নতুন ফৌজদারি আইন: উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৬:২৪ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৪ শনিবার
নতুন ফৌজদারি আইন: উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল
আইন (ল) হল কতকগুলো বিধিবিধান বা নিয়ম-কানুন যা রাষ্ট্র রচনা করে তার নাগরিকদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে। নাগরিক যখন তার স্বীকৃত অধিকারের সীমা লংঘন করে তখন আইন ভঙ্গের ঘটনা ঘটে। আবার নাগরিককে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করাও আইন বিরোধী কাজ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র তথা সরকারও অভিযুক্ত হতে পারে। আদালত আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তি এবং আইন ভঙ্গের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আমাদের দেশে আইন মূলত দুই ধরনের- দেওয়ানি (সিভিল) ও ফৌজদারি (ক্রিমিনাল)। দেওয়ানি আইনের অধীনে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পত্তি, অধিকার ও দায়িত্বের প্রশ্নে উদ্ভূত বিরোধ বা মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। দেওয়ানির বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানানো যায় না। অভিযোগকারীকে সরাসরি আদালতে যেতে হয়। অন্যদিকে, চুরি, ডাকাতি, হামলা, হত্যা, প্রতারণা, লুটপাট, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, অপহরণ, জালিয়াতি প্রভৃতি অপরাধমূলক ঘটনা ফৌজদারি আইনের অন্তর্ভুক্ত। ফৌজদারির বিষয়ে থানা ও আদালত দুই জায়গাতেই অভিযোগ জানানো যায়। ফৌজদারি মামলায় জেল, জরিমানা ও মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি হতে পারে।
এতদিন ভারতীয় ফৌজদারি আইনের তিনটি অংশের নাম ছিল- ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (১৮৬০), ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট (১৮৭২) ও কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর (১৯৭৩)। আইপিসি বা ভারতীয় দণ্ডবিধি হল ভারতে সংঘটিত নানান ধরনের অপরাধের বিবরণ ও তাদের শাস্তির বিধান সম্পর্কিত প্রধান আইন। জেল, জরিমানা ও মৃত্যুদণ্ডের রায় আইপিসি'র বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী হয়ে থাকে। চালু হবার পর থেকে ব্রিটিশ আমলে তো বটেই স্বাধীন ভারতেও এই বিধির অনেক সংশোধন ও সম্প্রসারণ হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ায় যেকোনো অভিযোগকে সত্য প্রমাণ করা জরুরি।এই কাজটি আইইএ বা ভারতীয় সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী করা হয়। সাক্ষ্য আইন স্থির করে দেয়, মামলায় প্রমাণ হিসেবে কোন তথ্য (ফ্যাক্ট) দেওয়া যাবে অথবা যাবে না এবং কে কীভাবে সাক্ষ্য দেবে। সূচনার পর থেকে সামান্য আধুনিকনিকীকরণ ও সংযোজন ছাড়া সাক্ষ্য আইনে বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি।সিআরপিসি বা ফৌজদারি কার্যবিধির প্রধান কাজ হল বিভিন্ন অপরাধের তদন্ত, অনুসন্ধান তথা বিচার প্রক্রিয়ার অভিমুখ নির্ধারণ করা।সিআরপিসি'র নির্ধারিত পথে সমগ্ৰ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। সিআরপিসি ফৌজদারি মামলার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জেলা ও দায়রা আদালত, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ও পদাধিকারীদের ক্ষমতা ও এক্তিয়ার নির্ধারণ করে। বিভিন্ন অপরাধকে শ্রেণিবদ্ধ করে। অর্থাৎ, কোনো অপরাধ জামিনযোগ্য (বেলেবল) নাকি জামিনযোগ্য নয় অথবা আমলযোগ্য (কগনিজেবল) নাকি আমলযোগ্য নয় তা স্থির করে। আদালতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফর্মের বয়ান তৈরি করে। সিআরপিসি গঠন করা হয় ১৮৮২ সালে এবং পুনর্গঠিত হয় ১৮৯৮ সালে। ১৯৭৩ সালে পুনরায় আমূল পরিবর্তন ঘটানো হয়। বিগত পঞ্চাশ বছরে সিআরপিসি অন্তত ১৮বার সংশোধন করা হয়েছে। সংবিধান (কনস্টিটিউশন) দেশের সর্বোচ্চ আইন। মৌলিক কাঠামো বজায় রেখে সেই সংবিধানও শতাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। কাজেই ফৌজদারি আইনে টুকটাক পরিবর্তন ঘটানোর মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।
