বিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে হিন্দি গানের সঙ্গে পড়ুয়াদের উদ্দাম নাচের ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৬:২৮ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার
বিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে হিন্দি গানের সঙ্গে পড়ুয়াদের উদ্দাম নাচের ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়, অভিযোগ ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করে এই আসর করা হয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের অভিভাবকের, যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে সাফাই প্রধান শিক্ষকের, সমগ্র ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা
মালদা;;০৯ফেব্রুয়ারী: বিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে হিন্দি গানের আসর। পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী ছাত্রীদের নিত্যানুষ্ঠান থাকলেও তা বাতিল করে করা হয় হিন্দি গানের আসর। হিন্দি গানের সঙ্গে উদ্দাম নাচ ছাত্র-ছাত্রীদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই শোরগোল এলাকা জুড়ে। সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এসেও ঘুরে যেতে হয় ছাত্রীদের। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের অভিভাবকের। সাথে মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সাফাই প্রধান শিক্ষকের। সমগ্র ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। খোঁচা বিজেপির। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সাফাই তৃণমূলের। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত ভিঙ্গল হাই স্কুলের ঘটনা। গত ৩১ শে জানুয়ারি এবং ১লা ফেব্রুয়ারি ভিঙ্গল হাই স্কুলের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে দুইদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগীত এবং নৃত্যানুষ্ঠান ছিল। যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে অনুষ্ঠানসূচি আগাম হ্যান্ড বিলে ছাপানো হয়েছিল। সেই সূচি অনুযায়ী ছাত্রীরা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে সেজে গুজে অনুষ্ঠানে হাজির হয়। কিন্তু অভিযোগ তাদেরকে মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি। তাদের সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে হিন্দি গানের আসর বসানো হয়। সমগ্র ঘটনায় ছাত্রীরা মানসিক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। বিষন্ন মনে তারা বাড়ি ফিরে আসে। তারপরেই অভিভাবক মহলে ঘটনা জানাজানি হয়। সেই হিন্দি গানের আসরে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দাম নাচের ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়া। অভিযোগের আঙুল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্র প্রসাদ সাহার দিকে। এবার সমগ্র ঘটনা নিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন মৃত্যুঞ্জয় দাস নামে এক অভিভাবক। তার দুই কন্যা ওই বিদ্যালয়ে পাঠরত। এছাড়াও তার অভিযোগ বিদ্যালয়ে সঠিক ভাবে মিড ডে মিল দেওয়া হয় না। সরস্বতী পূজোতে খাওয়ানোর জন্য চাঁদা নিলেও মিড ডে মিলের খাতা থেকে সেই খাওয়ানোর খরচ হয়েছে। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। তার দাবি বিদ্যালয়ের আকৃতি প্রাক্তন ছাত্রের উদ্যোগে একটি গানের অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের খরচও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা দিয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। সমগ্র ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলের আমলে সারা রাজ্যে অপসংস্কৃতি খোঁচা বিজেপির। যদিও পাল্টা তৃণমূলের দাবি এই ধরনের হিন্দি গানের আসর হওয়া ঠিক নয়, হলে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগকারী অভিভাবক মৃত্যুঞ্জয় দাস বলেন, ছাত্রীরা দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিয়ে সেজেগুজে গেছিল। অনুষ্ঠানসূচি পূর্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সেটা বাতিল করে হিন্দি গানের আসর বসিয়েছেন। সরস্বতী পূজার চাঁদা নেওয়া হলেও মিড ডে মিলের খাত থেকে খাওয়ানোর খরচ করা হয়েছে। আমি প্রশাসন এবং শিক্ষা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানলাম।
প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্র প্রসাদ সাহা বলেন, বিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন কৃতি ছাত্র পুলিশের উচ্চ পদে রয়েছে। তার উদ্যোগে কয়েকটা হিন্দি গান হয়। সেখানে অংশগ্রহণ করেছিল সকল পুলিশেরাই। কোন অনুষ্ঠান বাতিল হয়নি। অনুষ্ঠানের খরচ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কৃতি ছাত্রদের অনুদানে হয়েছে।
তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, যদি এই ধরনের হিন্দি গানের আসর বসে সেটা ঠিক নয়। অভিযোগ সত্যি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু মিড ডে মিল নিয়ে অভিযোগ সঠিক নয়।
উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, তৃণমূলের আমলে সারা রাজ্য-জুড়ে অপসংস্কৃতি। এই ধরনের ঘটনা অভিপ্রেত নয়। এরা কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। তাই সকলের এত বাড়বাড়ন্ত।
বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রীরাই অংশগ্রহণ করতে পারলো না। যেটা তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এক্ষত্রে প্রাক্তন ছাত্রদের অনুষ্ঠান হলেও কোনো অনুষ্ঠান বাতিল করে করা ঠিক নয়। সাথে শিক্ষাগণের সংস্কৃতি এবং গরিমা নস্ট করতে পারে এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেওয়া উচিত নয় প্রধান শিক্ষকের। এমনটাই মত এলাকার বিশিষ্ষ্টদের।