ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্যের বিষয় নিয়ে SUCI(C) দলের আবেদন
পুষ্পপ্রভাত পত্রিকা
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ পিএম, ২৬ মে ২০২১ বুধবার
মাননীয়
জেলাশাসক
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
মহাশয়,
আপনি জানেন, ইয়াস ঝড়ে ও প্রবল জলোচ্ছ্বাসে জেলার বিস্তীর্ণ অংশের জনজীবন বিপর্যস্ত, ঘরবাড়ী, পুকুর ও চাষাবাদ সবই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত।
এ পর্যন্ত আমরা যা জানতে পেরেছি তা আপনার কাছে রাখছি।
১) দীঘা থেকে কাঁথি পর্যন্ত উপকূল এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন ৷ বহু মাটীর বাড়ী নষ্ট হয়েছে।সমুদ্র নিকটবর্তী পাকার ঘরগুলির নীচের অংশও জলমগ্ন ৷ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি প্রচুর হয়েছে এবং নোনা জল মাঠে ঢোকার ফলে আগামী ২/৩ বছর ফসলও তেমন হবে না ৷ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষের ৷ সরকারী উদ্যোগে সেন্টারগুলিতে সরিয়ে আনা লোকেদের জন্য কিছু খাদ্য ও জলের ব্যবস্থা থাকলেও যারা স্বেচ্ছায় অন্যের বাড়ীতে একসঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়েছে তাদের জন্য পঞ্চায়েত থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ৷ অবিলম্বে তাদের জন্য শুকনো খাবার ও জলের ব্যবস্থা করা দরকার।
২) খেজুরীর ২নং ব্লকের বিশেষ করে নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার প্রায় ঘরবাড়ি জলের নীচে ৷ নোনা জল ঢোকার ফলে চাষের ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ একটি মাটির বাড়িরও আস্ত নেই৷ এই মুহূর্তে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার করে শুকনো খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থার প্রয়োজন ৷
নন্দীগ্রামের প্রায় 20টি মৌজা নদীবাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ ভাবে প্লাবিত হয়ে গেছে। সোনাচূড়া, কেন্দামারী, বাসুলিচক, পঞ্চম খণ্ড, জলপাই সহ আরও কয়েকটি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে আবার কোথাও কোথাও বাঁধ উপচে জল ঢুকেছে। এর ফলে নন্দীগ্রামের কয়েক হাজার পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার মাছ চাষী তাদের সব হারিয়ে হাহাকার করছে। মাটির বাড়ীগুলি ভেঙে পড়েছে। পানীয়জলের অভাব দেখা দিয়েছে। মিনদীপের অবস্থা শোচনীয়। পুরো মিনদীপ জলের তলায়।
চন্ডীপুর ব্লকের হলদি নদী সংলগ্ন 12 টি গ্ৰাম প্লাবিত।
দঃ নরঘাট মাতঙ্গিনী বাজার সহ কয়েকটি গ্ৰাম জলমগ্ন। ক্ষতি হয়েছে সব মাটির বাড়ি, মাছ চাষ, ইট ভাটা, সব্জী চাষ প্রভৃতি।
৩) তমলুক শহরের নদী সংলগ্ন 1,14,17,19 নম্বর ওয়ার্ড রূপনারায়ণ নদীর জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ঝাঁপিয়ে জল ঢুকে পুরো এলাকায় কাঁচা বাড়ি নষ্ট হয়েছে। পাকা বাড়িগুলির একতলাও জলমগ্ন। এলাকার মানুষজন তমলুক কলেজ ,হামিল্টন হাই স্কুল সহ অন্যান্য স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। চন্দ্রামেড় থেকে বিশ্বাস পর্যন্ত এলাকায় জল ঢুকে ঘরবাড়ি, চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই এলাকায় *ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। *নদী বাঁধগুলি দ্রুত সংস্কার করতে হবে।
*এলাকা চাষ সহ সবরকম ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪) কোলাঘাটে প্রবল জলোচ্ছাসে রূপনারায়ণের নদীবাঁধ টপকে জল ঢুকছে এলাকার কোলা, কুখাবাড়, সাহাপুর, বাড়বড়িশা, বড়িশা প্রভৃতি বিভিন্ন গ্রামে। লকগেট দিয়েও হু হু করে জল ডুকছে দেহাটী খালে। যে কোনো সময় দীর্ঘ দিনের পুরনো ভগ্ন লকগেটটি ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনও বাড়িতে এক কোমর জল । বহু মানুষ ঘরের জিনিস পত্র বার করতে পারেনি। ফলে ভালই ক্ষতি হয়েছে । এছাড়া খড়িচক ক্যালভার্ট যেটা ভেঙে জল ঢুকছে সেটা আজ রাতের জোয়ারের আগে মেরামত না করলে আরও অনেক এলাকা জলমগ্ন হবে । বিডিও কে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো হয়েছে। কিন্তু সেচ দপ্তরের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না ।
খারুই ১নং অঞ্চলের গোবরা এবং আঢাইপুর গ্রামের নদীর দিকের প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি জোয়ার এর জলে জলমগ্ন।
৫) হলদিয়া বন্দর সংলগ্ন গ্রাম জলমগ্ন। ঘরবাড়ি, পুকুর, চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত। মহিষাদলে মায়াচরে নদী বাঁধ ভেঙে বড় অংশ জলের তলায়। বেশিরভাগ মাটির বাড়ি পড়ে গেছে, মাছ, পান বোরোজ, সব্জীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাতের জোয়ারে দনিপুরের নদী বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা আছে। যা অবিলম্বে সারানো দরকার।
এছাড়া জেলার নানান প্রান্ত থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দাবি -
ক) দলমত নির্বিশেষে ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে যুক্ত করে সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সরকারি ত্রাণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।
খ) নোনা জল ঢোকায় চাষের জমি ও মাছের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুকুর ও জমিকে দ্রুত নোনা জল মুক্ত করা হোক। পান চাষীদের যাঁদের বোরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
গ) ভাঙ্গা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িগুলি মেরামতের জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়া হোক এবং দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তা বন্টন করা হোক।
ঘ) যাদের দোকান ঘর ভেসে গেছে তাদের আর্থিক সাহায্য করা হোক।
ঙ) ভেঙে যাওয়া বাঁধ ও লকগেটগুলি দ্রুত মেরামতির ব্যবস্থা করা হোক।
আমাদের প্রত্যাশা আপনি এই ব্যবস্থাগুলি দ্রুত গ্রহণ করবেন।
ধন্যবাদান্তে
অনুরূপা দাস, জেলা সম্পাদক
এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা
তারিখঃ ২৬/৫/২০২১