কিন্তু এবার অনেক বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর প্রণীত ও ২০২৪ সালের পয়লা জুলাই প্রবর্তিত নতুন ফৌজদারি আইনে তিনটি অংশের নামই বদলে দেওয়া হয়েছে। আইপিসি, আইইএ ও সিআরপিসি'র নতুন নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বি এন এস), ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম (বি এস এ) ও ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বি এন এস এস)। ঔপনিবেশিক নাম বাদ দেওয়ার জাতীয়তাবাদী যুক্তির আড়ালে নতুন নামকরণের মধ্যে দেশের প্রধান শাসকদলের সংস্কৃত ও হিন্দি ভাষার প্রতি বিশেষ আগ্ৰহের প্রতিফলন ঘটেছে। নতুন নামে শুধু ভাষা নয় ভাবনারও পরিবর্তন ঘটেছে। আইপিসি'র ইংরেজি 'পেনাল'-এর অর্থ দণ্ড বা শাস্তি। কিন্তু বিএনএস'র 'ন্যায়'-এর ইংরেজি হল জাস্টিস। সিআরপিসি'কে 'কার্যবিধি'র মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে 'নাগরিক সুরক্ষা' নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে নতুন নামে নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ পেলেও সরকার বা শাসকদলের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় দূর হচ্ছে না। এর কারণ হল, ইতিমধ্যে তাদের 'আচ্ছে দিন', 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ', 'খাবো না খেতেও দেবো না' প্রভৃতি সুমধুর ভাষ্যের মর্মান্তিক পরিণতি হতে দেখা গেছে।ফৌজদারি আইনের নতুন নামের ক্ষেত্রেও 'মুখে এক কাজে আর এক' করার অভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে হয়।
প্রয়োজন থাক বা না থাক মোদি সরকারের কিছু করে দেখানোর একটা ঝোঁক রয়েছে। ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী সংসদ ভবন ভালো অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিশ্বের বৃহত্তম সংসদ ভবন সেন্ট্রাল ভিস্তা নির্মাণ, গুজরাটের নর্মদায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বিশ্বের উচ্চতম (১৮৩ মিটার) মূর্তি স্থাপন, গুজরাটের মোতেরা স্টেডিয়ামকে প্রায় সাতশো কোটি ব্যয়ে পুনঃনির্মাণ করে নরেন্দ্র মোদীর নামে বিশ্বের বৃহত্তম স্টেডিয়ামে পরিণত করার মতোই নামধাম পাল্টে দিয়ে নতুন ফৌজদারি আইন প্রণয়ন করে সরকার একটি 'কীর্তি' স্থাপন করতে চেয়েছে। এত ধুমধাম করে যে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে পুরনো আইনে কিছু সংযোজন ও বিয়োজন তথা সংশোধনীর মাধ্যমেও সেই কাজটি করা সম্ভব ছিল। যেমন, আইপিসি'র ২৩টি অধ্যায় (চ্যাপ্টার) ও ৫১১টি ধারা (সেকশন) বিএনএস'তে হয়েছে যথাক্রমে ২০ ও ৩৫৮। আইইএ'র ১১টি অধ্যায় ও ১৬৭টি ধারা বিএসএ'তে হয়েছে যথাক্রমে ১২ ও ১৭০।সিআরপিসি'র ৩৭টি অধ্যায় ও ৪৮৪টি ধারা বিএনএসএস'তে হয়েছে যথাক্রমে ৩৯ ও ৫৩১। অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তি একই থাকলেও বদল করা হয়েছে ধারা নম্বর। যেমন, হত্যার শাস্তির ধারা ছিল ৩০২, হয়েছে ১০৩। হত্যার চেষ্টা ৩০৭ থেকে ১০৯, ধর্ষণ ৩৭৫ থেকে ৬৩, শ্লীলতাহানি ৩৫৪ থেকে ৭৪, প্রতারণা ৪২০ থেকে ৩১৮, মানহানি ৪৯৯ থেকে ৩৫৬ ইত্যাদি।
আইন শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষার প্রয়োজনে দেশে সুসংহত অপরাধমূলক আইন থাকা জরুরি। কিন্তু সেই আইন কখনও নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার পরিসরে আইন বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু নতুন ফৌজদারি আইনের অন্যতম লক্ষ্য হল বিরোধী কণ্ঠস্বরকে জব্দ করা। কারণে অকারণে একজন নাগরিকের আইনের চোখে অপরাধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পান থেকে চুন খসলেই বিপদ! আসলে নাগরিক সমাজকে আইনের ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করে তোলার কৌশল গ্ৰহণ করা হয়েছে। পেশাগত দাবিতে, রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রচারে, সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার অধিকার খর্ব করতে চাওয়া হয়েছে। সমাজের শিক্ষিত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রগতিশীল চিন্তাবিদদের উগ্ৰ সাম্প্রদায়িক সমাজবিরোধী মানবতাবিরোধী জঙ্গি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে একাকার করে দিয়ে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনের সাহায্যে আরও বেশি করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পথকে প্রশস্ত করা হবে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের শাসকদলে আসতে বাধ্য করা হবে। বিগত এক দশকে এমন ভুরিভুরি দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, বিরোধী দলে থাকার সময় যে ব্যক্তি ছিল কয়লার মতো কালো সেই ব্যক্তি শাসকদলে যোগদান করে হয়ে গেছে দুধের মতো ধবধবে সাদা।
নতুন আইনে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তিকে আরও কড়া ও কঠিন করা হয়েছে। যেমন, মৃত্যুদণ্ডের প্রাবল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।আইপিসি'তে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল ১১টি ক্ষেত্রে, বিএনএস-এ তা হয়েছে ১৫টি। অথচ বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ডের কথা ভাবা হয়ে থাকে।আধুনিক বিশ্বে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের জনপ্রিয় দাবির কথাও বিস্মৃত হওয়া উচিৎ নয়।অনেকগুলো ক্ষেত্রে কারাবাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।এখন থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ হল আমৃত্যু কারাবাস। চোদ্দো বছর কারাদণ্ড ভোগের পর বন্দির আচার আচরণ বিবেচনা করে মুক্ত করার যে রীতি ছিল তা রদ করা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ বহু গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন আইনের 'ন্যায়' আর 'নাগরিক সুরক্ষা' জেল, জরিমানা ও মৃত্যুদণ্ডের বহর দেখে লজ্জা পাচ্ছে! আসলে নতুন আইনে দেশের সর্বোচ্চ আইন তথা সংবিধানের মৌলিক ভাবনাকে অস্বীকার করতে চাওয়া হয়েছে।
