতি স্লোগান।
আর জি করের মহিলা ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুন আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বলে মনে হয় না। এটা পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে। এই পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনায় ওই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ও চিকিৎসকের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। 'তিলোত্তমা' হয়তো কারোর সঙ্গে কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন।কোনো গুরুতর গোপন বিষয় হয়তো তিনি জেনে ফেলেছিলেন। তাঁর ভূমিকায় কেউ হয়তো ভীষণ অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েছিল।তাই তাঁকে প্রাণে মারার ষড়যন্ত্র করা হয়, সঙ্গে যৌন নির্যাতন। এখানে ক্রোধ মুখ্য, কাম গৌণ। এই ভয়ঙ্কর ঘটনা যাতে নির্বিঘ্নে ঘটতে পারে তার বন্দোবস্ত আগে থেকেই করা হয়। তিলোত্তমাকে কে বা কারা খুন ও ধর্ষণ করেছে, এই তথ্য উদঘাটন করার পাশাপাশি কে বা কারা তা করিয়েছে, সেই তথ্যও সামনে আসা জরুরি।
আর জি করের ঘটনায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও লবিবাজির খবর প্রকাশ পেয়েছে। পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষার রেজাল্ট, ওষুধপত্র, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিভিন্ন পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি সবেতেই অনিয়ম, কাটমানি, কমিশন ও কারচুপির ঘটনা ঘটে। মেডিক্যাল কলেজের পড়াশোনা ও প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও কর্তাব্যক্তিদের অনেকেই যে এক একটা দুর্বৃত্ত হয়ে উঠেছেন, একথা এতদিন সাধারণ বঙ্গবাসী জানত না। পাড়ার মাথামোটা মাস্তানদের মতো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে অবস্থানকারী মেধাবী ডাক্তাররাও যে দাদাগিরি করেন, ভাবতেই খারাপ লাগছে। থ্রেট কালচার, মাফিয়ারাজ ছড়িয়ে পড়তে কোনো ক্ষেত্রই বোধহয় বাকি নেই। পশ্চিমবঙ্গের শুধু পশ্চাদগমন চলছে।
আর জি করের মহিলা ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দুদিনের (২-৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) বিশেষ অধিবেশনে অপরাজিতা নারী ও শিশু (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন ও সংশোধন), ২০২৪ বিল সর্বসম্মতিক্রমে ধ্বনিভোটে পাস হয়েছে। রাজ্যপাল বিলটিতে স্বাক্ষর না করে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য প্রেরণ করেছেন। কিন্তু বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভে সমর্থ হবে বলে মনে হয় না। প্রথমত, ধর্ষণের কড়া শাস্তি আগেকার আইপিসি অথবা এখনকার বিএনএস-এ নেই এমনতো নয়। ধর্ষণ ও খুনের শাস্তি হিসেবে ২০০৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ও ২০২০ সালে দিল্লীতে মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা ও অক্ষয় কুমারের ফাঁসি হয়। আর জি করের তিলোত্তমার ধর্ষক ও খুনীদের ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি প্রযুক্ত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোনো অপরাধের এক ও একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করা আমাদের সংবিধানের পরিপন্থী। প্রতিটি অপরাধের সাজার ক্ষেত্রেই বিকল্প সংস্থান থাকা জরুরি। আদালত একাধিক বিকল্প থেকে যেকোনো একটিকে বেছে নেবে। কাজেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখানোর নামে রাজ্য সরকারের তাড়াহুড়ো করে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগের মধ্যে নাটকীয়তা থাকলেও এটি কোনো কাজের কাজ নয়। নিছকই আই ওয়াশ।
যখন 'বিচার চাই', 'জাস্টিস চাই' বা 'ইনসাফ চাই' বলে আওয়াজ ওঠে তখন আসলে চাওয়া হয়, যেন বিচার প্রক্রিয়া যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে শেষ করে অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকলের শাস্তি কার্যকর করা হয়। এটা অত্যন্ত জনপ্রিয় দাবি। কিন্তু ভারতীয় বিচারব্যবস্থা এব্যাপারে ডাহা ফেল। স্বাধীন ভারতে একাধিক আইন কমিশন গঠন, ফৌজদারি আইনের সংস্কার ও সংশোধনী সত্ত্বেও এব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্ৰগতি ঘটেনি। বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতেই চায় না! ফলতঃ সাজা ঘোষণা ও তা কার্যকর করতে সাঙ্ঘাতিক বিলম্ব ঘটে। পয়লা জুলাই, ২০২৪ প্রবর্তিত নতুন ফৌজদারি আইনও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে বলে মনে হয় না। এতে প্রথম শুনানির ৬০ দিনের মধ্যে চার্জ গঠন এবং শেষ শুনানির ৪৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শুনানির সর্বোচ্চ সংখ্যা কিংবা প্রথম ও শেষ শুনানির মধ্যে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবধানের ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি। অর্থাৎ, 'তারিখ পে তারিখ' চলতেই থাকবে