রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একাধিক অসুখে ভুগছে

মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০৪:৩৮ পিএম, ৫ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার

ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একাধিক অসুখে ভুগছে
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল

     সাম্প্রতিক নিট (NEET-ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট) কেলেঙ্কারি ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার  অবস্থা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। নিট-ইউজি (আন্ডার গ্ৰ্যাজুয়েট) পরীক্ষার দুর্নীতি প্রকাশ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নিট-পিজি (পোস্ট গ্ৰ্যাজুয়েট) পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিয়োগের পরীক্ষা ইউজিসি-নেট (ইউনিভার্সিটি গ্ৰ্যান্টস কমিশন-ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট)।মানবদেহের চিকিৎসা যেভাবে পরিষেবা থেকে পণ্য হয়ে উঠছে তাতে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। জনস্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করে যেভাবে ব্যবসার বৃহৎ ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুরবস্থা দূরীকরণে সকলের সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
     চিকিৎসকরা হলেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই চিকিৎসক তৈরি করার পদ্ধতির মধ্যেই গুরুতর গলদ রয়েছে। এই পদ্ধতি যেমন মেধার সাথে আপস করছে তেমনি দুর্নীতির প্লাবন দ্বার খুলে দিচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞানের সিলেবাস ও  নিট-এর সিলেবাসের মধ্যে বেশ কিছুটা বৈসাদৃশ্য রয়েছে।আর, এই দুটো পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন অনেকটাই আলাদা।এজন্য নিট-এর প্রস্তুতির সঙ্গে স্কুলের পঠনপাঠনের খুব একটা সম্পর্ক নেই। যারা চিকিৎসক হওয়ার পরিকল্পনা করে তারা উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। এজন্য তারা থিয়োরির ক্লাস নয়, শুধুমাত্র প্র্যাকটিক্যাল ও প্রজেক্টের জন্য স্কুল যাওয়াকেই যথেষ্ট মনে করে। অর্থাৎ চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শিক্ষার্থীদের কাছে স্কুলের তেমন গুরুত্ব থাকে না। মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের বিদ্যালয়বিমুখতাকে শিক্ষা ব্যবস্থার একটি নেতিবাচক দিক হিসেবেই দেখা দরকার।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বকে অস্বীকার করে প্রথাবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে না।নিট ও উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞানের বিষয় অর্থাৎ জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যার পাঠক্রমের মধ্যে প্রভেদ না রেখে নিটের সিলেবাসে কিছু বাড়তি অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এতে মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের পক্ষে দুটি পরীক্ষাতেই ভালো ফল করার সম্ভাবনা বাড়বে। এখন যে পড়ুয়া উচ্চমাধ্যমিকে জোর দেয় সে নিটে ভালো করে না আর যে নিটে জোর দেয় সে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো করে না। একজন পড়ুয়ার খুব কাছাকাছি সময়ে দেওয়া দুটো পরীক্ষায় দুরকম ফল হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
    ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা সর্বভারতীয় না হয়ে রাজ্য ভিত্তিক হওয়া উচিৎ। ২০১৭ সালে জাতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট চালু হওয়ার আগে সেটাই ছিল।যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিকেন্দ্রীকরণের বদলে সবকিছু কেন্দ্রীকরণের প্রচেষ্টা কেন? পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে বলতে পারি, কয়েক বছর পূর্ব পর্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী পড়ুয়ারা দু'একজন প্রাইভেট টিউটর অথবা জেলার অভ্যন্তরে কোনো কোচিং সেন্টারের সাথে সংযুক্ত থেকে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় (JEE) সফল হয়ে ডাক্তারি পড়েছে। আর, এখন নিটের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ভালো কোচিং সেন্টারের সন্ধানে অনেককেই রাজ্যের বাইরে চলে যেতে দেখা যাচ্ছে।প্রচুর টাকা পয়সা খরচ হচ্ছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেয়ে অথবা পড়াশোনার চাপ সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে বসছে। কয়েক বারের চেষ্টায় অসফল হয়ে অনেকের ছাত্রজীবনে ও কর্মজীবনে অন্ধকার নেমে আসছে। তারা ডাক্তার হতে গিয়ে জীবনযুদ্ধে চিররোগী হয়ে পড়ছে।কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলোর রমরমা ব্যবসায় কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না।