ন্যায় সংহিতার ১১১ নম্বর ধারায় যেভাবে 'সংগঠিত অপরাধ'কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তাতে জরুরি পরিষেবায় বাধাদানের অভিযোগ তুলে যেকোনো গণআন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে দেওয়া সম্ভব। এর ফলে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলন করার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে।
ইউএপিএ,২০১৯ (আন-লফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) একটি দমনমূলক আইন। বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার কথা বলা হলেও মুক্তচিন্তার কণ্ঠস্বরকে জব্দ করার জন্য বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাঁদের বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে। ইউএপিএ থাকছেই, এবার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে আরও কঠোর ভাবে মোকাবেলা করার সংস্থান রাখা হয়েছে বিএনএস-এর ১১৩ নম্বর ধারায়। সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। এই আইনে সমাজের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, সমাজকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আইপিসি'র ১২৪এ ধারা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতা (সেডিশন) সম্পর্কিত। সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল সাত বছরের কারাবাস। ব্রিটিশ সরকার ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এই ধারায় অভিযুক্ত করে কারাবন্দি করত। নতুন ফৌজদারি আইনে সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতার কথা নেই। কিন্তু বিএনএস-এর ১৫২ ধারায় যা রয়েছে তা আরও মারাত্মক।এই ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির কথা, লেখা, ছবি বা অন্য কোনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে উস্কানি দিচ্ছে অথবা দেশের সার্বভৌমত্ব, একতা ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করতে প্ররোচনা যোগাচ্ছে বলে মনে হলে সেই ব্যক্তি অভিযুক্ত হবেন। শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সরকারের অথবা শাসকদলের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব নিয়ে চলতে থাকা যেকোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এই ধারায় ধরে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে।
নতুন ফৌজদারি আইনে পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্ৰেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে পুলিশ হেফাজতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বাড়বে বলে মনে হয়। তদন্ত প্রক্রিয়ার উপরেও গোপন বোঝাপড়ার প্রভাব পড়তে পারে। গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে পুলিশি রাষ্ট্র শোভা পায় না।
বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার ক্ষেত্রেও নতুন আইন কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে বলে মনে হয় না। প্রথম শুনানির ৬০ দিনের মধ্যে চার্জ গঠন এবং শেষ শুনানির ৪৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শুনানির সর্বোচ্চ সংখ্যা কিংবা প্রথম শুনানি ও শেষ শুনানির মধ্যে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবধানের ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি। অর্থাৎ 'তারিখ পে তারিখ' চলতেই থাকবে। 'জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড'-এর অবসান ঘটবে না। টাকা যার বিচার তার, এই ধারণাও দূর হবে না।
আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কার দরকার। কিন্তু শুধুমাত্র ফৌজদারি আইনের কিছু অধ্যায় ও ধারার রদবদল ঘটিয়ে এই সংস্কার সাধন করা সম্ভব নয়। এর জন্য আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিচারপতি ও আদালতের কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে। পুলিশের কাজ ভাগ করে দিতে হবে। কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে, কেউ তদন্তের কাজে নিয়োজিত থাকবে। আইন নিরপেক্ষ তথা 'অন্ধ' থাকবে।পক্ষ যদি নিতেই হয় তবে দুর্বলের পক্ষ নিতে হবে।মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রমে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কিত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করা হোক। আইন সম্পর্কে সচেতনতা কম বয়স থেকেই গড়ে উঠুক।