আর আমাদের আওড়াতে হবে- জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড। খুনের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনেক বিলম্ব ঘটার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মহাত্মা গান্ধী নিহত হন ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি। ঘাতক নাথুরাম গডসে হাতেনাতে ধরা পড়ে। নাথুরাম ও তার সহযোগী নারায়ণ আপ্তেকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জাতির জনকের অভাবনীয় হত্যাকাণ্ডের ৬৫৫ দিন পর ১৯৪৯ সালের ১৫ই নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর। সৎবন্ত সিং ও কেহর সিংয়ের ফাঁসি কার্যকর হয় প্রায় পাঁচ বছর পর ১৯৮৯ সালের ৬ই জুন। ২০০৮ সালের ২৬শে নভেম্বর মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ১৬৬ জন মানুষ মারা যায়।ধরা পড়ে পাকিস্তানী জঙ্গি আজমল কাশভ। তাকে ফাঁসি দেওয়া হয় চার বছর পর ২০১২ সালের ২১শে নভেম্বর।কলকাতার একটি আবাসনে ১৪ বছর বয়সী হেতাল পারেখের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে ৫.৩.১৯৯০ তারিখ আর অভিযুক্ত ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় প্রায় দেড় দশক পর ১৪.৮.২০০৪ তারিখ। দিল্লিতে ২৩ বয়সী ফিজিওথেরাপি ছাত্রী 'নির্ভয়া'র (জ্যোতি সিং) গণধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত চারজনের ফাঁসি কার্যকর হয় সাত বছর পর ২০২০ সালের ২০শে মার্চ।অন্য একজন অপরাধের দিন বয়সের দিক থেকে নাবালক ছিল বলে ছাড়া পেয়ে যায়।
প্রাথমিক ভাবে ধর্ষণ ও হত্যা সংক্রান্ত অপরাধের বিচার হয় সেশন কোর্টে। সাধারণত সেশন কোর্ট রায় দিতে সময় নেয় এক থেকে দুই বছর। মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলা করা হয় প্রথমে হাইকোর্টে এবং তারপর সুপ্রিম কোর্টে। শুনানি শেষ করে রায় দিতে বিরক্তিকর রকমের বিলম্ব ঘটে এই দুই আদালতে।সবশেষে রাষ্ট্রপতির কাছেও কিছুদিন প্রাণভিক্ষার আবেদন জমা পড়ে থাকে। এখন ভারতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার ব্যাপারে সচেষ্ট বা সিরিয়াস নয়। কাজেই পাবলিক চাইলেও তিলোত্তমার বিষয় বিস্মৃত হওয়ার আগে বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ধারণা বা পারসেপশানের ভিত্তিতে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় না। 'অন্ধা কানুন' যথেষ্ট পরিমাণে সাক্ষ্য, তথ্য ও প্রমাণ না পেলে কোনো অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে না। যে অপরাধে শাস্তি যত কড়া সেই অপরাধে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য সাক্ষ্য, তথ্য ও প্রমাণ তত শক্তপোক্ত হতে হয়। আর জি কর-এ তিলোত্তমার ঘটনায় তথ্য, প্রমাণ নষ্ট, বিকৃত ও লোপাট করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই'কে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ (সারকামসটানশিয়াল এভিডেন্স) সংগ্ৰহের ওপর জোর দিতে হবে। তা করা না হলে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের ঘটনাতেও কেউ শাস্তি পাবে না যা অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সম্ভ্রান্ত পেশার একজন উচ্চশিক্ষিত মহিলা একটা মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষণ ও খুনের শিকার হওয়ার পরও বিচারব্যবস্থা অপরাধীদের শনাক্ত ও শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে সমাজে নারী সুরক্ষার প্রশ্নে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন পরিচালনায় বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁরা তাঁদের আন্দোলনের অরাজনৈতিক চরিত্র বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের আন্দোলনের প্রতি 'সংহতি' জানাতে আসা সাংসদ, বিধায়ককে গো ব্যাক স্লোগান শুনিয়ে যেভাবে বিদেয় করেছেন তা সত্যিই সাহসী সিদ্ধান্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার গত তেরো বছরে আর কোনো আন্দোলনকে এতটা গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়নি। ডাক্তারদের দাবি মেনে একগুচ্ছ পুলিশ ও স্বাস্থ্য আধিকারিককে অপসারণ করা হয়েছে। আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্ৰিক বেহাল অবস্থা নিয়েই চিকিৎসকরা সরব হয়েছেন। এজন্য স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সংস্কার সাধনে এই আন্দোলনের একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিলোত্তমার নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী সকল ব্যক্তির শাস্তি এবং সুস্থ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, এই মুহূর্তে নাগরিক সমাজের বলিষ্ঠ দাবি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তন করার জন্য নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় কিন্তু অনাচার অসহনীয় হয়ে উঠলে সরকারকে পদক্ষেপ করতে বাধ্য করার জন্য যেকোনো সময়েই গণ আন্দোলন সংঘটিত হতে পারে।