মালদা শহরের সঙ্গে জুড়তে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে তৈরি হল বাঁশের সাঁকো
এম আনোয়ার উল হক
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ১২:৫৮ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
মালদা শহরের সঙ্গে জুড়তেগ্রা মবাসীদের উদ্যোগে তৈরি হল বাঁশের সাঁকো
এম আনওয়ার উল হক, কোতুয়ালি
নদী আপন মনে বয়ে চলে নিজ গন্তব্যে। আর সেই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে গ্রাম শহর নগর সভ্যতা। আজকে এরকমই একটি গ্রামের গ্রামের কথা তুলে ধরব। গ্রামটি হচ্ছে গোবিন্দপুর। মালদা শহরের অদূরে এই গ্রাম। বলতে পারেন ঢিল ছুঁড়া দূরত্বে মালদা শহর। শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরেই এই গ্রাম। কিন্তু গ্রামটিতে যেতে হলে আপনাকে নদীর জল ভাঙতেই হবে । কেননা নদীর ওপর কোন স্থায়ী ব্রিজ বা সেতু নেই।
অজ্ঞাতে গ্রামের মানুষ বিকল্প হিসাবে নিজেদের উদ্যোগে সশ্রমে আস্ত বড় বাঁশের সেতু বানিয়ে ফেলছেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে । কোন সরকারি সাহায্য ছাড়াই। যদিও মাত্র দু' কিলোমিটারের রয়েছে দুই দুইজন এমপি রয়েছেন। একজন রাজ্যসভার সাংসদ তৃণমূল নেত্রী মৌসম বেনজির নূর। অন্যজন কংগ্রেস নেতা দক্ষিণ মালদার সাংসদ আবুল হাসেম খান চৌধুরীর বাড়ি। এলাকার মানুষের দাবি বহুদিনের, নদীর উপর একটা স্থায়ী ব্রিজ হোক। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের তদবির করেও ফল হয়নি। বাম ডান বিজেপি সব রাজনৈতিক দল দেখিয়েছেন মালদা শহর থেকে রতুয়া যাওয়ার সংযোগকারী কালিন্দ্রি নদীর উপরে থাকা কোতোয়ালির নেতাজি ব্রিজকে।
উল্লেখ্য, নেতাজি সেতুটি বাম আমলে ১৯৯০ সালে তৈরী করা হয়।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথা জনপ্রতিনিধিদেরও দাবি এত কাছাকাছি ব্রিজ তৈরি করা সম্ভব নয়! এমনই কথা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গোবিন্দপুরের মানুষের বক্তব্য ব্রিজ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই ব্রিজ ব্যবহার করতে গোবিন্দপুরের মানুষকে ৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে কোতোয়ালি টিপাজানি আরাপুর কিংবা ১২ কিলোমিটার অতিক্রম করে মালদা শহর যাতায়াত করতে হয়। গোবিন্দপুর টিপাজানির উপর ব্রিজ হলে এতটা পথ অতিক্রম করতে হবে না। সেকারনে স্ব-উদ্যোগে প্রতিবছর তৈরি করেন বাঁশের সাঁকো।
গোবিন্দপুরের পারুল কর্মকার জানান,
বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও যাতায়াতের যাতায়াতের জন্য সেতু তৈরি না হওয়ায় গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে তৈরি করে বাঁশের সাঁকো।
মালদা জেলার ইংরেজবাজার ব্লকের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর এলাকায় কালিন্দ্রি নদীর উপর তৈরি হল সেই বাঁশের সাঁকো।
স্থানীয়দের দাবি নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চাতের গোবিন্দপুর ও কোতুয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের টিপাজানি, আরাপুর তথা মালদা শহরের মধ্যে যোগাযোগকারী গোবিন্দপুর গ্রামের বাঁশের সাঁকোটি, প্রতিবছর বর্ষায় আসলে তা স্রোতে ভেঙে যায়, যার ফলে যাতায়াতের নানান সমস্যায় ভুগতে হয় গ্রামবাসীদের। তখন গ্রাম থেকেই নদীর উপর চালায় নৌকা। নৌকার মাঝিকে বেতনও দেয় গ্রামবাসীরা। ভরা বর্ষায় নদী পারাপার হতে অনেক সমস্যা হয়। অন্তঃসত্ত্বা বৃদ্ধ রোগীদের প্রচন্ড অসুবিধা হয় নৌকা বা বাঁশের সাঁকো পারাপার হতে। এই গ্রামের ছেলে মেয়েরা মালদা কলেজ, উইমেন্স কলেজ, জোত আরাপুর পরেশনাথ হাই স্কুল, আরাপুর জোত টিপাজানি আহ্লাদিনী ঘোষ গার্লস হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। তারা নিয়মিতই যাতায়াত করে ওই অস্থায়ী সেতু দিয়ে বলে জানান পারুল দেবী।
গোবিন্দপুর এর মিঠুন মন্ডল জানান,
বর্ষার সময় চার মাস নৌকা চলে আর আট মাস ভরসা এই বাঁশের সাঁকোটি। সোমবার অবশেষে গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে তা তৈরি করে।
জোত আড়াপুর পিএন হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সোনালী মন্ডল, বর্ণালী মন্ডল, স্মৃতি রেখা মন্ডলদের কথায় এটা বাঁশের সাঁকো নয় এটা বাঁশের ব্রিজ। তারা জানিয়েছেন, গ্রামে ভাল স্কুল নেই। সে কারনে আমরা ছোটবেলা থেকেই এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করি। কোতুয়ালির নেতাজি ব্রিজ ব্যবহার করলে অনেক সময় অপচয় হয়।
ইংরেজবাজার বিধানসভার বিধায়িকা শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে ওই গ্রামটি। বিধায়িকার দেখা নেই বলে অভিযোগ করতে পারেনি এলাকাবাসী। অনেক সময় বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকেই নদীতে পড়ে গেছে। বিশেষ অসুবিধা হয় অন্তঃসত্তা মহিলাকে নিয়ে বলে জানিয়েছেন ভুগত মানুষেরা।
জানা গিয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হয় এই বাঁশের তৈরি সাঁকো। নিজেদের উদ্যোগে গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মেটানোর উদ্যোগ নেয় প্রতি বছর । গ্রামবাসীদের পাশাপাশি স্থানীয় ছাত্রছাত্রীরাও গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাত লাগায় এই বাঁশের সাঁকো তৈরীর কাজে। তাই নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে সেই সাঁকোর উপর দিয়ে সোমবার যাতায়াত শুরুও করেছেন গ্রামবাসীরা।