শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোনোভাবেই নাগরিকত্ব বিল মানা হবে না: আমসু

রাহাতুল আক্তার বড়ভূইয়া

পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা

প্রকাশিত : ০৯:১৩ এএম, ৬ জানুয়ারি ২০১৯ রোববার

এনআরসিতে নাম সকল নাগরিকের নাম নথিভুক্ত

এনআরসিতে নাম সকল নাগরিকের নাম নথিভুক্ত

গুয়াহাটি প্রতিনিধি

ভারতীয় সংবিধানের সেক্যুলার চরিত্রকে অক্ষুণ্ণ রাখতে কোনোভাবেই নাগরিকত্ব বিল মানা হবে না বলে জানিয়েছে অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আমসু)।

ভারতে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬ প্রসঙ্গে গতকাল (শুক্রবার) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অসমের শিলচরে এক জনসভায় বলেন, ‘আমাদের সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই বিল মানুষের অনুভূতি এবং তাদের জীবনের সাথে সম্পর্কিত। আমি আশা করি এই বিল শীঘ্রই   সংসদে পাস হবে এবং যারা ভারত মাতায় বিশ্বাস রাখে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।’

জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বাস দিতে চাই যে, কোনও ভারতীয় নাগরিকের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়বে না।’

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা সংখ্যলঘুদের (অমুসলিম হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন ও পার্সি) ভারতে আশ্রয় দিতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন করছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার। সংসদে পেশ করা এ সংক্রান্ত বিলে প্রস্তাব করা হয়েছে, ওই তিন দেশ থেকে ভারতে আসা অমুসলিমরা ১২ বছরের পরিবর্তে ৬ বছরের মধ্যেই নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু এভাবে ধর্মীয় ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের চেষ্টা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।  এদিকে এ প্রসঙ্গে অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (আমসু) উপদেষ্টা ও  অসমের সংখ্যালঘু সংগঠন সমূহের সমন্বয় সমিতির মুখ্য আহ্বায়ক আইনজীবী আজিজুর রহমান আজ (শনিবার তিনি জানান, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দু’জন অসমবাসীদের বোকা বানিয়ে ওনাদের রাজনৈতিক ফায়দা লাভের চেষ্টা করছেন। প্রথমত, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যেকোনো মূল্যে ওনারা পাস করানোর কথাও বলছেন। একইভাবে অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা কার্যকর করার কথা বলছেন। কিন্তু, নাগরিকত্ব বিল গ্রহণ করা হলে অসম চুক্তি আপনা থেকেই শেষ হয়ে যাবে। কারণ, অসম চুক্তিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে অসমে নাগরিকত্বের জন্য। এখন যদি নরেন্দ্র মোদির কথা অনুযায়ী নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয় তাহলে অসম চুক্তি নস্যাৎ হয়ে যাবে। যদিও ওনারা স্ববিরোধী ভাবে অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা কার্যকর করার কথা বলছেন। এটা হচ্ছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মুখে অসমের জনসাধারণের কাছে নরেন্দ্র মোদির ‘ললিপপ’। যাতে বাঙালি হিন্দুরা ওনাদের সমর্থন করেন এবং অসমীয়ারাও যাতে সমর্থন করেন। এভাবে ওঁরা দ্বিমুখী নীতি নিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটা স্পষ্ট বলতে চাই যে, অসমের জনসাধারণকে যেন ওঁরা বোকা না ভাবেন। অসমের মানুষজন অত বোকা নন। অসমের মানুষজন ওনাদের চরিত্র ইতিমধ্যেই অবগত হয়েছেন। অসমের মানুষজনকে ওঁরা ফুটবল বানানোর চেষ্টা করছেন।’
আজিজুর রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমসু সহ ৭০টি জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে যৌথভাবে গোটা অসমে জনমত তৈরির চেষ্টা চলছে যাতে নরেন্দ্র মোদি ধর্মের ভিত্তিতে যে  নাগরিকত্ব বিল এনেছেন তা কোনোভাবেই যাতে পাস না হয়। সংবিধানের সেক্যুলার চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখার দায়িত্ব সরকারের। যদি তা অক্ষুণ্ণ না রাখা হয় তাহলে সরকারকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ।’  

এনআরসিতে নাম সকল নাগরিকের নাম নথিভুক্ত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে আজিজুর রহমান বলেন, ‘উনি ওরকম বললেও টেকনিক্যালি দেখা যাচ্ছে ভুয়া ব্যক্তিরা আপত্তি প্রদান করছেন। ফলে ঠিকানাহীন ওইসকল ব্যক্তিদেরকে এনআরসি কর্তৃপক্ষ শুনানির জন্য ডেকে উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনতে পারবেন না।’ এনআরসিতে ‘ভুয়া আপত্তি প্রদানকারী’দের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরব হয়ে আছেন কেন সেই প্রশ্নও উত্থাপন করেছেন আমসু নেতা আইনজীবী আজিজুর রহমান।