       মেডিক্যাল কলেজ ও এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি) কোর্সের আসন সংখ্যা প্রায় প্রতি বছরই বৃদ্ধি পায়। সেটাই স্বাভাবিক। এন এম সি (ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশে মেডিক্যাল কলেজ ও এমবিবিএস-এর আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৭০৬ ও ১০৯১৪৫। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি কলেজের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৮৬ ও ৩২০ আর তাদের আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫৮৮০ ও ৫৩২৬৫। অর্থাৎ, চিকিৎসক তৈরির সরকারি আয়োজনকে প্রায় ধরে ফেলেছে বেসরকারি উদ্যোগ এবং অদূর ভবিষ্যতে হয়তো অতিক্রম করে যাবে। ২০২৪ সালে নিট-ইউজি'র পরীক্ষার্থী ছিল ২৩ লক্ষ ৩৩ হাজার। সর্বমোট ৭২০ নম্বরের পরীক্ষায় পাস নম্বর নির্ধারিত হয় ১৩৮। অর্থাৎ, ২০ শতাংশের কম নম্বর পেয়েও একজন পরীক্ষার্থী ডাক্তারি পড়ার যোগ্যতা অর্জন করছে। এত কম নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও পাস করা যায় না। স্কুল শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এর থেকে অনেক বেশি পার্সেন্টেজ পেতে হয়। অতি সাধারণ বা নিম্ন মেধার পড়ুয়ারা ডাক্তার হলে তো খুব মুশকিল! নেট-ইউজি'র পুরো প্রশ্নপত্রটাই এমসিকিউ (মাল্টিপ্ল চয়েস কোশ্চেন) দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ কিছু লেখার দরকার নেই। চারটি বিকল্প থাকে। সেখান থেকে সঠিকটা চিহ্নিত করতে হয়। এরূপ একমাত্রিক পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে পড়ুয়াদের জ্ঞান, বোধ, বুদ্ধি, উদ্ভাবনী শক্তি ও স্মরণ শক্তি তথা সামগ্ৰিকভাবে মেধা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায় না।মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে যে পেশাজীবীদের সঙ্গে সেই চিকিৎসকদের মেধার সাথে কখনও আপস করা উচিৎ নয়। সত্যিকারের মেধাবী ও পরিশ্রমী পড়ুয়ারাই যাতে ডাক্তার হয় তা নিশ্চিত করা দরকার।এজন্য বর্তমানে মেডিক্যালের যে পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে তা পাল্টানো এবং পাস নম্বর বাড়ানো জরুরি।
       এমবিবিএস কোর্স করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ সরকারি কলেজ। এর একটা বড় কারণ সরকারি কলেজে পড়াশোনা করার খরচ বেসরকারি কলেজের তুলনায় অনেকটাই কম। পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স  সরকারি কলেজে সাকুল্যে ২-৩ লাখ টাকায় হয়ে যায়। এর ফলে মধ্যবিত্ত তো বটেই এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারের পড়ুয়াকেও আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় না।কিন্তু বেসরকারি কলেজে পড়ার খরচ ৭০ লাখের উপরে শুরু হয় এবং তা ১ কোটি থেকে ১.৫ কোটিতে পৌঁছায় যা কেবলমাত্র উচ্চবিত্তদের পক্ষেই অ্যাফোর্ড করা সম্ভব।সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোর্স ফি-এর মধ্যে এমন বিশাল ব্যবধান আমাদের 'সমাজতান্ত্রিক' দেশে কতটা যুক্তিযুক্ত ভেবে দেখা দরকার। বেসরকারি কলেজের ফি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্ধারিত হওয়া উচিত।
     নিট-ইউজি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যে মেধা তালিকা তৈরি হয় তার প্রথম দিককার স্থানাধিকারীরা সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়।কে কোন কলেজে ভর্তি হতে পারবে সেটাও নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেয়। ২০২৪ সালে ২৩ লাখ ৩৩ হাজার পরীক্ষার্থী ছিল। উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লক্ষ। প্রথমদিককার ৫৬ হাজার প্রার্থী সরকারি কলেজে ভর্তি হবে। বাকি ৫৩ হাজার আসনে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে।বেসরকারি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধা তালিকার ক্রমিক নম্বরের কোনো গুরুত্ব নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বেসরকারিতে ৫৫০ নম্বর পাওয়া পড়ুয়ার যতটুকু অধিকার ১৫০ নম্বর পাওয়া প্রার্থীরও ততটুকু অধিকার। মেধার কোনো মূল্য নেই। আসলে এখানে পুরোটাই টাকার খেলা। যার টাকা আছে সে ন্যূনতম কোয়ালিফাইং নম্বর পেয়েই ডাক্তারি পড়ার ছাড়পত্র পেয়ে যাবে আর, যার টাকা নেই সে দুই-চার নম্বর কম পাওয়ার কারণে সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারেনি বলেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে  না।নিটে ৭৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া দরিদ্র পরিবারের ছেলেটি বা মেয়েটি ডাক্তার হতে পারবে না কিন্তু ২০ শতাংশ নম্বর পাওয়া ধনী পিতামাতার সন্তানের গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলবে।এই ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবেই ভালো মানের চিকিৎসক তৈরির পরিপন্থী।
      ভারতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করার অত্যধিক খরচের জন্য প্রতি বছর লক্ষাধিক নেট উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশ, ইউক্রেন, চীন প্রভৃতি দেশে পাড়ি দেয়। বাংলাদেশে ৩০-৪০ লাখে ও ইউক্রেনে ২০-২৫ লাখে ডাক্তারি পড়া যায়। চীনে আরও কম টাকায় ডাক্তারি পড়ানো হয়। তাহলে ভারতে প্রাইভেট কলেজে এমবিবিএস কোর্সে কোটি টাকার গল্প কেন? আসলে আমাদের দেশের সরকার স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধি আর কোটিপতি বাবামায়ের সন্তানের চিকিৎসক হওয়ার পথ প্রশস্ত করতেই নিটের নিয়মাবলি রচনা করেছে।
      নিট পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতির পেছনেও একটি বড় কারণ প্রাইভেট কলেজের ফি। যাদের ৮০-১০০% নম্বর পাওয়ার মতো মেধা নেই বা বলা যায় যাদের সরকারি কলেজে ভর্তির  সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই তাদের একাংশ প্রশ্নপত্র কেনার চেষ্টা করে। ৩০-৪০ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে ভালো ফল করে সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারলে বেসরকারি কলেজে পড়ার খরচ ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। দুর্নীতির মধ্যেও অঙ্ক রয়েছে! সুতরাং, দুর্নীতি বন্ধ করার একটা উপায় হিসেবেও প্রাইভেট কলেজের ফি কমানো দরকার।
       বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর টাকা খরচ করে যারা ডাক্তার হয় তাদের অনেকেই চেষ্টা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই টাকা তুলে নেওয়া যায়। ডাক্তার হয়ে 'মানবসেবা'র কথা বিস্মৃত হয়ে তারা অর্থ উপার্জনে মনোনিবেশ করে। সরকারি বেতনে তাদের পোষায় না। তারা সরকারি চাকরির পরওয়া করে না। সরকারি চাকরি পেলে ভালো, না পেলেও ক্ষতি নেই। প্রাইভেট চেম্বার ও প্রাইভেট হাসপাতাল তথা নার্সিংহোমই যথেষ্ট।যত রকম ভাবে সম্ভব পেশেন্ট পার্টির পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হবে। প্রথমত, চার-পাঁচ মিনিটে রোগী দেখে একটা প্রেসক্রিপশন লিখে চার-পাঁচশো টাকা 'ভিজিট' নেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজন না থাকলেও প্রেসক্রিপশনে এক বা একাধিক টেস্ট লিখে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে 'কমিশন' খেতে হবে। টেস্ট যত দামী হবে কমিশন তত বেশি হবে। তৃতীয়ত, ওষুধ ব্যবসায়ীদের এজেন্ট তথা মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের কথা মতো কাজ করে 'গিফট' নিতে হবে। এভাবেই অনৈতিক উপায়ে দৈনিক হাজার হাজার অথবা লক্ষাধিক টাকা উপার্জন নিশ্চিত করা হবে। টাকার জোরে বেসরকারি কলেজ থেকে ডাক্তার হয়ে যখন অনেকেই এত উপার্জন করে তখন যারা মেধার জোরে সরকারি কলেজ থেকে ডাক্তার হয়েছে তারা প্রথমজনদের থেকে কম উপার্জনকে মেনে নিতে পারে না। তখন তারাও প্রথমজনদের পথ অবলম্বন করে। দুটি ক্ষেত্রেই কিছু ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু সাধারণ প্রবণতা হল আজকাল অর্থের জন্য চিকিৎসকদের 'ভগবান' থেকে 'কসাই' হতে আপত্তি নেই। চিকিৎসকদের এই অসুস্থ মানসিকতা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক।
      ওষুধ ব্যবসা সাংঘাতিক মুনাফার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।ওষুধ কোম্পানি ও চিকিৎসকদের একাংশের যোগসাজশে অত্যন্ত চড়া দামে বাজারে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকে ব্যবহৃত স্ট্রেপ্টোকাইনেজ ইনজেকশন পেশেন্ট পার্টিকে কিনতে হয় ৯ হাজার টাকা দিয়ে, অথচ ইনজেকশনটির প্রকৃত মূল্য ৭০০-৯০০ টাকা। টাইফয়েডে ব্যবহৃত মনোসেফ ট্যাবলেটের পাইকারি মূল্য ২৫ টাকা, কিন্তু ফার্মেসি থেকে দ্বিগুণ অর্থ দিয়ে কিনতে হয়। ডায়ালাইসিসের একটি ৫০০ টাকার ইনজেকশন পেশেন্ট পার্টিকে কিনতে হয় ১৮০০ টাকা দিয়ে। সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ১৫০ টাকার অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে ডাক্তার হয়তো প্রেসক্রাইব করছেন ৫৪০ টাকা মূল্যের কোনো অ্যান্টিবায়োটিক। বাজারে একটি আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট করলে দিতে হয় ৭৫০ টাকা, রেডিওলজিস্ট পায় ২৪০ টাকা, বাকিটা ডাক্তারের কমিশন।এম আর আই করতে ডাক্তারের কমিশন ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। 
       স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল বদল দরকার। কিন্তু বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়নের যুগে তার খুব একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সরকার শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে ক্রমাগত হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ যত কমবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও শোষণ তত বাড়বে। মূল্যবোধ ও মানবিকতার অবক্ষয় আরও ত্বরান্বিত হবে। জনসচেতনতা ও গণপ্রতিরোধ ছাড়া অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয়।